রেললাইনের ধার থেকে উঠে দাঁড়ালো মেয়েটি। উঠে দাঁড়ানোর পরপরই পড়ে যাচ্ছিলো। তবুও ভাঙা পায়ে ভর দিয়ে উঠে দাঁড়ায়। শরীরের কাপড় কোথায়? যেটুকু আছে তাতেও লজ্জা নিবারণ করা যায় না। ঠোঁটের দুপাশ থেকে গড়িয়ে পড়ছে কষ, মাথা ফেটে গড়িয়ে পড়ছে রক্ত। চোখের আশপাশে কালশিটে দাগ, বাম হাতের কব্জি বেঁকে গিয়েছে, সরে গিয়েছে কাঁধের হাড়!

মেয়েটি আবার উঠে দাঁড়ায়। মাটিতে পড়ে থাকা ওড়নাটা দিয়ে জড়িয়ে নেয় দাঁত বসানো স্তনগুলোয়। স্তনবৃন্ত চুইয়েও নেমে এসেছে রক্তের ধারা। ছেঁড়া পায়জামা দিয়ে যেটুকুন দেখা যাচ্ছে, দুই উরু ক্ষতবিক্ষত করেছে অজস্র নখের আঁচড়। যদি আরো খানিকটা গভীরে দেখতে পাওয়া যেতো, নারীদেহের সবচেয়ে গভীর অন্তঃস্থল, যেখান থেকে নবজাতক বেরিয়ে আসে সেখানে কারা যেন গভীর গর্ত খুঁড়েছে। গর্ত থেকে বেরিয়ে আসছে রক্তধারা। সেই গর্তে তারা সুখ খোঁজে, আমোদ খোঁজে, পুরো পৃথিবীর কৌতুহল খোঁজে নাকি তারা জানেই না তারা কি খোঁজে। মেয়েটির সেই ক্ষুদ্র ছিদ্রে ঢুকেছে চার অনুপ্রবেশকারীর উশৃঙখল অঙ্গ। সেই অঙ্গ শুধু এমন ছিদ্র খোঁজে। যত সরু ছিদ্র ততো বেশি মজা, ততো বেশি শরীর গরম হয়। সেই ছিদ্রকে বড়ো করার মধ্যেই তাদের পুরুষত্ব। যার ছিদ্র, যার শরীর তার অধিকার নেই তাদের আটকানোর। আটকাতে গেলেই মারো, ধরো, কাটো, রক্ত বার করতে করতে ন্যাতা করে ফেলো শরীরটাকে। অনুপ্রবেশকারীদের নাম ধর্ষক।
ন্যাতার মতোন সেই শরীরটাকেই টেনে নিয়ে যাচ্ছে মেয়েটি। কিছুদূরেই পড়ে আছে পাঁচ লিটারের একটা পেট্রোলের ক্যান। মেয়েটি পা টেনে টেনে কোনমতে সেই ক্যানটাকে হাতে তুলে নেয়। সমস্ত শরীর অসার হয়ে আসছে তার। মনে হচ্ছে জ্ঞান হারাবে কিছুক্ষণ পর। কিন্তু জ্ঞান হারালে চলবে না, এই দিনটার জন্যই তো তার এতো অপেক্ষা করা!
পেট্রোল ভরা ক্যানটা নিয়ে, শরীরটাকে টেনে হিঁচড়ে মেয়েটি চলে রেললাইন পেরিয়ে এক গুদামঘরের সামনে। মেয়েটির যোনি থেকে বেড়িয়ে আসছে জমাট বাঁধা কালচে রক্ত! পা গড়িয়ে তা মিশে যাচ্ছে মাটিতে। সমস্ত রক্ত বেরিয়ে গেলেও সে থামবে না!
গুদামঘরের বাইরে রাখা দুটো খাটিয়ায় উপুড় হয়ে শুয়ে চার ধর্ষকেরা। তাদের অশান্ত অঙ্গ আর উত্থিত নেই, রাতের খাবার পেয়ে গিয়েছে তারা। মদের বোতলের নেশা আজ একটু বেশিই গাঢ় যেন। দিশি মদের বোতলগুলো রাস্তায় আনতে আনতে কতটুকু ঘুমের ওষুধ মিশিয়েছিলো মেয়েটির ঠিক মনে নেই। 
মেয়েটি জানতো সে শিকারে পরিণত হবেই, ঠিক সাতদিন আগে তার বোনকে যেমন ছিঁড়ে খেয়েছিলো এরা! বোন তো ওদের কাছেও আসেনি, শুধু অঙ্ক টিউশনি পড়ে ফিরছিলো, মাধ্যমিকে অঙ্কে ১০০ তে ১০০ পাওয়া মেয়ে। বোন তার এই পথ দিয়ে যাচ্ছিলো শুধু তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরবে বলে।
আজ রামু কাকার থেকে মদের বোতল নিয়ে নিজে এসেছিলো মেয়েটি, এদের সাপ্লাই দিতে। সে তো দিদি, বদলা তাকে নিতেই হতো। মদ খেতে খেতে মেয়েটিকে ছিঁড়ে ছিঁড়ে খাচ্ছিলো যখন ওরা, মেয়েটির চোখ ছিলো পেট্রোলের দিকে। ওষুধ মেশানো মদ খেয়ে শিথীল হয়ে যায় ওরা, টলতে টলতে গুদামেই উপুড় হয়ে শুয়ে পড়ে।
মেয়েটির বেঁকে যাওয়া হাত থেকেই পেট্রোল ছড়িয়ে পড়ছে চারটি মানুষরূপী জীবের ওপর। ওরা স্বপ্নে তখন ধর্ষণ করছে আরো কত শত ছিদ্রের! 
 এক ধর্ষকের বিড়ির পাশে পড়ে থাকা দেশলাই থেকে একটা কাঠি জ্বলে উঠলো। জ্বলে ওঠা আলোয় মেয়েটির শেষবারের মতোন মনে পড়লো, তার বোনের পোড়া দেহটা কেমন দলা পাকিয়ে গিয়েছিলো!
দাউদাউ করে জ্বলছে আগুন। মেয়েটির শরীরের সমস্ত ছিদ্র দিয়ে ভেসে আসছে নীরব চিৎকার! ঘুমন্ত মানুষগুলো চিৎকার করলেও মেয়েটির কানে যাচ্ছে না। মেয়েটির হা হা হা অট্টহাসিতে ভেঙে যাচ্ছে রাতের নীরবতা। এই প্রথম মেয়েটির পোড়া গন্ধ ভালোলাগছে, ধর্ষকদের শরীর পোড়ার গন্ধ!

কলমে মুকুলিকা দাস


বর্তমানে পদার্থবিদ্যায় স্নাতকোত্তর স্তরে পাঠরতা। ছোটবেলা থেকেই লেখালেখি শুরু হলেও সাহিত্য জগতে প্রবেশ ফেসবুকের হাত ধরে। তারপর বিভিন্ন সংকলন, পত্রিকা, ই-বুক, ওয়েবজিনে নিয়মিত লিখে চলেছেন। উল্লেখযোগ্য কিছু সংকলন যেগুলো প্রকাশিত হয়েছে- সেরা ইচ্ছেডানা বিভা সংকলন, আতঙ্কের অমানিশা, ভূতোপনিষদ, ফসল, ১৬-এ শিহরণ, আবছায়া ইত্যাদি। আরও কিছু সংকলন প্রকাশ হতে চলেছে এই বছর। তার উল্লেখযোগ্য কিছু অডিও স্টোরি- নজর, ক্যানভাস, লুকোচুরি, পাপ, নিখোঁজ সংবাদ এবং, তামস ইত্যাদি।

SOURCEকলমে মুকুলিকা দাস
Previous articleহস্তান্তর
Next articleঅক্ষয়
Avatar
Disclaimer: Monomousumi is not responsible for any wrong facts presented in the articles by the authors. The opinion, facts, grammatical issues or issues related sentence framing etc. are personal to the respective authors. We have not edited the article. All attempts were taken to prohibit copyright infringement, plagiarism and wrong information. We are strongly against copyright violation. In case of any copyright infringement issues, please write to us. লেখার মন্তব্য এবং ভাবনা, লেখকের নিজস্ব - কপিরাইট লেখক কর্তৃক সংরক্ষিত..................

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here