গাঢ় midnight blue রঙের মলাট সারি সারি আয়না আর তাতে ফুটে ওঠা অদ্ভুত সব প্রতিবিম্ব!!উফফ! দিব্য যেন আর তর সইছে না।প্রতিটা কাজের অবসরে থেকে থেকে ওর মাথায় ভেসে উঠছে ছবিটা..Peter Haining এর ‘Hell of Mirror’ এর দ্বিতীয় সংস্করণ বা বলা যায় climax পার্ট ‘ The Mystique’ বইটি।অনলাইনে অর্ডার করার দিন থেকে হাতের মুঠোয় বইটা না পাওয়া অবধি দিব্য সারাক্ষণ অস্থিরভাবে tracking Id – অসদ্ব্যবহার করতে থাকে কি এমন লেখা আছে এই বইতে যা একজন সুস্থ স্বাভাবিক মানুষকে ….ভাবতেই কেমন যেন শিউরে ওঠে দিব্য।ফোনে এর নোটিফিকেশন tone চমক ভাঙে…screen ফুটে ওঠে -“Shipped: Your order with order ID OD115630230849280000 has been shipped and will be delivered  by Friday, Nov 07, 2020. 7 মানে কাল!অবশেষে অপেক্ষার অবসান!আগামী 24 ঘন্টার মধ্যে বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের কোন গূঢ় সত্যের মুখোমুখি হোতে চলেছে ভাবতে ভাবতে  যেন এক গহীন রহস্যের অতলে গা ভাষায় দিব্য।

KAMONE GAKUEN – সুদূর জাপানের একটি school ,বিভিন্ন Japanese গ্রন্থে যার উল্ল্যেখ পাওয়া যায় supernatural power অর্থাৎ অলৌকিক শক্তির আখড়া হিসেবে। সেখানে অতিপ্রাকৃত এর সাথে বাস্তবের যোগসূত্র কে ঘিরে রয়েছে The seven Mysteries বা সাতটি রহস্যের প্রচলন। এর মধ্যে তৃতীয় বা third mystery হলো ‘Hell of Mirror’- প্রতিবিম্বের নরক।Peter তার বইতে বলেছেন এই hell of mirror এমনই একটি গোপন স্থান যেখানে মানুষ উপস্থিত হলে তার সম্মুখে উন্মোচিত হয় সারি সারি আয়না।যদি সেই মানুষটি সুস্থ , সাহসী, সৎ এবং সহৃদয় হন, তবে তিনি সেই আয়না পেরিয়ে সহজেই প্রস্থান করতে পারেন,কিন্তু যদি মানুষটির মনে কোনো গোপন আশঙ্কা বা কোনো সুপ্ত পাপের লেশমাত্র থাকে , তবে সেই আয়নায় ফুটে উঠবে সেই আশঙ্কা , ভীতি বা পাপের ভয়াবহ বিকৃত প্রতিবিম্ব ,আর সেই প্রতিবিম্বের  অবগত হলেইফট করে দিব্য হাত থেকে খসে পড়লো চিরুনি টা।আয়নার দিকে তাকিয়ে নিজেই হেসে ফেললো দিব্য।

ঠিক Midnight blue না হলেও ঘন কৃষ্ণ নীল মলাটে সারি সারি আয়নার ছবি আর তাতে ফুটে ওঠা অদ্ভুত সব প্রতিবিম্ব, নীচে সোনালী অক্ষরে লেখা -‘The Mystique’ –তাতে একবার হাত বুলিয়ে খুব সন্তর্পণে বইটা খুললো দিব্য   typewriter এর font লেখা

– “THE MYSTERY WAS NOT IN NUMBER THREE , IT WAS OF NUMBER THREE.”..কিছুক্ষন কি যেন ভেবে আর অপেক্ষা না করে প্রথম পাতায় চোখ রাখলো দিব্য।একমনে পড়া শুরু করলো।একদমে প্রথম 4 পাতা পরে ফেললো দিব্য।প্রতিটা লাইনে যেন কি অবিস্বরণীয় সব যুক্তি সাজানো রয়েছে, সবটুকু সম্পর্কে অবগত থাকলেও এভাবে কোনোদিন যে ভাবা হয়ে ওঠেনি..শুধু দিব্য কেন আর পাঁচটা সাধারণ মানুষ যে এভাবে কোনোদিন ভাবেনি তা নিয়ে দিব্য বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই। লেখক বলছেন এই গোটা পৃথিবীতে যা কিছু  আমাদের চিরাচরিত মেনে নেওয়ার বাইরে তাইই  অতিপ্রাকৃত বা Supernatural paralal universe নিয়ে আজকাল মাতামাতির শেষ নেই, সেই সংক্রান্ত এমন এক তথ্য এখানে রয়েছে যা শোনামাত্রই যে কেউ অবাস্তব বলে মুখ ভেটকাবে।দিব্য তার ব্যতিক্রম নয়।লেখক শুধু বলছেন না রীতিমতো সত্য বলে দাবি করছেন এবং সকলকে যাচাই করে দেখে তবেই বিশ্বাস করার কথা বলে লিখেছেন – “paralal universe is not paralal at all, time dictates them where to merge”. তার মতে ঘড়িতে সময় যখন ঠিক 3:00 হয় , তখন paralal universe এর দুজন অবিকল ব্যক্তিত্বের মধ্যে একইরকম  পরিবর্তন ঘটে।অর্থাৎ, মানুষ যখন যেই কার্য তেই নিমগ্ন থাকুক না কেন , দুপুর বা রাত 3 টের সময় সেই কার্যে ছেদ পড়বেই এবং এটি দুই paralal universe এর জন্যই একইভাবে প্রযোজ্য।এরপরেই লেখক নিজের জীবনে দেখা কিছু ঘটনার উল্লেখ করেছেন যা এই বিষয়টির  অনুকূলে।যদিও সেগুলো খুব সাধারণ কিছু ব্যাপার। এই ঘটনার কারণস্বরূপ লেখক বলছেন সৌরজগতে সূর্য থেকে দূরত্ব অনুযায়ী পৃথিবীর অবস্থান তৃতীয়  এবং এই একই কারণে জীবনের যেকোনো ক্ষেত্রে  থাকে তিনটি বিভাগ -Begining , intermediate এবং ending বা আমাদের উপাস্য ব্রহ্মা তিনটি মস্তিষ্কের অধিকারী যাতে অতীত, বর্তমান ভবিষ্যৎ এই তিনকালেই তার অবাধ যাতায়াত সম্ভবপর হয়। এই লাইনটি পড়া মাত্রই দিব্য মাথায় খেলে যায় মা দুর্গার ত্রিনয়ন আর স্বর্গ , মর্ত্য, পাতালের সাথে তিন এর যোগসূত্র।কিন্তু ঠিক তিনটে বাজলেই মানুষের একটানা কর্মের মাঝে ছেদ পড়ে এই কথাটা দিব্য কিছুতেই মেনে নিতে পারেনা।

সকাল থেকে দুপুর , দুপুর থেকে বিকেল, বিকেল থেকে সন্ধে গড়িয়ে যায়।সামনেই দিব্য ফাইনাল ইয়ার এর পরীক্ষা। দিব্য সকাল থেকে পড়াশোনা নিয়ে ব্যস্ত থাকে বা বলা ভালো নিজেকে ব্যস্ত রাখে, যাতে সব পড়া সেরে রাত্রে ‘The Mystique’ মনোনিবেশ করতে পারে। আজ 5 no. পাতায় চোখ রাখতেই দিব্য মনে পড়ে গেল সেই মাঝবয়সী ছেলেটার কথা -Tarnes Luther,BSP Business School , Berlin.।সুস্থ , স্বাভাবিক , একজন কৃতী ছাত্র। ২০১৭ সাল..তখন ছেলেটির ফাইনাল ইয়ার। হটাৎ হাতে এলো Ronald Starling এর ‘The Mystique’ ..ব্যসকয়েক মাসের মধ্যে বদলে গেল জীবনটা। এমন সুস্থ, স্বাভাবিক একজন মানুষের এমন পরিণতি কেন হলো!..এই বইটি কেই বা কেন কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হলো!নিজের অজান্তেই দিব্য কপালে চিন্তার ভাঁজ পরে। নিজেকে সামলে নিয়ে আবার চোখ রাখে বই এর পাতায়।লেখক এবার  এই প্রসঙ্গে তুলে ধরেছেন  জীনের তপস্যায় প্রাপ্ত তিন বর সংক্রান্ত আজব কিছু  তথ্য।তার মতে জীন প্রসন্ন হলে সবসময় তিনটি বরদান দিয়ে থাকেন কারণ  bibel অনুসারে প্রভাব প্রতিপত্তির চরম সীমায় থাকা ব্যক্তিদের নামে ‘3’ এর স্ট্যাম্প দেওয়া হতো আর মানুষ  নিজের প্রভাবপ্রতিপত্তি বিস্তারের জন্যই জীনের তপস্যায় নিয়োজিত হয়।দিব্য চোখ চকচক করে ওঠেমনে পড়ে যায়ভূতের রাজা দিলো বর.. জবর জবর তিন বর!

আজ সকালে থেকে দিব্য তক্কে তক্কে আছে , আজ বাড়ির সবাইকে আলগোছে নজর রেখে চলেছে..ঠিক 3 টের সময় কারোর মধ্যে কিছু পরিবর্তন আসছে কিনা, দিব্য কে জানতেই হবে যে করে হোক।খাওয়া স্নান সেরে মায়ের একটু টিভি দেখা অভ্যাস।দিব্য আজ মায়ের পাশে এসে বসেছে..তিনটে বাজতে এখনো এক ঘন্টা।দিব্য একবার ঘড়ি দেখে আর একবার মা কে।বেশ খানিকক্ষণ ধরে দিব্য লক্ষ্য করে যে মা মোহিত হয়ে টিভি এর দিকে তাকিয়ে রয়েছে.চোখ সড়ছেনা যেন।..হঠাৎ মা দিব্য দিকে তাকিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করে বলে..তখন থেকে কি দেখছিস বলতো মুখের দিকে তাকিয়ে?দিব্য চমকে তাকায় ঘড়ির দিকে..ঢং ঢং ঢং ঘন্টা বেজে উঠল..দিব্য ঘাবড়ানো আর চমকানোর মাঝে যেন থমকে রইলো।নাঃ!এটা বোধ হয় নেহাত কাকতালীয় , সিরিয়ালে উত্তেজনাপূর্ণ কিছু হচ্ছিলনা বলেই বোধহয় মা টিভির দিক থেকে চোখ ফিরিয়েছিল আমার দিকে।কিন্তু তখন তো 3 টে 01 বা 2 টো 59 বাজতে পারতো, একদম তিনটে বাজতেই কিকরে ঘটলো এটা..তবে কি বইটা তে ঠিকই লেখা আছে!সবটা কেমন যেন জট পাকিয়ে গেল দিব্য মাথায়..এসব নিয়ে ভাবতে ভাবতে চলে গেল  নিজের ঘরে।সব পড়া সেরে বইটা নিয়ে হেলান দিলো দিব্য আজকে 10 no. পাতা।12 পাতার শেষে পৌঁছতেই ঘুম এলো দিব্য র।বইটা রেখে চোখ বুজলো।হটাৎ যেন খুব গরম লাগছে, অস্বস্তি হচ্ছে..চোখ খুলে ফোন তা নিল দিব্য।হাত কাঁপছে ওরওর দীর্ঘ ঘুমের ছেদ ঘটেছে ঠিক রাত 3:00 এ।বিছানায় কিছুক্ষণ বসে কি যেন ভাবে দিব্য..তারপর জল খেয়ে আবার ঘুমোনোর চেষ্টা করে।অনেক্ষন জেগে ছিল সেটা মনে আছে দিব্য কিন্তু যখন ঘুমিয়েছে খেয়াল করেনি ও।

পরদিন সকাল থেকে কাজের ফাঁকে ফাঁকে ,খেতে বসে ,আবার নিয়মমতো সব কাজ সেরে রাতে বইটা নিয়ে বসতেই কালকের ঘটনা গুলো মাথায় পাক খেতে থাকে দিব্যর।নাঃ।আবার নজর রাখতে হবে..কাকতলীয় ঘটনা একদিন হতে পারে রোজ না।পরদিন  দুপুরে আবার দিব্য বাড়ির সবার উপর নজর রাখতে থাকে।দিদা আজকে উল বুনছে.. দিদার পাশে গিয়ে বসে।দিদা ওকে দেখে মুচকি হেসে আবার কাজে মন দেয়। দিব্য অধীর আগ্রহে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে অপেক্ষা করতে থাকে..দিদা একমনে উল বুনছে।হঠাৎ মা ডাক কানে আসতেই দিব্য পিছনে ফিরে দেখে ওর মা দাঁড়িয়ে আছে দিদার চোখ উলের বুনন ছেড়ে মায়ের দিকে ফিরেছে,এক মুবার্টও দেরি না করে ঘড়ি দেখে দিব্য।কেল্লাফতে!!আর কোনো সন্দেহ নেই।এত কাকতলীয় কোনো ঘটনা হতেই পারেনা..বইতে যা লেখা সব হুবহু মিলে যাচ্ছে।দিব্য মনে হলো যেন দীর্ঘ গবেষণার পর কিছু আবিষ্কার করে ফেলেছে ।আহ্লাদে আটখানা হয়ে দিব্য আবার বইটা নিয়ে বসে গেল.. আর কি কি গুপ্ত রহস্য এই বইতে রয়েছে সেগুলো ওকে জানতেই হবে।বাকি পাতা টা শেষ করে নতুন পাতায় পৌঁছলো দিব্য।এখানে লেখক বলছেন  100 শতকের আগে বিশ্বব্রহ্মাণ্ড ছিল  Abnegazar , Rath এবং Ghast নামক তিন দানবের দখলে যারা Three Demons নামে পরিচিত ছিল। লেখক এও বলেছেন যে  কিছু মানুষের  অভিব্যক্তি তে এমন কিছু বৈশিষ্ট্য প্রকাশ পায় যাদের মধ্যে এই three  Demons এর গুণাবলী বর্তমান থাকে।আর সেই অভিব্যক্তির প্রকাশে প্রকট  থাকে তিন এর আধিক্য।এর The hell অফ mirror সেই সব মানুষদের ভিতরের সুপ্ত  পৈশাচিক সত্ত্বা কে প্রতিফলিত করে তোলে। দিব্য মনে পুরো ব্যাপারটার প্রতিকৃতি ফুটে উঠতে থাকে খানিকক্ষণ কি যেন ভেবে দিব্য  আবার পড়ায় মন দেয়।

বইয়ের পাতা আর দিন একসাথে এগিয়ে চলতে থাকে।দিব্য এখন আগের থেকে আরো অনেক বেশি নিমগ্ন হয়ে পড়েছে বইটার প্রতি।সবসময় দিবয়র চোখ , মন যেন অস্বাভাবিকতা খুঁজে চলেছে চিরাচরিতের আড়ালে।যেন কত অজানা রহস্য বয়ে চলেছে প্রতি টা মুহূর্ত,অথচ আমরা সবটা দেখেও দেখছিনা , শুনেও শুনছি না , বুঝেও বুঝছিনা। দিন দিন দিব্য যেন খুব আত্মকেন্দ্রিক হয়ে পড়ছে,কারোর সাথে কথা বলেনা, যেটুকু বাড়ি ঘর ছাদ চেয়ার টেবিল মানুষজন দিবয়র আওতায় পরে, সবটুকু কে যেন সারাফিন নজরবন্দি করে রাখতে চায় , পাছে কোনো এক মুহূর্তের অন্যমনষ্কতায় এই ত্রিভুবনের কোনো অন্তর্নিহিত সত্য অধরাই রয়ে যায়।আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে দিব্য নিজের অতিপ্রাকৃতিক ক্ষমতার তদন্ত করতে থাকে।লেখক বলেছেন যে সব মানুষ সুপ্ত পৈশাচিক শক্তির অধিকারী তারা প্রতি তৃতীয় পূর্ণিমায় সেই সত্ত্বার উন্মোচন করে।দিব্য এক মুহূর্ত দেরি না করে ক্যালেন্ডার চোখ রাখেপরশু..উত্তেজনায় , কৌতূহলে শিউরে ওঠে দিব্য।

পরদিন সকাল থেকে দিব্য সবাইকে নজরে রাখছে,সবার সমস্ত কাজকর্মের ভাবভঙ্গি খতিয়ে দেখছে।এখনো অবধি তেমন কিছু চোখে পড়েনি দিব্য র।বেলা 12 টার দিকে কলিং বেল টা বেজে উঠল..ঠিক 3 বার, মা গিয়ে দরজা খুলে দিব্য দেখলো বাবা দাঁড়িয়ে রয়েছে।কাজকর্মে তিন এর প্রকাশ!তিনবার বেল!হটাৎ দিব্য মাথায় খেলে যায় বাবা বাড়ি ফিরলে রোজ তিনবার বেল বাজে।অথচ বইটা না পড়লে দিব্য কোনোদিন মাথাই ঘামাতো না এই ব্যাপার টা নিয়ে। দিব্য বাবার পিছন পিছন ঘরে পৌঁছালো..ওর বাবা দিব্য কে দেখে হাসিমুখে বললো..কিরে পড়াশোনা চলছে তো?ঠিকঠাক? আর তো তিন সপ্তাহ রয়েছে হাতে!দিব্য সেসব তোয়াক্কা করে না, তিন সপ্তাহ কথা টা যেন ওর কানে বাজতে থাকে।দিব্য মনে মনে ভাবে জেকরেই হোক বাবা কে চোখে চোখে রাখতে হবে,প্রতিটা কাজ লক্ষ রাখতে হবে।বিকেলের দিকে চা পর্ব চলছে..মা পিয়াজি ভেজেছে গরম গরম।দিব্য এবং বাকি সবাই বেশ খোশমেজাজে।হঠাৎ মা ঝাঁঝিয়ে উঠলো..বাবা বললো কি গো!কোনো কান্ডজ্ঞান নেই।তোমার না কোলেস্টেরলদিব্যি 3 টে পিয়াজি খেয়ে ফেললে.. বলা মাত্রই যেন মুখের হাসি মিকিয়ে গিয়ে দিবয়র কপালে ভাঁজ পরে ,আবার মাথায় ভীর করে আসে ‘the Mystique’ আর সেই 3 এর রহস্য।তারপরের মা বাবার কথাবার্তা আর কানে পৌঁছায়না দিব্য র।রাতে খেতে বসে বাবার ফোন আসে..কাকে যেন  বলছে কালকে 3 টের সময় মিটিং ফিক্স করার কথা।দিব্য ভেবে অবাক হয় যে তবে কি সত্যি তার বাবার মধ্যেই সেই কুখ্যাত 3 demons এর বসবাস!নাকি সে একটু বেশি ভাবছে।রাতে শুয়ে দিব্য ঘুম আসেনা..রীতিমতো ঘামছে ..কিছুই বুঝে উঠতে পারেনা কি হচ্ছে..কি হবে..ওর কি করণীয়।অনেক ভেবে দিব্য ঠিক করে রাত তিন টের সময় একবার বাবার ঘরে ঢুকবে ,সবকিছু পরখ করবে,যদি আত্মপ্রকাশ ঘটে।কথামতো, দিব্য পা টিপে টিপে বাবার ঘরের দিকে এগোয়পর্দার ফাঁক দিয়ে চোখ রাখতেই ভয়ে শরীর হিম হয়ে যায় ওর।মা খাটে সুঁই রয়েছে..বাবা পাশে দাঁড়ানো মা এর দিকে মুখ করে , হাতে তাক করা পিস্তল।বিপদ আসন্ন জেনে দিব্য কোনদিকে না তাকিয়ে রান্নাঘর থেকে উঠিয়ে আনে বড় চাকুটা,বাবা তখন একইভাবে দাঁড়িয়ে..দিব্য কোনদিক না ভেবে ঝাঁপিয়ে পড়ে বাবার উপরচকচকে ছুরির ফলাটা গেঁথে যায় বাবার কাঁধে,সুঠাম দেহ টা একবার চিৎকারের চেষ্টা করে লুটিয়ে পরে মেঝেতে।

সকাল থেকে গোটা বাড়িটা থমথমে।বাবা প্রাথমিক চিকিৎসার পর শুয়ে আছে।মা দিদা ভাই সবাই পাশে বসে।দিব্য এর যে বাড়িতে কোনো অস্তিত্ব আছে সেটাই যেন সবাই ভুলে গেছে।কেউ ওর দিকে তাকাচ্ছে না পর্যন্ত,কথা বলা তো দূর।দিব্য কিছুতেই বাড়ির লোককে বোঝাতে পারছেনা যে ওর বাবা কাল রাতে ওর মা কেফোন বাজছে ঘন ঘন, আর কখনো মা কখনো দিদা একরাশ বিস্ময় নিয়ে জবাবদিহি করছে। কান্না জড়ানো গলায় মা কাকে যেন বলছে,অফিস থেকে ফেরার পর থেকেই নতুন খুনের case টা নিয়ে ওর বাবা খুব চিন্তায় ছিল।সারাদিন ভাবছিল কি করে এভাবে খুন হতে পারে,রাতে নিজের পিস্তল নিয়ে বিভিন্ন angel থেকে তাকে করে দেখছিল কোন দিকে পিস্তল চালালে এভাবে খাদ্যনালী ছিড়ে. .বলতে বলতে অঝোরে কেঁদে ফেলে মা। রাগে ভয়ে দিব্য কাঁপতে থাকেশেষমেষ নিজের দোষ ঢাকতে বাবা এভাবে মা কে নিজের তদন্তের দোহাই দিলো..তাহলে কি এরপর আরো বড় কোনো বিপদ আসতে চলেছে!বাবা নিশ্চয়ই আবারো কোনো ক্ষতি করার চেষ্টা করবে..আজ  পূর্ণিমা..ওই পৈশাচিক সত্ত্বার বহিঃপ্রকাশ আজ ঘটবেই।এইসব ভাবতে ভাবতে দিব্য দমবন্ধ লাগে।হঠাৎ কানে আসে ভাই জোরে জোরে পড়ছে..তিনটি শালিখ ঝগড়া করে রান্নাঘরের চালেদিব্য অস্বস্তি লাগে ,অস্থির ভাবে ফোন টা হাতে নিতেই চমকে ওঠে দিব্য 3 টে whatsapp নোটিফিকেশন।ভয়ে ভয়ে দিব্য chat টা খুলতেই দেখে 3 টে দানবিক ইমোজি..দিব্য ছুঁড়ে ফেলে ফোন টা , পরক্ষনেই ওর দিদা ভাই কে বলছে দাদুভাই এবার ঘুমিয়ে পড়ো.. আমি কিন্তু ঠিক তিন গুনবএকদুই..দিব্য চারপাশের সবকিছু কেমন যেন গুলিয়ে যাচ্ছে,ঘোলাটে হয়ে আসছে চারিদিক ,টিভি থেকে জোড়ে আওয়াজ আসছে দেখতে হলে চোখ রাখুন শুধুমাত্র স্টার জলসায় সোম থেকে শনি ঠিক দুপুর 3 টেহঠাৎ ওর মনে হয় যেন পৃথিবীর সমস্ত ঘড়িতে একসাথে 3 টে বাজছে, তারস্বরে তিনবার ঢং ঢং শব্দ করে ঘন্টা বেজে চলেছে..দিব্য কানে হাত চাপা দিয়ে চোখ বুজে ফেলে।চোখ যখন খুললো তখন রাত্রি প্রায় 8 টা , দিব্য মা দিদা ভাই সবাই একদৃষ্টে তাকিয়ে রয়েছে ওর দিকে।কিন্তু সব ছাড়িয়ে দিব্য নজর যাচ্ছে সোজা সামনের দেয়ালে..সারি সারি তিন লেখা গোটা দেয়াল টায়।দিব্য এবার চারিদিকে এক ঝলক তাকায়.. নাহ!আর কোথাও কোনো অসঙ্গতি নেই।কিছুক্ষণ পর ওর মা দিদা ভাই সবাই একে একে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল,বাইরে থেকে তালা দেয়ার শব্দ হলো।সবটা বুঝে ওঠার আগেই দিব্য মাথায় এলো ওরা তিনজন ওর দিকে একভাবে তাকিয়ে কি যেন দেখছিলো..তিনজন দেখছিলোতিন..ভাবতে ভাবতে দিব্য উঠে দাঁড়ায়..এগিয়ে যায় আয়নার সামনে..চমকে ওঠে দিব্য!ওর সারা মুখে  গায় ফুটে উঠেছে কিছু অস্পষ্ট তিন।কিছুটা পিছিয়ে আসে দমবন্ধ হয়ে আসে..নিজের সবটুকু জোর একত্রিত করে দরজায় ধাক্কা দিতে থাকে..তিনবার জোরে ধাক্কার পর খুলে যায় দরজাদিব্য তখন ভেবে যায়, তিনবার ধাক্কার পর দরজা খুললোএটা কি কোনো আসন্ন বিপদের সংকেত?আজকে পূর্ণিমা, 3 demons এর জেগে ওঠার দিন..না না আজ কোনো ঝুঁকি নেয়া ঠিক হবেনা..দিব্য পিছিয়ে যায়খাটে এসে জড়োসড়ো হয়ে বসে থাকে।পাগলের মতো ছটফট করতে থাকে ও। হঠাৎ মনে পড়ে যায় ওর জন্য ওর বাবা আজ শয্যাশায়ী , ওর বাড়ির লোকজন  এর কাছে অপরাধী..আর নিজের কাছে?!ভাবতে ভাবতে একছুটে ঘর থেকে বেরিয়ে যায়,রান্নাঘরে গিয়ে উদ্ধত ভাবে ছুড়ির ফলাটা ঢুকিয়ে দেয় নিজের হাতের কব্জিতে..একবার, দুবার , তিনবার।রক্তে ভেসে যাচ্ছে দিব্য শরীর।কিছুক্ষণ চেঁচামেচি , ধর ধর..আর্তনাদতারপর সবকিছু স্তব্ধ।দিব্য অসার দেহটা শোয়ানো খাটে। দরজা বন্ধ,সব টা শান্ত।

আজ কে সকাল থেকে বাড়িতে খুব হইচই , সবাই খুব উত্তেজিত, পাড়ার লোকজন সব জড়ো হয়েছে, ক্ষণে ক্ষণে ফোন আসছে..সেদিনের মতোই মা আর দিদা জবাবদিহি করছেকিন্তু  আজ কান্না বা ভয় নেইখুশিউচ্ছাস ছলকে পড়ছে ওদের কথায়।দিব্য ভাই 3rd হয়েছে মাধ্যমিক পরীক্ষায়! কি ভাবছেন? এই বুঝি দিব্য আবার ওর ভাইকে নিয়ে সন্দেহগ্রস্থ হয়ে পড়ে…!নাঃ!সে উপায় আর নেই!আজ প্রায় দুবছর হতে চলল..নতুন রং এর প্রলেপের আড়ালে ওদের বাড়ির সারা দেওয়ালে দিব্য আঁকা তিন দিয়ে কাটা চিহ্নগুলো যেমন ঢাকা পরেগেছে..তেমনই ওদের মন থেকে দিব্য সাথে সাথে সেই ভয়াবহ ঘটনার স্মৃতি মুছে গেছে ।দিব্য নামের মানুষটা যে একসময় এই বাড়িয়ে নয়নমণি ছিল সেসব যেন এখন এক দুর্বিসহ গল্প হয়ে গেছে।কিন্তু সবার চোখের আড়ালে দিব্য কিন্তু ঠিক দিব্যমান।শুধু দিব্যজিৎ মুখার্জী নাম টা আর ‘The Mystique’ এর নেশাটা হারিয়ে এখন সে শুধুই  Patient no. 3 – Dinlipi Mental Asylum.

গোটা ঘটনায় এমন কিছুই ছিলনা যা আমার আপনার চিরাচরিত জীবনের থেকে ব্যতিক্রমী,কিন্তু তবুও দিব্য চোখে  তাকেই অস্বাভাবিক করে তুলেছিল ‘The Mystique’।তারই ফলস্বরূপ দিব্য এই পরিণাম! সবটাই কি কাকতালীয় , নাকি সত্যিই রহস্যময়,সেসব বিচারের দায়িত্ব রইলো পাঠকদের হাতেই।তবে এটুকু বলবো..আমরা আমাদের চারপাশে এমন অনেককিছু দেখি যা আমাদের কাছে খুবই স্বাভাবিক..কিন্তু কখনো খতিয়ে দেখলে তার অস্বাভাবিকত্ব  নজরে  পড়তে পারে বইকি।যাই হোক!অনেকক্ষণ একটানা আপনাদের গল্প শোনালাম,..আপাতত বিদায়!…ওওওওওও বাবাহ!!…3 তে বাজতে যায় দেখছি…!!

 

 

কলমে-  ঋষা ভট্টাচার্য্য, হালিশহর, পশ্চিমবঙ্গ


Jooble Presents Quarterly Creative Writing Competition

SOURCE  ঋষা ভট্টাচার্য্য
Previous articleইন্নোস
Next articleভাগের মা
Avatar
Disclaimer: Monomousumi is not responsible for any wrong facts presented in the articles by the authors. The opinion, facts, grammatical issues or issues related sentence framing etc. are personal to the respective authors. We have not edited the article. All attempts were taken to prohibit copyright infringement, plagiarism and wrong information. We are strongly against copyright violation. In case of any copyright infringement issues, please write to us. লেখার মন্তব্য এবং ভাবনা, লেখকের নিজস্ব - কপিরাইট লেখক কর্তৃক সংরক্ষিত..................

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here