আমি চাই আজ তোমার মৃত্যু হোক।
কি ভীষণ অসহায়তার স্বীকার হয়েছ তুমি ।
মনে পড়ে সেই দিন ,
যখন সন্তান হীনতার কষ্টে আঁকড়ে ধরেছিলে আমায়।
বলেছিলে তুই আমার সব দুঃখ লাঘব করেছিস,
না পারিনি আমি তোমার কোনো কষ্ট দূর করতে পারিনি।
আজ যখন দেখলাম স্ট্রেচার এ শুয়ে
স্থির নেত্রে তুমি তাকিয়ে আছো।
মনে হলো অনেক না বলা কথা তোমার হারিয়ে যাচ্ছে ।
ভীষণ জানতে চাইছে এ মন।
কি বলতে চাও তুমি?
কিভাবে নির্যাতিত হয়েছিলে তুমি শ্বশুরবাড়িতে?
কিভাবে আভিজাত্যের আড়ালে মৃত্যু ঘটিয়েছিলে সব ইচ্ছের?
না পারনি তুমি লক্ষ্মণরেখা উলঙঘন করতে পারোনি ।
সবাই পারে না চিৎকার করে কঁকিয়ে কেঁদে উঠতে।
বাড়ির গুরুজনদের সমাজের ভয়ে নেওয়া
কিছু ভুল সিদ্ধান্তের বলি হয় তোমার মতো শয়ে শয়ে নারী ।
সে তোমাকে ডিভোর্স দিয়ে মুক্ত হয়ে আবার নতুন সূর্য দেখল,
আর তুমি থেকে গেলে প্রগাঢ় অন্ধকারে ।
সেই অন্ধকার থেকে নিজেকে মুক্ত করার জন্য হাতে তুলে নিলে লাল পতাকা।
দাপিয়ে বেড়ালে সারা এলাকা, এক ডাকে মানুষ চিনলো তোমায় ।
তাও পারলেনা তুমি অন্ধকার থেকে বেরোতে ।
আজ যখন স্ট্রেচারে অপলকে চেয়েছিলে তুমি ,
তখন আমরা তিন চারজন ছাড়া আর কেউ ছিলামনা।
কোথায় গেল সেই মানুষগুলো যারা তোমার জন্য বেঁচে আছে।
এটাই কি কপাল না ভুল সিদ্ধান্তের ফল?
বাঁচার মতো বাঁচতে হলে নিজের একটা মানুষ খুব দরকার ।
আমি চাই আজ তোমার মুক্তি হোক।
শোকে মুহ্যমান হয়ে পড়ি আমি,
তোমার জীবন থেকে শিক্ষা নিই আমি।
আসলে প্রত্যেক জীবনই এক একটা উপন্যাস ।
যা শুধু শিক্ষিত করে আমাকে।
প্রতিবাদ নয় শুধু ,প্রতিবাদীর প্রয়োজন,
‘ না’ বলার প্রয়োজন আমাদের।
অনেক সময় একটা ‘ না’ হাজারটা ‘হ্যাঁ ‘ এর সমান হয়ে ওঠে।
আমি চাই আজ তুমি স্বর্গীয় সুখ পাও।
গাঙচিলের মতো নরম ভোর দেখ, যুবতী গোধূলি দেখ, স্বর্ণালি সন্ধ্যা দেখ,
দেখ আকাশ কীরকম বিভিন্ন রঙে রাঙিয়ে তোলে নিজেকে ।
দেখ সব দেখ তুমি । সম্পূর্ণ হয়ে ওঠো প্রকৃতির সাথে ।
আমি চাই আজ তোমার মৃত্যু হোক।
যারা প্রতিবাদ করতে পারেনা তাদের মৃত্যুই ঘটে।
কবি পরিচিতি : সুজাতা ঘটক, খড়দহ, পশ্চিমবঙ্গ , কলিকাতা বিশ্বাবিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞান বিভাগে স্নাতকোত্তর , ইন্দিরা গান্ধী মুক্ত বিদ্যালয় থেকে মাস্টারস অফ বিসনেস এডমিস্ট্রেশন বিভাগে পড়াশোনা। পারিবারিক সূত্রে ছোটবেলা থেকে গান ও আবৃতির সাথে যুক্ত। সখ : ফুলের বাগান।