জাপান পর্ব ৯ ২৩ শে এপ্রিল থেকে ২৯ এপ্রিল
এই সপ্তাহে আমাদের আলাপ হয় আমাদের বিল্ডিং এ থাকা এক ভারতীয় তথা বাঙালির সাথে। বাবিকে স্কুলে যাওয়ার পথে ,তিনি ভাস্করকে বাংলাই কথা বলতে শোনেন , সেই সূত্রে কথার শুরু। যদিও আমি অনেক দিন আগেই আন্দাজ করেছিলাম উনি বাঙালি। অনেকসময় পথে বেড়োতে ,সামনাসামনি হয়েছি , উনি হয়তো আমাদের দেখে বোঝেননি। অনেকেই আমাকে আর ভাস্করকে দেখে বাঙালি ভাবেনা। আমাদের চেহারাটা নাকি অনেকটা অবাঙালির ন্যায়। কথাবার্তা তে জানা গেলো উনি জানুয়ারী থেকে এখানে আছেন।এসেছেন ৬ মাসের জন্য। আগামী ২৬শে এপ্রিল , স্ত্রী ও পুত্র আসছে , দেড় মাস থেকে সবাই একসাথে , দেশে ফিরে যাবেন। নাম প্রিয়াঙ্ক ঘোষ , পেশায় কানপুর আই আই টির অধ্যাপক। বেশ খুশ মেজাজ মানুষ। এসেছিলেন ও আমাদের ঘরে। স্বস্ত্রীক আলাপ করতে। স্ত্রীর নাম কস্তুরী ঘোষ। ছেলে বর্ণ। বেশ ভালো লাগলো , জাপানে এসে কিছুদিনের জন্য ও বাঙালি পাওয়া ,বেশ মজার কিন্তু।
আমার মেয়ের স্কুলে নিত্যনতুন নতুন কিছু ঘটনা ঘটে। আমি নতুন , তাই আমার কাছে সবই বেশ মজার। মেয়ের স্কুলে পড়াশোনা হয়না আগেও বলেছি। শুধু খেলা , গাছ লাগানো , পরিষ্কার করা , সাবলম্বী হওয়ার জন্য যা যা করতে হয় সে সব শেখানো , ব্যায়াম এসব করানো হয়। মাঝে মাঝে , অনেক বই মানে ম্যাগাজিন এর মতো পাঠায় স্কুল থেকে , কিন্তু তা আমার বোধগম্য নয়। সব জাপানীস এ লেখা। এ সপ্তাহে যেমন গাছ পাঠালো , বললো বাড়িতে লাগাতে , বড় করতে। মাঝে মাঝে , মনে হয় কোনো কোনো কোম্পানি স্কুলে এসে তাদের পণ্য প্রচার করে। সেগুলো এরা অভিভাবকদের দেয়। বেশ ভালো ধারণা কিন্তু। মেয়ের স্কুলে খেলায় হয় তাই বই বলে কিছু নেই। দুটো ছোট্ট ডায়েরি মতো। একটাতে অ্যাটেনডেন্স (উপস্থিতি ) দেখা হয় আর একটাতে ছবি বা স্টিকার লাগাতে হয় , অনেকটা ছবি দেখে পড়ার মতো। উপস্থিতি খাতাটা বেশ। এক একদিনের জন্য এক এক রকম স্টিকার। মেয়ে আমাকে বোঝায় ও এটা এই জন্য ওটা সে জন্য ইত্যাদি ইত্যাদি।
আমি এখন যখন তখন রাস্তায় সাইকেল নিয়ে বেরিয়ে যায় , বেশিরভাগ সময় একা , যখন মেয়ে বর কেউ থাকে না। এখানে রাস্তার পাশে দু ধার দিয়ে গাছ লাগানো। শুধু বড় গাছ নয় , গাছের গোড়ায় ও থাকে সুন্দর সুন্দর ফুলের গাছ। এসে থেকে বিভিন্ন রকম ফুলের সাথে আমার আলাপ হয়ে গেছে ইতিমধ্যে। তাই নতুন কাউকে পেলে চট করে ছবি তুলে নিতে ভুলিনা।
এখানে রাস্তার ফুটপাথে একটু দূরে দূরেই পানীয়ের ভেন্ডিং মেশিন বসানো। কিন্তু অদ্ভুত ব্যাপার এদের স্টকের। এতো রকমের পানীয় , যে সব ভেন্ডিং মেশিনে সব একই রকমের পানীয় আপনি পাবেন না। শুধু ভেন্ডিং মেশিনই নয় , এদের এই স্টক বিভিন্ন কুকিজ ,কেক ,বা অন্য অনেক খাবারের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। যা আজ আপনার ভালো লাগলো , তা আবার আপনি হয়তো না ও পেতে পারেন। এরা মানুষের স্বাদ নিয়ে এতো গবেষণা করে , যে কেউ যেন একই খাবার খেয়ে একঘেঁয়ে মনে না করে , তাই নাকি এটা এদের একরকমের পরীক্ষা যাকে বলে এক্সপেরিমেন্ট। আমিও সুযোগ কম নি , যখন যেটা ভালো লাগে একসাথে হাফ ডজন তো কিনেই আনি। ভেন্ডিং মেশিন এ ১০০ থেকে ২০০ এর মধ্যে যে কেউ নিজের পছন্দের পানীয় ঠিক পেয়ে যাবে। কোকাকোলা , জল ছাড়া, বিভিন্ন স্বাদের জুস , গন্ধ মেশানো জল , আরো অনেক কিছু , তার মধ্যে আমার পছন্দের পীচ কোকাকোলা ,যেটা আমাদের দেশে এখনো উপলভ্য নাকি আমার জানা নেই , এছাড়া আনারস সিডার আমার বেশ পছন্দের।
বাজারে গেলেও এখন আমার পছন্দের দোকানের সাথে সাথে পছন্দের কিছু খাবার ও তালিকাতে নথিভুক্ত করেছি আমি। তার মধ্যে কিউই জুস সীড শুদ্ধু ,লেমন টি আর কিছু পছন্দের কুকিজ , পছন্দের লজেন্স আর চুইংগাম তো আছেই।
আমার মেয়ের দই খাওয়ানোর এক্সপেরিমেন্ট করতে গিয়ে এখানে অনেক রকমের yougurt এর স্বাদ আমার নখ দর্পনে।জাপানীস yougurt গুলো বেশ ভালো,তাতে ফলের টুকরো মেশানো থাকে , কিন্তু আমার মেয়ে সেই ঘুরে ফিরে ইন্ডিয়ান yougurt ভালো লাগে। তার পছন্দের একটা চকলেট পুডিং , এখন আমার সাপ্তাহিক লিস্টে স্থায়ী সদস্য। এছাড়া তার জুসের লিস্ট ও অনেক লম্বা , কখনো ট্রপিক্যানা কোনো জাপানীস ব্র্যান্ড কামিনো। এখন সেই পছন্দ এসে দাঁড়িয়েছে ডেল মন্টের আনারসের জুসে।
এছাড়া একবার বাজারে গেলে যা পাই , উঠিয়ে আনি , যেমন ডিম্ দই দুধ মাংস ছেড়ে সবজির মধ্যে যা যা পাই , কুমড়ো, ফুলকপি, বাঁধাকপি, ঢেড়শ, বেগুন, লংকা ,ধনেপাতা ,পেঁয়াজকলি,সস,গাজর । হ্যাঁ , সবজি বাজারে এর থেকে বেশি চেনা আমি কিছু পাইনি এতদিনে। কতদিন যে , বাঁধাকপি আর ফুলকপির ভরসায় দিন চলবে জানিনা। মেয়েকে আলুর পরোটার সাথে বাঁধাকপি দেবার আগেই সে চেঁচিয়ে ওঠে বলে , “মা আমার এমনি এমনি আলুর পরোটা ভালো লাগে , তোমার বাঁধাকপির দরকার নেই ” . বোঝো কান্ড।
এতো গেলো খাওয়াদাওয়া আর সাপ্তাহিক জীবনযাপন। এবার পরিকল্পনা শুরু সপ্তাহান্তিক কালে ঘুরে বেড়ানোর। এসেছি পর্যন্ত একটা শনিবার ও বাড়িতে বসিনি। উল্টে রবিবার ও অনেক সময় বেরিয়ে পড়েছি। এবারে আমাদের সাথী হলো দুটো ইন্ডিয়ান পরিবার , এক ঘোষ পরিবার আর একজন ভাস্করের যাতায়াতের পথে পরিচিত এক মুসলিম পরিবার (স্বামী-স্ত্রী ) ,ফারহাজ আর সামিনা। আমার পুরোনো সাইকেল টা সামিনা কে আমরা দান (মেয়ের বেবি সিট্ লাগতে আবার ১১৫০০ ইয়েন এ একটি সাইকেল কিনতে হয়েছে ) করেছি , সেই সূত্রে , একটু বেশি জানাশোনা। পরিকল্পনাতে ছিল Hiei mountain .ফারহাজ বার বার বলছিলো ট্রেনের পথে যেতে , কিন্তু প্রিয়াঙ্ক দা বলছিলো একটা নাকি বাস আছে, যেটা সোজা Hiei mountain যায়। ভাস্কর আর আমি কিছু না বুঝে ,যেদিকে হাওয়া সেদিকে গেলাম। দুপুর ১ তা নাগাদ শনিবার সবাই মিলে চললাম Hiei এর পথে। প্রিয়াঙ্ক দা , নাকি বাস টাকে অনেকবার অফিস থেকে যাতায়াতের পথে দেখেছে। আমরা সেই শুনে বেশ সুনিশ্চিত ছিলাম আমরা ঠিক পথে এগোচ্ছি।
কিন্তু সব ভুল ভাল হয়ে গেলো। প্রিয়াঙ্ক দা , ওই বাস কে গিনকাকুজি থেকে ঘুরে যেতে দেখেছে(যা দেখেছে সব ঠিক ই দেখেছিলো , শুধু কিছু তথ্য জানা ছিল না , যা আমরা আগামী কিছু সময়ে জানতে পারলাম ) , সেই শুনে , আমরা সবাই চড়ে বসলাম ৫ নম্বর বাস এ। নেমে পড়লাম ,গিনকাকুজি স্টপে। কিন্তু গুগল ম্যাপ দিলো সব চটকে। খুঁজেই পাচ্ছিলাম না , কোথা থেকে ওই বাস ছাড়ে। অনেক কষ্টে যখন খুঁজে পেলাম তখন প্রায় ২ টো। বাসস্টপ এ গিয়ে দেখলম্ ২:১৪ তে বাস। বাসস্টপে সব জাপানীস লেখা ছিল। কিছু বুঝে উঠতে না পেরে , ওখানেই অপেক্ষা করার ডিসিশন নিলাম। একটু পরে এক ভদ্রমহিলা , জাপানীস , কিন্তু ইংলিশ বলতে ও বুঝতে পারে , তাকে জিগেস করতে জানলাম Hiei Mountain যাওয়ার বাস নাকি দিনে একটা , সকালে একবার যায় , আর বিকেলে ফিরে আসে। হয়ে গেলো ঘেটে ঘ, কেলেঙ্কারি। এবার কি করা যায় , কোথায় যাওয়া যায়!!! ফারহাজ বলছিলো , ট্রেনে চলো , আমি বললাম আজ থাক। কারণ বাস এর সারাদিনের পাস নেওয়া হয়ে গেছে ইতিমধ্যে , এখন ট্রেনে গেলে শুধু শুধু টাকা নষ্ট , তার থেকে বরং , আমাদের রাস্তায় কোনো ভালো জায়গাতে যায় , যেখানে আমাদের তিন পরিবারের কেউই যায়নি। বেশ বেশ। সবাই রাজি। গন্তব্য ঠিক হলো Nijo Castle.
ভাস্কর আমি জাপান আসার আগেই nijo castle ঘুরে এসেছে। কিন্তু , আমার খুশি ওর খুশি , আজ না হোক কাল যেতাম ই। আজি যাই।সামনের বাসস্ট্যান্ড থেকে ১০১ নম্বর বাস ধরে ৩টের আগেই পৌছালাম Nijojocho, Nakagyo Ward এ। বাসস্ট্যান্ডে পৌঁছাতে দেখা মিললো এক প্রৌঢ় ভদ্রলোকের সাথে , জাপানীস , সাইকেল এ চড়ে। আমাদের আগেও তিনি দুটি জাপানীস মেয়েকে রাস্তা চিনিয়ে দিতে সাহায্য করছিলেন। এগিয়ে এলেন নিজেই আমাদের দিকে। আমাদের ইংলিশ এ জিগেস করলেন কোথায় যাবেন ?আমরা নিজো র কথা বলতেই দেখিয়ে দিলেন রাস্তা। একবার নয় বার বার বোঝাতে থাকলেন কোন দিক দিয়ে যেতে হবে। সত্যি একেই বলে অভিজ্ঞতা। মানুষ দেখা , দেশ দেখা। ৩ মিনিট হেঁটে , সামনেই NIJO catle এর গেট , প্রচুর ভিড় , টিকেট এর লাইন এ।
castle এখানে এসে প্রথম দেখা। লক্ষ করলাম castle এর চারপাশ একটা সরু জলাশয় দিয়ে ঘেরা। এর নাকি অনেক ইতিহাস। এই castle এর অনেক কিছু অনেক মূল্যবান জিনিস দিয়ে সাজানো , সোনার ব্যবহার ও আছে নাকি। প্রকান্ড সোনালী গেট। ছবি তোলা শুরু। একান্তে, স্বপরিবারে। প্রথম গেট পেরিয়ে বালির রাস্তা। একপাশে একটা আধুনিক বোর্ডের মতো জিনিস।সামনে গিয়ে দেখলাম , সেখানে বিভিন্ন ভাষার সুইচ দেওয়া।যেটা টিপবেন , সেই ভাষা অনুযায়ী সেখানে Nijo Castle এর ইতিহাস এর রেকর্ডিং বাজছে (ইংরেজি অডিও গাইড )।
এবার এলো দ্বিতীয় গেটের পালা। আইয়া বড়ো গেট। সাথে সোনালী কারুকার্য। সোনা নাকি অন্য কিছু জানি না। তবে সোনার মতো কোনো দামি ধাতুর তো হবেই।এটি চীনা শৈলী তৈরী একটি গেট, নাম Karamon। গেটের সামনে সাদা বালির মাঠ, আর সামনে আরো একটা প্রবেশ পথ বা আসল দুর্গ। ভেতরে ছবি তোলা বারণ। কারণ এর ভেতরে আছে অনেক মূল্যবান পেইন্টিং। ভেতরে গেলাম ,ভাস্কর আগেও বলেছিলো যখন আমরা ভেতরে গিয়ে হাঁটবো , তখন দেখবে , পাখির আওয়াজ হবে , তোমার হাঁটার সাথে সাথে। সত্যি। ভেতরের পরিবেশ অন্যরকম। অনেক গুলো হল , তাতে বড়ো বড়ো পেইন্টিং আর রাজাদের সেই সময়ের বিভিন্ন সংস্কৃতির প্রদর্শনী। আমি নেহাত সাদামাটা মানুষ আমার , মন চাইছিলো সব ক্যামেরা বন্দি করতে , কারণ এর অনেক কিছুই আমি বুঝিনি , বা পরে ভুলে যাবো কিন্তু উপায় নেই।
পরে ইন্টারনেটে দেখে যেটুকু বুঝলাম সেটুকু বলি :
নিঝো কাসল (二条 城, নিঝোজো) 1603 খ্রিস্টাব্দে ইডো পিরিয়ড (1603-1867) এর প্রথম শোগু, টোকুগোয়া আইয়াসু’র কিয়োটো বাসভবন হিসাবে নির্মিত হয়েছিল। তার নাতি ইমিটিসু প্রাসাদ ভবনটি ২3 বছর পরে সম্পন্ন করে এবং আরও পাঁচটি দুর্গ নির্মাণ করে দুর্গ প্রসারিত করে।187২ সালে টোকুগাওয়া শোগুনাটের পতনের পর নিঝো কাসল কিছুদিনের জন্য রাজকীয় প্রাসাদ হিসেবে ব্যবহৃত হয় এবং শহরটিকে একটি ঐতিহাসিক স্থান হিসাবে উন্মুক্ত করে দেয়। এর প্রাসাদের ভবনগুলি যুক্তিযুক্তভাবে জাপানের সামন্ত যুগের দুর্গ প্রাসাদ স্থাপত্যের সর্বোৎকৃষ্ট উদাহরণ এবং এই দুর্গকে 1994 সালে ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান ঘোষণা করা হয়।
নিঝো কাসলটি তিনটি অঞ্চলে ভাগ করা যায়: মানমারু (প্রতিরক্ষার প্রধান বৃত্ত), নিনামুরু (প্রতিরক্ষার মাধ্যমিক সার্কেল) এবং কিছু বাগান যা মানমারু ও নিনামুরুকে ঘেরাও করে। পুরো দুর্গস্থল, Honmaru পাথরের দেওয়াল এবং moats দ্বারা বেষ্টিত হয়।
দুর্গের ভেতরে ঢুকলে দর্শকরা একাধিক অপেক্ষা এবং শ্রোতা কক্ষ দ্বারা পাস (অতিক্রম ) করবে। কেবলমাত্র সর্বোচ্চ শ্রোতাদের দর্শকরা প্রধান শ্রোতাদের কক্ষে প্রবেশ করার অনুমতি পায় , যেখানে শোগুন একটি উঁচু মেঝেতে বসে থাকতে দেখা যায়। নিম্ন পর্যায়ের পরিদর্শকদের কেবল শোগুনের সরাসরি দৃশ্য ব্যতীত পাশের কক্ষগুলির দেখার অনুমতি দেওয়া হয় । অভ্যন্তরীণ কক্ষগুলি অফিস এবং জীবন্ত চেম্বারগুলির অন্তর্ভুক্ত ছিল, যা পরবর্তীতে শোগুণ এবং তার মহিলা পরিদর্শকদের জন্য কেবলমাত্র প্রবেশযোগ্য ছিল।Ninomaru প্রাসাদ বাইরে Ninomaru বাগান, একটি বড় পুকুরে, শোভাময় পাথর এবং manicured পাইন গাছ দিয়ে একটি ঐতিহ্যগত জাপানি ল্যান্ডস্কেপ বাগান তৈরী করা রয়েছে ।
Honmaru (প্রতিরক্ষা প্রধান সার্কেল) ছিল একটি দ্বিতীয় প্রাসাদ,একটি জটিল, পাঁচতলা দুর্গ স্থান। যাইহোক, 18 শতকের উভয় কাঠামো আগুন দ্বারা ধ্বংস হয় এবং আর পুনর্নির্মাণ করা না হয়। শোগুয়েটার পতনের পর, একটি সাম্রাজ্যবাদী আবাস কাতুসুরা ইমপেরিয়াল প্যালেস থেকে নিঝো কাসলের হনমারুতে স্থানান্তরিত হয়, যেখানে এটি আজকের মানমানু প্রাসাদ হিসাবে অবস্থিত।Ninomaru প্রাসাদ এর মতো , Honmaru প্রাসাদ নিয়মিত খোলা থাকে না ,বিশেষ অনুষ্টান বা দিন ছাড়া । দর্শকরা Honmaru বাগান চারপাশে পায়চারি করা এবং সাবেক দুর্গ পাথরের পাথর আরোহণ করার সুযোগ পাবেন , যা আমরাও পেয়েছি , যার শেষ প্রান্তে সিঁড়ি বেয়ে ওপরে উঠলে দুর্গস্থল এর উপর দৃশ্য দেখা সম্ভব হয় ।
হানমানু ও নিনামুরু সবুজ স্থান দ্সবুজ গাছে ঘেরা ।এখানে অনেকগুলি জাতের চেরি গাছ ক্রমবর্ধমান ভরাডুবিতে রোপণ করা হয়, যার মধ্যে চেরি বাগানে প্রায় 400 টি চেরি গাছ রয়েছে। বেশিরভাগ চেরি বৃক্ষের প্রজাতির উপস্থিতির কারণে, নিঝো কাসেলের ফুলের মরসুম সাধারণত মার্চ মাসের শেষের দিক থেকে এপ্রিল মাসে পুরো মাস জুড়ে থাকে। কাসেলের মাঠের বেশিরভাগ এলাকা ম্যাপেল, জিঙ্কো এবং অন্যান্য গাছ দ্বারা আচ্ছাদিত হয় যা সাধারণত নভেম্বরের দ্বিতীয়ার্ধের সময় উজ্জ্বল শরতের রং প্রদান করে।
কি করে পৌঁছাবেন NIJO CASTLE :
নিঝো কাসলের প্রবেশদ্বার তোজাই সাবওয়ে লাইনের সাথে নিঝোও-মিয়া স্টেশন থেকে অল্প পরিসরে।
কিয়োটো স্টেশন থেকে, করসুমমা সাবওয়ে লাইনকে করসুমা-ওকি স্টেশন থেকে ট্রেন নিন এবং সেখান থেকে তোজাই লাইনের নিঝোও-ম্যায় স্টেশন থেকে ট্রেন চেঞ্জ করুন। পুরো ট্রিপ প্রায় 15 মিনিট সময় লাগে এবং 260 ইয়েন খরচ হয়। বিকল্পভাবে, কিয়োটো স্টেশন কিউটো সিটি বাস নম্বর 9, 50 বা 101 (15-20 মিনিট, 230 ইয়ান এর আর এক উপায়) দ্বারা কিয়োটো স্টেশনে অথবা কিয়োটো সিটি বাস 1২ নম্বর (15 মিনিট, ২30 ইঞ্চি এক পথ) শিজো-কাওরমামা থেকে কেল্লা পৌঁছতে পারে। )।
এছাড়া আরো একটি পথ ঠিক উল্টো দিক থেকে আসে ,যেভাবে আমরা পৌছালাম , শহরের উল্টোদিক থেকে।
প্রবেশ সময় ও প্রবেশ মূল্য :
8:45 থেকে 17:00 (16:00 পর্যন্ত ভর্তি), 9:00 থেকে 16:00 পর্যন্ত Ninomaru প্রবেশ খোলা।
জানুয়ারী, জুলাই, আগস্ট এবং ডিসেম্বর মাসে মঙ্গলবার (অথবা মঙ্গলবার যদি একটি জাতীয় ছুটির দিন থাকে), ২6 শে ডিসেম্বর ২4 জানুয়ারি–এই দিন গুলিতে কেল্লা বন্ধ থাকে।
প্রবেশ মূল্য 600 ইয়েন।এছাড়া ইংরেজি অডিও গাইড 500 ইয়েনের জন্য উপলব্ধ থাকে। ইংরেজিতে দুর্গটির 90-মিনিট নির্দেশিত ট্যুরগুলি ২000 ইয়েনের জন্য প্রতিদিন দুবার করে রাখা হয়।
আমরা Nijo কেল্লা থেকে বেরিয়ে , পাশের হনমরু বাগান পরিদর্শন করি,তারপর একটু জিরিয়ে নি চা কফি ঠান্ডা খেয়ে। সময় তখন ৫ টা ছুঁই ছুঁই। আমরা কিয়োটো স্টেশনের খুব কাছাকাছি। তাই কথা হলো , পরবর্তী গন্তব্য কিয়োটো টাওয়ার , যা গত সপ্তাহে ভাগ্যবশত আমরা দেখে ছিলাম। আজ তার ভেতরে ঢুকে দেখার পালা।
পৌঁছে গেলাম ৫:১৫ নাগাদ কিয়োটো স্টেশন। এদিক ওদিক একটু বসে , ৫:৩০ নাগাদ ভেতরে ঢুকলাম।
যেটুকু জেনেছি , তাতে বলা যায় জাপান এর সবচেয়ে মার্জিত শহর কিয়োটো, যেখানে তার সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য শ্রেষ্ঠ সংরক্ষণ করা হয়েছে। এখানে আমরা লণ্ঠন বাতিঘর, প্রাচীন মন্দির এবং মন্দিরগুলিতে, কাঠামোগত প্রাসাদ এবং ধ্যানমূলক বাগানগুলিতে কাঠের টাউনহাউস খুঁজে পায় বারবার। তাই কিয়োটো স্টেশনের উত্তর সেন্ট্রাল প্রস্থান থেকে প্রত্যক্ষভাবে ছড়িয়ে থাকা (উজ্জ্বল আঁকা লাল ও সাদা) টাওয়ারের দৃশ্যের মাধ্যমে প্রথমবারের মতো কিয়োটো কে দেখে যে কেউ বিস্মিত হতে পারে।
1960 এর তৈরী উজ্জ্বল বাতিঘর, কিয়োটো টাওয়ার 131 মিটার উঁচু , শূন্যগর্ভ থেকে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে। এটা কিয়োটোর মধ্যে সবথেকে লম্বা কাঠামো। এটা যেমন ওপরের আকাশ কে হাতছানি দিয়ে কাছে ডেকে নেই অনায়াসে তেমনি এখন থেকে দেখা যায় চারপাশের দর্শনীয় স্থানগুলি। 50 বছরেরও বেশি সময় ধরে এই অদ্ভুত কাঠামোটি একে একে আধুনিক কিয়োটোয়ের প্রতীক হিসেবে নিজেকে প্রমান করেছে ।কিয়োটো টাওয়ার এর নিচের অংশে দোকান,অনেকটা মল এর মতো, সেখানে পাখার দোকান থেকে বিউটি স্পা সব এ ছিল। সেখান থেকে লিফট নিয়ে ১১ তলা। সেখান থেকে আবার একটা লিফট নিয়ে একদম চূড়ায়।
এই নিবন্ধে আমর অভিজ্ঞতার সাথে সাথে এই টাওয়ারের প্রধান সুবিধাগুলি পরিচয় করিয়ে দেব এবং এটি কিভাবে এবং কেন এটি তৈরি করা হয়েছিল তা ইতিহাসের দিকে একটু নজর রাখবো।
কিয়োটো টাওয়ারের মধ্যে সুবিধার এবং ব্যবসার একটি ধাঁধাময় বিন্যাস রয়েছে , এবং কাছাকাছি আপনার পথ খুঁজে পাওয়াটা কঠিন হতে পারে। এটা বোঝা গুরুত্বপূর্ণ যে কাঠামো দুই ভাগে বিভক্ত করা রয়েছে। এটির ভিত্তি হচ্ছে কিয়োটো টাওয়ার বিল্ডিং, একটি ব্লক বা বিভাগ যার মধ্যে রেস্টুরেন্ট, দোকান, একটি হোটেল, একটি পর্যটন তথ্য কেন্দ্র এবং একটি পাবলিক স্পা রয়েছে। এই ভবনটি আরও 100 মিটারের জন্য আরোহণ করার জন্য কত গুলো পর্যবেক্ষণ মাত্রা পার করতে হয় । এই মাত্রাগুলি পৌঁছানোর জন্য আপনাকে প্রথমে 11 তম তলা পর্যন্ত লিফ্ট নিতে হবে, যা হল বিল্ডিং এবং টাওয়ারের মধ্যে স্থানান্তর বিন্দু। তারপর উচ্চ স্তরের অন্য একটি লিফ্ট নিতে হবে। লেভেল 3 এ স্কাই লাউঞ্জ বার এবং লেভেল 5 এ অবসেরভেশন ডেক্স। অবসেরভেশন ডেক্স পর্যবেক্ষকদের জন্য বছরে 365 দিন জন্য খোলা থাকে , এবং এই জায়গা থেকে পুরো শহর এর ৩৬০ ডিগ্রী বিস্তৃত দৃশ্য দেখা যায় ।
আমাদের পরিকল্পনাতে ছিল আমরা দিন ও রাত দুটির দৃশ্য দেখবো , টাওয়ার থেকে। ১০০ মিটার উঁচু এই ডেস্ক থেকে রোদঝলমল দিনে পুরো কিয়োটো সাহার কে দেখার অভিজ্ঞতা সত্যিই অতুলনীয়। ডেক প্রশস্ত এবং ৩৬০ ডিগ্রী মানে গোল এবং দূরবীনযুক্ত।মাঝে মাঝে ছোট বড় দূরবীন দিয়ে আপনি দেখতে পারেন বিভিন্ন দর্শনীয় স্থানকে হাতের কাছে আছে ।আরো একটা অত্যাধুনিক টেকনোলজি ছিল , বিশাল বড় বড় ,জিপিএস সিস্টেম বসানো ম্যাপ যুক্ত টাচ স্ক্রিন , যা ঠিক দূরবীনের পাশেই রাখা ছিল। এই টাচ স্ক্রিন আপনাকে সাহায্য করবে ঠিক ওই দূরবীন আপনাকে কোন কোন জায়গা দেখতে সক্ষম হবে , সেটাকে সনাক্ত করতে।স্থান গুলো টাচ করলেই তার বিবরণ সমেত অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য আপনাকে অনায়াসে দেখিয়ে দেবে। পূর্বে এখানে অনেক গেম মেশিন ছিল যা সাম্প্রতিক বছরগুলিতে ডেক্সের পুনর্নবীকরণ করা সময় সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।
আমরা সন্ধ্যে অবধি অপেক্ষা করি , এবং দেখি অপূর্ব দৃশ্য , রাতের ঝা চকচক , আলোয় ঝলমল কিয়োটো শহরকে।তজি মন্দির টি কিয়োটো স্টেশনের একদম কাছে তাই, দূরবীন ছাড়াই , তাকে খুব সহজে খুঁজে বার করি আর ক্যামেরা বন্দি করতে সক্ষম হয়।
কিয়োটো টাওয়ারের ইতিহাস :
প্রকৃতপক্ষে 1964 সালে টাওয়ারটির সমাপ্তিটি কিয়োটো ইতিহাসের একটি টার্নিং পয়েন্ট হিসেবে চিহ্নিত হয়েছিল। কিয়োটো টাওয়ারটি এখন যে স্থলে অবস্থিত তা আনুষ্ঠানিকভাবে কিয়োটো সেন্ট্রাল পোস্ট অফিসের স্থানছিল , যা 1961 সালে কিয়োটো স্টেশনের উত্তর-পশ্চিমে, বর্তমান অবস্থানে চলে আসে। পোস্ট অফিসটি সরানোর সিদ্ধান্তটি 1953 সালে আবার চালু করা হয়, এবং সেই সময়ে নগরের প্রবেশের এই নতুন খোলা জায়গাটি কীভাবে ব্যবহার করা যায় সে বিষয়ে নাগরিক ও ব্যবসায়িক নেতাদের মধ্যে কথাবার্তা শুরু হয়েছিল আবার । কিয়োটো চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি এর স্পনসরশিপের অধীনে এটি একটি প্রতিষ্ঠান স্থাপন করার সিদ্ধান্ত নেয় , যা সেতুটির জন্য উপযুক্ত একটি ভবন নির্মাণের তত্ত্বাবধান করবে যা সংস্কৃতি ও শিল্পের কেন্দ্র হিসেবে কাজ করবে এবং পর্যটনকে উৎসাহিত করবে। পরিকল্পনার প্রথম ধাপে কখনোই এখানে কোনো টাওয়ার তৈরি করা হবে তার পরিকল্পনা ছিল না।
প্রবেশ মূল্য :
প্রাপ্তবয়স্কদের: 770 ইয়েন
উচ্চ বিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের: 620 ইয়েন
জুনিয়র উচ্চ ও প্রাথমিক স্কুল ছাত্র: 520 ইয়েন
3 বছর বয়সী শিশু: 150 ইয়েন
প্রতিবন্ধী ব্যক্তি: 350 ইয়েন
প্রবেশ সময় :
খোলা: 9:00 – 21:00 (২0:40 এ সর্বশেষ এন্ট্রি)
যোগাযোগ : 075-361-3215
দিন শেষ , বেরোতে বেরোতে ৭:৩০ বেজে যায়। আজ কথা ছিল নতুন রেস্তুরাঁর। জায়গাটা চেনালেন প্রিয়াঙ্ক দা। বিশ্ববিদ্যালয় এর কাছেই একটা রেস্তুরাঁ, নাম মহা। খিদেয় পেট অস্থির। পেট পূজা করে বাড়ি ফিরতে ফিরতে রাট ১১ টা।
<<জাপান পর্ব ৯ জাপান পর্ব ১১>>
CopyRight @ M K Paul, May,2018
[…] জাপান পর্ব ১০ ২৯শে এপ্রিল থেকে ৪য় মে […]
ALWAYS give an author credit.