জাপান পর্ব ৯: তজি টেম্পল

1
3949

<< জাপান পর্ব ৮                                                                   ১৬ই এপ্রিল থেকে ২২শে এপ্রিল

এখন কখনো রাতে দিনে বাজার বেরোলে , বেশ অনেক চেনা মুখের সাথে দেখা হয়ে যায়। আর যেই না দেখা অমনি গপ্পো। এখন এখানে কয়েকটা পরিবারের সাথে আমাদের বেশ আলাপ। এমনি একদিন গত সপ্তাহের শুক্রবার হবে , আমরা তিনজনে মিলে বেরিয়েছিলাম জুস আর দুধ আনতে , তাও ৭ টা হবে , ফিরলাম কটায়?৮:৩০. এই দু পা হেঁটে সামনেই তিনটে ফুড মল। আর সেখানে দুধ আনতে গিয়ে দেড় ঘন্টা। না না কোনো দুর্ঘটনা নয়। দেখা সাক্ষাৎ আর গল্প। রাস্তার মাঝেই এক ঘন্টা ঠাঁই দাঁড়িয়ে। প্রথমে দেখা হলো ওলগা র সাথে , তার সাথে মিনিট ২০, তার পর পেছন ফিরতেই দেখলাম নীনা , ওর মেয়ে পাওলিন কে নিয়ে সাইকেল এ ওই রাস্তায়। খুব আনন্দ হলো ওদের দেখে। ওরাও ভাবেনি এরকম করে দেখা হয়ে যাবে। নীনা আর পাওলিন, আমার জাপান আসার পরের দিন এ ওদের সাথে আলাপ হয়েছিল ইন্ডিয়ান হোলি (রং খেলা ) পার্টি তে। সে অর্থে বলতে গেলে , পাওলিন বাবির প্রথম বান্ধবী , জাপানে এসে। সত্যি ভাবিনি আবার ওদের সাথে এভাবে দেখা হয়ে যাবে। ওহ। দুজনের সে কি আনন্দ। পাওলিনের ইচ্ছে ছিল সেই মুহূর্তে আমাদের ঘরে আসার। কিন্তু রাত অনেকে হয়েছিল। তাই ওদের আস্তে বললাম এই রবিবারে , ছুটির দিনে।
রবিবার সকাল থেকেই বাবি খুব খুশি। আমরা ওদের ব্রেকফাস্ট এ ডেকে ছিলাম।ওরা এলো। বাবি আর পাওলিন , কোথায় যেন হারিয়ে যাওয়া দুই বোন। কি আনন্দ আর অনেক খেলা।মাঝে একটু আধটু মন কষাকষি তারপর আবার ভাব। আমাদের খুব ভালো লাগলো ওদের দেখে। নীনার সাথেও হলো অনেক গল্প। ওর দেশের (ইন্দোনেশিয়া ) আর আমার দেশের। পাওলিনের জন্য কোনো উপহার সেই মুহূর্তে আমার কাছে ছিল না , তাই ববির একটা হাতের ব্রেসলেট আর মাথার ক্লিপ , ইন্ডিয়া থেকে আনা , সেটাই উপহার দিলাম। বাবি নিজের হাতে পরিয়ে দিলো পাওলিন কে। যাওয়ার সময় রীতিমতো দুজনের এ মন খারাপ। কথা হলো আবার দেখা হবে।

Neena, Pauline and Aadhya

Pauline and Aadhya

 

 

 

 

 

 

এই বোধহয় শেষ সপ্তাহ ছিল সাকুরা মানে Cherry Blossom এর, আমার জানলা গুলো দিয়ে দেখা সাদা গাছ গুলো , কেমন একটা নেড়া হয়ে গেলো। বিবর্ণ। শেষ দুধ সপ্তাহে রোজ ই , একদিন ছেড়ে একদিন বৃষ্টি গেছে। এই সপ্তাহ একটু আকাশ পরিষ্কার। মেয়ের স্কুলেও রোজ একটা না একটা নিত্যনতুন বলতে পারেন , অনুষ্ঠান। কখনো পার্কে ঘোরানো , কখনো জিমনাস্টিকের আয়োজন , কখনো বা কুকিং ক্লাস। সব যেন ঘেঁটে ঘ। মেয়ের স্কুলে এখন দুটো ডায়েরি , একটা তে কবে কবে ছুটি আর অ্যাটেনডেন্স এর হিসাব নিকাশ আর অন্যটিতে রোজ রোজ নতুন কিছু ছবি সাঁটা। ছবি গুলো অবশ্য বাচ্চারাই লাগাই। মেয়ে ভারী খুশি। না আছে পড়াশোনা , না কোনো বকাঝকা। সকল ৮:৩০ থেকে দুপুর দুটো অবধি শুধু খেলা আর খেলা। অরিগামি তে কয়েকটা ফুল বানাতে পারে এই আর কি। আর কিছু নতুন সংযোজন হয়নি ওর প্রতিভার। সে যাক। রোজকার এই নতুন নতুন অনুষ্ঠানের জন্য স্কুল অবশ্য একটা নতুন খাম পাঠায় , হা হা , হ্যাঁ , টাকা জমা দেবার। সে পার্কে যাওয়া হোক বা মিষ্টি খাওয়া , সব কিছুইরি মূল্য দিতে হয়। এই সব অনুষ্ঠানের মধ্যে আর একটি ছিল মা দের মিটিং। যথারীতি আমার কাছে কাগজ এলো জাপানীস লেটার যাকে বলে। তাকে অনুবাদ করে দেখেও নিলাম। যাবো কি যাবোনা , কেন গেলেও তো আর মুম্বাইতে আমাদের মা দের মতো ২ ঘন্টার আড্ডা আর চা -টা জুটবে না কপালে। এর মূল্য ছিল ৩০০ ইয়েন। স্কুলে যেতেই আমার জাপানীস বন্ধু আইক চেপে ধরলো , আমিও জিগেস করলাম কি হবে টা কি। ও বললো তেমন কিছু না , বোর্ড মিটিং এর মতো। ওই দিন সব মা এরা মাইল ঠিক করবে কে মুখ্য দায়িত্ব নেবে, কে কে কি কি কাজ করবে। রাজি হলাম। গেলাম ও। সকল ৯:৩০ সময়। যথারীতি সময় মতো হাজির , ভারতীয় হলেও আমার সময় জ্ঞানটা জাপানীস থেকেও ভালো। গিয়ে দেখি , একটা বড়োসড়ো ঘরে গোল টেবিল বৈঠকে সবাই বসে জাপানীস আলোচনায় ব্যস্ত। আমাকে দেখে আইক বললো কোন কুকিজ নেবো, চোখ পড়লো অনেক রকমের কুকিজ আর চায়ের দিকে। হা হা। এরাও কিছুটা হলেও আমাদের মতো। আমি বললাম কিছু একটা দাও ভাই , সব এ আমার কাছে সমান। আইক আমার পশে এসে বসলো। তারপরের সময়টা হু হু করে কেটে গেলো। মনেও হলো না আমি বিশ জন জাপানীস মায়ের মাঝে বসে আছি।

 

কারণটা ছিল আইক। ও আমাকে এক মিনিটের জন্যও বুঝতে দিলো না আমি ওদের কিছু বুঝিনা। সবাই সহযোগিতাও করলো। কি ভাবে? ভাষা নাই বা জানলাম ,বুঝলাম,কিন্তু মুখের হাসি আর যে আন্তরিকতা ওরা আমায় আজ অবধি দেখায় , সেটা সব মানুষের সত্যিই শিক্ষণীয় বিষয় বৈকি। আমার সম্পর্কে ,আধ্যার সম্পর্ক ওরা জানতে চাইলো ,কত দিন থাকবো , কি পরিকল্পনা ইত্যাদি ইত্যাদি। আমি বললাম ইংলিশ এ , আইক সেটাকে জাপানীস এ অনুবাদ করলো। আবার ওরা ওদের বিষয়ে অনেক কিছু বললো যা আমাকে আইক ইংলিশ এ অনুবাদ করে দিলো। বললাম যে মনেই হলো না , আমি এক অজানা ভাষার মানুষের সাথে এতো স্বাভাবিক ভাবে এতো সহজে মিশে গেলাম। ওরা অনেক রকম চা এনেছিল। গ্রীন টি , মিল্ক টি, লেমন টি , তার মধ্যে লেমন টি টা

আমার বেশ লাগলো। সাথে কুকিজ ও বেশ মুখরোচক।আমি মানেই তো অনেক গল্প আর অনেক ছবি। সবার সাথে অনেক ছবি তুললাম। ওরাও খুব খুশি হলো।

Aiko, Extreme Left

 

 

 

 

 

শেষের সপ্তাহ গুলোতে যেখানেই গেছি , বিশেষ করে আরাশিয়েমা,গিনকাকুজি এসব জায়গায় , যেখানে খাবার ষ্টল ছিল , সেখানে চোখে পড়েছে অনেক রকমের খাবার। এদের সব খাবার এই , বেশিরভাগ , একটা কাঠি গোজা থাকে। মনে হয় , হাত নোংরা হোক সেটা এরা চাইনা। গরুর মাংস হোক , মুরগি বা নিরামিষ কোনো জিনিস , সব কিছু , একটা লম্বা কাঠির মাঝে গুঁজে , বেশ সুন্দর করে পরিবেশন করে এরা। মেয়ে অনেক সময় জেদ করে ,এটা কিনে দাও, ওটা দাও বলে। ওকে বোঝানো মুশকিল , যে জিনিস গুলো সুন্দর দেখতে হলেও সেগুলো আমাদের খাবার মতো নয়। আমি প্রতি সপ্তাহে মঙ্গলবার আর শুক্রবার এদুটো দিনে বাজার করতে যায় , সপ্তাহের যাবতীয় খাবার। দুধ দই মাংস সবজি যা পাই , বাকি যা না পাই , ভাস্কর আসার পথে নিয়ে আসে। এরকম এ এ সপ্তাহের বাজার করতে গিয়ে চোখে পড়লো সেই সব খাবার গুলো ,fresco তে ,নাম গুলো ট্রান্সলেট করে দেখার চেষ্টা তে বুঝলাম এগুলো নিরামিষ কিছু। মিষ্টি ধরণের। কয়েকটা কিনে আনলাম। জানিনা খাবো কি খাবো না। কিন্তু মেয়ের মন রাখতে , আর ওর ভুল ভাঙাতে আমার এই পথ নেওয়া। বাড়ি এসে আগে গুগল এ খুঁজে বার করলাম ,এগুলো কি। এর নাম , মিতাশি ডাঙ্গও, আর বাকি গোল গোল বলের মতো (কাঠি ছাড়া ), এগুলো রাইস বল। মিতাশি ডাঙ্গও ও একরকমের রাইস বল কিন্তু কাঠি সঠিক আর মিষ্টি সসে ডোবানো। আমি খেয়ে তো অজ্ঞান। আমার আবার সহজে সব কিছু মুখে যাই না ,মেয়েটাও আমার মতো ভারী দুস্টু হয়েছে। খেয়ে বুঝলাম , এটা আমার মেয়ের কিছুতেই পছন্দ হবে না , হলে তো ভালোই , আমি বাঁচি। মিতাশি ডাঙ্গও, বাঙালির ভাষায় , সেদ্ধ ভাত চটকে বল তৈরী করা , আর তাতে চিটে গুড় লাগানো। যা ভাবনা , মেয়ে অনেক কষ্টে একটু মুখে দিয়েই ব্যাস আর খাবো না। তাই সব মিতাশি ডাঙ্গও, জোর করে ভাস্করের পেটে। হে হে। অত্যাচারিত বাবা -বর , যেটা আছে ভেবে নিতে পারেন।

Mitashi Dango
Rice Balls
Mitashi Dango

আমার বর , মেয়ের খুশি নিয়ে বিশেষ ভাবে চিন্তিত। চিন্তিত ,এ কারণেই , যাতে অফিস থেকে ফিরে মেয়ে বেশি এ জ্বালায়। তার জন্য রোজ এ কিছু না কিছু মেয়ের জন্য ঘরে আসতেই থাকে। ব্যাটমিন্টন ,টেবিল টেনিস থেকে এখন সাইকেল ও এসে হাজির। মনে হচ্ছে আমি যেন জাপানেই নতুন সংসার সাজাচ্ছি। জানিনা যাওয়ার সময় এই জিনিসের কি গতি হবে। মেয়ে তো সাইকেল পেয়ে খুব খুশি , কিন্তু সে খুশি ক্ষনিকের ই। সে আবার নতুন কিছুর আশায় বসে আছে বৈকি।

Aadhya and her cycle

এই সপ্তাহে , বৃষ্টির পূর্ভাবাস ছিল না। তাই মনে আনন্দই আনন্দ। এই শনিবার অন্তত একটু ঘুরব। এসপ্তাহে ঠিক হলো তজি টেম্পলে আর কিয়োটো টাওয়ার দেখবো। কথা মতো , কোন বাস যাবে , সব দেখা হয়ে গেলো। কোথায় নেমে বাস বদলাবো , সব নিশ্চিত করে ,শনিবার দুপুরে বেরোলাম তজি টেম্পলের উদ্যেশে।ইন্টারনেট এ সার্চ করার সময় লক্ষ্য করলাম , মাসের ২১ তারিখে ওখানে একটা মার্কেট বসে , তজি টেম্পলের গ্রাউন্ড এ। একেবারে সোনায় সোহাগা।

বেরিয়ে পড়লাম তজির পথে , প্রথমে ৫ নম্বর বাস ধরে Shijo Karasuma /Shijo Kawramachi বাসস্টপ , ওখান থেকে একটু হেঁটে , বিপরীত রাস্তা থেকে ২০৭ নম্বর বাস ধরে তজি বাসস্টপ, Minami ward .বাসস্টপ এ নেমেই দূর থেকে প্যাগোডার দর্শন হলো। কি ভিড়। হয়তো মার্কেটের জন্য। মার্কেট ঠেলে ভেতরে গেলাম। ইন্টারনেট এ পড়েছিলাম মার্কেট ৫ তার মধ্যে উঠে যায়। আমরা ২:৩০ নাগাদ পৌঁছায়। তাই ভাবলাম আগে তজি টেম্পলের দর্শন হোক। মার্কেটে দেখলাম আমাদের দেশের মেলা র মতো চিনেবাদাম থেকে বিভিন্ন মুখরোচক খাবার ,তার মধ্যে ছিল স্ট্রবেরি-কিসমিস-খেজুর এসবের মুখশুদ্ধি জিনিস। কিছু কিছু স্বাদ ও করলাম। দেখলাম আমাদের মুম্বাইয়ের মতো বরফ গোলা। পোশাক, সরঞ্জাম, ভাস্কর্য, কীমোনো, প্রাচীন জিনিসপত্র, মৃন্ময় পাত্র, খেলনা, খাদ্য ও উদ্ভিদ সহ অনেকরকমের দোকান , শেষমেশ ছাতার দোকান ও

Toji Market

কিন্তু আগে মন্দির দর্শন, তাই সব পিছে ফেলে এগোলাম মন্দিরের গেটের দিকে। প্রবেশ মূল্য মাথা পিছু ৫০০ ইয়েন (প্যাগোডা র ভেতর কখনও কখনও কোনো বিশেষ অনুষ্ঠানে খোলা থাকলে, প্রবেশ মূল্য ৮০০ ইয়েন ) .এই মন্দিরটি কিয়োটো স্টেশনের খুব কাছে। কিয়োটো টাওয়ার থেকে এটাকে দেখাও যায়। এটি কিয়োটোর এক মাত্র প্যাগোডা , তাও ৫ তলা। ভেতরে যাওয়ার রাস্তা থেকে প্যাগোডা পৌঁছানো অবধি রাস্তাটা কেমন যেন মায়ানগরীর মতো। সত্যি , একেই বলে জাপান আর এরাই জাপানীস। কোনো বহুমূল্য সম্পদকে কি ভাবে বাঁচিয়ে রাখবে , আর পর্যটকদের কাছে কি ভাবে পরিবেশন করবে, তা এদের থেকে শেখ উচিত , সব দেশের।

তজির সামনে একটা ছোট্ট ঝিল , জেনে বুঝেই মনে হয় , এই ঝিল করা। চারিদিক এতো ফুল, এতো রঙের পাতা , মাঝখানে ঝিল আর ঠিক এক কোন তজি দাঁড়িয়ে। যে কোনো দিক থেকে ছবি তুললে , একই তজির এক এক নতুন রূপ পাওয়া যায়। তজির মন্দির ঘুরে দেখার সময় পরিচয় হলো এক জার্মান ভদ্রলোকের সাথে ,উনি যেচে কথা বললেন। জানতে চাইলেন আমি কি জানি এই মন্দির সম্পর্কে , আর কি তফাৎ আমাদের দেশের মন্দির আর জাপানের মন্দিরে। আমি আমার জ্ঞানের চাবি খুলে , যেটুকু পারলাম বললাম। আর ওনার কাছেও জানলাম কিছু। যেমন , এই প্যাগোডার ওপরের গোল গোল চাকার মতো জিনিস গুলো নাকি , পুরুষ-নারীর , অনুপাত, নির্ণয় করে। ভাস্কর ছিল কিছুটা দূরে। ওর সাথে আলাপ করলাম , কারণ ভাস্কর ,এক সময় জার্মান ঘুরে এসেছে।

The Man-Women proportion Indicator
The building Structure of Toji

আমার মেয়ে প্রজাপতির পেছনে , আর ঝিলের কাছে মাছদের দেখে খুব খুশি। পরিচয় হলো প্যারিস থেকে আসা এক দম্পতির সাথে। তার ছোট মেয়েটির আমার বাবি কে ভারী পছন্দ। কিছুতেই হাত ছাড়তে নারাজ।ওই দম্পতি বিশ্ব ভ্রমনে বেড়িয়েছে , সাথে ৫ অনুর্ধ দুই ছেলে মেয়ে। সত্যি। আমি তো এরকম স্বপ্ন ও দেখিনা।

The Beautiful Toji
The beautiful garden

তজির পাশের দুটো মন্দিরে ছিল বড় বড় বুদ্ধের মূর্তি . বসানো দুটো আরো মন্দির , যেখানে রীতিমতো পুজোআর্চা চলছিল। ফটো তোলা নিষিদ্ধ লেখাটি পড়ার আগেই আমার ক্যামেরা ক্লিক হয়ে যায়। আর ক্যামেরা বন্দি হয় অসাধারণ কিছু ছবি।এই দুটি স্থান “kodo hall” আর “kando hall” নাম পরিচিত।

ছোট্ট করে জেনে নি তজির সম্পর্কে কিছু কথা :

তোজি মন্দির (東 寺, তোওজি), আক্ষরিক অর্থে “পূর্ব মন্দির”, হেইয়ান পিরিয়ডের শুরুতে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল যখন রাজধানীটি শেষ পর্যন্ত 700 বৎসরে কিয়োটোতে স্থানান্তরিত হয়েছিল। বৃহত্তর মন্দির, এখান থেকে এখন তার অদৃশ্য বোন মন্দিরে সায়জি (“পশ্চিম মন্দির”), শহরের দক্ষিণ প্রান্তে অবস্থিত এবং রাজধানীর অভিভাবক মন্দির হিসেবে কাজ করে। তোজি মন্দিরটি কিয়োটোর একটি অন্যতম ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান।

মন্দিরের প্রতিষ্ঠার প্রায় ত্রিশ বছর পর, জাপানি বৌদ্ধধর্মের শিংং সম্প্রদায়ের প্রতিষ্ঠাতা কোবো দিশিকে টোগি প্রধান পদে নিযুক্ত করা হয় এবং মন্দির কোইয়া পর্বতের সাম্রাজ্যের সদর দফতরের পাশাপাশি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শিংন মন্দিরগুলির অন্যতম।

তজির , মূল কাঠামোর মধ্যে একটি কন্ডো হল, যেটি মন্দিরের প্রধান হল এবং বৃহত্তম ভবন। 1486 সালে একটি বৃহৎ আগুনের দ্বারা ধ্বংস করা হয়, এটি একটি সমসাময়িক স্থাপত্য শৈলীতে এডো পিরিয়ডের বিল্ডিং, যা পুনরায় পুনর্গঠিত করা হয় এবং এখানে পূজার প্রধান উদ্দেশ্য ইকুসি বুদ্ধের একটি বড় কাঠের মূর্তি, তার দুই পরিচারক, নিককো এবং গাককো বোধিসত্ত্ব ।

Lord Buddha

ঠিক এর পাশেই রয়েছে ,কোডো হল, যা 8২5 খ্রিস্টাব্দে কোব দিশি দ্বারা যোগ করা হয়েছিল এবং মন্দিরের বক্তৃতা হল হিসেবে কাজ করেছিল। এটি 1486 আগুনে পুড়িয়ে ফেলা হয়, এবং পরে তা মূল স্থাপত্য শৈলী মধ্যে পুনর্নির্মাণ করা হয়েছিল। কোডো হল এ চীন থেকে কোব দিশি দ্বারা আমদানি করা 19 টি মূর্তি রয়েছে, যা বৌদ্ধ, বৌদ্ধধর্ম এবং ভয়ঙ্কর রাজাদের দ্বারা ঘিরে কেন্দ্রস্থলে দানিচী বুদ্ধ (ভায়রাকানার) দিয়ে একটি মন্ডল অনুসারে সাজানো হয়।

কন্ডো এবং কদো থেকে তজির পাঁচটি তলাবিশিষ্ট প্যাগোডা, যা মূলত 8২6 সালে কোব দিশি দ্বারা নির্মিত হয়েছিল। এটি 57 মিটার লম্বা এবং এটি জাপানের সবচেয়ে বড় প্যাগোডা এবং মন্দির , উভয়েরই একটি প্রতীক হিসেবে পরিণত হয়। শহর জুড়ে অনেক জায়গা থেকে এই প্যাগোডা দেখা যায় । প্যাগোডার ভেতরে চারটি ছোট বুদ্ধের মূর্তি রয়েছে,যা বিশেষ বিশেষ সময় প্যাগোডা খোলা থাকলে দেখা যায় (যার সৌভাগ্য আমাদের হয়নি ) .

ঠিক পশ্চিমে, প্রদত্ত এলাকার বাইরে কোব দিশির একটি মূর্তি সঙ্গে Miedo হল (প্রতিষ্ঠাতা হল) দাঁড়িয়ে আছে । কাছাকাছি হল হোমসুক্যান জাদুঘর, Toji মন্দির এর ভাণ্ডার ঘর, যা অনেক বড় বৌদ্ধ মূর্তি এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ জিনিসপত্র প্রদর্শন করে। জাদুঘরটি শুধুমাত্র মার্চ মাসের শেষের দিক থেকে মে পর্যন্ত এবং পুনরায় সেপ্টেম্বরের শেষের দিকে ও নভেম্বর থেকে নভেম্বরের শেষ পর্যন্ত খোলা থাকে । এর প্রবেশ মূল্য আলাদা।

কি করে পৌঁছাবেন :
তোজি কিয়োটো স্টেশনের থেকে 15 মিনিট হাঁটার দক্ষিণে অবস্থিত। বিকল্পভাবে, এটি কেটিটাসু কিয়োটো লাইন (২ মিনিট, কিয়োটো স্টেশন থেকে 150 ইয়েন ) বরাবর তোজি স্টেশন থেকে পাঁচ মিনিটের একটি পায়ের মধ্যে পৌঁছতে পারেন।

তজি দেখে বেরোতে বেরোতে ৪ টের একটু বেশি হলো। মেয়েতো আগে থেকেই বরফের গলা দেখে বায়না জুড়েছে ,আর আমি ছাতা কেনার। বাইরে পৌঁছতেই দেখলাম সবাই দোকান ওঠাচ্ছে। এমা , একি। ৫ তা বাজতে না হলেও ৪০ মিনিট বাকি। তাড়াতাড়ি করে ছাতার দোকানে গিয়ে , একটা সাকুরা ছাতা কিনলাম , ছাতা টা বেশ। ভাস্করের একদম এ ছাতা কেনার আছে ছিল না , বিশেষ করে traditional জাপানীস ছাতা কেনার তো কোনো মানে নেই,তা যেমন ভারী , তেমন বড়ো ,বাঁশ আর কাগজের তৈরি। আমার সাকুরা ছাতাটা অদ্ভুত। দেখতে সাধারণ , কিন্তু বৃষ্টির জল বা এমনি জল পড়লেই তার মধ্যে ফুল ফুল ছবি ভেসে ওঠে। এদিক ওদিক দেখে বেরোতে বেরোতে ৫টা হতে চললো , দেখলাম মাঠ ফাঁকা,একের পর এক দোকান , গাড়ি ভর্তি করে ফিরে যাচ্ছে।একেই বলে জাপানীস সময়।এরা যদি বলে ৫ টা ,তাহলে তা ৫টা।

Kyoto Station Inside View
Kyoto Station

আবার ২০৭ ধরে sanjo এলাম, সেকান থেকে ৫ নম্বর বাস ধরে কিয়োটো স্টেশন। টোকিও আমরা বুলেট ট্রেনে যাবো ভেবে রেখেছি , তাই ভাস্কর আজ কিয়োটো স্টেশনে তার ময়নাতদন্তে নেমে পড়লো ,কথা থেকে ট্রেন ছাড়ে ,কোথায় টিকিট কাটবো ইত্যাদি। জাপানে এসে ইলেকট্রনিক্স জিনিস দেখবে না , তা হয়। এখানে বিখ্যাত দোকান হলো bic camera .সেটা সস্টেশনের কাছেই , চললাম ,সেই পথে। অনেক অনেক রকমের আধুনিক টেকনোলজি ,না না রকম তথ্য প্রযুক্তির জিনিস। কিনিনি কিছুই , তবে ল্যাপটপের দাম যাচাই করে নিলাম।

ঘড়িতে তখন ৭ টা। বুঝলাম ভাস্কর আজ আর কিয়োটো টাওয়ার এ যাবে না। যাক। দোকান ঘুরে রাস্তায় আসতেই দেখলাম গোলাপি নীলে ঝলমল করছে কিয়োটো টাওয়ার। কি সুন্দর লাগছে। অনেক মানুষ অনেক ভাবে ছবি নিচ্ছে। আমি কি আর দেরি করি। আমিও অনেক ছবি তুললাম।

Kyoto Tower at Night

মেয়ে আর বাবা , তখন খুব ক্লান্ত। খিদেও পেয়েছে খুব। ব্যাগে আনা সব খাবার ই তখন শেষ। জল ও দুবার কিনে খেতে হয়েছে। তাই আর এদিক সেদিক না দেখে চললাম কিয়োটো উনিভার্সিটির কাছে, আমাদের খাবার ঠেকে।
পৌঁছেতো গেলাম ৮ টাই , কিন্তু এতো ভিড় দোকানে , খাবার দিতে দেরি হলো। মনে মনে ভাবছি ৮:৪১ এর বাস আর পাবো না। ঠিক তাই , খাবার শেষে বাস স্টপ এ পৌছালাম ,৮:৪৩.বাস যথারীতি চলে গেছে। এর পর এই বাস স্ট্যান্ডে প্রায় ৪৫ মিনিট পরে বাস। অনেক ভেবে হাঁটা লাগলাম ,অন্য বাসস্ট্যান্ডের পথে। এখানে যতবার খেতে আসি , ততবার যাওয়ার পথে খুব বাঁশ খাই। আজ যেন খুব বড়োসড়ো। বাসস্ট্যান্ড ঠিক কোথায় ছিল জানা নেই। তাই হাঁটতে হাঁটতে যখন বাস স্ট্যান্ডে পৌছালাম দেখলাম ,আমরা ৪০ মিনিট হেটে ফেলেছি। কি যে কান্না পাচ্ছিলো কি বলবো। সাথে প্রচন্ড পায়ে ব্যাথা। বাস স্ট্যান্ড আবার একদম ছোট , বসার জায়গা নেই। তাতে কি। আমি আর পারছিলাম না। পাশে একটা দোকান এর গা ঘেসে ,প্রায় রাস্তাতে দু পা ছড়িয়ে বসে পড়লাম। জ্ঘ্যান ঘ্যান করে অনেকবার বলেও উঠলাম , আর আসবোনা ,এই দোকানে খেতে। ভাস্কর চুপ , মেয়ে চুপ। মা কাঁদছে। পায়ের ব্যাথা আমার পরের দিন ও ছিল , একদম টনটনে।

1 COMMENT

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here