সারাদিন বাড়িতে একাই কাটে মধ্যমার।মধ্য কলকাতার এই প্রাসাদসম বাড়িটা জুড়ে সে একাই বিরাজমান।মাঝে মাঝে মনে হয় গোটা বাড়িটা যেন তাকে গিলে খেতে আসছে,পালিয়ে যেতে চায় মধ্যমা কিন্তু উপায় নেই।কোথায় যাবে সে? এই শহরের একটা রাস্তা,একটা গলিও যে তার চেনা নেই।সেই কোন ছোট্টবেলায় কোন এক অজ পাড়াগাঁ থেকে এই বাড়ির বাবু তাকে কিনে এনেছিল।মধ্যমা নামখানা ঐ বাবুর বৌ এর দেওয়া।ওনাদের একখানাই ছেলে ছিল,যার সাথে তারা মধ্যমার বিয়েও দিয়েছিল।কিন্তু সে ছেলে অসুস্থ ছিল,বেশিদিন বাঁচেনি।সদ্য বিধবা মধ্যমার তখন কোথাও কোনো গতি ছিল না।কিন্তু একদিন গিন্নিমা তাকে জিজ্ঞেস করলেন,
‘আমার ভাইপো টা কে তোর কেমন লাগে? পছন্দ?’
লজ্জায় সেদিন মধ্যমা কিছু বলতে পারেনি।আর বলবেই বা কি করে?সেই যেদিন প্রথম এই প্রাসাদে তার আগমন,তবে থেকে আজ অবধি রোজ যাকে লুকিয়ে লুকিয়ে দেখেছে,যার সাথে সামনাসামনি হলে বুকটা ধড়াস করে উঠেছে,যার সুঠাম পৌরুষত্ব রাতের পর রাত মধ্যমা কে জাগিয়ে রেখেছে,সেই মানুষটি কে তার পছন্দ কিনা এ কথা ভাষায় প্রকাশ করা সত্যি কি সম্ভব?
গিন্নিমার ভাইপো সপ্তক ছেলেটি খুব শান্ত স্বভাবের,পিসি পিসেমশাইয়ের মুখের উপর কোনোদিন কথা বলত না।তাই অনিচ্ছা সত্ত্বেও মধ্যমা কে বিয়ের জন্য রাজি হয়েছিল।বিয়ে হয়েছিল বটে তবে কোনোদিন নিজের বৌ কে ছুঁয়ে অবধি সে দেখেনি।তাই স্বামী সুখ আসলে ঠিক কেমন হয়,তা থেকে চিরটা কাল বঞ্চিত রয়ে গেছে মধ্যমা।
মধ্যমার কোনো সন্তান সন্ততি নেই।সপ্তক কোনোদিন তাকে অসম্মান বা অযত্ন করেনি।বিয়ের কয়েক মাস পরই কাউকে কিছু না জানিয়ে গৃহত্যাগী হয় সপ্তক।খুব কষ্ট পেয়েছিল মধ্যমা,তবু সামলে নিয়েছিল।তারপর একে একে গিন্নিমা,কর্তামশাই সহ বাড়ির বড়রা চলে যান ইহ জগৎ ছেড়ে।সেই থেকে মধ্যমা একাই এই বাড়ির সব দায়িত্বভার বহন করে চলেছে।গিন্নিমার অর্থের অভাব ছিল না,সে সব এখন মধ্যমার জিম্মায়।তাই দিয়ে ভালোই চলে যায় মধ্যমার,খাওয়া পরার কোনো অভাব নেই।কিন্তু এই ফাঁকা বাড়িতে সব থেকে বেশি যেটার অভাববোধ করে মধ্যমা, তা হলো একজন সঙ্গীর।
সেদিন মধ্যমার উকিলবাবু সকাল সকাল এসে হাজির হলেন,কিছু সইসাবুদ করিয়ে চায়ে চুমুক দিতে দিতে একটা প্রস্তাব রাখলেন মধ্যমার কাছে।
‘এতো বড়ো বাড়ি তো ফাঁকাই পড়ে আছে।বলছি একটা ভাড়াটিয়া বসালে কেমন হয় মামনি?’
উকিলবাবু এবাড়ির অনেকদিনের পরিচিত,ছোটো থেকে দেখছেন মধ্যমা কে।মধ্যমা ও খুব মেনে চলে ওনাকে।
‘সে তো বেশ ভালোই বলেছেন।আছে নাকি কেউ আপনার সন্ধানে?’
‘সেদিন এক দম্পতি এসেছিল আমার কাছে।কথায় কথায় জানলাম নতুন বিয়ে করে কলকাতায় এসে উঠেছে,থাকার জন্য বাড়ি খুঁজছে।তাই তোমার সাথে কথা না বলেই তাদের আজকে আসতে বলে দিয়েছি।তুমি কিছু মনে করনি তো মা?’
মধ্যমা বড়োই সরল মনের।হাসিমুখে নিজের সম্মতি জানিয়ে দিল।আধ ঘন্টা পর চাকরের সাথে ঘরে ঢুকল একটি মধ্যবয়সী ছেলে ও একটি মেয়ে।মেয়েটির মুখখানা একদম লক্ষ্মী প্রতিমার মতো,মাথায় ঘোমটা টানা,মুখে একটা সলজ্জ হাসি।ঢিপ করে একটা প্রণাম করল মধ্যমা কে,ছেলেটিকে ইশারা করাতে সেও প্রণাম ঠুকে নিল।মধ্যমা দুজনকে বসতে বলে কথা সেরে নিল।বাড়ির একতলার দুটো ঘর,ড্রয়িং রুম সহ পিছনের ব্যালকনিটা ওদের দুজনের।এক কথায় রাজি হয়ে গেল প্রমিত ও সুধা।
দেখতে দেখতে কয়েকদিন ভালোই কাটল।সুধা মেয়েটি মাঝে মধ্যে এসে মধ্যমার সাথে গল্প করে যেত।গ্রামের মেয়ে,তিন কুলে কেউ নেই,প্রমিতের সাথে গ্রামের একটা অনুষ্ঠানে আলাপ,সেখান থেকেই সম্পর্কের শুরু।মধ্যমার বেশ ভালোই লাগত সুধার সাথে গল্প করতে।কোথাও যেন ওর নিজের সাথে মিল খুঁজে পায়।মধ্যমা ও গ্রামের মেয়ে ছিল,এতো বছরে কোনোদিন গ্রামে ফিরতে পারেনি।জানে না ওখানে আর কেউ বেঁচে আছে কিনা।সুধার মধ্যে দিয়ে নিজের জীবনের প্রতিবিম্ব খুঁজে পেল মধ্যমা।
কিন্তু প্রমিত ছেলে টিকে প্রথম দিন থেকেই মধ্যমার ঠিক সুবিধার মনে হয়নি।আসা যাওয়ার পথে কয়েকবার দেখা হয়েছে,খুব বাজে নজরে মধ্যমার দিকে তাকিয়ে থেকেছে।মধ্যমা এমনিতেই বেশ সুন্দরী,দৈহিক গঠন ও চোখে পড়ার মতো।কিন্তু যার ঘরে এতো ভালো একজন স্ত্রী আছে তার নজর এরকম তো হওয়ার নয়! ঠিক বুঝে উঠতে পারে না মধ্যমা,তাই চেষ্টা করে প্রমিত কে এড়িয়ে যাওয়ার।
সেদিন সুধাকে খুঁজতে হঠাৎই মধ্যমা ঢুকে পড়েছিল প্রমিতের ঘরে।প্রমিত ঘরে একাই ছিল।মধ্যমা কে দেখে একটা লোলুপ দৃষ্টিপাত করল।খুব অস্বস্তি হলো মধ্যমার,শাড়িটা ভালো করে গায়ে জড়িয়ে নিল।কিন্তু তাও প্রমিতের দৃষ্টি একটুও সরল না।ক্ষণিকের জন্য মধ্যমার মনে হলো প্রমিত তার দিকে আস্তে আস্তে এগিয়ে আসছে।কিন্তু কিছু ঘটার আগেই সুধা ঘরে চলে এলো।
‘আরে তুমি? কখন এলে? আমি একটু ছাদে গেছিলাম।কি হলো তুমি এতো ঘামছো কেন? শরীর খারাপ?’
‘না আমি একদম ঠিক আছি।তোমার জন্য এই আচারটা এনেছিলাম।‘
বাটিটা সুধার হাতে দিয়ে রুদ্ধশ্বাসে ছুটে নিজের ঘরে এসে দরজা দিল মধ্যমা।খাটের উপর বসে পড়ল।দুহাতে মুখ ঢাকল,প্রমিতের সেই কামুক চাহনি সে কিছুতেই ভুলতে পারছে না।ওর চোখ যেন মধ্যমার শরীরের প্রতিটা ভাঁজকে তারিয়ে তারিয়ে উপভোগ করছিল।একবার ভাবল সুধা কে সবটা জানিয়ে দেবে,কিন্তু পরক্ষণে ভাবল বলবে টা কি? কাউকে দেখা তো কোনো অন্যায় হতে পারে না।অবশেষে মধ্যমা ঠিক করেই নিল,প্রমিতের মুখোমুখি সে আর হবে না।
কিন্তু একই বাড়িতে থেকে এভাবে এড়িয়ে যাওয়া টা সহজ নয়।প্রায়শই প্রমিতের সামনাসামনি হতে হত মধ্যমা কে।ছেলেটার নজর শুধু খারাপ তা নয়,ধীরে ধীরে ওর কার্যকলাপের উপরও সন্দেহ হতে থাকে মধ্যমার।প্রমিত কি কাজ করে সুধা জানে না,সারাদিন বাড়ি থাকে কিন্তু রাতেরবেলা বেরিয়ে যায়।সুধা মেয়েটা বড্ড সরল,খুব চিন্তা মধ্যমার ওকে নিয়ে।বারবার ওর মনে সন্দেহ জাগে,প্রমিত কোনোভাবে সুধা কে ঠকাচ্ছে না তো?ভেবেছিল উকিলবাবু কে দিয়ে খোঁজ নেওয়াবে কিন্তু উনি এখন শহরের বাইরে।তাই মধ্যমা নিজেই সত্যিটা জানার চেষ্টায় লিপ্ত হলো।
প্রমিত কে যখনই বাইরে যেতে বা বাইরে থেকে আসতে দেখেছে মধ্যমা,ততবারই ওর কাছে একটা চামড়ার ব্যাগ দেখেছে।বেশ বুঝতে পারল মধ্যমা যে ঐ ব্যাগটা তাকে প্রমিতের আসল সত্যিটা জানতে সাহায্য করবে।যদিও সেই ব্যাগে হাত দেওয়া ততোটাও সহজ ছিল না।বেশ কিছুদিন মধ্যমা প্রমিতের উপর নজর রাখতে শুরু করল।প্রমিত ঘরে ঢুকলে যদি কোনো কিছু প্রমাণ পাওয়া যায়! কিন্তু প্রমিত কখনোই ওর ব্যাগটাকে হাতছাড়া করত না।বেশ কিছুদিন চেষ্টা করেও যখন বিশেষ কিছু হাতে এলো না,তখন একটা অন্য পথ ভাবলো মধ্যমা।
দুদিন পর ছিল পূর্ণিমা।ছোট্ট করে পুজো করেছিল মধ্যমা।সপ্তক যতদিন ছিল,প্রতিটা পূর্ণিমাতে বাড়িতে পুজো হোক এটাই চাইত।গিন্নিমার অবর্তমানে মধ্যমাই করত সেসব।তবে আজকের এই পুজোর পিছনে একটা বিশেষ উদ্দেশ্য আছে মধ্যমার।পুজো শেষে ঠাকুর কে মন ভরে ডাকল,
‘আজ আমি একটা কঠিন কাজ করতে চলেছি ঠাকুর।জানি না সফল হব কিনা,তবে ঐ ফুটফুটে মেয়েটার কোনো ক্ষতি আমি হতে দেব না।আমায় তুমি শক্তি দিও।‘
পিছন ঘুরতেই সুধা কে দেখতে পেল,সে প্রসাদ খেতে হাজির হয়েছে।তাকে বসিয়ে পাশের ঘরে গেল মধ্যমা।দরজা টা বন্ধ করে ড্রয়ার থেকে একটা ট্যাবলেট বের করল।সুধার জন্য তুলে রাখা প্রসাদের সিন্নি তে সেটা ভালো করে মিশিয়ে দিল।ঘুমের ওষুধ,খুব অল্পমাত্রার।যতক্ষনে সুধার ঘুম ভাঙবে ততক্ষণে মধ্যমার কার্যসিদ্ধি হয়ে যাবে।সুধা খুব তৃপ্তি করে চেটেপুটে পুরো সিন্নিটা খেয়ে নিল,ঠিক যেমন করে ছোটবেলায় মধ্যমা ওর মায়ের হাতে বানানো যে কোনো খাবার খেয়ে নিত।মধ্যমার বুকের ভিতরটা মোচড় দিয়ে উঠলো।সুধা তো ওর মেয়ে হতেই পারত!
ওষুধে কাজ দিয়েছে,বেহুঁশে ঘুমোচ্ছে সুধা।ঘরের দরজাটা বাইরে থেকে আটকিয়ে নিচে নেমে এলো মধ্যমা।হাতে প্রসাদের থালা,প্রমিতের জন্য এনেছে।প্রমিতের ঘরে আলো জ্বলছে,টোকা দিল দরজায়।প্রমিত দরজা খুলতেই একটু চমকে গেল।ভালো করে মেপে নিল মধ্যমার শরীর টাকে।গা ঘিনঘিন করলে ও আজ আর কোনো উপায় নেই মধ্যমার।চুপচাপ ঘরে এসে ঢুকল।দরজাটা ভেজিয়ে প্রমিত ওর পিছনে এসে দাঁড়ালো।শয়তানটার নিশ্বাসের গরম হাওয়া মধ্যমা নিজের কাঁধ,কোমর ও ঘাড়ের কাছে অনুভব করতে পারল।গা গুলিয়ে উঠছে মধ্যমার,তবু সব রাগ সংবরণ করে ঘুরল প্রমিতের দিকে।
‘তোমার জন্য প্রসাদ এনেছিলাম।আগে খেয়ে নাও।‘
মধ্যমার দিকে সেই একই লোলুপ দৃষ্টি দিতে দিতে থালা থেকে সিন্নিটা তুলে মুখে পুরে দিল কিছুটা।আঙ্গুলগুলো চেটে নিয়ে মধ্যমার কোমর থেকে আঁচলটা খুলে তাতে ভালো করে মুছে নিল।মধ্যমা কিছু বলার আগেই ওকে সজোরে ধাক্কা দিয়ে বিছানায় ফেলে দিল প্রমিত।হিংস্র প্রাণীর মতো ঝাঁপিয়ে পড়ল ওর শরীরের উপর।বিছানার চাদরটা খামচে ধরল মধ্যমা।ওষুধটা কেন কাজ করছে না প্রমিতের উপর? ভয়ে আঁতকে উঠলো,তাহলে কি সত্যি প্রমিত আজ তার শরীরটা নিংড়ে,শুষে নেবে? না! তা কিছুতেই হতে দিতে পারে না মধ্যমা।নিজের গায়ের সবটুকু জোর দিয়ে ঠেলে ফেলল প্রমিত কে।উঠে পালাতে গেল,কিন্তু প্রমিত তাকে ছাড়ার পাত্র নয়।পিছন থেকে জাপটে ধরে মধ্যমা কে বিছানায় আনার চেষ্টা করতে লাগল।ধস্তাধস্তিতে টেবিলের উপর রাখা ব্যাগটা মাটিতে পড়ে গেল।মধ্যমার নজর সেদিকে পড়তেই চিনে ফেলল প্রমিতের সেই লেদারের ব্যাগ টাকে।চেষ্টা করল প্রমিত কে ছাড়িয়ে ব্যাগ টা নেওয়ার কিন্তু পারল না।প্রমিত মধ্যমার উদ্দেশ্য বুঝতে পেরে ওকে ধাক্কা দিয়ে আলমারির গায়ে ঠেলে দিল।কপালে সজোরে ধাক্কা খেয়ে মেঝেতে লুটিয়ে পড়ল মধ্যমা।আবছা আলো আঁধারিতে দেখতে পেল প্রমিত এগিয়ে আসছে তার দিকে।হঠাৎই ঘরের দরজাটা খুলে গেল।পূর্ণিমার আলোর মতো একটা আলো এসে পড়ল মধ্যমার মুখে।একটা অবয়ব দেখতে পেল সে।তারপর আর কিছু মনে নেই মধ্যমার।
মধ্যরাতে যখন জ্ঞান ফিরল,তখন মধ্যমা দেখল মাথার কাছে চুপটি করে বসে আছে সুধা।কাঁদছে মেয়েটা।মধ্যমা ওর হাত টা ধরল।
‘আমায় ক্ষমা করিস মা।তোকে অজ্ঞান না করলে যে কালপ্রিট টা কে ধরতে পারতাম না।কিন্তু আমি পারলাম না রে,হেরে গেলাম।‘
সুধা মুখ তুলে তাকালো।
‘তুমি হেরে যাওনি,আমার মা কক্ষনো হারতে পারে না।শয়তানটা ধরা পড়েছে।ও আমাকে বিক্রি করবে বলে আমাকে বিয়ে করে এনেছিল।আজ রাতেই হয়ত আমাকে পাচার করে দিত যদি না তুমি…..’
এই অবধি বলে মধ্যমার বুকের উপর লুটিয়ে পড়ল সুধা।মধ্যমার বুকটা যেন জুড়িয়ে গেল।বাইরে অনেক মানুষজনের আওয়াজ পাচ্ছিল কিছুক্ষণ ধরে,সুধা কে জিজ্ঞেস করতে সে বলল,
‘বাইরে পুলিশ এসেছে।জানোয়ারটাকে ধরে নিয়ে যেতে।ঠিক তোমার মতই একজন ভগবানের দূত ঠিক সময় এসে ব্যাটাকে হাতেনাতে ধরেছে।শুনলাম সে নাকি পুলিশের গুপ্তচর,বহুদিন ধরে গা ঢাকা দিয়ে নজর রাখছিল আমাদের বাড়ির উপর।তোমাকেও তো সেই উদ্ধার করেছে গো।‘
কথা শেষ হতে না হতেই দরজায় একটা অবয়ব দেখতে পেল মধ্যমা,যাকে সে অজ্ঞান হওয়ার আগে দেখেছিল।কিন্তু এখন দেখে খুব চেনা মনে হচ্ছে মানুষটা কে।বুকটা ছ্যাঁৎ করে উঠলো মধ্যমার যখন গলার স্বরটা কানে এলো,
‘কেমন আছো মধ্যমা?’
সুধার হাত টা জাপটে ধরল মধ্যমা।গলার কাছে সমস্ত কষ্টটুকু একসাথে এসে জমা হয়েছে।এতোগুলো বছর যে মানুষটার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করেছে,আজ সে তার সামনে দাঁড়িয়ে।সুধার হাত ধরে উঠে দাঁড়ালো মধ্যমা,এক পা এক পা করে সপ্তকের দিকে এগিয়ে গেল।সপ্তক একদৃষ্টে চেয়ে আছে তার দিকে।
‘ক্ষমা চাওয়ার মুখ নেই আমার জানি,কিন্তু তবু কিছু কথা তোমায় জানাতে চাই।নাহলে আমার বুকে এতদিন ধরে যে পাথরটা জমে আছে সেটা আমাকে বাঁচতে দেবে না।‘
মধ্যমা দুচোখ ভরে তাকিয়ে আছে সপ্তকের দিকে।সপ্তক বলে চলল,
‘এবাড়িতে কেউ জানত না আমি কি কাজ করি! ছোটো থেকে সখ ছিল গোয়েন্দা হওয়ার,আর সেই নেশাতেই গুপ্তচরের কাজ করতে শুরু করি।এই কাজে প্রাণের ভয় সবসময় ছিল,আর তাই চাইনি কাউকে নিজের জীবনের সাথে জড়াতে।আমি পারছিলাম না তোমাকে এভাবে কষ্ট দিতে,তাই সেদিন কাউকে কিছু না জানিয়ে বাড়ি ছাড়ি।ভেবেছিলাম আর ফিরব না।এমনি তেও কিছুই তো দিতে পারিনি তোমায়,তুমি ও ভুলে যাবে আমায়।কিন্তু সেদিন যখন জানলাম নারী পাচারকারীর মূল মাথা প্রমিত এই বাড়িতেই গা ঢাকা দিয়ে আছে,আমি বেশ বুঝতে পেরেছিলাম তুমি বিপদের মধ্যে আছো।এতো কাছে থেকেও তোমার ক্ষতি কি করে হতে দিতে পারি মধ্যমা?’
নিজের দুহাতে মধ্যমার মুখটা জড়িয়ে ধরল সপ্তক।এই প্রথম স্বামীর ছোঁয়া পেল মধ্যমা,নিজেকে যেন পরিপূর্ণ মনে হলো।
‘তুমি এখনো আমার নামের সিঁদুর পরো মধ্যমা?’
‘তুমি তো আমার কাছথেকে কোনোদিন হারিয়ে যাওনি।তাহলে পরব না কেন?’
মধ্যমাকে বুকের মধ্যে আগলে নিল সপ্তক।বাইরের চাঁদের আলোটা এসে পড়ল দুজনের উপর।মধম্যার সব পুজো আজ সার্থক হলো।
সপ্তক,মধ্যমা ও সুধা–তিনজনের এখন সুখের সংসার।সুধা কে ওরা দত্তক নিয়েছে,নিজের মেয়ের মতো মানুষ করছে।সপ্তক আর পুরনো কাজে ফেরেনি,ছোটখাটো ব্যাবসা শুরু করেছে।আর মধ্যমা এখন পাকা গিন্নি,স্বামী সন্তান নিয়ে তার ভরা সংসার।সারা বাড়ি এখন সুধা আর সপ্তকের আওয়াজে গমগম করে,কথা বলার লোকের আর অভাব নেই মধ্যমার।
লেখিকা পরিচিতি :শ্বেতা আইচ , বরাহনগরের বাসিন্দা
বিঃ দ্রঃ লেখাটি জানুয়ারি, ২০২০ ত্রিমাসিক লেখনী প্রতিযোগিতার অন্তর্ভুক্ত।