(১)

ঘড়িতে দুপুর তিনটে । সারাদিন গুমরে থাকা আকাশের কান্নাটা মেঘ ফেটে নীচে নামল। অনন্ত কালো মেঘের ঘনঘটা আজ সারাদিনটাকে মেঘলা দিন নাম দিয়েছে। সাবানা ব্যলকনিতে বসে কাটিয়েছে সারাটা দিন। রিনা কাজ করতে এসে, এক বাটি খিচুড়ি করে দিয়ে গেছে। ও না রাঁধলে আজ খাওয়া হতনা সাবানার। ভীষণ অলস হয়ে যায় সাবানা এই বৃষ্টির দিনগুলোতে। হাত পা গুলো আড়ষ্ঠ হয়ে ওঠে। সারাদিন কফি খেয়ে কাটিয়ে দিতে পারে। অফিস চুলোয় যাক। আকাশের কান্না দেখতে ওর খুব ভালো লাগে। প্রতিম যখন ছিল। দুজমে এই ব্যলকনিতে বসে বৃষ্টি দেখত সারাদিন। তখন রাঁধত সাবানা। দুপুরে দুজনে আয়েশ করে খিচুড়ি আর ডিম ভাজা খেত। সাত তলার এই ব্যলকনি সাবানাকে প্রতিমের আরও কাছে নিয়ে আসত। পাতাবাহারি গাছগুলো হালকা হাওয়ায় দুলত। বৃষ্টির ফোঁটা পরত ওদের উপর। চকচক করত ওরা।‌ দুজনে এক দৃষ্টিতে চেয়ে থাকত তাদের দিকে। প্রতিম সাবানাকে জড়িয়ে রাখত নিজের বাহুবন্ধনে। একটা চাদরের তলায় বসে থাকত দুজনে‌। গরম হত শরীর। সাবানা আগাগোড়াই একটু শীতকাতুরে। কিন্তু প্রতিম পাশে থাকলে ওর শীত লাগত না। প্রতিমের শরীরের উষ্ণতা সাবানার শরীরে আর কাউকে প্রবেশ করতে দিতনা। এমনকি ঠান্ডা বাতাস গুলোকেও না। কোন একটা অজানা কারণে প্রতিমের চোখ দিয়ে অনবরত জল পরত এই সময়। বৃষ্টির সময় কান্না করত প্রতিম। আর কোন‌ সময় কাঁদতে দেখেনি সাবানা তাকে। হাজার কষ্ট পাক। অথবা বুকে চেপে থাক হাজার ব্যাথার পাহাড়। ওর চোখ থেকে এক ফোঁটা জল বের হতনা কোনদিন। কিন্তু বৃষ্টি এলেই কাঁদত প্রতিম। যতক্ষন আকাশ কাঁদত, ততক্ষন প্রতিমও চুপ করত না। প্রথম দিকে একটু অবাক হয়েছিল সাবানা। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে ব্যাপারটা সয়ে গিয়েছিল ওর। অনেকবার জিজ্ঞেস করেও যখন কোন সদুত্তর পায়নি। চেপে গিয়েছিল ব্যাপারটা। আর মুখ ফুটে জিজ্ঞেস করেনি কোনদিন। তবে সাবানা একটা বেশ মজাদার নাম দিয়েছিল প্রতিমের। বৃষ্টি-কাঁদুনে। সাবানার মনে পরে সেইদিনের কথা। যেদিন প্রতিম তাকে জড়িয়ে ধরে হাউহাউ করে কেঁদে উঠেছিল। বাইরে তখন মুষলধারে বৃষ্টি। আকাশ যেন ভেঙে পরবে এবার‌। সাবানাও জড়িয়ে ধরেছিল প্রতিমকে। আসলে তাদের জীবনে কান্নার কোন জায়গা থাকাই উচিৎ নয় কোনভাবেই। একটা দু-কামরার ফ্লাটে আরামে ছিল দুজন। প্রতিমের বাড়ির লোক তাদের এই সম্পর্ক মেনে নেয়নি। আর কোনদিন মেনে নেবেও না। কারন, সাবানা আর প্রতীম এক হতে পারেনা। তাদের নাকি ঈশ্বর আলাদা। সাবানা কলকাতার মেয়ে। প্রতিম বর্ধ্মানের ছেলে। এখানে একটি ইঞ্জিনিয়ারিং সেক্টরে জব করত প্রতিম। সাবানার সাথে তার পরিচয় রঞ্জনের বার্থডে পার্টিতে। একটা খোলা চুলের মেয়েকে দেখে প্রতিমের হাতের লাল জলের গ্লাসটা আর তার ঠোঁট ছুঁতে রাজি হচ্ছিল না। সাবানার চোখের দিকে তাকিয়ে হারিয়ে গিয়েছিল প্রতিম। এত মায়া ভরা চোখ কোন মানুষের হতে পারে? অবাক হয়েছিল সে। প্রতিম নিজে থেকে গিয়েই আলাপ করেছিল সাবানার সাথে। তারপর ফোন নম্বর আদান-প্রদান। সারারাত কথা, তারপর প্রেম। সাবানার মা মারা গিয়েছিল অনেক ছোটবেলায়। বাপ ভর্তি করে দিয়েছিল একটি বোর্ডিং এ। প্রথম দিকে সপ্তাহে একবার দেখতে আসত। তারপর মাসে একবার। তারপর সময়ের কালচক্রে সেটাও বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। বোর্ডিং হাউসের মিসেস লরেন এর কাছে মানুষ সাবানা। আর তার খুব ভালো বন্ধু ছিল দিয়া। গত বছরের শুরুতে বাবা মারা গেল। মিসেস লরেন উকিল ধরে, নানারকম আইনি জটিলতার মুখমুখি হয়ে সাবানাকে বাবার বাড়িটা পাইয়ে দিয়েছিল। দিয়া বেশিরভাগ সময়টা সাবানার সাথে এই বাড়িতেই থাকত। সাবানার দেখাশোনা করার দায়িত্বটা তাকে হয়ত স্বয়ং ঈশ্বর দিয়েছিলেন। সাবানা আর প্রতিমের বিয়েতে সমস্যা একটাই ছিল। ধর্ম। যদিও সাবানা এসবের ধার ধারে না। কিন্তু সমস্যা হল প্রতিমকে নিয়ে। বাড়ির লোকেদের মুখ ফুটে কিছু বলতে গেলেই তার হাত-পা কাঁপে। বাড়িতে বলতে গিয়ে এক মাস ফেরেনি কলকাতায়। সাবানা একা এই ফ্লাটে প্রতিমের অপেক্ষায় দিন গুনছিল। ওর ফোনের সুইচ অফ। তাদের ভালোবাসার সুইচ ধীরে ধীরে অফ হয়ে আসছিল। কিন্তু এত সহজে প্রতিম ছেড়ে যাবে? মানতে পারছিল না সাবানা। কিছুতেই মনকে বোঝাতে পারছিল না সে। দিনের শেষে ফ্লাটে এসে প্রতিমের গায়ের গন্ধটা পেত সাবানা। ওর ব্যবহার করা জামাটা জড়িয়ে শুয়ে থাকত সারারাত। ভাবত সে বোধহয় হেরে গিয়েছে। তার ভালোবাসা হেরে গেছে। মৃত্যু অভিমুখে যাত্রা করেছে তাদের ভালোবাসা। তার বৃষ্টি-কাঁদুনে লোকটা ধীরে ধীরে পর হয়ে আসছে। হয়ত আর কোন বৃষ্টির দিনে প্রতিমকে কাঁদতে দেখতে পাবেনা সাবানা।

(২)

সেদিন প্রতিমের কান্না দেখে অবাক হল সাবানা। এইভাবে কোনদিন কাঁদতে দেখেনি প্রতিমকে। হ্যাঁ, আগাগোড়াই বৃষ্টি এলেই কাঁদে ও। তবে সেদিনের কান্নাটা যেন অনেক জমানো কষ্টের প্রতিফল স্বরুপ বের হচ্ছিল প্রতিমের চোখ দিয়ে। কিন্তু কিসের কষ্ট? সাবানা তাকে ভালোবাসে। অনেক ভালোবাসে। প্রতিমের সব শর্তে রাজি হয়েই বিয়ে হয়েছে তাদের। তার সত্বেও প্রতিমের এত দুঃখ কিসের? ভেবে পায়না সাবানা। প্রতিম সাবানাকে চেপে ধরে কেঁদে চলে। প্রতিমকে একবার ডাক্তার মিঃ চৌধুরীর কাছে নিয়ে গিয়েছিল সাবানা। মিঃ চৌধুরী এই শহরের নামকরা সাইকোলজিস্ট। কিন্তু “সাইকো” শব্দটা একেবারেই অপছন্দ প্রতিমের। তাই সেখান থেকে রেগে বাড়ি ফিরে এসেছিল প্রতিম। একা। সেটা অবশ্য বিয়ের আগে। তখন সাবানা ঘর থেকে বের হত। বন্দি থাকত না প্রতিমের ভালবাসার ঘরে। মিঃ চৌধুরী বলেছিলেন এটা এক ধরনের মানসিক রোগ। ডাক্তারি ভাষায় যাকে বলা হয় “বাইপোলার ডিসঅর্ডার”। এই রোগের রুগীরা নিজেদের জন্য একটি বিশেষ সময় বেছে নেয়। যাতে তারা সেই সময়ে নিজেদেরকে পৃথিবীর সব থেকে দুঃখী মানুষ মনে করে। নিঃসঙ্গ হয়ে যায় তার সমস্ত পৃথিবী। সে একা, কেবল একা হয়ে যায়। সবটা শুনেছিল সাবানা। তাই বৃষ্টির সময় তার বৃষ্টি-কাঁদুনে কে আর একা ছাড়ত না। জড়িয়ে ধরে বসে থাকত। কিন্তু আজকের কান্নাটা এত উগ্র দেখাচ্ছে কেন বুঝতে পারল না সে। অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল প্রতিমকে ” কাঁদছ কেন? বাড়ির কথা মনে পরছে?” প্রতিমের কান্না থামছিল না। আরও চেপে জড়িয়ে ধরেছিল সে তার ভালোবাসাকে। সাবানার বুকটা বদ্ধ হয়ে আসছিল। ওর বাহুবন্ধন থেকে নিজেকে মুক্ত করতে পারছিল না মেয়েটা। আরও চেপে জড়িয়ে ধরল প্রতিম। আরও। সাবানার মুখটা ওর বুকে গুঁজে দিল, মাথার পেছনে শক্ত হাত দিয়ে চেপে ধরল মুখটা, বুকে। আর পারছিল না সাবানা। তার নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছিল। প্রতীমের কান্নার আওয়াজ আরও বাড়ল। বাইরে মুষলধারায় বৃষ্টি। চেঁচিয়ে বলতে চাইল সাবানা “তোমার এত ভালোবাসায় আমার নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে প্রতিম। ছেড়ে দাও আমায়, প্লিজ ছেড়ে দাও।” কিন্তু তার মুখ থেকে কোন কথা বের হলনা। কেবল একটা অস্পষ্ট গোঙানি। ভালোবাসার চাপের গোঙানি। মনে হচ্ছিল প্রতিমের শক্ত চামড়া, ওর পাঁজরের হাড় ভেঙে সাবানার মুখটা এবার বোধহয় এফোঁর-ওফোঁড় হয়ে যাবে। আর পারছিল না মেয়েটা। হাত পা গুলো আড়ষ্ঠ হয়ে আসছিল তার। চোখ ঠিকরে‌ বেরিয়ে আসতে চাইছিল।‌ প্রতিমের ভালোবাসা তাকে আরও একবার বন্দি করতে চাইছিল। কিন্তু সে যে আর বন্দি হতে চায়না। মুক্ত হতে চায়, অনেকটা মুক্ত।

(৩)

বিয়ের পর‌ থেকে নয় মাস এই ফ্লাটের দরজার বাইরে বেরোতে পারেনি সাবানা।‌ এমনকি সিঁড়ির প্রথম ধাপটা কোথায় আছে তাও ভুলে গেছে সে। লিফট ঠিক কোন দিকে সেটাও তার মনে নেই। কাজের মেয়ে আসে। কাজ করে, চলে যায়। সাবানার ঘর খোলা বারন। তার ঘর প্রতিম পরিষ্কার করে।‌ প্রতিম ছাড়া সাবানাকে কেউ দেখে না। চেঁচিয়ে বলতেও পারেনা সাবানা ” কেউ আমাকে মুক্ত করো। মুক্ত করো এই ভালোবাসা থেকে। চাইনা আমার এই বন্দি ভালোবাসা, চাইনা।” ব্যলকনি থেকে আওয়াজ যায়না নীচে। সামনে বিশাল মাঠ। তার‌ ওপারে শহর। সাবানা জানে, চেঁচিয়ে বললেও তার আকুতি পৌঁছাবেনা সেখানে। সাবানা এই ভালোবাসার ঘরে বন্দি আজ নয় মাস।‌ প্রথম দিকে একটু অসুবিধা হত। কিন্তু প্রতিমের ভালোবাসা তাকে সব ভুলিয়ে দেয়। প্রতিমের শরীরের পুরুষালি গন্ধ, তার শক্ত হাতের ছোঁয়া, তার সিগারেটে পোড়া ঠোঁট বন্দি দশা ভুলিয়ে রাখে সাবানাকে। যদিও তার এই বন্দি দশা সে নিজেই বেছে নিয়েছিল একসময়। একমাস প্রতিম না ফেরাতে সাবানা ওর অফিস থেকে ঠিকানা নিয়ে সোজা পৌঁছেছিল তার গ্রামের বাড়ি। সঙ্গে নিয়েছিল দিয়াকে। প্রতিম তার জীবনে আসার আগে দিয়াই তার একমাত্র ভরসা ছিল। প্রতিম তাকে ওর ভরসাতেই রেখে গিয়েছিল গ্রামের বাড়িতে, কিন্তু আর ফেরেনি। ভালোবাসা সত্যিই হয়ত সাবানাকে বেহায়া করে তুলেছিল। প্রতিম নিজের বাবা মায়ের অমতে তাকে বিয়ে করতে রাজি হয়নি প্রথমে। কিন্তু সাবানা ওকে ছাড়তে নারাজ। জীবনে অনেক কিছুই ছেড়েছে মেয়েটা। কাউকে নিজের কাছে আটকে রাখতে পারেনি। আর আজ তার ভালবাসাকেও এত সহজে ছেড়ে দেবে? না, সেটা কোনভাবেই সম্ভব নয়। শেষ পর্যন্ত চুক্তি হয়েছিল তাদের মধ্যে। সাবানার ভালোবাসা পাওয়ার চুক্তি। তার বন্দি জীবনের চুক্তি। সে কেবল প্রতিমের সামনে আসবে, আর কেউ যেন তার মুখদর্শন না করে। এমনকি দিয়াও না। বাইরের জগতের সঙ্গে সমস্ত সম্পর্ক ত্যাগ করে সে কেবল প্রতিমের হয়ে থাকবে। শুধুমাত্র প্রতিমের। একবার ভাবেওনি সাবানা, রাজি হয়ে গিয়েছিল। ভয় পেয়েছিল, তার বৃষ্টি-কাঁদুনেকে ছাড়তে।

(৪)

প্রতিম তাকে আরও চেপে ধরল। তার নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছিল, প্রতিমের বুকের মধ্যে আবদ্ধ হয়ে আসছিল তার প্রান পাখিটা। প্রতিম চেপে ধরেছিল তার মুখটা ওর শক্ত চামড়ার বুকে। সাবানা চলে যাচ্ছিল এই পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে। প্রতিমের বুকের ভেতর ঢুকে যাচ্ছিল মেয়েটা। আসলে যে বাঁধে, সে নিজেও বেঁধে যায়। সাবানাকে বন্দি করে প্রতিম নিজেও একপ্রকার বন্দি হয়ে গিয়েছিল। তাই আজ সে সাবানাকে তার বন্দি দশা থেকে মুক্তি দিতে চেয়েছিল। আর নিজেও মুক্ত হতে চেয়েছিল। কিন্তু, মানুষ আসলে সবসময় যেমনটা ভাবে। তেমনটা নাও হতে পারে। সেদিনও হয়নি‌। প্রতিমের ভালোবাসার চাপ ও নিজেই সহ্য করতে পারেনি‌ সেই দিন। সাবানাকে মুক্ত করতে‌ গিয়ে নিজে‌ই বন্দি হয়েছিল মৃত্যুর কাছে। সাবানাকে শ্বাস রোধ করে মারাটা যতটা শক্তি দিয়ে করতে চেয়েছিল সে,ততটা শক্তি ওর শক্ত চামড়ার ভিতর ধুকধুক করতে থাকা পিচ্ছিল নরম হৃদ‌পিন্ডটা নিতে পারেনি।‌ বুকে হাত চেপে মেঝেতে লুটিয়ে পরেছিল প্রতিম।‌ ঠিক‌ যেখানে সাবানার মুখটা চেপে ধরেছিল‌ সে, সেই জায়গাটায় প্রতিমের হাতটা আঁকড়ে ধরেছিল। অসহ্য যন্ত্রণায় মাটিতে লুটিয়ে পরেছিল ছেলেটা। মিঃ চৌধুরী আগেই বলে দিয়েছিলেন সাবানাকে, প্রতিমের হৃদয় খুব দুর্বল। সামান্য আঘাতেই তার হৃদস্পন্দন বন্ধ হতে পারে। আসলে যেসব মানুষের এই ধরনের ডিসঅর্ডার থাকে, তাদের হৃদয় ধীরে ধীরে দুর্বল হতে থাকে। তারা নিজেরাই নিজেদের অন্তরে দুঃখের অনুভুতি উৎপন্ন করতে থাকে। তাদের না বলা কথাগুলো তাদের হৃদয়কে দুর্বল করতে থাকে। একটু শারীরিক বা মানসিক চাপেই তাদের হৃদস্পন্দন বন্ধ হতে পারে। প্রতিমের গোঙানির আওয়াজ শুনতে পাচ্ছিল সাবানা। দেখছিল তার সামনে তার একমাত্র ভালোবাসা কিভাবে শেষ হয়ে যাচ্ছে। হুইল চেয়ারের চাকাটা ঘুরিয়ে দরজার দিকে এসে জোড়ে চেঁচিয়ে ছিল সাবানা। কিন্তু ততক্ষনে সব শেষ। তার পঙ্গু পা দুটোকে নিয়ে এগোতে পারছিল না সে। প্রতিমের মূল সমস্যা ছিল তার বউ জন্ম পঙ্গু। পোলিও রোগে আক্রান্ত মেয়েটা ছোটবেলা থেকেই। কিন্তু এই অবস্থা জেনেই সে সাবানাকে ভালোবেসেছিল। তার বাড়িতে, তার বিছানাতে, তার শরীরের উপর শুয়ে থাকত ছেলেটা। তার পঙ্গু পায়ে চুমু দিত। কিন্তু যখনই বিয়ের কথা এল, পাল্টে গেল প্রতিম। আর ওর সেই পরিবর্তন সাবানাকে ভিতর থেকে ভেঙে দিয়েছিল। একটা পঙ্গু মেয়ের সাথে শোয়া যায়, তার সাথে শারীরিক সম্পর্ক করা যায় অথচ তাকে বিয়ে করা যায়না। কেন? প্রশ্নের উত্তরে প্রতিম বলেছিল “ পঙ্গু বউকে লোকসমাজে বের করা যায়না।“ সাবানা ওকে মনে করিয়েছিল ওর নিজেরও একটা রোগ আছে। কিন্তু ও মানতে চায়নি। বলেছিল “যে রোগ দেখা যায়না। আসলে সেটা রোগ নয়।“ আজ সেই অদেখা রোগেই ছেলেটা লুটিয়ে পরল মেঝেতে। বাইরে তখন বৃষ্টি কমেছে। সাবানার চোখ দিয়ে জলের ফোটা গুলো মুক্তোর মত ঝরে পরছে প্রতিমের বুকে। তার বৃষ্টি-কাঁদুনে আর কোনদিন কাঁদবে না। শত শত বৃষ্টির ফোটা মেঘেদের বুক চিঁড়ে পরবে পাতাবাহার গাছগুলোর পাতায়, ব্যলকনির গ্রিলগুলো ভিজবে আবার, শুধু সাবানার বৃষ্টি-কাঁদুনের চোখটা আর ভিজবে না।

লেখক রাজকুমার মাহাতো, সম্পামির্জানগর, কলকাতা

Write and Win: Participate in Creative writing Contest & International Essay Contest and win fabulous prizes.

1 COMMENT

  1. দারুন লাগলো। ভালো বাসা যেমন feel করছিলাম। সেরকম ভয় ও লাগছিলো। খুব সুন্দভাবে লেখা হয়েছে রাজ। অনেক অভিনন্দন আপনাকে 🌹

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here