বহুদিন ধরেই সোহমের সাথে গণ্ডগোল চলছে। স্কুল থেকে বেরিয়ে ছেলেকে নিয়ে বাড়ি ফিরতে হবে।সোহম আজকাল নিজের টুকু ছাড়া কিছুই বোঝে না। সেদিন টুপাই একটা টুটিফ্রুটির বায়না করায় গালে পাঁচ আঙুলের ছাপ বসিয়ে দিলো। তারপর অবিশ্রান্ত গালাগালি- “যেমন মা তার তেমন ছা”, “এতো খাওয়ার বায়না কেন তোর?” ইত্যাদি ইত্যাদি।অথচ এই সোহমের সাথে কলকাতা চেনা, আর আইসক্রিম খাওয়া। কোয়ালিটি, স্কুপ, তুলিকা সর্বত্র নানা ধরনের আইসক্রিম খেতো। এরমধ্যে সবথেকে প্রিয় ছিল টুটিফ্রুটি। ওপরের লাল টুকটুকে চেরীটা সোহম চিরকাল ইসিকাকেই দিতো, তার বদলে লাল টুকটুকে ঠোঁটের দখল নিতো সুযোগ পেলেই। টুপাই হবার আগে ফ্রীজে ঠাসা থাকতো নানা ফ্লেভারের আইসক্রিম। টুপাইস ছোট থেকেই আইসক্রিম দেখে বড়ো হয়েছে। বছর দুয়েক ধরেই সোহমের বদল শুরু। ছেলের ওপর টান কমেছে। ইসিকার সাথে ওর দিনে কটা কথা হয় নিজেরাই জানে না। টুপাই মাত্র আট বছরের ছেলে, ও বাবার এই পরিবর্তন বোঝে কি ভাবে? ওতো এখনও বাবাকে ঘোড়া বানাতে চায়, বাবার সাথে আগের মতো বেড়াতে চায়, আইসক্রিম খেতে চায়। সোহমের সময় ইচ্ছে কোনটাই নেই। কানে সব আসে আর মোবাইলের যুগে খবর, ফটো সব আলোর গতিতে এসে যায়। চটকা ভাঙলো টুপাইএর কান্নায়। -“মাম্মা বাবাই মারলো আর আমার সাইকেল টাও ছুঁড়ে ফেলে দিলো। আমি আর আইসক্রিম চাইবো না।”-“চলো বাবু আমি তোমাকে আইসক্রিম দেবো”, ছেলেকে নিয়ে বেরিয়ে পড়লো, পাড়ার দোকান থেকে আইসক্রিম কিনে ছেলেকে খাইয়ে সিদ্ধান্ত পাকা করে নিলো ইসিকা। পরের দিন থেকেই স্কুলের পাশেই ঘর খুঁজতে শুরু করলো। পেয়েও গেল একটা এক কামরার ঘর, সাথে ড্রয়িং কাম ডাইনিং। ভাড়া সহনশীল। সামনে সপ্তাহে সোহম ট্যুরে গেলেই ও চলে আসবে। দু’মাস হলো ছেলে নিয়ে ইসিকা চলে এসেছে। বাবা মা কে, দাদাদের জানিয়েছে, যথারীতি সমর্থন পায় নি, একমাত্র বাবা বললেন -“সঠিক সিদ্ধান্ত, এরপর ছেলে মানুষ হবে না” ট্যুর থেকে ফিরে সোহম ফোন করেছিল বার কয়েক, ইসিকা ফোন ধরে নি বার কয়েক। শেষ পর্যন্ত একদিন ধরে জানায় যে -“ডিভোর্স দেবো না, আর ফিরে ও যাবো না”, তুমুল ঝগড়া করে সোহম ফোন রেখে দেয়।ছ’মাস হয়ে গেছে ছেলে নিয়ে আলাদা আছে ইসিকা, ফোন করে সোহম, ইসিকাকে ফিরে আসার কথা বলে, ক্ষমা চায়, ইসিকা রাজী নয়। স্কুলের সামনে কয়েকদিন দেখেছে, সামনে আসে নি, ইসিকাও এগিয়ে কথা বলে নি।আজকে টুপাইএর জন্মদিন। ছেলের মন খারাপ, যতোই হোক বাবা তো? ফ্ল্যাটের পাশের কয়েকটা বাচ্চার সাথে ছেলে খেলে তাদের বিকেলে ডেকেছে, আজকে ছুটিও নিয়েছে। কাজের মেয়েটা তার ছেলেকে নিয়ে আসবার পর ইসিকা সামনের দোকানে গেল কেক আর আইসক্রিম আনতে। বাড়িতে ঢুকে চমকে উঠলো, সোহম বসে আছে। সামনে অনেক আইসক্রিম এর টাব। একটা বড়ো কর্ণেটো ছেলেকে কোলে বসিয়ে খাওয়াচ্ছে। বাপ ছেলে দুজনের চোখে জল মুখে হাসি। -“তুমি চিনলে কি করে?”-“ফলো করে”ছেলেটা এতো খুশি বাবাকে পেয়ে, ওর খুশি ভাঙতে ইচ্ছা হলো না।-“রাতে খেয়ে যেও”-“যাক তাহলে জুটবে এখানে ডিনার”উত্তর দিলো না। চা করে দিলো, ছেলের বন্ধুরা সবাই এসে পড়তে জন্মদিনের মজায় ছেলে মেতে উঠলো।সবাই চলে যাবার পর ছেলে আর বাবা খেতে বসলো। ফ্রীজ থেকে টুটিফ্রুটি নিজেই বার করলো ছেলে। বাবাকে খাইয়ে দিয়ে বললো- “আইসক্রিম ভালো জিনিস, খেয়ে নিতে হয়”। বাবা কান ধরে বললো -“আর ভুল হবে না, আমাকে তোমাদের বাড়িতে থাকতে দেবে?”

কলমে সুস্মিতা চক্রবর্তী

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here