চাকুরীজীবি অনিকেত, অনীক ছদ্মনামে সে, ভৌতিক গল্প লিখে বেশ নাম করেছে। অফিস থেকে দশদিনের ছুটি নিয়ে সে যাচ্ছে বন্ধু, ঋষির কাছে। লেখাও হবে বেড়ানোও হবে এই উদ্দেশ্যে।
ঋষি থাকে একটা ছোট্ট পাহাড়ী শহর, নলগীড়ে। অনিকেত শুক্রবার আফিসের পর রাতের ট্রেনে রওনা দিল, পরদিন শনিবার, ভোর চারটে সময় ট্রেন পৌচ্ছাবে গন্তব্যে। ফার্স্ট ক্লাসে, একটা সাইড বার্থ সিট। অনিকেতের ট্রেনে একদম ঘুম অসেনা,তাই রাতে বালিশে, হেলান দিয়ে, জানালার বাহিরের জমাট বাঁধা অন্ধকারের দিকে তাকিয়ে, আগামী গল্পটা ভালো করে গুছিয়ে নিচ্ছে।
শনিবার রাত, সময়টা রাত তিনটে, অনিকেত বসে বসে গল্প নিয়ে ভাবছে। সারা কামরায় সে একাই জেগে আছে। হঠাৎই, একজন লোক এসে অনিকেতের সিটে এসে বসল।
অনিকেত বলল,”আরে আরে, ভাইয়া সিট রিজার্ভ।” লোকটি বলল,”আগলা স্টেশন সে, প্যাহেলে চালা জায়ুঙ্গা। থোরা ব্যাঠনে দিজিয়ে।” অনিকেত দেখলো, লোকটার গায়ে, একটা লাল রঙের ছেঁড়া জামা, গলায় একটা সবুজ ছেঁড়া গামছা। যদিও , ট্রেনের রাতের আবছা আলোতে খুব সামান্যই দেখা যাচ্ছে। এমন সময়, অনিকেতের কানে এলো, অনেক মানুষের চিৎকার। অনিকেত জানালার বাহিরে তাকাতেই দেখল, একদল মানুষ মশাল নিয়ে ছুটছে। আর তাদের থেকে বেশ কিছুটা সামনে ছুটছে, একটি ছেলে। অনিকেত বেশ উত্তেজিত হয়ে ভাবল, “চোর নাকি? এতো গুলো লোক, হাতে আবার মশাল। কোন জায়গারে বাবা? লোকে এখনো মশাল ব্যবহার করে?” এমন সময়তেই অনিকেতের চোখে পড়ল মশাল ধারী একজনের উপর, অনিকেতের যেন মনে হল, তার সামনে বসা মানুষটাই যেন, জামাটাও যেন একই রকমের। অনিকেত সামনে তাকাতেই আবাক! বসে থাকা লোকটা তো নেই। কিন্তু উঠে গেছে বলে তো মনে হল না। এই সময়তেই অনিকেত শুনতে পেল, পাশের রেললাইনে, ট্রেনের আসার শব্দ। আর মুহুর্তের মধ্যেই চলে গেল ট্রেনটা। কিন্তু, এতো গুলো লোক! সবাই মারা পড়ল? বেশ কিছুক্ষণ কেটে গেল। ভোর পাঁচটার সময়, অনিকেত নলগীড় স্টেশনে নামল। ঋষির বাড়ি পৌচ্ছে, গতকাল রাতের সব ঘটনা জানালো। উত্তরে ঋষি বলল,”আজ থেকে বহুযুগ আগে, সীমগীড় ও জামগীড় নামে পাশাপাশির দুটো গ্রাম ছিল, দুই গ্রাম ছিল, একে অপরের শত্রু। সেখানের একটি ছেলে ও মেয়ের প্রেমের সম্পর্ক শুরু হয়। যা, দুই গ্রামের লোকেরা মেনে নিতে পারেনি। তখন দুই গ্রামের লোক একসাথে পঞ্চায়েত করে ঠিক করলো যে, ছেলে ও মেয়েটিকে খুন করা হবে। একদিন সন্ধ্যায় মেয়েটি যখন বাড়িতে একা ছিল, তখন বাড়িতে আগুন লাগানো হয়। আর সেই খবর পাওয়ার পর, পাশের গ্রামের থাকা প্রেমিক, নিজের প্রাণ বাঁচানোর জন্য পালায়। সে রাত তিনটের কাছাকাছি সময়ে রেললাইন ধরে ছুটতে শুরু করে। তখন একটাই রেললাইন ছিল। হঠাৎই দুই গ্রামের অনেক গুলো লোক মশাল নিয়ে, ছেলেটির পিছনে তাড়া করে। উদ্দেশ্য ছিল, মেয়েটির মতো ছেলেটিকেও পুড়িয়ে হত্যার। কিন্তু, তখনই একটা ট্রেন আসে উল্টো দিক থেকে। ব্যাস সব শেষ। আর তোর সিটে যে এসে বসেছিল, সে ছিল এই দলের পান্ডা। চিন্তা করিসনা, অনেক রেললাইন যাত্রীকেই উনি দেখা দেন ও সেই পুরানো ঘটনাটি দেখান। আমিও দেখেছি।”

কলমে শুভশ্রী ঘোষ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here