মা | কুটনি বুড়ি -দুটি কবিতা

1
1028

মা

মা-গো তোমার গর্ভে যখন আমার
হলো বৃক্ষরোপণ,
তোমার অনেক স্বপ্ন, জানা হলো
যেটা ছিল গোপন।
যেথায় আমার শান্তি ছিল –
ছিল পূণ্য আলো,
বাহির আলোর লোভের মোহে হলেম আমি কালো।
মা-গো তোমার কোলে ভালো ছিলাম কেন দিলে ছুড়ে,
আমার সাধের স্বর্গ খানি কেন নিলে কেড়ে।
যেথায় ছিলাম স্বাধীন’ আমি,
 সেথায় রক্ষা মাতা ছিলে তুমি।
পেতাম যেথায় শুধু আদর,
যেন, শীতের ঢাকা রক্ষা চাদর,
বাহিরপানে কেবল শুধু কেড়ে নেওয়ার পালা,
আমি একা পঙ্গু হেথায়,
সইতে আমি পারি না আর এই পৃথিবীর জ্বালা।
এই পৃথিবীর কোন্ সে কোনায়,
 লুকিয়ে আছো তুমি সেথায়
তবু জানি নয়ন ভরে দেখছ আমায় তুমি।
আমার ছিল যত চাওয়া
তোমার ছিল ততই দেওয়া
তুমি ছিলে কেবল আমার স্বর্গময়ি ভুমি।
কি দিয়েছ কি পেয়েছ,
আমি কি পেয়েছি -কি দিয়েছি
তার হিসাব নিকাশ নাই বা করে নাও তুলে মা কোলে,
মায়ের ব‍্যাথা যে না বোঝে
সেই অভাগা দূঃক্ষ খোঁজে
সাত জন্মের পাপের বোঝা নিজের কাঁধে ঢালে।
তুমি আমায় জন্ম দিলে
পৃথ্বী আমায় অন্ন দিলে
ঋণ শোধাব কেমন করে  তাইতো  ভেবে সার,
আমার খেলা সাঙ্গ হলে
নেবে কি আমায় তুলে
নইলে আমি কেমন করে
সাগর হবো পার।
যে গাছ ছিল  ঊর্ধ্বমুখী,
আজ হয়েছে নিন্মমুখি,
মাগো তোমার গর্ভে আবার করো আমায় তুমি রোপণ,
সাত জনমেও ছেড়ো না মা, আমায় তুমি করো ক্ষমা,
কেবল  শুধু আমায় তুমি গর্ভে করো ধারণ।

কুটনি বুড়ি

নাতনি:
ও ঠাকুমা শুনবে তুমি মজার একটা কথা?
শোনার পরে মনে তোমার হয় না যেন ব‍্যাথা।
ঠাকুমা:
” বলি ও পোড়ামুখির জাত!
তোর মজার কথা বলতে যেয়ে শেষ হবে কি রাত?”
নাতনি:
শোন্ তবে –
মোদের পাড়ায় আছে যে এক বিশাল কুটনি বুড়ি,
সবার কানে লাগায় কেবল কুমন্ত্রণার সুরসুরি।
বাড়ি বাড়ি ঘুরে কেবল খবর জোগাড় করা,
সংসারেতে কাজ নাই তার এমন লক্ষীছাড়া।
ঘোষ বাড়ির খবর নিয়ে বোস বাড়িতে বলে,
তার মধ্যে যত পারে তিক্তমধু ঢালে।
উত্তর পাড়ার খবর নিয়ে দক্ষিণ পাড়ায় যায়,
কুমন্ত্র ঢেলে সেথায় পান সুপারি খায়।
ঘোরাঘুরি বন্ধ এখন “করোনার” এই জেরে!
কুটনামি তার চলছে এখন বদ্ধ হয়ে ঘরে।
ল‍্যান্ডফোনেতে ঘন্টা ভরে কিচিরমিচির চলে ;
হটস্আপ আর ম‍্যাসেঞ্জারেও যতই পারে ঢালে।
পরনিন্দা পরচর্চা এটাই যে তার কাজ,
সবার সাথে ঝগড়া বাধায় দেখাই সাধুর সাঁঝ।
মিষ্টি হেসে বন্ধু বলে তুই তোকারি করে,
অল্পখনেই সকল  লোকের মনটি কে জয় করে।
পেট ভর্তি হিংসা ভরা মুখে  নকল হাসি,
কুটনি বুড়ির গুনটা জানে সকল মাশি পিশি।
বুড়ি হয়ে কচি সাঁঝে লাগায় মুখে রং,
অশালীন সব পোশাক পড়ে দেখায় রূপের ঢং।
পাড়া পড়শি বন্ধুরা সব দেখে বুড়ির সাঁঝ,
কেবল করে কানাঘুষো কেউ খোলে না রাজ।
সম্পর্ক ভেঙ্গে যাবে এমন চিন্তা করে,
দিদি বলে সবাই ডাকে মিষ্টি মধুর স্বরে।
বলি-ও ঠাকুমা, বলো দেখি কে সেই কুটনি বুড়ি?
এই পাঁচালি শুনে কানে লেগেছে সুরসুরি!
ঠাকুমা:
বিশাল রেগে গজ্গজিয়ে ধরলো চুলের মুঠি,
পোড়ামুখি দেখবি এখন ভাঙ্গবো পিঠে লাঠি।
এতক্ষণে শুনেছি তোর কুপাঁচালির গলা,
সারা গাঁয়ে জ্বলছে আগুন কানটা করে জ্বালা।
নামটা খুলে বল্ তো দেখি, কে সেই কুটনি বুড়ি!
নইলে চুলের মুঠি ছাড়বো না তোর, কি বুঝলি নেড়ি?
নাতনি:
ও-ঠাকুমা শুনবে যদি ছাড়ো চুলের মুঠি,
একটু দূরে সরে দাঁড়াও দিয়ে হাতের লাঠি।
শোন্ তবে কানটি খুলে কুটনি বুড়ির নাম!
“কমলাদিদি” – বলে নেড়ি ছুটে পালায় ধাম।

কলমে প্রদীপ দে

1 COMMENT

  1. আসাধারন লেখনীতে আপনার মুগ্ধ আমার সাহিত্য পিপাসু মন। ❤✌❤

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here