ওরা মূর্তি হতে চায়নি

Ishwar Chandra Vidyasagar

2
755
Photo: Social Media

ওরা মূর্তি হতে চায়নি।
ওরা নিজেরাই তো বারবার ভেঙেছে
সমাজের মূর্তমান জগদ্দল পাথর।
বিমূর্ত ভাবনার জোয়ারে ওরা প্লাবন এনেছে বদ্ধ মৃত জলাশয়ে।
ওরা কেউ পৌত্তলিকতা ভেঙেছে।
কেউ ভেঙেছে অন্ধবিশ্বাস,কুসংস্কার আর কুপ্রথার
অহঙ্কারী অভেদ্য দেওয়াল।
ওরা ভেঙেছে ভয়,সংকোচ আর সন্দেহের শিকল।
ওরা ভেঙেছে কারণ ওরা গড়তে জানে।
ভাঙার গান গেয়ে ওরা ঘুম ভাঙিয়েছে
গভীর তন্দ্রায় আচ্ছন্ন মানবিক মূর্তির।

ওরা মূর্তি হতে চায়নি।
ওরা বিমূর্ত ভাবনা আর বাণীতে
নতুন প্রাণ সঞ্চার করেছে জীবন জীবাশ্মে।
আমরাই ওদের প্রাণহীন মূর্তি করে দাঁড় করিয়েছি
পথের প্রান্তে,মোড়ে,স্মৃতিসৌধ আর স্মারকে।
ওরা দাঁড়িয়ে থেকে দেখেছে এগিয়ে যাওয়া সময়ের সাথে
নৈতিকতা,চেতনা,বোধ,মানবিকতার পিছিয়ে যাওয়ার দৌড়,
দেখেছে অধঃপতন আর অবক্ষয়।
বিভেদ আর বিভাজনের বিষবাষ্পে
ঝাপসা হয়ে গেছে ওদের নির্বাক দৃষ্টি।

ওরা আসলে নিজেরাই ভেঙে যেতে চেয়েছে।
ওরা তো ভেঙেই গিয়েছে ভিতরে ভিতরে প্রতিদিন প্রতিক্ষন।
আমরা তা বুঝতেও পারিনি।
আজ যখন আমাদেরই আস্ফালন আর উন্মাদনায়
ভেঙে পড়ছে ওদের আত্মাহীন মূর্তি
তখন আত্মসম্মানে বড় লাগছে আমাদের।

যখন ওদের ভেঙে ফেলা হয় স্কুলে,কলেজে,ঘরে,বাইরে
ওদের কথা আর দর্শনকে উপেক্ষা করে,
যখন ধর্ষকের হয়ে মিছিল করা হয় রাজা রামমোহন সরণীতে,
যখন ক্ষুধার্ত শিশু খাদ্যের সারিতেও লাইন দিতে পারে না
রেশন কার্ড নেই বলে,
যখন বিদ্যাসাগরের নামাঙ্কিত কলেজের বার্ষিক অনুষ্ঠানেই চলে
বিজাতীয় বিকট সংস্কৃতি আর সঙ্গীতের আস্ফালণ,
তখন কোনো পক্ষই পথে নামে না–
ওদের বিমূর্ত চিন্তাকেই ভেঙে ফেলা হচ্ছে বলে।
আসলে সবপক্ষই দূর্বল প্রতিপক্ষ চায়।
লড়াইটা তাহলে সহজ আর নিরাপদ হয়।

সংখ্যাটা কতটা লঘু সেটা বড় কথা নয়।
চিন্তা কতটা ঘণ আর গভীর সেটাই আসল।
বাঙালী যে সংখ্যায় এখনও লঘু হয়ে যায়নি
সব আদমসুমারীই তা মেনে নিয়েছে।
আসলে গুরু মষ্তিষ্কের গুরুতর ভাবনা অপেক্ষা
লঘুতর বিষয়েই বাঙালী আজ অধিক চিন্তাশীল।
তাই তাঁরা আজ শুধু নদীর ভাঙন দেখে
ঘরের ভাঙন চোখে পড়ে না।

ওরা মূর্তি হতে চায়নি।
ওদের মূর্তি করে দেওয়া হয়েছে
কারণ বিমূর্তকে জানার মত সময় নেই
আসলে মানুষ আজ নিজেই মূর্তি হয়ে গেছে।

 

Poet Krishna Barman

কৃষ্ণ বর্মন…..

2 COMMENTS

Leave a Reply to KRISHNA BARMAN Cancel reply

Please enter your comment!
Please enter your name here