সেদিনও বৃষ্টি নামেনি,স্মৃতির কপাট আলগা করে, দেখেছিলাম রোদের শরীর ছুঁয়ে কুয়াশারা নেমে আসছে, ওরা বৃষ্টির রঙ হয়ে চেনা অক্ষরে লিখে গেল-
আজ পারমিতা আসবে।
এই প্রথম সেলফিতে বারবার দেখছিলাম
চৌকো ফ্রেমের চশমা আর নতুন গাল বোঝায় দাড়িতে আমাকে কেমন দেখতে লাগছে ।
পাঞ্জাবি ছেড়ে, আজ প্রথম জিন্স আর শার্ট পড়েছি,
শরীর জুড়ে একটা মিষ্টি পারফিউম এর গন্ধ,
আজ পারমিতা আসবে।
গতরাতে মেসেজে বলেছিল ,
ভিক্টোরিয়ার গেটে দেখা হবে আমাদের,
মেঘ মুলুকে জোনাকিরা রাতের শরীরে যেভাবে চুমু আকে, অতটা সাহস হয়তো হয়ে উঠবে না
আমাদের অভিমানি বসন্তের চিহ্ন রেখে যাবো
অনাগত শীতের কাছে, আমার আবছা দৃষ্টির আড়ালে লুকিয়ে রাখা কুয়াশাদের ছড়িয়ে দেবো,
একটা নরম পৃথিবীতে, শেষ বিকেলেও মনে হবে সকাল শুরু হলো।
২০ বছরের একটা ছেলে বলেছিলো এই কৃষ্ণচূড়ার মালাটা নেবে, এর কী দোষ, হলুদ রঙে ভালোই ছিল,
আমার কাজে আসেনি, অনিমা এবারেও এলোনা।
আমিও ভয় পেয়েছিলাম,
ট্রেনের সাইরেন বারবার ডেকে বলছিল চলে আয় উজান।
পারু আজও আসবেনা,
নিদারুণ কাঙালের মতো ঘরে ফেরা!
নিপুণ অন্ধকারটা রেলগাড়ির জানালার ওপাশ থেকে, ভনিতা করে বলছিল,
বলেছিলামনা ওগুলো আসলে কুয়াশা নয়,
পড়ন্ত বিকেলে ইরাবতীর শরীর বেয়ে নেমে আসা ঘাম! প্রজাপতির রং ভেবে এখনো কোন মোহের পিছে ছুটছো? বাচ্চাদের মতো একটু কেঁদে বলেছিলাম
খুব ভালোবাসি পাগলি মেয়েটা কে,
এবারও এলোনা পারমিতা।
ঘরে না ফিরতেই হাতে একটা চিঠি এলো ,
তোমাকে লিখছি উজান, 22 শে জুলাই আমার বিয়ে; আবিরের রঙটা আরো ফিকে হলো জানি।
ব্যস্ত কলকাতার দুরন্ত ট্রাম , লোহার কঠিন রাস্তাকে যেভাবে পিষে যায় ঘন্টার পর ঘন্টা, আমিও সময়ের দাবানলের শিকার।
অভিমান ভুলে আবার এসো নতুন রাঙা এক বসন্তের বিকেলবেলা, সেদিন নাহয় নতুন করে ভালোবাসা দিও।
প্রথম সকালে দেখা কুয়াশাদের বলি, এবার যদি বৃষ্টি হয়ে ভিজিয়ে দিতে চিঠির অক্ষর গুলো,
তাহলে হয়তো আরও একটা দিন কাটত পারমিতার জন্য।
লেখক পরিচিতি: বিশ্বজিৎ হালদার,কুচেমোড়া, নদীয়া।