হিমু এবং রিক্সাচালক | ছোটগল্প

0
1386
Photo: mojarto.com

কল্পনার জগৎ বড় মায়াময়।মানুষ কল্পনায় নানা অবয়ব ধারন করতে পারে।যা বাস্তবে চিন্তা করা কঠিন।
আজ পূর্নিমা রাত।আমার মেঝ খালার ঈদে উপহার দেওয়া হলুদ পাঞ্জাবীটা পড়ে বের হলাম রাস্তায়।আশে পাশে দুই একটা মানুষ আর ডাষ্টবিনে একটা কুকুর দেখতে পাচ্ছি।সে মনের সুখে লেজ নেঁড়ে নেঁড়ে কি যেন খাচ্ছে।আমাকে দেখে বিরক্তির ভাব দেখাল।আমি তাকে আর বিরক্ত না করে সামনে এগুতে লাগলাম।সত্যি রাতের শহর বড়ই মনোরম।আজকে একটা রিক্সাও চোখে পড়ছে না।হয়তো সব রিক্সাওয়ালারা আজ আরাম করে ঘুমাচ্ছে তাদের পরিবারের সাথে।
আচ্ছা যদি সরকার থেকে সপ্তাহে একটা দিন তাদের ছুটির ব্যবস্তা করা হতো কেমন হতো।দিনটা যদি হয় শুক্রবার।তাহলে রিক্সাওয়ালারা ও বৌ-বাচ্ছা নিয়ে ঘুরতে যেতে পারতো ছুটির দিনে।এদিকে শহরটা হতো যানজট মুক্ত আর শান্তিপূর্ন ভাবে হন্টন প্রক্রিয়া চালানোর স্থান।
হাটতে হাটতে পাথরঘাটা থেকে কোতোয়ালী চলে এসেছি।কোতয়ালী থানার মোড়ের পাশে কয়েকটা রিক্সাচালকে দেখতে পেলাম।এদের একজন যাত্রী সিটে বসে কানে হেডফোন লাগিয়ে গান শুনছে।দ্বিতীয় জন হাতের তালুতে বৃদ্ধা আঙুল দিয়ে কি যেন ঘষাঘষি করছে আর গুনগুন করে গান গাইছে।মনে হয় গাঁজা টাজা হবে।তৃতীয় জন একটু মনমরা ভাবে বসে আছে।দেখে আমার চিন্তিতই মনে হলো তাকে।
কাছে যেতেই মনমরা আর চিন্তিত চালকটি মৃদু গলায় জিজ্ঞেস করল-
কই যাইবেন মামা?
আমি বললাম- ডিসি হিল যাবো,যাবেন?
চালকটি হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়িয়ে বললেন-যামু।
আমিঃতা ভাড়া কত দিতে হবে?
চালকঃযা ন্যায্য ভাড়া আইয়ে,তাই দিয়েন।
সাথে সাথেই বুঝে গেলাম এই চালক চট্টগ্রামের শহরের স্থানীয় চালক নয়।কিছু স্থানীয় চালক আছে যারা এলাকার দাপট দেখিয়ে যাত্রী থেকে বেশি ভাড়া আদায় করে।যা রীতিমতো ডাকাতির সমান।এদের ভাবভঙ্গি দেখে অনেকেই এদের রিক্সাতে উঠে না।ভুলক্রমে যদি কেউ উঠে যায় তার খেসারত ও দিতে হয় গুনে গুনে।অপরদিকে দিনশেষে দেখা যায় তাদের থেকে কম ভাড়া নেওয়া চালকের ইনকাম বেশি হয়েছে।
আর বেশিক্ষন চিন্তা না করে হুট করে উঠে পড়লাম চিন্তিত চালকটির রিক্সায়।নিউমার্কেট চত্ত্বরের দিকে যাওয়ার পর রিক্সাচালক ঘাড় ঘুরিয়ে জিজ্ঞেস করল-একটা কথা জিগায় মামা?
আমি নিচু গলায় বললামঃকি কথা বলেন?
আপনেরে এই হলদি পাঞ্জাবীতে জব্বর লাগতাছে কিন্তু মামা আপনের পা দেহি খালি,জুতা কি ছিঁড়া গেছে?
আমিঃ না,আমি জুতা পায়ে চলাফেরা করি না।সবসময় খালি পায়েই থাকি।
রিক্সাচালকঃ মামা কি আমার লগে মশকরা করেন?
আমিঃ আজব তোমার সাথে মশকরা করতে যাবো কোনদুঃখে।
চালক মাথা নিচু করে রিক্সাচালনায় মন দিল।
বেচারা মনে হয় একটু বিভ্রান্ত হয়েছে।তাই ব্যাপারটা সহজ করতে আমি তাকে প্রশ্ন করি-
মামা আপনার নাম কি?
রিক্সাচালকঃ রহিম মিয়া।
আমি ব্যাপারটা আরো সহজ করতে,তা রহিম মিয়া ছেলেমেয়ে কয়জন আপনার?কোথায় থাকেন?
রহিম মিয়াঃ একডা পোলা,নাম করিম মিয়া।রেলওয়ে বস্তিতে থাকি মামা।
আমিঃ তা কি করে আপনার ছেলে?
রহিমঃ কাগজ তোকায় দিনে ৭০/৮০ টাকা পায়।তার মায়ের হাতে তুইলা দেয়।আবার রাতের স্কুলে পড়তে যায়।আমার পোলার পড়ালেখার মাথা খুব ভালা।
হঠাৎ রহিম মিয়া একটু হাসি হাসি মুখ করে বলল একবার কি হইছে জানেন মামা-
আমি মনোযোগী শ্রোতার মত বললাম-কি রহিম মিয়া?
রহিম মিয়াঃ কিছুদিন আগে আমার পোলায় কাগজ তোকাইতে গিয়া একটা ৫০০ টাহার নোট পাইছিলো।এই টাহা পাইয়া পোলায় আমার কিযে খুশি।রাতে ঘুমানোর সময়ও বালিশের তলে রাইখা ঘুমাইতো।
আমি গম্ভীর গলায় বললাম,তারপর?
রহিম মিয়াঃ করিমের মাইয়ে কি করছে কাল রাইতে পোলা ঘুমানোর পর টাহাটা আমার হাতে আইনা দিল।আমি টাহাটা হাতে লইয়া উল্টাতেই চোখে পড়ে একটা নম্বর আর কিছু লেহা।
আমিঃ টাকাটার গায়ে কি লিখা ছিল?
রহিম মিয়াঃ আমি তো লেহাপড়া জানি না।তাই পড়তে পারি নাই।তবে একটা শিক্ষিত লোকেরে দেখাইছিলাম।সে কইছে কোন এক রুপা নামের মাইয়া হিমু নামের পোলারে চিঠি লিখছে।
রহিম মিয়া একটু মুঁচকি হেসে বলল-মনে হয় কি মামা ভালোবাসার কোন চক্কর হইবো।
আমি নিশ্চিত এটা রুপার কোন পাগলামী।সে মনে হয় আমাকে খুঁজতে চট্টগ্রাম এসেছিল।আমার ঠিকানা সে জানে না।তাই হয়তো যাওয়ার সময় ৫০০ টাকার নোটে এই চিঠি লিখে ফেলে গেছে।সে হয়তো জানতো আমার হাতে একদিন না একদিন এই টাকা এসে পৌঁছাবে।আমি তার দেওয়া নাম্বারে যোগাযোগ করবো।
আমি আর বেশি কিছু না ভেবে বললাম-
টাকাটা এখন কই রহিম মিয়া,খরচ করে ফেলেছেন?
রহিম মিয়াঃ না মামা,আমার পকেটেই আছে।
আমি ঠান্ডা মাথায় বললাম-
টাকাটা কি আমি একবার দেখতে পারি?
রিক্সাচালক রহিম মিয়া ভ্রু কুঁচকে বললেন-
কেন মামা?
আমিঃ না এমনি দেখতাম।
রহিমঃ আইচ্ছা বলে,কচকচে ৫০০ টাকার নোটটা বের করে আমার দিকে ধরলেন।
আমি টাকাটা হাতে নিতেই চোখে পড়লো ছোট ছোট করে কিছু সুন্দর হাতের লিখা।আমার বুঝতে আর দেরি হলো না এটা রুপার হাতের লিখা।কি লিখেছে পড়ছিঃ

প্রিয় হিমু,
কেমন আছ।কিছু দিন ধরে তোমার সাথে যোগাযোগের অনেক চেষ্টা করেছি।তোমার মোবাইল ও বন্ধ,মেসেও গিয়ে খোঁজ নিয়েছিলাম। কিন্তুু ব্যর্থ হলাম।কেউ জানে না তুমি কোথায় চলে গেছো।একদিন মেস থেকে ফিরে আসার সময় এক ভিক্ষুক বলল-তুমি চট্টগ্রাম চলে গেছো।তাই তোমার খোঁজে আমি চট্টগ্রাম এসেছিলাম।বাকিটা টেলিফোনে বলল নাম্বার দিলাম।
ইতি
তোমার রুপা

আমি নাম্বার গুনতে গিয়ে দেখি দুটো নাম্বার কম দিয়েছে রুপা।মেয়েটার মাথায় বুদ্ধি আছে।টাকাটা আজে বাজে মানুষ পেলেই ফোন করে ডিস্টাব করবে বলেই এ কাজ করেছে রুপা।পাশে ছোট করে লিখা আমাদের প্রথমবার যে তারিখে দেখা হয়েছিল।সেই দিনের তারিখ সংযুক্ত করে ফোন করো।এ মেয়ে তো সাংঘাতিক।
এবার সত্যি সত্যি চিন্তায় পড়ে গেলাম আমি।ঠিক মনে করতে পারছি না আসলে কোন তারিখে আমাদের প্রথম সাক্ষাৎ হয়েছিল।
ভাবতে ভাবতেই রিক্সা চট্টগ্রামের বহু বছরের পুরনো ঐতিহ্যবাহী মিষ্টির দোকান বোস ব্রাদাসের সামনে দিয়ে ক্রস করে ডিসি হিলের দিকে যাচ্ছে।বেচারা রিক্সাচালক উচুঁ রাস্তায় উঠতে উঠতে হাঁপাচ্ছে।আমার কিন্তু রিক্সা থেকে নেমে যাওয়া উচিৎ ছিল।আমিও কেমন চিঠি খানি পড়তে পড়তে সবকিছুই ভুলে গিয়েছিলাম।
রিক্সাচালক রহিম মিয়া ডিসি হিলের মেইন গেইটের সামনে গিয়ে রিক্সা দাঁড় করালো।
আমি তার দেওয়া পাঁচশো টাকার নোটটা একহাতে রেখে আমার বাম কানে গুজে রাখা এক হাজার টাকার নোটটা তার দিকে ধরলাম।
সে সাথে সাথেই বলে উঠলো আমার কাছে তো ভাংতি নাই মামা।
আমি বিনয়ের সাথে বললাম-
এটা পুরোটাই তুমি রেখে দাও।বিনিময়ে তোমার ছেলের কুঁড়িয়ে পাওয়া নোটটা আমায় দিয়ে দাও।
কথা শুনে রিক্সাচালকে একটু চমকিত মনে হলো।তার চোখ মুখ দেখেই তা বুঝা যাচ্ছে।
তারপর রহিম মিয়া মৃদু গলায় জিজ্ঞেস করল-
আইচ্ছা মামা আপনি নোটটা দিয়া কি করবেন?
আমি বললাম তোমার এতোকিছু জানার তো দরকার নাই।
রহিম মিয়াঃ আরেকটা কথা বলি মামা?
আমি – আচ্ছা বলো
রহিম মিয়া- মামা আপনের নাম কি?
আমি মুঁচকি হেঁসে বললাম-আমার নাম হিমালয়,তবে ডাক নাম হলো হিমু।
রহিম মিয়া- এইবার বুঝতে পারছি আসল ঘটনা মামা।
আমি গম্ভীর গলায় বললাম-কিসের আসল ঘটনা রহিম মিয়া?
রহিম মিয়া- এই নোটের চিঠিটা আপনেরেই লিখছে রুপা নামের মাইয়াডা।ঠিক না মামা?
আমি বললাম- ঠিক ধরেছো রহিম মিয়া।
আমাকেই লিখেছে চিঠিটা।
আমি তাকে বিভ্রান্ত করতে বললাম-তা রহিম মিয়া তোমার দ্বিতীয় পক্ষের স্ত্রী কেমন আছে?
রহিম মিয়ার আর সাড়া শব্দ নেই।মনে মনে হয়তো ভাবছে আমি তো তাকে কিছুই বলিনি আমার দ্বিতীয় বিয়ের কথা।উনি কিভাবে জানলো।মাঝে মাঝে মানুষের বিভ্রান্তকর চেহারাটা দেখতে আমার ভালোই লাগে।আমি আসলে তেমন কিছুই জানি না।আন্দাজে ঢিল ছুঁড়ি অনেক সময় লেগে যায়।
রহিম মিয়ার ও হয়তো লেগে গেছে,বেচারা চেহারাটা কালো করে আমার আগাগোঁড়া দেখছে।আর হয়তো ভাবছে আমি কোন সাধারন মানুষ নই নির্ঘাত মহাপুরুষ টাইপ কিছু।না হলে কিভাবে তার খবর জানলাম,যে খবর তার প্রথম স্ত্রী ও এখনো পর্যন্ত জানেনা।সে হঠাৎ তাকে দেওয়া এক হাজার টাকার নোটটা ফেরত দিয়ে
তাড়াতাড়ি রিক্সা নিয়ে চলে গেল।
আমার কাছে এখন দেড় হাজার টাকা হলো,রুপার দেওয়া চিঠির পাঁচশো টাকার নোট
সহ।তারপর হেঁটে ডিসি হিলের ভিতর ঢুকে একটা প্রকান্ড বড় শিশু গাছের নিচে বসে পড়লাম।চোখটা লেগে আসতেই হঠাৎ অনুভব করলাম,কেউ আমাকে হাত দিয়ে নেঁড়ে ডাকছে।
আমি ঘাঁড় ঘুরিয়ে দেখতে পেলাম একটা ছোট বাচ্ছা মেয়ে।বয়স কত হবে এই ৪/৫ বছর হবে। পড়নে শুধুই একটা ছেঁড়া জামা আর একটা প্যান্ট।চেহারাটা বড়ই মায়াবী।চুলগুলো কোঁকড়ানো।আমি জিজ্ঞেস করলাম-কি হয়েছে রে?
মুখে কিছুই বলছে না,শুধু হাত দিয়ে ইশারা করে বুঝাচ্ছে,সে কয়েকদিন যাবদ কিছুই খায়নি।
আমার কেমন জানি মায়া হলো।আমার বাবার বানী গুলোর মধ্যে একটা ছিল মায়া নামক কোন কিছুতেই আবদ্ধ হওয়া যাবে না।মহাপুরুষদের মায়াতে পড়তে নেই।তারপড়েও বাবার বানী উপেক্ষা করে মেয়েটাকে নিয়ে গেলাম পাশের একটা ভাতের হোটেলে।এদিকে রাত ও অনেক হয়ে গেছে।প্রায় ১২টার কাছাকাছি হবে।এসব দোকান অনেক রাত অবধি খোলা থাকে।আমি বললাম তোমার কি নাম মা?
মেয়েটি ছোট করে জবাব দিলো-কুসুম
আমি ভেবেছিলাম হয়তো মেয়েটি কথা বলতে পারে না।আমি জিজ্ঞেস করলাম তুমি কি দিয়ে খাবে কুসুম?
কুসুম একটু চিন্তা করে বলল-গরুর মাংস দিয়া গরম ভাত খামু।আমি অর্ডার দিলাম।খাবার দেওয়া হলো কুসুমকে।সে এমন ভাবে খাচ্ছে যেন তার ভিতরে অভুক্ত কোন রাক্ষস ঢুকেছে।মেয়েটা আসলেই ক্ষুর্ধাত।মাঝে মাঝে ক্ষুর্ধাত মানুষের খাওয়া দেখলেও মনে তৃপ্তি পাওয়া যায়।অন্যরকম একটা আনন্দ।কুসুমের এখন পেট ভর্তি।তার চোখে মুখে একটা খুশি ঝলকানি দেখতে পাচ্ছি।
আসলে পেট ভরা থাকলে পৃথিবীটা বড়ই সুন্দর মনে হয়।আর খালি পেটে কেমন জানি অসার অসার লাগে।হোটেলের ১৮০ টাকা বিল দিয়ে রাস্তায় বের হলাম।হঠাৎ কুসুম আমার পায়ের কাছে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরে থাকে কিছুক্ষণ।তারপর এক দৌঁড়ে রাস্তা পার হয়ে কোথায় যেন অদৃশ্য হয়ে গেল মেয়েটা।আর চোখেও পড়ছেনা।আমি আবার আমার হাঁটা শুরু করলাম।হঠাৎ করেই মনে পড়লো রুপা আর আমার প্রথম দেখা হওয়ার তারিখ।তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম দেখেছিলাম আমার পরিচিত কয়েকজন বন্ধুর সাথে।সেই দিনই দুজনের প্রথম সাক্ষাৎ।দিনটা ছিল ১৫ই ফেব্রুয়ারি।এবার রুপাকে ফোন করার পালা।সামনে এগিয়ে দেখতে হবে ফুটপাতের কোন ফ্লেক্সিলোডের দোকান খোলা আছে কিনা।
একটু এগুতেই চোখে পড়লো একটা দোকান।
দোকানটির পাশেই ভ্যানগাড়ীতে করে চা,কলা,বিস্কুট,পাউরুটি বিক্রি করছে একজন ব্যবসায়ী।এসব দোকানে সব ধরনের সিগারেট ও পাওয়া যায়।যাক ভালোই হয়েছে রাতের মানুষের জন্য।যারা রাতের শহরে জেগে থাকে।দোকানদারকে জিজ্ঞেস করলাম-
ভাই একটা ফোন করা যাবে?
দোকানদারঃকরা যাবে কিন্তু মিনিট প্রতি দুই টাকা দিতে হবে।
আমি বললাম ঠিক আছে দিন।
দোকানদার তার ডেক্সের খুঁটির সাথে রশি দিয়ে একপ্রান্তে বাঁধা মোবাইলটি আমার দিকে বাড়িয়ে দিলেন।
কারন এতো বেশি চুরি,ছিনতাই বেড়ে গেছে যে দোকারদার বাধ্য হয়ে মোবাইল ও বেঁধে রেখেছে সুরক্ষার জন্য।
আমি মোবাইলটা হাতে নিয়ে নাম্বার খুঁজে পাচ্ছি না।কাস্টমাররা কল করতে করতে মোবাইলের নাম্বার খুঁজে পাওয়ার জো নেই।তাও কষ্ট করে আস্তে আস্তে নোটে লিখা নাম্বারটা তুলে সাথে ১৫ যু্ক্ত করে কল দিলাম।মোবাইলে রিং পড়ছে…
ওপাশ থেকে একটা মেয়ের কন্ঠ ভেসে এল কানে।চিনতে একমূহুর্ত ও দেরি হলো না এটা রুপা।
রুপাঃ হ্যালো কে?
আমি একটু চুপ করে রইলাম।
রুপাঃ এতো রাতে ফোন দিয়ে কথা বলছেন না কেন,কে আপনি?
আমি ছোট করে বললাম-আমি হিমু।
সাথে সাথেই ওপার থেকে অশ্রুসিক্ত গলায় রুপা বলে উঠল-
তুমি পেয়েছো তাহলে আমার রেলস্টেশনে ফেলে আসা নোটটা।
আমি বললাম হুম আজ পেলাম।
রুপাঃ তুমি কি আমার সাথে আর কখনো দেখা করবে না কোনদিন?
বড়ই মায়াবী মেয়েটা,এদিকে তার কথা শুনে আমার চোখের কোনেও জল টলমল করছে।
আমি মৃদু গলায় তাকে বললাম পৃথিবী তো গোল দেখা অবশ্যই হবে আমাদের,তবে কবে সেটা বলতে পারছি না এখন।
এই বলেই ফোন কেটে দিলাম।
কারন রুপা মেয়েটা মায়ার ঝর্ণার মতো,একবার ঐ ঝর্ণা ধারায় গা ভেজালে তা শুকানো মুশকিল।আমাকে যে আমার বাবার রেখে যাওয়া বানী অনুস্বরন করে মহাপুরুষ হওয়ার সাধনা চালিয়ে যেতে হবে।আমাকে এসব মায়ার জালে আবদ্ধ হলে চলবে না।
মোবাইলের বিলটা পরিশোধ করে আমি আবার হাঁটতে লাগলাম নিস্তব্ধ আর নির্জন অলিগলির পথ ধরে।

-সমাপ্ত-

Jagonnath Chowdhury

গল্পকারঃ জগন্নাথ চৌধুরী, 

লেখক পরিচিতিঃ লেখকের আসল নাম নান্টু চৌধুরী,ছদ্ম নাম জগন্নাথ চৌধুরী।তিনি বাংলাদেশের চট্টগ্রাম জেলার লোহাগাড়া থানার সুখছড়ী গ্রামে ১৯৯৪ সালের ১৫ই ফেব্রুয়ারি জন্মগ্রহন করেন।ছোটবেলা থেকেই তিনি ছিলেন সাহিত্যপ্রেমী।

 

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here