তোমায় জানতে

2
1302
Photo:gregorybknapp

“ঘুমিয়েছ ঝাউপাতা?” রাত সাড়ে এগারোটার সময় মুঠো ফোনে মেসেজটা দেখে মুচকি হাসলাম। যদিও প্রেরকের নম্বরটা অচেনা তবু কার লেখা বুঝতে একটুও আসুবিধে হল না। দুদিন আগেই রীতেশ কথার ফাঁকে হঠাৎই অপ্রাসঙ্গিক ভাবে জিজ্ঞেস করেছিল “বলোতো জেগে আছো ঝাউপাতা? কার লেখা?” যদিও কবিতার বইগুলো আজকাল শুধুই বুকশেলফের শোভা বর্ধন করে তবুও ঝাউপাতার কাব্য কি ভোলা যায়? বললাম “সে আবার কোন কবিতা? ‘ঘুমিয়েছ ঝাউপাতা?’ তো জয় গোস্বামীর লেখা, জেগে আছো বলে আবার কে কবে লিখল?” অতএব মেসেজ টা যে রীতেশের তা নিয়ে কোন সংশয়ই আর রইল না, হোক না অচেনা নম্বর। আজকাল ত সকলেরই দু’ তিনটে করে ফোন থাকে, তাছাড়া রীতেশ আজকে রাতের ট্রেনে এলাহাবাদ যাচ্ছে, এক মাসের জন্য, নতুন সিমও নিয়ে থাকতে পারে। আর, আজ রাতে যেহেতু ট্রেনে এবং একা, আমাকে একটু চমকে  দেবার সুযোগটা কি আর হাতছাড়া করবে? মজাই লাগল।

আজ এই মুহূর্তেআমি আমার  মেয়ের ঘরে পাহারারত। আমার মেয়ে আমার পাশের খাটে বই খাতা ছড়িয়ে আসন্ন উচ্চ মাধ্যমিকের পড়া নিয়ে ব্যাস্ত। তার সাথে সাথে আমার চোখেও ঘুম নেই। রীতেশ আমার বন্ধু, খুব ঘনিষ্ঠও নয় আবার উপেক্ষাকরে থাকার মতও নয়। গান, কবিতা ইত্যাদি শিল্পকলার জগতে তার অবাধ বিচরণ। আর সেই কারণে সে আমার প্রিয় মানুষদের মধ্যে অন্যতম। সে যাই হোক, বার্তাটা পেয়েই লিখলাম ‘কতদূর গেলে’? মনে মনে ভাবলাম এতক্ষণে নিশ্চয়ই বর্ধমান পেড়িয়ে গেছে। ভাবতে ভাবতেই দেখি এসে গেছে উত্তর। ও মা! এ যে দেখি ধরা দিতে মোটেই চায় না- “দূরে কোথায় দূরে দূরে, আমার মন বেড়ায় যে ঘুরে ঘুরে”। বাঃ! মাঝ রাত্তিরে বেশ রসিকতা তো!

আহা! এমন একটা মন উদাস করা বার্তা হেলায় ইনবক্সে পরে থাকবে তাই কি হয়? সাথে সাথে খটাখট্‌ উত্তর চলে গেল “ যে জন দেয় না দেখা যায় যে দেখে, ভালোবাসে আড়াল থেকে। আমার মন মজেছে –“ এই রে, পাঠিয়েই মনে হলো একটু বাড়াবাড়ি করে ফেললাম, অত ভালবাসা টাসার কথা না বললেই হোত। আসলে গানের তোড়ে লিখে ফেলেছি এবং দুটো গানে গুলিয়েও ফেলেছি কিভাবে যেন। আফসোস হচ্ছে। কিন্তু হাতের ঢিল, মুখের কথা আর মোবাইলের মেসেজ একবার ফস্কে বেড়িয়ে গেলে তো আর ফেরানোর উপায় নেই। কি আর করা ‘গতস্য শোচনা নাস্তি’। নিত্যকার অভ্যেসবশত গল্পের বইটা টেনে নিলাম।, মুঠো ফোন বালিশের পাশে। বিপ্‌ বিপ্‌। উত্তর দিল ফোন “আমার প্রাণের পরে চলে গেলো কে বসন্তের বাতাস টুকুর মতো, সে যে ছুঁয়ে গেল-– সে চলে গেল বলে গেল না।“হল এবার? যেমন কর্ম, তেমনি ফল। আরো লেখ ভালবাসার কথা। ভাবলাম, এখানেই ইতি টানি বেশী বাড়াবাড়ি না করে।কিন্তু পরক্ষণেই মনে হল আচ্ছা চলুকই না আর একটু, রোজকার নিস্তরঙ্গ জীবন যদি খেলাচ্ছলে একটু অন্যরকম হয়, ক্ষতি কি? লিখলাম,“বলেছিলাম তো, ডেকেওছিলাম, তুমি তখন ছিলে মগন গহন ঘুমের ঘোরে,”এবার শুরু হলো অপেক্ষা, কি উত্তর আসে। যদিও চোখ বইয়ের দিকে, মন রইল মুঠো ফোনে।

এই প্রতীক্ষার ফাঁকে কন্যার ডাক। “মা প্লীজ একটু কফি করে দাও না, নইলে ঘুম পাচ্ছে, পড়তে পারছি না।চিনি বেশি দিয়ো কিন্তু।“ এর মধ্যেই কিন্তু ফোনের বিপ্‌ বিপ্‌ কান এড়ায় নি। উঠে পড়লাম, আমার ফাঁকিবাজ মেয়ের পড়ায় মন বসেছে বলে কথা। রান্নাঘরে এলাম বটে, কিন্তু সাথে ফোন। কৌতূহল, কি লেখা এল? “যে রাতে মোর দুয়ারগুলি ভাঙল ঝড়ে,/জানি নাই তো তুমি এলে আমার ঘরে। সব যে হয়ে গেল কালো,/ নিভে গেল দীপের আলো। আকাশ পানে হাত বাড়ালেম কাহার তরে,/জানি নাই তো তুমি এলে আমার ঘরে”।

বুকের ভেতর অদ্ভুত এক শিরশিরানি। এ কি শুধুই গান কবিতার খেলা? নাকি কিছু না বলা কথাও আছে এতে? এ কোন ইঙ্গিত! থেমে গেলাম। আর কিছু লেখা কি ঠিক হবে?দোলাচলে পড়লাম, তার মাঝেই আবার এল- “ হারাই হারাই সদা ভয় হয় হারাইয়া ফেলি চকিতে, আশ না মিটিতে/মাঝে মাঝে তব দেখা পাই, চিরদিন কেন পাই না।”

এবার চিন্তায় পড়ে গেলাম, রীতেশই তো? না ঘুমিয়ে কাব্য চর্চা করবে রীতেশ! তাও আবার ট্রেনে শুয়ে শুয়ে! ওর তো ট্রেন চলতে শুরু করলেই  ট্রেনের দোলায় নাকি ঘুম পায়। নাঃ এবার একটু যাচাই করা দরকার, রীতেশই কিনা। লিখলাম ‘কলকাতা শাসন করা মধ্য রাতের চার যুবক কারা?’ক’দিন আগে রীতেশের মুখেই ওই কবিতাটা শুনি। চার যুবক মানে- শক্তি, সুনীল, শরৎ, সন্দীপন। উত্তর এলো- ‘যুবক! তুমি কে?’ এই রে!এতক্ষণ এত কথার পর বলে কিনা তুমি কে! তার মানে আমি এতক্ষন ধরে ভুল দান খেলেছি। কিন্তু খেলতে যখন নেমেছি একবার,ফোন টা কে সুইচ অফ করে দেওয়া ছাড়া, খেলা ফেলে উঠে যাবার তো আর পথ নেই। ভাবতে ভাবতেই চলে এল-

তুমি তো কবি মহতী, তুমি কে গো?

“সুন্দর এসে থেমে আছে তার নাসিকার শেষ প্রান্তে।

আমার জীবন যাবে আজীবন, তোমার জীবন জানতে।“

হে ভগবান! এতক্ষন তোদিব্য চলছিল রবিঠাকুরের ঝোলা থেকে। এ আবার কোন কবিতা! এ নিশ্চয়ই হয় কৌশিকদা নয় তো স্বপনদা, আমার দুই বন্ধুর বর, এদেরই কীর্তি। দুজনেরই প্রচুর কবিতা পড়ার অভ্যাস আছে। আন্দাজে ঢিল ছুড়ি “ধরা পরে গেছ কৌশিকদা।“কোন ধরা ছোঁয়ার ধারই ধারলো না সেই অজানা বার্তা প্রেরক “আমি ক্লান্ত প্রান এক, চারিদিকে জীবনের সমুদ্র সফেন।” জীবনানান্দ দাশের নাটোরের বনলতা সেন!!তড়িৎ গতিতে উত্তর দিই ‘ওরে বাবা! আমি বনলতা সেন হতে পারব না, ভাদ্রমহিলার চোখ বড় গোলমেলে ধরনের ছিল। শুভ রাত্রি।‘ ঘড়িতে দেখলাম প্রায় দেড়টা বাজে, শণিবারের রাত বলেই বাঁচোয়া। আলো নেভাব, তার আগেই আবার বিপ্‌। “এক কাপ কফি, চলবে? চলবে না? বারিস্তা, ফোরাম, ফুড কোর্ট। সুইট সারপ্রাইজ। হবে?”এ নিশ্চয়ই  তাহলে স্বপনদা, মহা বিচ্ছু। আমাকে বোকা বানিয়ে মজা দেখছে। কাল যদি উৎসাহ পেয়ে বারিস্তায় চলে যাই, তাই নিয়ে যে কতো আওয়াজ দেবে। বললাম, “তুমি বোধ হয় আমার অচেনা কেউ, কোথাও একটা ভুল হচ্ছে।““আর যদি চিনতে পারো, মৃদু টোকা দেবেনা দরজায়? তুমি আসবে না?”

আহা! এমন করে ডাক! শুনলেই মনে হয় না গিয়ে কি পারি? কিন্তু বয়স, অভিজ্ঞতা সবাই একযোগে আপত্তি জানায় – “যেও না।“ ভাঙব তবু মচকাবো না। লিখলাম- “যেতে পারি কিন্তু কেন যাবো?”উত্তরে আমার ভেসে যাবার পালা।“মেয়ে, কি আশ্চর্য! আজও মনে হয় তোমার কপালের টিপ/ মৃদু গুনগুন ধ্বনি, হাসি।/ কালো চুল আর চোখের দুটি শিখা দিতে পারে আলো/ তা তো আর দেয় না কো অন্য কোন গানের প্রদীপ, তুমি আসবে না?” কৌতূহল চরমে। কে এ? নিজের বুদ্ধির ওপর আর ভরসা থাকছে না। আকাশ, পাতাল হাতড়ে মরছি, কে এ? অবশ্যই পরিচিত, কিন্তু কে? যে লিখছে, সে নিশ্চয়ই এই মুহূর্তে একা আছে, পরিবারের বাইরে। সেই ঘুরে ফিরে সন্দেহ রীতেশের দিকেই পড়ছে, কিন্তু মন বলছে এ অন্য কেউ। আমার ভাবনার জাল ছিন্ন করতেই যেন এল পরের বার্তা-

“বিস্ময়? ভয় হয়? মিছে ভয়,

আমি দূরের কেহ নয়।“

বিস্ময়! এ ত অপার বিস্ময়।‘না হয় একটু অন্যরকম হোক আজকের রোববারটা।‘

ও মা তাই তো! শনিবার রাত পেড়িয়ে তো বহুক্ষণ পা রেখেছি রবিবারে। ‘গুড নাইট, আমি কিন্তু চেয়ে থাকব পথের দিকে, এগারোটায়, কালো শার্ট, বাদামী প্যান্ট। তুমি?” হাতের ঢিল সাথে সাথে বেড়িয়ে গেল- “কালো বোরখা”।

“ঠিক চিনে নেব, শুধু ভুল ভেঙে দিতে ঘরময় বয়ে যাবে বেনামী বাতাস, তুমি আসবে না?”শুয়ে পড়লাম আলো নিভিয়ে।কে হতে পারে? গোয়েন্দা মনকে ক্রমশ গ্রাস করে নিচ্ছে একের পর এক কবিতার লাইন। যে ইচ্ছে হোক, নাইবা জানলাম। এই পঞ্চাশের দরজায় এসে দাঁড়িয়ে এমন গান, কবিতা আমাকেই উদ্দেশ করে যে লেখা একে কি উপেক্ষা করা যায়? ভাবনায় আবিস্ট হতে হতে ঘুম নেমে এলো চোখে।

সকালে চোখ মেলতেই মনে পড়ল রাতের কথা।তবে দিনের কড়া আলোয়, প্রাত্যহিক সাংসারিক খুঁটিনাটিতে রোম্যান্টিসিস্‌ম উধাও। “রিমঝিম, আজও নাচের ক্লাসে দেরি হয়ে যাবে ঠিক, একটু তাড়াতাড়ি রেডী হওয়া যায় নাকি?”, “গীতা, আজ ভাতটা একটু নরম করে কোরো, মাকাল খেতে পারেনি ঠিকঠাক”-এই সবের মাঝে কখন এগারোটা মানে কফির নিমন্ত্রণের  সময় পেড়িয়ে গেল খেয়ালও করলাম না। মেয়ের নাচের ক্লাসে অপেক্ষারতা মা আমি তখন, হঠাৎ ফোনে বিপ।“আসবে না?”মজা করার ইচ্ছেটা জেগে উঠল। লিখলাম “তখন ছিলেম বহুদূরে,তুমি আমায় ডেকেছিলে কফির নিমন্ত্রণে।“

এবার সরাসরি প্রশ্ন, “দু’ কাপ কফি খেয়ে ফেললাম, আসবি কিনা বল? ফিরে যাব? এই বৃষ্টি প্রতিদিন থাকবে না।“ ঠিক কথা, আজ একটা অন্যরকম দিন, রোজকার থেকে আলাদা, একটা হঠাৎ বৃষ্টির দিন।জল কাদা প্যাচপ্যাচে হলেও আমার বড় প্রিয় দিন, এমন দিনে তারে বলা যায়। বললাম,“কে তুমি?”“ওটা না হয় সারপ্রাইজ থাক। জীবনে একটু সাসপেন্স মন্দ কি? আসছিস তো? আর কতো দেরী?”

এ কী তীব্র টান। কিন্তু আমি নিরুপায়। কর্তব্য, দায়িত্ব, সামাজিক শৃঙ্খলায় গন্ডীবদ্ধ এক নারী।

“ডাক দিয়ে যাই, শুনতে কি পাও? বেশি দূরে নয় তো।একবার এলেই বুঝবি যে জীবন দোয়েলের, ফড়িঙ্গের,মানুষের সাথে তার দেখা হয় কখনো।“

পারলাম না। না পারলাম যেতে, না থাকতে, মনটা চলে গেল, বশে রইল না। বর এই কাব্যচর্চার কথা শুনে বলল, “এ সব যে কেন মাথায় পুষে রাখো, কাজের কাজগুলোতে ওই জন্যেই এত ভুল হয় তোমার।“ওকে  কি করে বোঝাবো যে এ তো শুধুই কবির কবিতা নয়, এত আমাকে ছুঁয়ে যাওয়া কথা, আমাকেই বলা। ভুলে যাবো? কিভাবে ভুলব সে তো পরের কথা, কিন্তু কেন ভুলবো? সাড়া দিতে না পারলেও উপেক্ষা কি করতে পারি? মন বলে পারি না।

ক্রমে ডুবে যাই নানা কাজে, অকাজে।একরাতের গল্প হারিয়ে যায় ক্রমশ।শেষ উত্তরটা ছিল আমারই প্রশ্নের পরিপ্রেক্ষিতে।জানতে চেয়েছিলাম “কে তুমি? আমাকে কি তুমি সত্যিই চেন?”উত্তরে এসেছিল “সামনে আসবেনা যদি, তবে থাকনা অন্ধকারটুকু।“

বেশ কয়েক মাস কেটে গেছে তারপর।  আমারো যথারীতি সংসার চক্রে, কর্ম চক্রের জাঁতাকলে পিষ্ট হয়ে দিন কাটছে। সেদিনের সেই রাতের কথা অবসর সময়ে, কবিতার বই হাতে নিলেই মনে পড়ে যায়।মনে একটা ধন্ধ থেকেই গেল, বুঝতে পারলাম না আজও কে সে? সেই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতেআমার বন্ধুদের সুচিন্তিত মত হল- “বয়ফ্রেন্ডের সংখ্যার আধিক্য হলে এমনিইগুলিয়ে যাওয়ারই কথা, বয়সও তো হচ্ছে, কতোজনের কথা আর মনে রাখবি?’আমার বরের সামনে কখনও প্রসঙ্গটা উঠলে দেখেছি মুচকি হেসে এড়িয়ে যায়। কৌতূহলী মনে প্রশ্নটা কিন্তু থেকেই গেছে। কে সে?

আজ আর এক রবিবার, বৃষ্টি ভেজা নয়, আবেগ হীন রোদে পোড়া দিন। বর গেছে কদিনের জন্য কোলকাতার বাইরে, মেয়ে নিজের ঘরে নিজের কাজে ব্যাস্ত। অলস দুপুর, হাতে একটু অবসর সময়। খাটে আধশোয়া হয়ে আমার পছন্দের কবি নির্মলেন্দু  গুনের কবিতার বইটার পাতা ওলটাচ্ছি। এ বইটা আমাকে দিয়েছিল আমার বর, গত বছর জন্মদিনে, পড়া হয়ে ওঠে নি। বইটা আমার খুব প্রিয় কারণ আমার কবিতা না পড়া বর কিন্তু খুব বেছে, ভেবে চিন্তে আমাকেএই পছন্দসই উপহারটা দিয়েছিল।ভেতরে কিছু লিখে দিতেও সাহস পায় নি, যদি নির্মলেন্দু গুন আমার পছন্দ না হয়, তবে তো বইটা পাল্টাতে হতে পারে এই ভয়ে।এসব নিয়ে আমি মজা করায় কট্ মট করে তাকিয়ে বলেছিল-“ না হয় কবিতা পড়ি না, তা বলে এত হেনস্থা!”

পাতা ওল্টাতে ওল্টাতে দেখি এক জায়গায় পেন্সিলের দাগ। কি হল? পুরনো বই নাকি! নাহঃ দিব্য ঝকঝকে মলাট। তাহলে? আমি তো এ বইতে হাতও দিই নি আগে।তবে? দাগ কাটা অক্ষরগুলো জ্বলজ্বল করছে, –

‘সুন্দর এসে থেমে আছে

তার নাসিকার শেষ প্রান্তে।

নাক পাশা যেন সোনা দিয়ে মোড়া

ঘুঘু চোখ ঘুমে বুঁদ ;

অথবা শীতের পিঁপড়ের মুখে

আলতা মাখানো খুঁদ ।

আমার জীবন যাবে আজীবন / তোমার জীবন জানতে।‘

কবিতা না পড়া একজনের সারা রাতভর কাব্যচর্চার সাক্ষী হয়ে আছে লাইন গুলো।মনে পড়ল, সেই রাতে আমি আমার নিজের ঘরে ছিলাম না, ছিলাম আমার মেয়ের ঘরে, আমার বর ছিল একা।

আবিস্কারের উত্তেজনায় বইটা হাতে নিয়ে খানিক চুপ করে বসে থাকি। তারপর ফোনে টাইপ করি- “বারিস্তার নিমন্ত্রণটা এখনও আছে তো?”বিস্মিতউত্তর আসে- “মানে? বারিস্তার নিমন্ত্রণ মানে?কার নিমন্ত্রণ?কিসের নিমন্ত্রণ? দাঁড়াও, দাঁড়াও এখন কথা বলতে পারছি না মিটিং আছে, রাখছি’।এই বলেই ফোনটা রাখতে গিয়েই আবার বলে ওঠে, “ও, তোমাকে বলতে ভুলে গিয়েছি, সেদিন ক্যুরিয়ারে একটা বই এসেছে তোমার। নির্মলেন্দু গুনের। তোমার একটা আছে না? আবার কিনলে”?“মানে? আমি কিনেছি?না, মানে, আমি,” বলতে বলতে  ছুটে যাই বুক শেল্ফের কাছে। ওই তো! ওই তো আগের বইটা, তাকের কোনার দিকে, আর এ বইটা রাখা ছিল আমার পড়ার টেবিলে। হতবাক হয়ে বইটার পেন্সিলে দাগানো লাইনগুলোর দিকে তাকিয়ে থাকি।তা হলে? ফোনে তখনো বলতে থাকা কথাগুলো ক্রমশ ক্ষীণ হয়ে আসে ‘আগের বইটা হারিয়েছ?এতো অগোছালো কেন? ওফফ্‌ তোমাকে নিয়ে আর পারা যায় না।‘

 

লেখিকা পরিচিতি :- তানিয়া দত্ত ঘোষ, জন্ম- কোলকাতায়, ১৯৬৬ তে, পেশায়-স্থপতি, শখ বহুবিধ-বেড়ানো, বিশেষত পাহাড়ে, গান শোনা, ছবি আঁকা, মাঝে মাঝে একটু আধটু লেখা।

SOURCEতানিয়া দত্ত ঘোষ
Previous articleরাখী বন্ধন
Next articleপ্রথম কথা
Avatar
Disclaimer: Monomousumi is not responsible for any wrong facts presented in the articles by the authors. The opinion, facts, grammatical issues or issues related sentence framing etc. are personal to the respective authors. We have not edited the article. All attempts were taken to prohibit copyright infringement, plagiarism and wrong information. We are strongly against copyright violation. In case of any copyright infringement issues, please write to us. লেখার মন্তব্য এবং ভাবনা, লেখকের নিজস্ব - কপিরাইট লেখক কর্তৃক সংরক্ষিত..................

2 COMMENTS

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here