৷ ১ ।
১৩ বছরের বিনুর আজ খুব আনন্দ।
ইস্কুল আজ ছুটি,
২৬ শে জানুয়ারি –
আনন্দের হাট,চড়ুইভাতির হুড়োহুড়ি;
ঘরে চড়বেনা আজ হাড়ি।
মাস্টারমশাইয়ের কাছে বিনু শুনেছে
২৬ শে জানুয়ারি দেশের মানুষ,
সত্যিকারের স্বাধীনতা পেয়েছে-
পেয়েছে মান আর হুশ-
ইচ্ছেমতো কথা বলবার স্বাধীনতা, অধিকার –
পেটভরে খাওয়ার অধিকার ,
অসুখের সাথে,
কোমর কষে পাঞ্জা লড়বার অধিকার –
রোদ্দুর, বৃষ্টি, বন্যার লালচোখ
বাঁচিয়ে চলবার অধিকার –
শালীনতা, সম্ভ্রম রক্ষা করে,
সমস্ত অন্যায়কে টুটি চেপে
মারবার অধিকার-
বিচার চেয়ে, ন্যায়বিচারের অধিকার;
অন্যায়ের প্রতিবাদে মুখর হওয়ার অধিকার।
বিনু জানেনা এসবের মানে-
৷ ২ ।
এতকিছুর অধিকার, কোথায় পাওয়া যায়!
কোথায় এসব কথা লেখা আছে-
সব অজানা!বিনুর কাছে, অজানা
তাদের পাড়ার সবার কাছে –
বিনুর, এসব কথা শুনলে –
কেমন নতুন নতুন লাগে।
অতকিছুর প্রয়োজন বিনুদের নেই,
একটু খাওয়া পেটভরে, মাথায় একটা,
ছোট টিনের ছাউনি দেওয়া ছাদ-
আর একটু ওষুধ, রোগ, বালাইয়ে।
এটুকুই বিনুদের চাওয়া-।
তাদের গ্রামের সবার,
এইটুকুই চাওয়া৷
বিনু জানেনা তার অসুস্থ মায়ের,
ওষুধ কাল কে দিয়ে যাবে!
এবেলা ভাত জুটলেও রাতের বেলায়,
শুধুই জল তার ক্ষুন্নিবৃত্তি, হয়তো করে দেবে!
বিনুরা দুবেলা ভাতের স্বপ্ন দেখেনা
দেখতে জানেনা৷
৷ ৷ ৩ ।।
বিনু জানেনা আষাঢ়ের প্রথম ধারা,
তাদের ঘর কে নতুন করে,
স্নান করাবে কিনা!
আজ সে কিছুই জানতে চায়না মায়ের কাছে-
কাগজের কয়েকটি তেরঙ্গা পতাকা নিয়ে,
তাদের বাড়ী থেকে,
নাম না জানা এক জনপদ থেকে
কত মানুষকে সেই কাগজের পতাকা,
বিলি করে যায় বিনু
কোথাও আজ বনভোজন হচ্ছে,কোথাও-
ফুটবল খেলা হবে, দিন – রাতের ;
বিনুদের পাশের পাড়ায়,আজ খেলা হছে
সকাল হতেই,
সবাই যাবে দেখতে,কেউ বা খেলতে,
কোথাও যাত্রাপালা,ম্যাজিকের আসর,
বিনু এসব কিছুই দেখবেনা,
সে আজ মনের খুশীতে,
নিজের আনন্দে,নিজের ছন্দে-
খাঁচা ভেঙে বেড়িয়ে পড়তে চায়,
সবার মাঝে-
বিনিপয়সায় দেশের কাজ করবার আনন্দে-
“সারে জাঁহাসে আচ্ছা, হিন্দোস্তা হামারা”,
মনের খুশীতে, নিজের ছন্দে,বিনিপয়সায়;
বন্দেমাতরম বলে-
দেশের কাজ করবার আনন্দে-
“সারে জাঁহাসে আচ্ছা”, প্রজাতন্ত্রের মন্ত্রে।।
সেই সময় থেকেই, “ভারতবর্ষ”, “দিশারী” সহ নানা পত্রিকায় কবির, কবিতা প্রকাশিত হতে থাকে।
কবি, বিজ্ঞান ও চিকিৎসাবিজ্ঞানে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে।
পেশার বাইরে সেবামুলক কাজের জন্য স্থাপন করেছিলেন একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা।
ডাঃ চট্টোপাধ্যায়ের চিকিৎসাবিজ্ঞান সংক্রান্ত লেখা, সংবাদপত্রে ও “প্রসাদ” পত্রিকায় ইতিপূর্বে অনেকবার প্রকাশিত হয়েছে।