— গেট আউট অ্যান্ড টেক ইওর ফুল অ্যান্ড ফাইনাল
     …… ফ্রম্ ক্যাশ সেকশান।
মাথার ওপর যেন বাজ পড়লো তিমিরের।
প্রাণের বন্ধুরাই বুঝি মহাশত্রু হয় শেষের দিকে। বস্ এর মেয়েকে পাবার আশায় তিমিরের চাকরীটাই খেয়ে নিলো বিভাস!
কিন্তু তিমির তো সুতপাকে চায়নি।
ভুল বুঝে ওর নামে বস্ এর কাছে লাগিয়ে শেষ পর্যন্ত সজোরে পেটে লাথি!
বাথরুমে গিয়ে অঝোরে কেঁদে নিলো তিমির।তারপর চোখমুখ ধুয়ে বিভাসের কাছে গিয়ে বলল,” বন্ধু,
সুতপাকে আমি চাইনি।তুই ভুল বুঝলি আমাকে?”
বিভাস কিছু না বলে নিজের কাজ করতে থাকে একমনে।তিমির বুঝতে পারে ,কোনো লাভ নেই।সুতপার প্রেমে সে একেবারে অন্ধ।
আস্তে আস্তে ক্যাশ সেকশনের দিকে এগোয় তিমির।
চোখটা ঝাপসা হয়ে আসে তার।সেই ঝাপসা চোখের বৃত্তের পরিধিতে ঘুরপাক খেতে থাকে কয়েকটা মুখ।
বৃদ্ধ বাবা,মা,বেকার ভাই,। কবিতা আর তার পেটে পাঁচ মাসের এক নতুন অতিথি।
কী করে মুখ দেখাবে সে বাড়িতে?
কিভাবে সে বলবে যে তার চাকরী চলে গেছে!
কবিতার দিকে সে তাকাবে কিভাবে?
তিমির কাউন্টারে তার কাঁপতে থাকা হাতটা বাড়িয়ে দিতেই ক্যাশিয়ার তার হাতে চার হাজার পাঁচশো টাকা দিয়ে খাতায় সই করিয়ে সাথে একটা কার্ড দিয়ে বললেন,’ তিমির,আমি জানি তোমার সঙ্গে যা হলো ভুল হলো।তবে বসের নির্দেশ!আমরা তো কিছু বলতে পারি না।তবে এই অ্যাড্রেসে একবার কথা বলে দেখো।তোমার হয়ে যাবে।এইটুকু আশ্বাস দিতে পারি।’
তিমির ভেজা চোখে টাকাগুলো কাঁধে ঝোলানো ব্যাগে রাখলো।কার্ডটা পকেটে পুরে গেটের দিকে পা বাড়ালো সে।
তিমির বটানিতে অনার্স।সুতপা এসেছিলো তার কাছ থেকে ‘ টিসু কালচার ‘ এর কিছু নোট নিতে।আর তাতেই বিভাস ভেবে বসলো সুতপার সাথে তিমিরের কোনো কিছু আছে।তার ফলেই খোয়াতে হলো তার হাজার সাতেকের এই চাকরিটা।
রাস্তায় নেমে হাঁটতে থাকলো তিমির।
ঠিক কোথায় যাচ্ছে সে নিজেই জানে না।পাশ দিয়ে ট্রেকার, বাস,ট্যাক্সি, অটো হুস হুস করে চলেছে নিজেদের গন্তব্যে।কত ব্যস্ত তারা ,কত হিংসুটে যেন।কারোর দিকে কারো তাকাবার সময়ই যেন নেই।কে আগে বেরিয়ে যাবে তার একটা লুকোনো প্রতিযোগিতা যেন সবারই মনে।
তিমির সেগুলো থেকে একদমই যেন আলাদা।তার আজ আর কোনো ব্যস্ততাই নেই;আছে হতাশা।তার সাথে ঘটে যাওয়া অন্যায়টাকে কোনোভাবেই যেন মানতে পারছে না সে।
হাঁটতে হাঁটতে অনেক দূরে চলে এলো তিমির।
ক্ষিদেও খুব পেয়েছে।প্রতিদিনকার মতো আজকে চা
 – টিফিন হয়নি তার। রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা একটা ঝালমুড়ি ওয়ালাকে মুড়ি বানাতে বলে পাশে একটা বেশ বড়ো বাড়ি দেখে তিমির।কারখানা মনে হচ্ছে।সাইন বোর্ডের দিকে তাকিয়ে চমকে ওঠে সে।পকেট থেকে ক্যাশিয়ারের দেওয়া কার্ডটা নিয়ে মিলিয়ে নেয় একবার।
হ্যাঁ,এই তো সেই ঠিকানা!
‘ বি.এন.চৌধুরী এন্ড সন্স প্রাইভেট লিমিটেড ‘
ঝালমুড়ি আর খাওয়া হয় না তিমিরের।নিজেকে শক্ত করে নিয়ে আস্তে আস্তে হেঁটে গেট দিয়ে ঢুকে সোজা চলে যায় ম্যানেজারের অফিস – রুমের সামনে।আস্তে করে দরজাটা ঠেলে বলে ওঠে,” মে আই কাম ইন স্যার!”

কলমে শঙ্কর নাথ প্রামাণিক, মুকুন্দপুর, মালদা

 

শিক্ষক,কবি ও গল্পকার।কাব্য সুধাকর ও হাইকু প্রভাকর উপাধি প্রাপ্ত।অণুগল্প তে মহাশ্বেতা দেবী স্মৃতি পুরস্কার প্রাপ্ত।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here