ক্লিওপেট্রা

0
904

দোতলার ব্যালকোনিতে দাঁড়িয়ে বছর চব্বিশ পঁচিশের অপূর্ব সুন্দরী একটা মেয়ে কৌতূহলী দৃষ্টিতে বলল – ” কাকে চাই ?”

কিছুক্ষণ কেউ কোন কথা বলতে পারল না ।আঠার থেকে বত্রিশ তেত্রিশএর আমাদের দলটা চমকটা নিতে একটু   টাইম নিল ।
এই বাড়িটা ছিল কেদার সামন্তের ।  বুড়ো গত বছর অক্কা পেয়েছে । এখন মালিক বড়  ছেলে  বিপুল  সামন্ত ।  আস্ত একটা জিনিস!
চোস্ত খেলোয়াড় ,ছোট একটা ল্যাং মেরে ছোট ভাই কার্ত্তিক সামন্তকে মাঠের বাইরে বের করে দিয়েছে । ভোলে ভালা কার্ত্তিকদা এখন
দোরে দোরে ঘুরে বেড়ায় ।
পাড়ার ছেলেরা এবার ঠিক করেই এসেছি ,মালটাকে কোনমতেই ছাড়া হবে না ।বাপতো দশটাকার মিটার রেখেই ইহলোক ত্যাগ
করে চলে গেল ,অনেক চেষ্টা করেও কেউ বাড়াতে পারেনি। প্রতি বছর একি বাক্যি বলত ,আমার ছেলে দুটো আগে নিজের পায়ে একটু
দাঁড়াক ভাল করে ,তার পরে তোদের চাঁদা বাড়িয়ে দেব।পুজোর বাজেট বেড়েছে ,কিন্তু ওনার চাদা চাঁদা আর বাড়েনি ।
 পাড়ার ছেলেরা কার্ত্তিক সামন্তকে ভালোবাসে ।তাই ঠিক করে এসেছি চাঁদার ইস্যুতেই বিপুল সামন্তকেই টাইট দেব ।
কিন্তু এ কী কান্ড! ওপর তলাতে ও কে ?
 অনুপ প্রথম কথা বলল -“বিপুলকাকু নেই ?”
মেয়েটি বলল -“ওনারা দমদমে গেছেন ।আমরা ওপর তলাটা ভাড়া নিয়েছি।সামনের সপ্তাহে শিফট করব।আজ ছুটির দিন বলে কিছু
জিনিস পত্র এনে রাখছি ।কিছু বলতে হবে ওনাকে ?”
রতন বলল – “আমরা পুজোর চাঁদা নিতে এসেছিলাম ।ঠিক আছে আমরা পরে আসব।আপনারনা তো পুজোর আগেই  ঢুকছেন …
চাদার বাপারটা একটু মাথায় রাখবেন ।  পাড়ায় ঢোকার মুখেই আমাদের ক্লাব … মুনলাইট ।”
মেয়েটি মিষ্টি হেসে বলল -“নিশ্চয়ই ।আসলে হঠাৎ করে রেললাইনের ধারের বাড়িটা ছাড়তে হচ্ছে … তবে বাড়ি ছাড়লেও ওখানকার
ক্লাবের ছেলেরা বলেছে চাঁদা না দিলে আসতে দেবে না। আপনারা  একটু বুঝে শুনে চাঁদাটা ধরলে খুব উপকার হবে ।
 রতন বলল -“সে একটা কিছু হবেখন ।সামনের রবিবারে আসব ।

বাড়ি থেকে বেড়িয়ে কিছুটা এগিয়েই শুরু হল স্বভাব মতো কাঁটা ছেড়া ।
 লাল্টু বলল- ” বাপারটা বুঝলি ?”
আমি অন্যমনস্কভাবে বললাম-“কী?”
রতন বলল -কেমন কায়দা করে আমাদের ম্যানেজ করে ফেলল দেখলি ? আমাদের হাতে রাখারজন্য কত আন্তরিকতা দেখাল ?”
চিকু বলল -” সুন্দর মুখের জয় সর্বএ । তোরাও কেমন সুবোধ বালকের মতো শুনে গেলি ওর বচন  । ও বুঝে গেছে ওর কাছে বেশি
চাইবার ক্ষমতা তোদের নেই।”
সন্তু বলল “তুইও তো ছিলি আমাদের সাথে । কিছু বললি না তো ?” 
চিকু বলল- “আমি পেছনে ছিলাম । তোরা সামনে থেকে যেভাবে নেকু নেকু ভাব নিয়ে শুরু করলি …আমি আর কি বলব । এসব
মেয়েরা পাকা খেলোয়াড় । নইলে এভাবে ঠিক পুজোর আগ দিয়ে ওই বাড়িটা ছাড়ছে কেন ? খুঁজে দ্যাখ গে কিছু না কিছু জন্ডিস কেস
আছে ।”
তাপস বলল -“রেল লাইনের ধারে আমার এক বন্ধু  আছে । একটু নাড়া দিলেই অনেক খবর বেড়িয়ে আসবে । কি বলিস ?”
হঠাৎ পিন্টু বলল -” যাই বলিস , মেয়েটা কিন্তু হেব্বি দেখতে । ঠিক যেন নায়িকা । “
লাল্টু বিশ্রি শব্দ করে হেসে উঠল । তার সাথে অস্পষ্ট স্বরে একটা অশ্লীল কথাও ছাড়ল । বাকিরাও হেসে উঠল ।এসব নোংরা
আলোচনা আমার ভাল লাগে না । একটা বিড়ি ধরিয়ে বললাম  -“বড্ড রোদ্দুর । আমি একটু জল খেয়ে আসছি “
পিছন দিকে রাস্তার ধারে একটা কল আছে । কয়েক জন জল নেওয়ার জন্য দাঁড়িয়ে আছে ।আমি তাদের কাছ থেকে একটা বোতল
চেয়ে কিছুটা জল খেয়ে ,হাতে মুখে জলের ছিটে দিলাম । বেশ আরাম লাগল । তখনই নজরে এল মেয়েটা বিপুল সামন্তের বাড়ি থেকে
বেড়িয়ে এদিকেই আসছে । আমার বুকের মধ্যে ঢিপ ঢিপ করতে লাগল । সত্যি ,কী সুন্দর দেখতে মেয়েটা ! চোখ ফেরানো দায় ।
যেমন ফসা , তেমনি মুখ চোখের গড়ন । ঠিক যেন রানি ক্লিওপেট্রা । হঠাত এই নামটা মনে আসাতে আমার নিজেরই  অবাক লাগল ।
ইলিভেনের ইতিহাস বইতে যে ক্লিওপেট্রার   ছবি আছে তার সাথে কী যেন মিল আছে মেয়েটার । ঠিক বুঝে উঠতে পারলাম না , তবু
নামটা মনে এল । ঠিক আমার সামনে এসে দাঁড়াল মেয়েটা ।এমন ভাবে হাসল , যেন  পরিচিত  ।
-” আশেপাশে কোন মুদিখানার দোকান আছে ?”
-“আর একটু পুব দিকে এগিয়ে যান । শিবুদার দোকান ।কী চাই আপনার ?”
-“কয়েকটা পেড়েক লাগতো ।সাথে একটু সুতো । পাওয়া গেলে খুব ভাল হত ।
-” মনে হয় পেয়ে যাবেন ।” আমি হেসে বললাম ।
-“ধন্যবাদ । একটু আগে আপনারাই তো চাঁদার জন্যে গিয়েছিলেন , এ পাড়াটা খুব ভাল শুনেছি ।”
-” শোনা কথায় সব সময় বিশ্বাস করতে নেই কিন্তু । ”

চোখ তুলে তাকাল  ক্লিওপেট্রা । গ্রীণ পেন্সিল ন্যারো জিনসের ওপর লাল কুর্তি ।খোলা চুল । হালকা হাওয়ার উড়ছে  । চোখের
দৃষ্টিতে একটা আনমনা ভাব ।যেন চোখ আর মনের ঠিকানা আলাদা আলাদা । লাল্টুর কথা গুলো ঠিক বিশ্বাস হতে চাইল না ।
সুন্দরী  মেয়ে মানেই কী তার পিছনে একটা ইতিহাস থাকতে হবে ?
-“আপনি কোথায় থাকেন ?” সুধাল ক্লিওপেট্রা ।
-” বা দিকের পার্ক  টার ওপাশে ।” আমি জাবাব দিলাম ।
-“কী করেন “
-“সে রকম কিছু না । পারিবারিক ব্যবসা আছে ,সেটাই দেখাশোনা করি । ডেকোরেটার্স-এর ব্যবসা ।সাথে টিউশানি করাই । আমাদের
একটা কোচিং সেন্টার আছে ।কয়েক জন বন্ধু  মিলে খুলেছি ।ভালই চলে ।
-” ভালই তো ।কী পড়ান আপনি ?”
-” ইতিহাস । “
-” বাব্বা…আমার খুব ভয়ের সাবজেক্ট ছিল । পড়াশোনা কোথায় ?”
-” যাদবপুর থেকে এম এ । ডিস্ট্যান্সে বি এডটা করছি  ।”
-“আপনার সাথে কথা বলে খুব ভাল লাগল ।ঠিক আছে এখন আমি আসছি । পরে একদিন কথা হবে ।”
 
                 ছোট খাট একটা ইন্টারভিউ নিয়ে মেয়েটা বেড়িয়ে গেল । ওর চলার ছন্দে চুলের দু পাশে ঢেউ উঠতে লাগল । আমার কিন্তু
রাগ হল না । বরং অদ্ভুত একটা মুগ্ধতা আর কৌতূহল মিলে মিশে আচ্ছন্ন করে রাখল অনেকটা সময় ।

দুই

ক্লিওপেট্রার বাবা বয়স্ক মানুষ । সেই তুলনায় মা অনেকটা ছোট ।তবে দুজনেই অসম্ভব সুন্দর । এসব পাড়াতে যেন ওদের ঠিক মানায় না ।
 চিকু আজ সামনে রয়েছে  । বেশ বিনয় নিয়েই শুরুটা করল – ” কাকাবাবু , আমরা এই পুজোটা পাড়ার লোকেরা মিলেই চালাই  ।আপনারও এখন
আমাদের পাড়ারই  লোক । বেশি না …যদি প্রতিমার দামটা  দেন তাহলে খুব ভাল হয় ।”
ভদ্রলোক মুষড়ে পড়া গলায় বললেন -” গত বছর রিটায়ার করেছি বাবা । ও পাড়ার ছেলেরা জোর করে পাঁচ হাজার টাকা নিয়ে নিল । তোমরাও
যদি বেশি চাপাচাপি করো তাহলে পূজোর আনন্দের অনেক কিছুই  আমাদের বাদ দিতে হবে ।এত সামর্থ আমার হবে না ।”
চিকু এবার ঝাঁঝিয়ে উঠল – “তা বললে চলবে কেমন করে ?আপনি ওদের কী দিলেন না দিলেন সেসব শুনিয়ে কী বোঝাতে চাইছেন আমি
বুঝতে পারছি না । আপনি কত দিতে পারবেন ?”
-“তোমাদের যা ডিমান্ড তাতে কতটুকু বলব বুঝে উঠতে পারছি না । বিশ্বাস করো ,আমার সামর্থ থাকলে অত কথা বলতে হতো না ।”
ভদ্রলোকের চোখে মুখে যে আকুতিটা ফুটে উঠেছিল তা আমার বিশ্বাস যোগ্য মনে হল ।তাছাড়া পারিপার্শিক অবস্থাও যে এদের অনুকূলে নেই
তা একটু বুদ্ধি থাকলেই ধরা যায় । কিন্তু যারা চাঁদা চাইতে এসেছে , তারা এত সিম্প্যাথির ধার ধারবে কেন ?
চিকু কিছু একটা বলতে যাচ্ছিল ,আমি ওকে থামিয়ে বললাম -” ব্যাপারটা একটু বোঝার চেষ্টা করুন কাকাবাবু । অন্য কোন ভাড়াটে হলে এটুকু
কিন্তু অনায়াসে দিয়ে দিত ।”
-” তা জানি বাবা ।আমাদের অবস্থা সব দিক থেকেই খারাপ । কী করে তোমাদের বোঝাব আমি বুঝতে পারছি না ।যদি একটু দয়া কর…।
 
কী যেন হয়ে গেল আমার ।মুখ ফসকে বলে ফেললাম -“ঠিক আছে , এবারের মতো তিন হাজার টাকা দিন…সামনের বছর এখানে
থাকলে পরিমাণটা অবশ্যই বাড়াতে হবে কিন্তু ।”
ভদ্রলোক কৃতজ্ঞ চোখে আমার দিকে তাকালেন ।চিকু অনিচ্ছা সত্ত্বেও রসিদটা  কেতে ওনার হাতে ধরিয়ে দিল ।ভদ্রলোক সামনের রবিবার
এসে টাকাটা নিয়ে যেতে বললেন ।

বাইরে বেড়িয়ে এসে চিকু রাগত স্বরে বলল -“এটা তুমি কী করলে দীপুদা ? দশের নীচে কোন কথাই হত না ।তুমি অযথা নামিয়ে দিলে ।
এরা হল পাকা মাল ।ভীষণ ডি প্লোম্যাটিক ।এদের আচার আচরণ কৃত্রিম । মিস্টি করে কথা বলে  কাজ হাসিল করে নেবে …কিন্তু নিজেরা কারু জন্যে
এতটুকু কিছু করবে না ।”
 চিকু রাজনীতি করে আজকাল । দাদাদের ভাষায় কথা বলে ।
আমি ব্যাপারটা হালকা করার জন্য বললাম -“ছেড়ে দে ।বয়স্ক মানুষ …ওভাবে বারবার অনুরোধ ক্রছেন…সামনের বার পুষিয়ে নেব ।”
আর কেউ কোন কথা বলল না ।
দুদিন বাদে সন্ধ্যার মুখে ক্লিওপেট্রা আমাদের কোচিং সেন্টারের সামনে হাজির । আমি তো ভীষণ অবাক । আমাকে দেখেই মিস্টি হেসে
বলল -“থ্যাংক্স ।”
আমি অবাক হয়ে বললাম  -“কিসের জন্য ?”
-“চাঁদাটা কমানোর জন্য । আপনার নামই তো দীপু ?বাবা মনে রেখেছিল । চেহারার বিবরণ শুনেই বুঝে গেলাম আপনিই দীপু ।টাকাটা সাথে
করেই এনেছি । এটা রাখুন ।”
ক্লিওপেট্রা একটা খাম সামনে ধরে বলল -” গুনে নিতে পারেন ।”
আমি বললাম -“না, না , তার দরকার নেই । আপনি আবার এলেন কেন ? রবিবার তো আমরা যেতামই  ।”
-” হঠাত করে কিছু টাকা পেয়ে গেলাম…তাই আর দেরি করলাম না ।কখন কোন দিক দিয়ে খরচ হয়ে যায় ।আপনি যে কতটা উপকার করেছেন
তা বলে বোঝাতে পারব না  দীপুবাবু ।”
-“আপনার বাবার কথা শুনেই সেদিন আমার মনে হয়েছিল আপনাদের একটা সংকট চলছে ।কী সেটা ? অবশ্য বলতে না চাইলে নাও বলতে
পারেন ।”
মলিন একটা হাসি ফুটে উঠল  ক্লিওপেট্রার ঠোঁটে ।- “আপনি এতটা করলেন …এটুকু জানার অধিকার অবশ্যই আপনার আছে । আমার মায়ের
ইয়ুট্রাসে ক্যান্সার ।বাবার ক্রনিক অ্যাসমা ।যা কিছু সঞ্চয় ছিল সব শেষ  ।এসব করতে গিয়ে বাবা আর বাড়ি বানাতে পারেননি ।আত্মীয়স্বজনরাও
মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে ।বাবার পেনশন আর আমার চাকরি … এইদিয়ে কোনরকমে চলছে ।হ্যাঁ …একটা সময় আমরা বনেদি পরিবারের অংশ
ছিলাম । কিন্তু এখন সব শেষ ।”
আমি বললাম -“আপনার কথা ঠিক বিশ্বাস হয় না। কেন জানি না । কিন্তু আপনি যে সত্য বলছেন ,তাতেও কোন সন্দেহ নেই ।”
-“কি ব্যাপার  !আমার পিছনে গোয়েন্দা লাগিয়েছেন নাকি?
 চোখ সরু করে কথাটা বলল ক্লিওপেট্রা ।ওর ভঙ্গিমাগুলো  অদ্ভুত ,কিন্তু সুন্দর ।সে সব আমার মনের অ্যালবামে জায়গা করে
নিচ্ছে বেশ বুঝতে পারছি ।
 আমাদের মধ্যে বেশ বন্ধুত্ব গড়ে উঠল ।খুব কথা বলে ক্লিওপেট্রা।আমিও বলি ।ফিরতে ফিরতে ওর কোন কোন দিন অনেকটা রাত হয়ে যায় ।
স্টেশনের সামনে ভানুদার চায়ের দোকানে আমাদের ঠেক ।ওর দেরি হলে কেন  জেন আমারও একটা চাপা টেনশন কাজ করে । স্টেশন থেকে ওদের বাড়ির
দিকে যেতে একটা অন্ধকার গলি পড়ে । জায়গাটা সুবিধের নয় ।কেশ্তদার রিক্সা থাকলে কন চিন্তা থাকে না। অন্য  কোন রিক্সায় উঠলে ভালকরে চিনে রাখি ।
তবে একটা সুবিধে এই এলাকার বেশিরভাগ রিক্সাওয়ালা আমাকে চেনে ।

আজকেও বেশ রাত হয়েছে ক্লিওপেট্রার । আমারও বাড়ি ফিরতে হবে এবার । ভাবলাম ও রিক্সায় উঠলে ওর পিছু পিছু সাইকেল নিয়ে রওনা
দেব । কেমন করে জানি দেখে ফেলেছে ক্লিওপেট্রা । হাতছানি দিয়ে কাছে ডাকল ।
-“আজ খুব হেঁটে যেতে ইচ্ছে করছে । যাবেন আমার সাথে ?”
আমি হেসে বললাম -” বেশ চলুন ।সারা দিন অফিসে খাটাখাটুনি  করেছেন …আপনার এই এনার্জিটা দেখে ভাল লাগল ।”
আনমনা গলায় ক্লিওপেট্রা বলল -“ভগবানের কাছে প্রাথনা করবেন …এটা যেন থাকে । আমার কেন যেন খুব ভয় হয় ,থেমে গেলেই আমি শেষ হয়ে যাব ।”
-“আপনাকে দেখে তো তেমন মনে হয় না ।”চলতে চলতে বলি ।
 -“জানি ।আমার অনেক কিছুই আপনার কাছে বিশ্বাস যোগ্য নয় ।”
আমি একটু লজ্জিত হলাম । চুপ করে রইলাম কিছটা সময় ।
-“জাস্ট জোকিং…। “হেসে উঠল ক্লিওপেট্রা -“আপনি আবার সিরিয়ালি নিয়ে নিলেন নাকি ?”
আমিও হেসে বললাম -“দূর ,রাগ করব কেন ?
হঠাৎ আমার মাথায় একটা উদ্ভট প্রশ্ন এল -“আচ্ছা ,আপনি কক্ষনো সূর্য ওঠা ..সূর্য ডোবা …শুকতারা…কাল্পুরুস…তারাদের ছুটে জাওয়া…এসব
দেখেছেন ?”
গম্ভীর  হল ক্লিওপেট্রা “হয়ত দেখেছি ,হয়ত দেখিনি…ঠিক মনে নেই । আমার মনের চোখের ভিস ন  অনেকটা কমে গেছে দীপু বাবু…বেশ টের  পাই ।
আমার দেখাশোনা সবটাই মানুষ কেন্দ্রিক । প্রকৃতি বা প্রকৃতির কিছু কখনই  আমাকে নিবিড় করে টানেনি ।একবার গিয়েছিলাম গোরুমারা ফরেস্টে ।
পৌঁছুতে না পৌছুতেই মায়ের মৃত্যু সংবাদ…ফিরিয়ে দিয়েছিল প্রকৃতি । “
আমি ভীষণ অবাক হয়ে বললাম -“তবে যাকে আপনি এখন মা বলে ডাকেন…তিনি আপনার কে ?”
 -” আমার স্টেপ মাদার  ।”
 -” কিন্তু…।।
 -“ঠিকই ধরেছেন …নিজের মা না হলেও ওনাকে আমি মায়ের মতোই ভালবাসি । আমার এই মায়ের সন্তান …আমার সৎ ভাই এই বন্ধনটা পরোক্ষে দৃঢ়
করে  দিয়েছে ।”

আমি কৌতূহলী চোখে তাকালাম ক্লিওপেট্রার মুখের দিকে । স্ট্রিট লাইটের আলো আধারিতে ওর মুখে রহস্যের বুনোট । এক মায়াবি নারী যেন ।
 -” আমাদের পরিবারে তখন খুব সুখ ছিল । হঠাৎ করেই সেই সুখে গ্রহণ লাগল । ভাইয়ের বিশাল উচ্চাকাঙ্খার কাছে আমরা সবাই গৌণ হয়ে গেলাম ।
তলে তলে আগেই অনেক দূর এগিয়ে গিয়েছিল ,একদিন চূড়ান্ত সিদ্ধান্তটা জানিয়ে উড়ে চলে গেল ইউনাইটেড স্টেটসে ।স্বপ্নের মায়াবী নগরীতে
আমরা অবাক হয়ে দেখলাম ।বলেছিল ফিরে আসবে … কিন্তু আর ফিরল না ।বাবা ফোন করে মায়ের ক্যান্সার হওয়ার খবরটা জানিয়েছিল ।কিছু দিন
পর ভাই নম্বরটাই পাল্টে ফেললো ।
 আমি নিরবে মাথা নিচু করে হাটছিলাম। কিছুক্ষন পর মাথা তুলে বললাম -“আপনার কষ্ট হয় নি ?”
-“তা হয়ে ছিল বই কি !রাগও হয়েছিল খুব।মনে হয়েছিল ,এ কেমন পুরুষ !আবার সেদিনই প্রথম মনে হয়েছিল ,আমিও নারী । আমার জীবনচক্র
যেন হঠাৎ করেই পালটে গেল ।আমার অন্তরাত্মার ভেতর লুকিয়ে থাকা কে যেন বেড়িয়ে এল…যে শুধু চলতে জানে…থামতে জানে না । সেই
থেকে আমার থামাতে এত ভয় ।”

তিন

ক্লিওপেট্রার বাবার সাথে মাঝে মাঝেই দেখা হয়ে যায় । মুখোমুখি হলেই মিস্টি করে হাসেন ভদ্রলোক । সেই সাথে জিজ্ঞেস করেন -“ভাল আছ দীপু ?”
আমি ঘাড় নাড়িয়ে বলি -“হ্যাঁ । আপনারা ভাল তো ?”
এদিন বাজারে দেখা হতেই অন্য সুরে বললেন -“তোমার কাকিমার শরীরটা ভাল নেই । বোধহয় আর বাঁচবে না । মেয়েটা যথাসাধ্য করছে ।ও
মেয়ে মানুষ কাহাতক আর পেরে ওঠে । অথচ যার করার দায় ছিল ,দিব্যি সে…।”
আমি বললাম -“কোন রকম সাহাজ্যের যদি দরকার হয় আপনি নির্দ্বিধায় বলতে পারেন । আমি যথাসাধ্য চেষ্টা করব ।”

-” জানি কিছু বললে তুমি করার চেষ্টা করবে । কিন্তু বিধাতার লিখন তুমি খণ্ডাবে কেমন করে ?আমাদের জন্যেতোমার কিছু করার ক্ষমতা নেই
দীপু । মানুষের ক্ষমতা লিমিটেড । সম্ভব হলে বিকেলের দিকে একবার এসে দেখে যেও ।
                   
                     সন্ধ্যার মূখে ঢুকলাম ওদের বাড়ি । ক্লিওপেট্রা আজ অফিস থেকে তাড়াতাড়ি ফিরে এসেছে । মুখে চোখে ক্লান্তির ছাপ স্পস্ট ।
আমাকে দেখে খুশি হল । কিন্তু খুশিটা স্থায়ি হল না , দেখা দিয়েই মিলিয়ে গেল ।সেই জায়গায় একটা অব্যক্ত হতাশা ঝরে পড়ল
কন্ঠে -“মাকে আর বাঁচাতে পারলাম না দীপুবাবু । কদিন অনেক ছোটাছুটি করেছি ।ডাক্তারবাবু জবাব দিয়ে দিলেন । কাল হসপিটাল থেকে বাড়ি
নিয়ে আসব ।ভেবেছিলাম আজকেই আনব ।কিন্তু অফিস থেকে কিছুতেই চারটের আগে বেরুতে দিল না ।”
  আমি চমকে উঠলাম । মনে হল ,এমন হিম শীতল কণ্ঠস্বর আমি যেন কোনদিন ,কোন কালেই শুনিনি ।
ভেতরে চলে গেল ক্লিওপেট্রা ।ওর বাবা আমার সাথে গল্প করতে লাগলে। উঠব উঠব ভাবছি ,এমন সময় ক্লিওপেট্রা আবার ফিরে এল ।
হাতে চাএর ট্রে ।স্মিত হেসে বলল -“একটু চা খান ।বাবাও খাবে। ” আমি বললাম -“এতো কিছু ঘটল ,আমাকে একটু জানাতে পারতেন ।”
ক্লিওপেট্রা হাসল -“তা কি করে হয়? কত কাজ থাকে আপনার ।আপনাকে বিরক্ত করতে আমার ভাল লাগবে না। তাছাড়া এতো একদিন-
দুদিনের ব্যাপার নয়।”
-“বিরক্ত কেন বলছেন ।মানুষ যদি মানুশের পাশে না দাড়ায় তাহলে পৃথিবীটাতো অচল হয়ে জাবে।আপনাদের সংকোচটা আমি বুঝি।
আসলে সেই অর্থে আমি তো আপনাদের কেউ নই ।”
ছি ! ছি ! ওভাবে বলবেন না । এখন মনে হয় , সম্পর্কের বন্ধনটা শুধু রক্ত দিয়ে হয় না … আর অন্য কিছু লাগে ।”
      কদিন পরেই ক্লিওপেট্রার মা মারা গেলেন । পাড়ার ছেলেরা মিলে শেষ কৃত্য সম্পন্ন করলাম ।ক্লিওপেট্রা আমাদের সাথে সাথে রইল ।
হাসি কান্নার এমন সংযম আমি খুব কম মেয়ের দেখেছি ।কোন কাজে কোন খামতি নেই ,অথচ এতো টুকু অতিরিক্ত উচ্ছাস বা বিরক্তি নেই ।
পাহাড়ি ঝরনা,স্রোতস্বিনী নদি ,সান্ত ঝিল -কোন কিছুর সাথেই এর তুলনা চলেনা ।এ যেন মহা সমুদ্রের তল দেশ ।
 এর কিছু দিন পর এক দিন বললাম -“আপনাদের পরিবারের প্রায় সবাই ডাক্তার ।কাকাবাবু বলছিলেন ,আপনিও নাকি ডাক্তারিতে ভরতি হয়ে ছিলেন ।
হঠাৎ করে ছেড়ে দিয়েছেন … কেন ?”
- “এমনিই ।আমার ওসব ভাল লাগে নি ।তাছাড়া বাবার ওপর চাপও হয়ে যাচ্ছিল ।দুজনকে এক সাথে ডাক্তারি পড়ানো বাবার পক্ষে জুলুম হয়ে
যাচ্ছিল ।তাই ভাইকে ছেড়ে দিয়েছিলাম । আমি গ্রাজুয়েট কমপ্লিট করে চাকরি পেয়ে গেলাম  । আমি খুব সাধারন মেয়ে দীপুবাবু ।এতেই আমি
সন্তুষ্ট ।
আমি চমকে তাকালাম ওর দিকে ।
সন্দেহজনক চোখে তাকাল ক্লিওপেট্রা । তারপর মুচকি হেসে বলল -“আপনি বোধহয় আমাকে বিশ্বাস করতে পারেন না ,না ?”
ওবাক হয়ে বলি  -“তা কেন ?”
সে  বলল  -“আপনার তাকানোর মধ্যে এমন কিছু আছে ,যা দেখে আমার এটা মনে হয়েছে । অবশ্য ভুলও হতে পারে “
আমি বললাম -“যদি বলি আপনার কথাই ঠিক । “
চোখে চোখ রেখে ক্লিওপেট্রা বলল -“কোনটা ?”
-” সত্যি সত্যিই আমি আপনাকে বিশ্বাস করতে পারি না । আপনি যা বলেন , মনে হয় তার সবটাই মিথ্যে ।” হঠাৎ যেন খুব মজার কথা বলে ফেলেছি , খিল খিল করে হেসে উঠল ক্লিওপেট্রা । এলো মেলো দাঁতের সাড়ি , কিন্তু মুক্তোর মতো  ঝকঝকে ,
সুন্দর মানিয়ে গেছে । টোল খাওয়া গালে লাল আভা ।
-” আপনি তো মশাই ডেঞ্জারাস লোক । আর কী কী মনে হয় আমাকে দেখে ?”
-” বললে হয়তো বিশ্বাস করবেন না ।”
-“তবু ব্লুন ।”
-” মনে হয় আপনি রাজ্য চ্যুত এক রানি । রানি ক্লিওপেট্রা । আপনার সাম্রাজ্যে আমরা সবাই এক সাধারন প্রজা । বিশেষ করে আমি । মাঝে মঝে
কল্পনা আর বাস্তবের ফারাকটা ঠিক বুঝে উঠতে পারিনা ।তখন মনে হয় আপনি মিথ্যে বলছেন সব ।আপনার সাম্রাজ্য আবার একদিন ফিরে পাবেন
আপনি । আবার চলে যাবেন আমার কাছ থেকে দূরে ..বহু  দূরে ।”
বিষণ্ণ হাসি ফুটে উঠল ক্লিওপেট্রার মুখে ।
-” ওসব আপনার কল্পনা । আমি কোন রানি টানি নই । ক্লিওপেট্রাও নই । আমার কোন রাজত্ব নেই । বাবার আশ্রয়ে বেঁচে থাকা একটা অতি
সাধারন মেয়ে । আপনি যা যা বলেছেন …সবই দেখেছি । সূর্য ওঠা …সূর্য ডোবা …শুকতারা …তবে এখন আর হয়ে ওঠে না । এখনও গভীর
রাতে কোন কোন দিন চেনা তারাদের খোঁজার চেষ্টা করি …কিন্তু চিনতে পারিনে …। “
ওর দৃষ্টি ঝাপ্সা…দূরের কোথাও নিবদ্ধ । আমি অবাক চোখে তাকিয়ে রইলাম বেশ কিছুক্ষণ ।

পরের দিন ওর সাথে দেখা হতে বললাম -” আপনার ফোন নম্বরটা দেবেন ? “
দিল । সেভ করে নিয়ে বললাম – আপনি ইদানিং খুব গম্ভীর হয়ে থাকেন…মায়ের জন্য কষ্ট হয় ?”
- ” কিছুটা ঠিক । তবে পুরোটা নয় । আসলে …। “
কী যেন বলতে গিয়েও থেমে গেল ক্লিওপেট্রা ।
 -” বন্ধু  ভাবলে বলতে পারেন ।”
একটু সময় চুপ করে রইল ক্লিওপেট্রা । তারপরে বলল -” রজতাভ ইংল্যান্ড থেকে ফিরে এসেছে । আমার অফিসে দেখা করতে এসেছিল ।”
আমি অবাক হয়ে বললাম -” কে এই রজতাভ ? আপনার সাথে কী সম্পর্ক  ?”
–” আমার থেকে এক বছরের সিনিয়র রজতাভ । ডাক্তারির ছাত্র ছিলাম আমরা দুজনেই । ওর মতো ব্রাইট ছাত্র  খুব কম হয় । সেই সাথে
অস্মভব স্মার্ট ও হ্যান্ড সাম । প্রথম দেখাতেই প্রেমে পরে গিয়েছিলাম । রজতাভ আমাকে পছন্দ করত । কিন্তু সেতা যে ক্ষনিকের টাইম পাস
কিছুদিন পরেই  তা জানতে পারলাম । নিজের কেরিয়ারের সিঁড়ি  হিসাবে এক মন্ত্রির মেয়েকে যেতেই আমার কাছ থেকে সরে গেল । চলে গেল
বিদেশ । “
        
          একটা ক্লিস্ট হাসি ফুটে উঠল ক্লিওপেট্রার ঠোঁটে ।
শান্ত গলায় বলল -” আমার জীবনে এই বিদেশ নামক সোনার হরিণটি চিরকাল নেগেটিভ রোল প্লে  করে গেল দীপুবাবু ।”
আমি বললাম -” আপনি কিছু বলেননি  ?”
অসহায়ভাবে ক্লিওপেট্রা বলল -” কাকে বলব ? কি বলব ? যে আমাকে আদৌ কোনদিন ভালবাসেনি …তাকে কী বলব ? দোষটা তো আমারই ।
কয়েকদিন কেঁদেছিলাম খুব । তারপরে ডাক্তারি পড়াই ছেড়ে দিলাম ।”
মাথা নীচু করে একটু সময় চুপ করে রইল ক্লিওপেট্রা ।
তারপর কর্কশ গলায় বলল -” সেদিনও আমার মনে হয়েছিল ,এ  কেমন পুরুষ !! আবার  সেদিন এটাও মনে হয়েছিল…আমিও নারী । থামলে
আমার চলবে না । চলাটাই যেন আমার জীবন ।”
আমি বিষণ্ণ গলায় বললাম -” হঠাৎ করে আপনার কাছে কেন  আবার ?”
-” বুঝতে পারলেন না ? আমাকে দেখাতে এসেছে । ওই মন্ত্রি কন্যার সাথে থেকে ওর কতটা উন্নতি হয়েছে সেটাই দেখাতে এসেছে । আমার মতো
মেয়ের সাথে থাকলে কি আর ও এমন রাজ ঐশ্বর্য পেত ? মন্ত্রিমশাই ওকে মেয়ে জামাই করেছেন । একটা নাসিং হোমও নাকি খুলে দেবেন বলেছেন ।
রাজকন্যা ও রাজত্ব দুটোই ওর এখন হাতের মুঠোয় ।এসব না দেখালে চলে ?”
  আমি কিছুই বলতে পারলাম না । কী বলব ! এই নির্মম দেখানোতে কী আনন্দ আমার জানা নেই । একটা সুন্দর মনের মেয়েকে ক্ষত বিক্ষত
করেও শান্তি হয়নি মানুষটার । এখন সেই কাঁটা ঘায়ে নুনের ছিটে দিয়ে ডবল আনন্দ লুটতে এসেছে ।আমারও ক্লিওপেট্রার মতো বলতে ইচ্ছে করল ,
এ কেমন পুরুষ তুমি !!”
  হঠাৎ ক্লিওপেট্রা আমাকে ভীষণ অবাক করে দিয়ে , আমার হাতটা ধরে কান্না জড়ানো গলায় বলল -“আমি অতি সাধারন মেয়ে দীপুবাবু । আমি শতাব্দী …
শতাব্দী ব্যানার্জী …কোন ক্লিওপেট্রা  নই । ছুঁয়ে দেখুন ভাল করে  । আমি হাসি…আমি কাঁদি ..আর পাঁচটা মেয়ের মতই আমাকে কাঁদিয়ে কারো কারো
খুব আনন্দ হয় । এই সব অসহায়তা নিয়েই আমি বেঁচে থাকি ।”

আমি ভাষাহীন । জবাব দেবার মতো কোন কথাই আসছে না ।
-” কী যেন আছে আপনার চোখে । তাই তো এত কথা বলি । যদি সম্ভব হয় …এই সব দূরত্ব ঘুচিয়ে আমার বন্ধু  হবেন ? সত্যি , আমার কোন বন্ধু
নেই…আমি একা …ভীষণ  একা ।”

আমার কেমন শীত শীত করতে লাগল । এটা কী ক্লিওপেট্রার শীতল স্পর্শের জন্য ! এই প্রথম মনে হল ক্লিওপেট্রা রক্তে মাংসে গড়া একটা
মানুষ । সেও হাসে …কাঁদে …আমার মতই সূর্যোদয় …সূর্যাস্ত দেখে । একটা অদ্ভুত ভাল লাগায় ভরে গেল মন ।

আমার সামনে একটা অন্য আমি এসে দাঁড়ায় । হাসি হাসি মুখে সে ক্লিওপেট্রার…নাকি …শতাব্দীর সামনে গিয়ে ওর কাঁধে হাত রেখে নরম
গলায় বলে -” ওঠো শতাব্দী …একটু পরেই হয়তো বৃষ্টি নামবে …চলো আমরা দুজনে মিলে ভিজি “
 
      শতাব্দী ভীষণ অবাক হল প্রথমে । কিন্তু একটু পরেই আলোতে ঝলমল করে উঠল ওর সুন্দর মুখখানা ।

 

লেখক পরিচিতি: সুজিত বসাক

বিঃ দ্রঃ লেখাটি জানুয়ারি, ২০২০ ত্রিমাসিক লেখনী প্রতিযোগিতার অন্তর্ভুক্ত।

SOURCEসুজিত বসাক
Previous articleফিরে পাওয়া
Next articleবিল্টুর বিটলামি
Avatar
Disclaimer: Monomousumi is not responsible for any wrong facts presented in the articles by the authors. The opinion, facts, grammatical issues or issues related sentence framing etc. are personal to the respective authors. We have not edited the article. All attempts were taken to prohibit copyright infringement, plagiarism and wrong information. We are strongly against copyright violation. In case of any copyright infringement issues, please write to us. লেখার মন্তব্য এবং ভাবনা, লেখকের নিজস্ব - কপিরাইট লেখক কর্তৃক সংরক্ষিত..................

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here