চেয়ারে বসে ভাবতে ভাবতে কখন যে দুটো চোখের পাতা নিত্যদিনের একই ঘটনা দেখতে দেখতে ক্লান্ত হয়ে গিয়ে নিমজ্জিত হয়েছিল, তা বুঝতেও পারেননি সুকন্যা। সুকন্যা কলকাতার এক প্রাইভেট কোম্পানির ম্যানেজার, যা মাইনে পান তাতে নিজের ভালোভাবেই চলে যায়। কাজ নিয়ে থাকতেই ভালোবাসেন সুকন্যা আর অফিসর কাজ না থাকলে গল্পের বইয়ে ডুবে থাকেন।
“ওহে, সুকন্যা কি হলো!”, নিমাইবাবুর এইরূপ অপ্রত্যাশিত আগমনে হন্তদন্ত হয়ে উঠে সুকন্যা দেখে সামনের দেওয়াল ঘড়িতে নটা বেজে পয়ত্রিশ মিনিট|
নিমাইবাবু সুকন্যারই অফিসেই কর্মরত, বয়সে তাঁর তুলনায় অনেক বড় হওয়ায় সুকন্যাকে তিনি মেয়ের চোখেই দেখেন। তাই যখনই প্রতিদিনের সাধারণ কাজকর্মের বাইরে সুকন্যাকে চুপচাপ বসে থাকতে দেখেন, অথবা ক্লান্ত দেখেন, তখনই তাঁকে নিমাইবাবুর প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়। তবে সুকন্যার ভালোই লাগে এইধরণের প্রশ্নের সম্মুখীন হতে, তাঁর ছোটবেলার কথা মনে পরে যায়।
এইকথা ভাবতে ভাবতে নিমাইবাবুর পরবর্তী প্রশ্নের সম্মুখীন হন সুকন্যা, “শরীর–সাস্থ্য সব ভাল তো বাছা? কতবার বলেছি রাত জেগে কাজ করো না, নিশ্চয়ই তাই করেছ? তাই এই অবস্থা।“
“না না, কাকা । জেগেছি তা ঠিক, তবে কাজ করিনি কাকা।” ক্লান্ত পরিশ্রান্ত স্বরে জবাব দিলেন সুকন্যা। তবে জবাব ঠিক নয়, প্রশ্নটা অনেকদিন পর পেয়ে বেশ ভাল লাগলো তার।
“এত চিন্তাভাবনা করো না দিদিভাই, নাও চা এনেছি খেয়ে নাও। সারাদিন আর তো কিছুই খাও না।” – এই বলে টেবিলে চা আর একটা বিস্কুটের প্যাকেট রেখে তিনি ঘর থেকে বিদায় নিলেন নিমাইবাবু। সুকন্যা আবার চোখ বন্ধ করলেন, তবে ঘুম এল না। চেয়ার থেকে উঠে গিয়ে পাশের জানালার ধারে দাঁড়ালেন, তবে প্রাকীতিক সৌন্দর্য দেখতে নয় কালকে রাতের চিন্তাকে পূর্ণরূপ দেওয়ার অভিপ্রায়ে।
ঘরে ঢুকলো প্রীতম্বর, তার আসার সংকেত পান তার সেই পুরোনো বুট জুতোটার গম্ভীর শব্দে। এই অফিসে উনি ছাড়া আর কেউ এই ধরনের জুতো পড়েন না।
“আসবো ম্যাডাম?”, প্রশ্ন করলেন প্রীতম্বরবাবু।
“হ্যাঁ, আসুন প্রীতম্বর বাবু।”
“ম্যাডাম, ফাইলগুলো—যদি একটু দেখে দিতেন। ”
“রেখে যান, ইভনিং–এ এসে নিয়ে যাবেন। আমার একটা মিটিং আছে, তাই সময় লাগবে। গতকাল দেরি হয়েছিল কেন জানতে পারি? রুটিন অনুযায়ী গতকাল তো কোনো মিটিং ছিল না। তাহলে?”
“আসলে ম্যাডাম, বাড়ির একটা কাজে হঠাৎ আটকে গেছিলাম, তাই আরকি দেরি হয়ে গেছিল। ” কিছুটা ইতস্ততভাবেই জবাবদিহি করলেন তিনি।
আরও কিছু হয়তো বলতে যাচ্ছিলেন, কিন্তু সুকন্যার ঠোঁটের কোনে একটা অপ্রত্যাশিত হাসি দেখে উনি আর কিছু বললেন না প্রীতম্বরবাবু।
“তাহলে আসি ম্যাডাম? আর কিছু কি লাগবে?”
কিছুনা বলেই ফাইলের দিকে মনোনিবেশ করলেন সুকন্যা। প্রীতম্বরবাবু চেয়ার ছেড়ে উঠে গেলেন আর কিছু না বলেই তিনি ঘরত্যাগ করলেন। সুকন্যা আবার চেয়ার ছেড়ে উঠে গিয়ে বসলেন অফিসঘরের এককোণে স্থান পাওয়া সোফাটায়। তাঁর এই ঘরটায় বইপত্র আর ফাইল ছাড়া বাকি সবকিছুই যেন স্থান পেয়েছে। এক হাতে চায়ের কাপ আর আরেক হাতে সদ্য কেনা ম্যাগাজিন তুলে নিলেন, কিন্তু ম্যাগাজিনে তাঁর মন বসলোনা।
চায়ের কাপ হাতে নিয়েই উঠে গিয়ে দাঁড়ালেন জানালার ধারে। ধীরে ধীরে ডুবে গেলেন গতরাত্রের ভাবনায়। কোথায় মিটিং,কখন মিটিং কিছুই আর মাথায় রইল না সুকন্যার।
“কিরে সুকু আয়, আজ তোর প্রিয় খাবার বানিয়েছি। ”
“না মা, তুমি খেয়ে নাও। আজ আমি ব্যস্ত, অনেক কাজ। তুমি খেয়ে নিয়ে ঘুমিয়ে পড়ো।”
“আজ এক বছর পর তুই বাড়ি ফিরলি, আজও তোর কাছে আমার সাথে খবর মতন সময় নেই। ”
“তুমি খেয়ে নাও মা, আজ আমি পারবো না– অনেক কাজ। ”
“ঠিকাছে..”
“সুকন্যা,সুকন্যা….” , অফিসের বড়োবাবুর হাঁকানিতে সুকন্যার সম্ভিত ফিরলো। পিছনে ফিরে দেখেন নবীনকুমার ভদ্র দাঁড়িয়ে আছেন তাঁর টেবিলের পাশে।
“হ্যাঁ স্যার, হ্যাঁ স্যার, বলুন….”, আমতা আমতা করতে করতে সুকন্যা কোনোরকমে চোখের জল মুছে নিজেকে সামলে নিলেন।
“আপনাকে কতবার ফোন করেছি, একবারও দেখেছেন?”, বলে সোফায় আসন গ্রহণ করলেন নবীনকুমার ভদ্র।
কোনোরকমে টেবিলের সামনে এসে ফোনটা তুলে দেখলেন, সাতটা মিস্সড কল। সুকন্যা জানতেন, যে এই কলগুলি আসবে। এটা তাঁর কাছে অপ্রত্যাশিত কিছু নয়, কারণ মোবাইলে সময় বলছে দশটা কুড়ি এবং মিটিং–এর সময় ছিল ঠিক দশটা। সুকন্যাও খুব সচেতন থাকেন এই বিষয়ে কিন্তু কেন যেন আজ তাঁর কাজে মন নেই, কেন যেন আজ বারবার তাঁর ছোটবেলায় ফিরে যেতে ইচ্ছে করছে, কেন যেন সেই মানুষগুলোর সাথে কাটানো মুহূর্তগুলো ফিরে পেতে ইচ্ছে হচ্ছে, কেন যেন ছোটবেলার স্মৃতিগুলো তাঁকে তাড়া করে বেড়াচ্ছে, এই অফিস ঘরের আনাচে –কানাচে যেন সেই স্মৃতিগুলো জমাট বাঁধছে আর তাঁর চোখের কোণে জল এনে দিচ্ছে। তাই কোনো অযথা অজুহাত দিলেন না তিনি, শুধু বললেন, “সরি স্যার, আমি আজ মিটিংটায়ে যেতে পারবো না, আজ আমি অফিসে থাকতে চাই। ”
কিছুটা হতভম্ব হয়ে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকার পর বড়োবাবু বললেন, “ঠিকাছে, কিন্তু সেটা তো জানাতে পারতেন। কোনো ব্যাপার না, আপনি আমায় ফাইলটা দিন, আমি প্রীতম্বরকে পাঠিয়ে দেব। ”
“আচ্ছা স্যার।”, বলে সুকন্যা ফাইলটা বড়োসাহেবের হাতে দিয়ে তখনকার মতন যেন নিস্তার পেলেন। বড়োসাহেব ঘর থেকে বেরিয়ে গেলেন। কোনোদিকে না তাকিয়ে সুকন্যা চেয়ারে বসে পড়লেন। কেন আজ তিনি এত ভাবছেন এইসব নিয়ে, এর আগে তো কোনদিনও এত ভাবেননি, ভাবার সময়ও পাননি। আজও তাঁর কাছে সময় নেই, টেবিলের ওপর রেখে যাওয়া ফাইলগুলো আরও কত কি।
চেয়ারে বসে হাতের ডানদিকে থাকা ড্রয়ারটা থেকে একটা ডায়েরি বের করে নিয়ে ড্রয়ারটা বন্ধ করে সেটা মনোযোগ সহকারে পড়তে আরম্ভ করলেন। যদিও সেই ডায়েরির কিছু পাতাতেই তাঁর জীবনের কিছু মূল্যবান মুহূর্ত লেখা, যার লেখিকা সুকন্যা নিজেই। সুকন্যা তাঁর মাকে দেখেই ডায়েরি লেখার নেশা ধরেন, যদিও তার অস্তিত্ব ক্ষণস্থায়ী। শেষ লেখা ২ রা জানুয়ারি; আজ থেকে আট–নয় বছর আগের ঘটনা যখন সে তার পরিবারের সাথে শেষবার বেড়াতে যায়, সেই পিকনিকের ছবিও আছে এই ডায়েরিতে। কিছুটা পড়ে ডায়েরিটা তার নিজস্ব স্থানে রেখে দেন সুকন্যা। ডানপায়ের ওপর বাম পা তুলে আবার যেন সুকন্যা আকাশ পাতাল ভাবতে আরম্ভ করেন।
“আজকে পুজো আর আজও তুই কাজ করছিস সুকু, কম্পিউটার থেকে চোখটা সরিয়ে দেখ সবাই এসেছে, যা সবার সাথে গিয়ে দেখা কর”
“না বাবা, এখন আমি বেরিয়ে যাব অফিসে। ফিরতে ফিরতে রাত হবে, তোমরা খেয়ে নিও আমি খেয়ে আসব হয়তো। ”
“আজও সুকু? আজ বাড়ির গৃহপ্রবেশ আর আজ তুই….”
“হ্যাঁ বাবা, খুব জরুরী মিটিং আজ। তোমরা তো আছো। ”
“কিন্তু সুকু আমরা তোকে চাই, তুই থাকলে কত ভালো হতো। ”
“পরেরবার নিশ্চয়ই থাকবো বাবা.. ”
“কিরে সুকু, এইদেখ আজ আমরা কেউ কোথাও যাবো না। কতদিন একসাথে সময় কাটাইনি বলতো!তাই আজ আমরা একসাথে সিনেমা দেখবো আর তোর সেই প্রিয় খেলাটা আছে না—ওটাও খেলবো.. ”
“আজ হবেনা, আজ আমায় বেরোতেই হবে মা। ”
সুকন্যার আবার বাস্তব জগতে ফিরে এলেন, তবে কারোর ডাকে নয় দেওয়াল ঘড়িটার ‘ঢং–ঢং–ঢং–ঢং’ শব্দে। দুচোখ ভর্তি জল, কোনোরকমে জল মুছে টেবিলে রাখা ফাইলগুলো তুলে নিলেন। একটার পর একটাতে সই করতে আরম্ভ করলেন। পাঁচটার সময় কাজ শেষ করার পর ডানদিকের ড্রয়ারে রাখা ডায়েরিটা বের করতে গিয়েও করতে পারলেন না— ঠিক সেইসময় টেলিফোনটা ক্রিং–ক্রিং শব্দ করে বেজে উঠলো।
টেলিফোনের ওপারে নিশিকান্ত ভৌমিক বলে উঠলেন, “ম্যাডাম, পুরোহিতকে আমি খবর দিয়ে দিয়েছি। আপনি যদি একবার বলে দেন কারা আসবে, তাহলে সেই মতন ব্যবস্থা নেব আরকি। ”
নিশিকান্ত ভৌমিকের কথা শেষ হতে না হতেই অফিসঘরের দরজায় এসে উপস্থিত হলেন প্রীতম্বরবাবু—জিজ্ঞাসা করলেন, “আসবো ম্যাডাম?”
সুকন্যা জানতেন তিনি আসবেন তাই আর কিছু না বলে খালি চেয়ারে বসতে বলার ইঙ্গিত করলেন।
“আমি আপনাকে পরে জানাচ্ছি, রাখলাম”, বলে রিসিভারটা যথাস্থানে রেখে প্রীতম্বরবাবুর দিকে তাকালেন।
নিম্নস্বরে বললেন,“এই যে ফাইলগুলো, নিয়ে যান।”
ফাইলগুলো হাতে তুলে নিয়ে প্রীতম্বরবাবু বেশ কৌতুহলী হয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, “ম্যাডাম, একটা কথা বলবো? শুনলাম আপনি নতুন ফ্ল্যাট কিনছেন কিন্তু আপনার যা অবস্থা আপনি তো একটা বাড়ি বানাতেই পারেন। ”
সুকন্যার ব্যক্তিগত জীবনের বিষয়ে অধিক কৌতুহলী মানুষকে যদিও তিনি খুব একটা পছন্দ করেননা, তাই যেন একটু বিরক্ত হয়েই বললেন, “হ্যাঁ করাই যায়, কিন্তু তার কি কোনো প্রয়োজন আছে, আমি তো মনে করি না। অন্তত আমার মতন একা থাকা মানুষের বাড়ির দরকার পড়বে না মনে হয়।”
প্রীতম্বরবাবু এই অফিসে নতুন, নতুন বলা যায় না আসলে, তিনি এই অফিসেরই অন্য শাখায় কাজ করতেন, গত ছমাস ধরে তিনি মেন অফিস অর্থাৎ এই অফিসে সুকন্যার অধীনে কর্মরত।
সুকন্যা একটা দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে বললেন, “ আপনার হলে আপনি আসতে পারেন, আমি আজ অফিস থেকে একটু তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরব, তাই বাকি কাজগুলো শেষ করে ফেলতে চাই। ”
“যে মানুষটা মিটিং–এ গেলেও তাঁকে জিজ্ঞাসা করতে ভোলেন না যে মিটিং কেমন গেলো, সেই মানুষটা আজ মিটিং–এ না যাওয়া সত্বেও মিটিং এর বিন্দু–বিসর্গ জানতে চাইলেন না!” একথা ভাবতে ভাবতে শুধু “আচ্ছা ম্যাডাম। ”, বলে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলেন প্রীতম্বর।
বাকি কাজগুলো কিছুটা অগোছালোভাবে শেষ করে সন্ধে ছটার সময় ঘরের উদ্দেশ্যে রওনা হলেন সুকন্যা। বিদেশী কোম্পানীর সুবৃহৎ চারচাকা গাড়িতে করে বাড়ি ফেরার সময় রাস্তার ধরের ফুলের দোকান থেকে গোটা চারেক রজনীগন্ধা ফুলের মালা কিনে ঘরে ঢুকলেন।
দ্বিতলবিশিষ্ট পৈতৃক বাড়িটি বেশ বড়, জন্মের পর থেকে এখানেই সুকন্যার বড় হয়ে ওঠা, কাজের সূত্রে বাইরে থাকলেও বিগত সাতটা বছর তিনি এখানে। সবাই চলে যাওয়ার পর দুতলার ঘরগুলো বন্ধ করে দিয়েছিলেন সুকন্যা। তাঁর মতে, একতলার দুটো ঘর তাঁর পক্ষে যথেষ্ট।
সদর দরজা থেকে ঘরে ঢুকে লাইটটা জ্বালাতে গিয়েও জ্বালালেন না, ধীরে ধীরে এগিয়ে গেলেন দরজার ঠিক উল্টো দিকের দেওয়ালটার দিকে। একটা ছোট্ট বাল্বের আলো দেওয়ালের সামনে থাকা ছোট্ট দেরাজটাকে আর দেওয়ালে টাঙানো ছবিগুলোকে আলোময় করে তুলেছে, ছবিতে সুকন্যার মা, বাবা আর বোন।
সুকন্যা পুরোনো ফুলের মালাগুলোকে খুলে নিয়ে ধীরে সন্তর্পণে নতুন মালাগুলো পরিয়ে দিলেন, ফুলের গন্ধে পুরো বাড়ি ভরে উঠলো আর বর্ষার খরস্রোতা নদীর মতো তাঁর চোখে নেমে এল অশ্রুবারি, প্রিয় মানুষকে হারানোর বেদনা। কাঁদতে কাঁদতে দেরাজের পাশের সোফাটায় বসে পড়লেন সুকন্যা। মনে পড়ে গেলো সেই দুর্ঘটনাটার কথা, আজও তাঁর স্পষ্ট মনে পড়ে ফোন আসার কথা, যেখানে ফোনের ওপার থেকে অচেনা গলায় একজন তাঁকে জানান সেই ভয়ংকর দুর্ঘটনার কথা,শেষে সুকন্যা জানতে পারেন তাঁর সাথে দেখা করতে আসতে গিয়েই তাঁদের গাড়িটার সাথে মালবাহী ট্রাকের ধাক্কায় গাড়িটা উল্টে যায় আর তাতে গাড়ির ভিতরে থাকা সকলের সেখানেই মৃত্যু ঘটে– শেষ দেখাও হয়না সুকন্যার সাথে।
হঠাৎ ডোরবেল বাজার শব্দ শুনে দরজাটা খুলতে দৌড়ে গেলেন, কিছুক্ষণের জন্য যেন তার মনে পড়ে গেলো তাঁর বাবার কথা। দরজা খুলে দেখলেন দাঁড়িয়ে আছেন নিশিকান্ত ভৌমিক।
নিশিকান্তবাবু বললেন, “ম্যাডাম, আপনি কিছু আর বললেন না বলে আমি চলে এলাম। কালকে কখন শিফট করবেন আপনি?”
সুকন্যা মনস্থির করে কাঁদতে কাঁদতে বললেন, “আমি পারবো না, আমার পক্ষে সম্ভব নয় এই বাড়ি বিক্রি করা।”
“তাহলে নতুন ফ্ল্যাটটা?” বললেন নিশিকান্তবাবু।
“এই বাড়িটার সাথে আমার সবচেয়ে সুন্দর সময়ের মুহূর্তগুলো জড়িয়ে, যদিও এর আগে কোনোদিন সেগুলোকে উপভোগ করতে পারিনি, আর হয়তো চেষ্টাও করিনি, তাই হয়তো এটাই আমার নিয়তি। কিছু তো করতেই পারলাম না, তাই জীবনের বাকিসময়টা এখানেই থাকতে চাই। যখন কাছের মানুষগুলো, ভালোবাসার মানুষগুলো আমাদের পাশে থাকেন, আমরা অনেক সময় বুঝতেই পারিনা তাঁদের অস্তিত্বের গুরুত্বটা, তাঁদের ভালোবাসার গুরুত্বটা….”
সংযুক্তা বোস, বগুইহাটি
লেখালেখি করার মাধ্যমে নিজেকে খুঁজে পাই। অনেক কথা যখন বলে প্রকাশ করতে পারিনা, তখন এই লেখালেখি প্রিয় বন্ধু হয়ে ওঠে। সে দিন হোক কিংবা রাত, কাগজ আর কলম থাকলে নিজেকে ভাসিয়ে নিয়ে যাই অনুভূতির সেই শহরে, যেখানে আমার চিন্তা, আমার ভাবনা, আমার লেখনী শক্তির বাস।