অমানিশার আঁধার থেকে সদ্য মুক্তিপ্রাপ্ত একটি পাখির শাবক সময়ের সাথে আর কালের চক্রপথে একটু-আধটু করে বেড়ে চললো।ঝড়ের দাপট এখনও থামেনি।দিনের শেষ প্রান্ত রাতের প্রথম প্রান্ত ছুঁয়ে দিয়েছে প্রায়।আকাশের এক দিকটা পরিষ্কার অথচ টিপ-টিপ করে বৃষ্টি পড়ে চলেছে।বাতাসে তেমন বেগও নেই—পৃথিবী এখন নীরব,নিঝুম।ভয়-ভীতি আর প্রতিবেশীর হিংসা,জ্বালা শাবকটির আশে-পাশে,আনাচে-কানাচে জ্বালিয়ে মারছে।শাবকটি নির্বাক,নিস্তব্ধ এক আকাশ মন নিয়ে সবকিছুর অনল আঘাতকে এক-এক করে দূরে সরিয়ে নিজ পথ রচনায় ব্যস্ত।মুখে তার ইস্পাত-কঠিন বজ্র শপথ।

সময় চলতে থাকে ঝর্ণার মতো।অতীত বর্তমানকে রাস্তা করে দেয় আর সেই অতীতকে দূরে সরিয়ে সময়ের প্রতিটি অণু-পরমাণুর সাথে তাল মিলিয়ে ক্ষুদ্র শাবকটি বর্তমান সৃষ্টি করে চলে।

শাবকটি পাখা খুলছে।তার উজ্জ্বল দৃষ্টির অপেক্ষায় অপেক্ষারত ব্যস্ত ভবিষ্যৎ।মাঝে-মাঝে দমকা বাতাস বইছে।আকাশের সব তারাগুলো অকৃপণ জ্বলছে।কুকুরগুলো ঘেউ-ঘেউ করছে।আম বাগানের জমাট অন্ধকারে জোনাকিরা জ্বলছে,নিভছে,আবার জ্বলছে আর নিভছে।পৃথিবী ঘুরছে—পৃথিবীর সবই ঠিক চলছে কিন্তু বুকভরা হতাশা এবং একরাশ নিষ্ঠুর স্মৃতি জড়ানো ব্যথা নিয়ে শাবকটি এগিয়ে চলেছে।তবে একটা ভয় শাবকটির মনকে আরও বেশি আঁধার করে ফেলছে অথচ বুকের ভিতরে দাউ-দাউ করে জ্বলছে অন্যায়ের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিশোধের আগুন।

সিরাজদ্দৌলার প্রায়শ্চিত্তের পর দেশে হিংসা,লালসা,স্বার্থপরতা আর নারকীয় পৈশাচিকতা পুঞ্জীভূত হয়ে যে চিতাবহ্নি প্রজ্বলিত করে চলেছে সেই চিতায় শুধু শাবকটির স্বাধীনতার রক্তিম বিবেক পুড়ে-পুড়ে অঙ্গার হতে চলেছে।সে জানে না কোনো দিন সে মঙ্গল মানস স্বাধীনতার নির্মল পবিত্রতা নিয়ে অক্ষত সুন্দর হয়ে বের হয়ে আসতে পারবে কিনা কারণ এতক্ষণে তার মনের পশ্চিমাকাশে হেলে পড়েছে সপ্তর্ষিমণ্ডল।

 

কলমে মালা সিংহ, নিউ ব্যারাকপুর, পশ্চিমবঙ্গ

বাংলা সাহিত্যের গভীর অনুরাগী।বিভিন্ন উপন্যাস পড়তে এবং গল্প ও কবিতা লিখতে ভালোবাসি।


7 COMMENTS

  1. সামনে অনেক পথ -ভাল লাগলো। আগামী দিনের লড়াই এর মানসিক প্রস্তুতি ভাবনার প্রথম থেকেই নিতে হয়।আরো লেখা আশা করছি।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here