(১)

গাড়ির ঝাঁকুনিতে চোখটা খুলে গেল তিতিরের। কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছিল ও বুঝতেও পারেনি। ঘুম ভাঙতেই শুনল গাড়িটা খারাপ হয়ে গেছে, সাইড সিন দেখতে বেরিয়েছিল পাঁচজনে; শৈল শহরে পা রেখেছে মাত্র দু’দিন, এর মধ্যেই এমন কান্ড।’একেই বলে যেখানে বাঘের ভয় সেখানেই সন্ধ্যে হয়’ – একেই জায়গাটা খুব গা ছমছমে, তার উপর অন্ধকার । এবার উপায় বলতে একটাই এখানেই কোনো একটা গেস্ট হাউসে থেকে যেতে হবে আজ , আর একটুও সময় নষ্ট করা ঠিক হবে না।তিতির,অর্ক,বর্ষা,অর্ণা এবং অনি সকলে মিলে এসেছে দার্জিলিং ট্যুর -এ, সবে মাত্র কলেজের দ্বিতীয় বর্ষ ,বর্ষাই শুধু ব্যতিক্রম সকলের থেকে বছর একের ছোট। এদের মধ্যে সবচেয়ে সাহসী তিতির এবং অর্ক ; বর্ষা বড্ডই ছেলেমানুষ, আর বাকিদের ভীতু বললে ও খুব ভুল বলা হয় না।নিস্তব্ধতার মধ্যে হঠ্যাৎই অর্ক বলে উঠল ‘সামনে একটা গেস্ট হাউস আছে আমি কিছুক্ষণ আগেই গুগলে দেখেছি.. চল আর দেরি করা ঠিক হবে না। ‘অনি: ‘হ্যাঁ, এখনই প্রায় ন’টা বাজতে যায়, জায়গাটা বড়োই নির্জন, তাড়াতাড়ি চল। ‘তিতির : ‘আর শোন আমাদের লজটায়  একটা খবর দিয়ে দে, যে আমরা আজ ফিরতে পারব না। ‘সকলে হাঁটতে হাঁটতে এগিয়ে চলল প্রায় দশ মিনিটের হাঁটা পথ .. . তারপর গেস্ট হাউস। সকলে গেস্ট হাউসে পৌঁছে প্রথমে রিসেপশনে গিয়ে দাঁড়ায় আর তিতির সাথে সাথে বলে ওঠে ‘আমাদের একটা রুম লাগবে শুধুমাত্র আজ রাতের জন্য। ‘বর্ষা বলে উঠল ‘প্লিজ, তিনতলার একটা রুম দেবেন, তিনতলার ব্যালকনি থেকে ভিউটা খুব ভালো… .’আহ! বর্ষা এখন এসব থাক না, আমাদের শুধু এক রাতের জন্য মাথা গোজার ঠাঁই দরকার, পরিস্থিতিটা বোঝার চেষ্টা কর । ‘  অনি ধমকে উঠল বর্ষাকে।রিসেপশনিস্ট ওদের কথার মাঝেই বলে উঠলেন ‘ক্ষমা করবেন,  এখন কোন রুম খালি নেই, আপনাদের কাল সকাল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। ‘হঠ্যাৎই আরেকজনের আগমন ঘটল, তিনিই যে ম্যানেজার তা রিসেপশনিস্টের কথায় স্পষ্ট হল।ম্যানেজার : ‘ওনাদের ৪০৩ নং রুমটা দিয়ে দাও। ‘রিসেপশনিস্ট : ‘কিন্তু স্যার, ওই রুমটা তো .. . ‘এ যেন কোন এক রহস্যের সূচনা হল।ম্যানেজার চেঁচিয়ে উঠলেন ‘আহ! , এত কথা বাড়াচ্ছ  কেন ? ওনাদের যে  একটা রুম প্রয়োজন, ওনাদের প্রয়োজনটা বুঝতে পারছ  না?  তাড়াতাড়ি কাজটা করো। ”রামলাল…  …ও রামলাল… কাজের সময় এদের কখনো পাওয়া যায় না। ”আজ্ঞে স্যার, ডাকছিলেন? ‘  রামলাল ছুটে আসে।’যাও ওনাদের পৌঁছে দাও ৪০৩ নং রুমে। ”কিন্তু স্যার, .. ‘ রামলাল ভয়ে চুপ করে যায়।’আর কোন কথা নয়, যাও বলছি .. . যাও। ‘ ম্যানেজার বেরিয়ে যান।’হ্যাঁ, স্যার যাচ্ছি ‘ বলে রামলাল সিঁড়ির কাছে এসে দাঁড়ায়।এই কথোপকথন এতক্ষণ ধরে এই পাঁচজনের চোখের সামনেই চলছে। ৪০৩নং রুমের কথা উঠতেই যে রামলাল ও রিসেপশনিস্ট উভয়ের কপালেই একটি চিন্তার ভাঁজ এসেছে  তা বাকিদের চোখ এড়ালেও তিতিরের চোখ এড়ায়নি।’আসুন আপনাদের ঘরে নিয়ে যাই ‘ কাঁপা গলায় বলে উঠল রামলাল।চারিদিক ঘুঁটঘুঁটে অন্ধকার, রামলালের পা যেন আর এগাতেই চাইছে না, এক নিমেষে হোটেলের ঝা চকচকে রূপটা বদলে গেল – এ যেন এক কথায় এক মৃত্যুপুরী।রামলাল :’চলে এসেছি চার তলায় ,আর এই সামনের রুমটাই আপনাদের।’বর্ষা ভয়ে ভয়ে বলে ওঠে ‘এ কি !এখানে এত অন্ধকার কেন?  এখানে আবার ভূত-টূত .. .  । ‘তিতির বর্ষাকে থামিয়ে দেয়।রামলাল একটি মোমবাতি জ্বালিয়ে রুমটার দরজা খুলে মোমবাতিটা একটি ধুলোয় ভরা টেবিলের উপর রাখে, আর কাউকে কিছু না বলে ঘর থেকে বেরিয়ে যায়। রামলালের ব্যবহার, হাঁটা-চলা, বাচনভঙ্গি সবকিছুতেই একটা অদ্ভুত রহস্যের গন্ধ;ঘরে ঢুকে  একটা সোফায় বসেই  অর্ক বলে ওঠে ‘আজ কি আমরা মুখে দেওয়ার কিছু পাব? না কি  আজ খালি পেটেই রাত কাটাতে হবে কে জানে.. । ‘অনি : ‘আমি আগেই বলেছিলাম গাড়িতে সব বিস্কুটগুলো  খাস না, এবার দেখ কি হতে চলেছে.. ‘বর্ষা তখনই চেঁচিয়ে ওঠে ‘ওখানে কে?!, কে ওখানে? .. ”কোথায় কে? ”কার কথা বলছিস?’  সকলে বলে ওঠে।’ওই যে ওই জানালার কাছটায় .. ”হ্যাঁ, তাইতো এতো এক ছায়ামূর্তি! দাঁড়া আমি দেখছি’, বলে তিতির এগিয়ে যায়, তখনই দরজায় টোকার শব্দ, অনি ও অর্ক এগিয়ে গিয়ে দরজা খোলে।অর্ক : ‘ও ..ও ..আপনি ? আমরাতো ভয়ই পেয়ে গিয়েছিলাম। ”আপনাদের খাবার এনেছিলাম, আজ রাতে এর থেকে বেশী এখানে আর কিছুই পাবেন না,’ বলে রামলাল পকেট থেকে একটি চাবি বের করে অর্কর হাতে দিয়ে বলে ‘এই যে আপনাদের রুমের চাবি, চারতলায় ইলেকট্রিকের সমস্যা আছে সেটা নিশ্চয় এতক্ষণে আপনারা বুঝতে পেরেছেন, এছাড়া  যদি কোনো সমস্যা হয় তাহলে  রাত দশ’টার আগে বলবেন, তারপর কিন্তু আর কাউকে পাবেন না, আমাকেও না।’ এই বলে রামলাল ঘর থেকে বেরিয়ে যায়।তারপর পাঁচজনের আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে ওঠে রামলাল। কিন্তু পাঁচজন থাকলেও আলোচনায় বিশেষ মন নেই বর্ষার। এই রুমটায় পা দেওয়ার পর থেকেই কেমন চুপচাপ হয়ে গেছে বর্ষা, তাই এই নিস্তব্ধতা কাটাতে অর্ণা বলে ওঠে ‘কি রে বর্ষা, এত চুপ করে কি ভাবছিস ? তুই আবার এখানে কোনো ভূত-টূতের খোঁজ পেলি নাকি? ‘বর্ষা : ‘চুপ কর। এসব বলিস না, আমার না জায়গাটা ঠিক ভালো লাগছে না, চল না আমরা এখান থেকে চলে যাই .. ‘তিতির এবং অর্ক  : ‘কিন্তু কি করব বল..আজকের রাতটুকু মাত্র, কাল সকালে  অন্য ব্যবস্থা করা যাবে, আজকের রাতটা কোনোরকমে কাটিয়ে দে প্লিজ। ‘অর্ণা :’ ভয় তো আমার ও লাগছে, এই চারতলাতেই শুধু ইলেকট্রিকের সমস্যা কেন -এর কি কোন ব্যাখ্যা তোদের কাছে আছে? ‘অর্ক ও অনি হেসে বলে ‘ হ্যাঁরে ,এখানে না আত্মারা বর্ষার জন্য অপেক্ষা করছে অবশ্য অর্ণাকে ও  ধরতে পারে ।’তিতির : ‘ এই তোরা এবার চুপ কর অনেক হয়েছে , কাল অনেক সকাল সকাল উঠতে হবে আর মোমবাতিটাও বেশিক্ষণ থাকবে বলে মনে হয় না। ‘

(২)


ঘড়িতে বারোটার ঘন্টা পড়তেই তিতির কেঁপে উঠল, ক্লান্তিতে ওর চোখটা একটু লেগে গিয়েছিল;সকলেই সোফাতে ঘুমিয়ে পড়েছে, মোমবাতি ইতিমধ্যেই নিভে গেছে আর তার মধ্যে শুরু হয়েছে বৃষ্টি। শুকনো পাতার উপর বৃষ্টি পড়ে একটা একঘেয়েমি শব্দ তৈরি করছে, যা তিতিরকে  অস্থির করে তুলছে।তিতির :’অনি ,অর্ণা, অর্ক,..ওঠ ..বর্ষা কোথায়?’অর্ণা : ‘ কোথায় মানে এখানেই তো.. ‘তিতির: ‘হ্যাঁ, ছিল কিন্তু এখন নেই.. ‘অনি ও অর্ক: ‘চল আর দেরী করা ঠিক হবে নাএকটা নূপুরের শব্দ পাচ্ছিস? ”হ্যাঁ , বর্ষার পায়েই তো নূপুর ছিল’ অর্ণা চেঁচিয়ে ওঠে।’বাইরে বেরিয়ে এলো চারজনে, চারতলার করিডোরে দাঁড়িয়ে এক অদ্ভুত দৃশ্য ।  এলোমেলো চুল, একটি মেয়ে হেঁটে বেড়াচ্ছে গোটা করিডোর জুড়ে  ।অর্ণা ও অর্ক চেঁচিয়ে ওঠে ‘ওইই আমাদের বর্ষা, বর্ষা কি করছিস এসব? বর্ষা উত্তর ..দে বর্ষা …..বর্ষা’তিতির :’ না ,এগিয়ে যাস না ও আমাদের বর্ষা হতেই পারে না ওর মুখটায় তো এক বীভৎস ক্ষত! ‘হঠাতেই রামলাল এগিয়ে আসে আর বলে’ একি?এত রাতে আপনারা এত চেঁচামেচি করছেন কেন? ”আপনি ?আপনিই বা এত রাতে এখানে কি করছেন? ‘অর্ক বলে ওঠে।আমি রোজ রাতে একজনের অপেক্ষায় থাকি। তা আপনারা বুঝবেন না ।’এখন এসব বলার সময় নয় ওই দেখুন আমাদের বন্ধু বর্ষা মাঝরাতে এখানে কিভাবে ঘুরে বেড়াচ্ছে দেখে মনে হচ্ছে ও আর ওর মধ্যে নেই, ‘তখনই ‘আমি বর্ষা নই আমি তীর্থা সবাই সরে যা সরে যা কেউ প্রাণে বাঁচবি না ,আমি বাঁচবো …বাঁচবো আমি আমি বাঁচতে চাই…’ বলে চেচিয়ে ওঠে বর্ষা।রামলাল: ‘বুঝলাম ,এখন আপনারা ঘরে যান। আজ আর ওকে তিনটের আগে সুস্থ অবস্থায় পাবেন না , তবে চিন্তার কারণ নেই ওর কোন ক্ষতি হবে না। ‘তিতির: ‘এই ঘটনার মানে কি? আপনি কি কিছু জানেন ?  বলুন তাহলে.. ‘অর্ক: ‘হ্যাঁ, প্লিজ কিছু লুকাবেন না, না সব বলুন আমাদের’অর্ণা ও অনি ইতিমধ্যে ভয়ে জড়োসড়ো মুখ থেকে কোনো কথা সরছে না।রামলাল: ‘না ,এটা সঠিক সময় নয় এখন এসব আলোচনা না করাই ভালো আপনারা ঘরের কাছে গিয়ে অপেক্ষা করুন ,আমি বলছি ওনার কোন ক্ষতি হবে না। ‘অনি ও অর্ণা খুব ভয় পেয়েছে এই ঘটনায় তাতে কোন সন্দেহ নেই কিন্তু এই ঘটনা সাহসী তিতির আর অর্কর মনেও কোথাও যেন আঘাত করছে,আর বলছে চোখের সামনে ঘটা পুরো ঘটনাটি সত্য। তিতিরের গোটা জীবনের বিজ্ঞান মনস্কতা কোথায় যেন হারিয়ে যাচ্ছে, দরজার কাছে দাড়িয়ে তিতির শুধুমাত্র এই ঘটনার ব্যাখ্যা খুঁজছে।ঘড়িতে তিনটে বাজলো তবুও বর্ষার পাত্তা নেই কিছুক্ষণের মধ্যেই   ছুটতে ছুটতে আসে বর্ষা। দরজার কাছে দাঁড়িয়ে জ্ঞান হারায় ,বর্ষার গা তখন জ্বরে পুড়ে যাচ্ছে। অনি এবং অর্ণাকেও অর্ক আর তিতিরই সামলায় সারারাত।   

(৩)

ধীরে ধীরে ভোরের আলোর দেখা মিলল।অর্ণা :’ ভোর হয়ে গেছে আমরা এখনই এখান থেকে বেরিয়ে যাব চল আমি আর এখানে কিছুতেই থাকতে পারব না। ‘অনি : ‘ আমিও তাই চাই ..’তিতির:’বর্ষার জ্বর একটু কমেছে ,তবে সেই আগের মত কোন কথার কোন উত্তর দিচ্ছে না ও একটা ট্রমার মধ্যে চলে গেছে , ‘অর্ক:’ আমি ম্যানেজারকে জানালাম কাল রাতের  ঘটনাটা, তিনি তো কিছুই বিশ্বাস করছেন না ,আর রামলাল ওনাকে যে কিছু বোঝাবেন তাও তার সাধ্যের বাইরে। ‘তিতির: ‘ দরকার নেই অর্ক ঘটনা আর তুলিস না যা হওয়ার হয়ে গেছে.., ‘
অনি: ‘ গাড়ি রেডি …চল.. তাড়াতাড়ি চল’তিতির: ‘ হ্যাঁ ‘আমি বর্ষাকে নিয়ে যাচ্ছি ।’গাড়িতে তখন অর্ণা, অর্ক, অনি উঠে পড়েছে। তিতির বর্ষাকে নিয়ে গাড়িতে ওঠার সময় একটু থমকে দাঁড়িয়ে পড়ে, গেটের কাছে দাঁড়িয়ে থাকা রামলালকে উদ্দেশ্য করে বলে ‘ আজই আমরা বাড়ি ফিরে যাচ্ছি। রামলাল কাকা, আপনি যদি আমাদের সাথে স্টেশন পর্যন্ত একটু যেতেন খুব ভালো হতো। ঘুরতে এসে তো ঠিকঠাক ঘোরাঘুরি টাই হলো না ,আপনার কাছ থেকে এই যাওয়ার সময় যদি একটু পাহাড়ের গল্প শুনতাম তাহলে খুব ভালো লাগতো .. ‘রামলাল প্রথমে রাজি হয় না। একটু আমতা আমতা করে তারপর পাঁচ বন্ধুর জোরাজুরিতে রাজি হয়ে গাড়িতে উঠে বসে।গাড়ি স্টার্ট নিল । গাড়িটি এগিয়ে চলেছে পাহাড়ের বুক চিরে, চারিদিকে দৃশ্য অপূর্ব এই দৃশ্য সূর্যাস্তের পর যে অতটা ভয়ঙ্কর হতে পারে তা চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা বড়ই শক্ত, যা পাঁচজনে দেখেছে কাল রাতে।তিতির: ‘  কাল রাতে যা ঘটল তা আমি নিজের চোখে না দেখলে কখনই বিশ্বাস করতাম না  ।আমার মনে হয় আপনি এই বিষয়ে অনেক কিছু জানেন ;আমাদের একটু বলুন না বিষয়টা.. ‘অর্ক: ‘ হ্যাঁ ,আমরাও জানতে চাই বলুন না কিছু লুকাবেন না দয়া করে’রামলাল প্রথমটায় একটু অবাক হন এবং তারপর বলেন  ‘ যখন তোমরা আমাকে তোমাদের সাথে আসতে বললে , তখনই আমি বুঝেছি এই প্রশ্নের মুখোমুখি আমাকে হতেই হবে। বিশ্বাস করো, আমি তোমাদের ওইরুমটাই কিছুতেই থাকতে দিতাম না কিন্তু ম্যানেজারের কথা আমি ফেলতে পারিনি। ‘তিতির: ‘ আপনি ঘটনাটা বলুন আমরা শুনব। ‘রামলাল : ‘ তা সে বছর পনেরো আগের কথা। আমি তখনই এখানে কিছুদিন হয়েছে কাজে এসেছি , একটা পরিবার একদিন এই পাহাড়ে ঘুরতে এসে আমাদের গেস্ট হাউসে আসে মিস্টার বিশ্বাস তার স্ত্রী ও একমাত্র কন্যা। ‘অর্ক: ‘তারপর কি হল?’রামলাল: ‘ তারপর ওনারা একদিন গাড়ি নিয়ে বেরোলেন পাহাড়পুরীটি ঘুরে দেখবেন বলে, আর পথে.. . ‘তিতির: ‘ কি হল পথে? ‘রামলাল: ‘ একটা অ্যাকসিডেন্ট  । তাড়াতাড়ি সকলকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলেও ড্রাইভার আর বাঁচলেন না… ‘অর্ণা : ‘ আর মিস্টার বিশ্বাস আর তাঁর পরিবারের কি হল? ‘রামলাল:’ মিস্টার আর মিসেস বিশ্বাস আহত হয়েছিলেন ঠিকই কিন্তু প্রাণে বেঁচে গিয়েছিলেন কিন্তু মেয়েটি…’অর্ক:’ কি হল মেয়েটির? ‘রামলাল:’ মারা গেল …হ্যাঁ…মারা গেল ‘রামলালের গলা ধরে আসছে কান্নায়।তিতির: ‘খুব মর্মান্তিক ঘটনা। আচ্ছা মেয়েটির নাম কি ছিল? ‘কাঁপা গলায় রামলাল উত্তর দিল তীর্থা।অর্ক এবং অর্ণা: ‘এই নামটিই তো কাল রাতে বর্ষা বারবার বলছিল! ‘রামলাল:’ হ্যাঁ , এটাই ঘটেছিল কাল রাতে। আজ যদি সে বেঁচে থাকত তাহলে হয়তো ওর বয়স ও হত ঠিক তোমাদের বন্ধু বর্ষার মতোই। তাই কাল হয়তো ওর অতৃপ্ত আত্মার শিকার হয়েছিল তোমাদের বন্ধু বর্ষা। ও বাঁচতে চেয়েছিল হয়তো ভেবেছিল ও আবার বাঁচতে পারবে..।’কান্নায় ভেঙে পড়ে রামলাল ।তিতির: ‘ আপনি কাঁদবেন না  ..আমরা বুঝতে পারছি। ‘রামলাল: ‘আমার সাথে দু দিনেই বড্ড বন্ধুত্ব হয়ে গিয়েছিল ওর ,আমাকে দেখলেই গল্প জুরত। তাই আজও আমাকে রাত বারোটা বাজলেই ওর অপেক্ষা করতে হয় ,এখন ওর বন্ধু বলতে একা আমিই। ‘গলা ধরে আসে রামলালের। গোটা ঘটনাটা বর্ষা ও বিহ্বল দৃষ্টিতে তাকিয়ে শুনছে কিন্তু কিছু বুঝতে পারছে বলে মনে হচ্ছে না।তিতির: ‘ ঘটনাগুলো মন মানতে চাইছে না কিন্তু যা চোখে দেখেছি ,তা অস্বীকার করার ক্ষমতা আমার সত্যিই নেই। ‘অর্ণা : ‘ এই মনে হয় স্টেশন চলে এলো !ট্রেনের শব্দ পাচ্ছি..’অর্ক:’ হ্যাঁ, তাইতো এবার তো নামতে হবে ‘রামলাল :’ তোমরা তাহলে এসো, এবার আমিও যাই, সাবধানে যেও। ‘তিতির ও অর্ক: ‘ ঠিক আছে আসুন আপনি।’ট্রেনে উঠে পড়েছে  পাঁচজনে । বর্ষা এখনও  বাস্তবে ফিরতে পারে নি ,ট্রেন ছেড়ে দিল ধীরে ধীরে অদৃশ্য হয়ে গেল স্টেশন এবং স্টেশনে দাঁড়িয়ে থাকা  রামলাল ও।প্রায় এক মাস হয়ে গেছে শৈল শহর থেকে সকলে বাড়ি ফিরেছে । বর্ষাও আগের থেকে এখন অনেকটা সুস্থ ,তবে সে রাতের ঘটনা ওর কিছুই মনে নেই। প্রত্যেকের মন থেকেই ধীরে ধীরে ধুয়ে মুছে যাচ্ছে ভয়ঙ্কর স্মৃতিগুলো ,জীবন আবার চেনা পথে চলা শুরু করেছে কিন্তু ভয়-ভীতি হীন তিতিরের মনে কোথাও যেন বাসা বেঁধেছে সেই অশরীরীর ভাবাবেশ। তিতির আজকাল খুব ভয়ে ভয়ে থাকে । সারাক্ষণ উত্তর খোঁজার চেষ্টা করে সেই ঘটনাগুলির আর ঘুমের মাঝেই আজকাল অল্প শব্দেই তিতিরের ঘুম ভেঙে যায় আর মনে মনে ভাবতে থাকে…..তীর্থা নয় তো …?

কলমে অনন্যা রায়

Previous articleরঞ্জন রহস্য
Next articleএকটি রাতের অভিজ্ঞতা
Avatar
Disclaimer: Monomousumi is not responsible for any wrong facts presented in the articles by the authors. The opinion, facts, grammatical issues or issues related sentence framing etc. are personal to the respective authors. We have not edited the article. All attempts were taken to prohibit copyright infringement, plagiarism and wrong information. We are strongly against copyright violation. In case of any copyright infringement issues, please write to us. লেখার মন্তব্য এবং ভাবনা, লেখকের নিজস্ব - কপিরাইট লেখক কর্তৃক সংরক্ষিত..................

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here