পৃথিবী আজ পিঙ্গলবর্ণের এক কুয়াশাচ্ছাদিত গ্রহ। চারিদিকে নানারকম যন্ত্র, ধাতব আবাসন।মানুষ এখন লুপ্তপ্রায়। পৃথিবী এখন সবুজ পিঁপড়েমানবদের দখলে। প্রত্যেকটা উত্তেজনাপ্রবন স্থানগুলিতে নজর রাখার জন্য আকাশে ঘুরে বেড়াচ্ছে নানা আকৃতির স্পেসশিপ।
রন্তুর পৃথিবীতে সবচেয়ে বিলাসবহুল অট্টালিকা। অট্টালিকার ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে এইসব দেখছিল রন্তু । হঠাৎ তার লাস্যময়ী পরিচারিকা এসে দাঁড়ালো গেটের সামনে।রোজ একঘন্টার জন্য ও বাইরে বেরোয়।ওর মানুষের মতো সব কিছু হলেও,শরীরের চামড়া পিঁপড়েমানবদের মতো। ওকে মানুষ আর পিঁপড়েদের হাইব্রিড বলা যায় ।রন্তুকে সঙ্গ দেওয়ার জন্য পিঁপড়েমানবরা ওকে তৈরি করেছে।আর কৃতজ্ঞতাবশত দিয়েছে বাকি সব কিছু ।
—–
আজ থেকে দুবছর আগেও রন্তু ছিল লন্ডন মিউসিয়ামের সামান্য কর্মচারী। রানকছিতা গ্রামের, মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে রন্তু, ব্রিটেনে গিয়েছিল পাশ্চাত্যশিল্প নিয়ে পড়াশোনা করতে। আর পড়াশোনার মাঝে খরচ চালানোর জন্য চাকরী।
একদিন পেরুর একটি বিধ্বংসী ভূমিকম্পের ফলে প্রত্নতাত্বিকরা খুঁজে পান এক অদ্ভুত পেইন্টিং। এটা কিসের ওপর, কি রঙে আঁকা , কিসের পেইন্টিং – কিছুই জানা যায়নি। পেইন্টিংটা ওয়াইন খেতে খেতে পরিষ্কার করছিল রন্তু। হঠাৎ হাত ফস্কে ওয়াইনের গ্লাসটা পরে যায় পেইন্টিংয়ের ওপর। পেইন্টিংটা অদ্ভুতভাবে ঘেঁটে যায় । তাতে দেখা যায় অনেক ঘণ্টা একটা প্যাটার্নে দুলোন্ত অবস্থায় সুসজ্জিত। রন্তু ঠিক এরকম প্যাটার্নে সাজানো ঘণ্টা দেখেছিল তাদের বাড়িতে।
তাদের বাড়িতে ঘন্টাদালান নামে একটি স্থান আছে। এখানে ছোটোবড়ো বিভিন্ন ঘণ্টা নির্দিষ্ট প্যাটার্নে সাজানো।সবাই বলে তাদের এক পূর্বপুরুষ বাড়ির বাচ্ছাদের খেলার জন্য এটি তৈরি করেছিলেন। সেই ঘণ্টার প্যাটার্নই ফুটে উঠেছে এই ছবিতে।
এটা কি কোনো গুপ্তধনের নকশা? রন্তু পেইন্টিংটার কিছু ছবি মোবাইলে তুললো। ছবিটা যে নষ্ট হয়েছে, সেটা কেউ জানার আগেই রন্তু চাকরিতে ইস্তফা দিয়ে ফিরে এলো দেশে।বাড়িতে পৌঁছে ছবিতে ঘন্টাগুলি যে সিকোয়েন্সে দুলোন্ত অবস্থায় আছে, সেইভাবে দোলাতেই এক অদ্ভুত সুরমূর্ছনা সৃষ্টি হলো। তারপরই শুরু হলো তীব্র ভূকম্পন।সারা পৃথিবী যেনো রসাতলে যাবে।মাটির তলা থেকে বেরিয়ে এলো এক বিশাল ঘণ্টাশহর ।এর প্যাটার্নও ছবিটার মতই । রন্তু সেই ঘণ্টাগুলিও দোলাতে সেই সুরমূর্ছনা শতগুণ বেড়ে গেলো।সেখানে তৈরী হলো বিশাল ওয়ার্মহোল।ওয়ার্মহোল থেকে বেরিয়ে এলো সমগ্র পৃথিবীর আকাশকে আচ্ছাদিত করে এক অশ্বক্ষুরাকৃতির স্পেসশিপ। তা থেকে সমগ্র পৃথিবীতে ঝাঁপিয়ে পড়লো অগুনতি পিঁপড়েমানব ।
কলমে মৌলী কুন্ডু, হাওড়া