“একমুঠো ভাত দিবি বাবা, তরকারি লাগবে না শুদ্দু একমুঠো ভাত….”।

মধ্যাহ্নের সময়ে আসা ছেড়া ফাটা ময়লা শাড়ি পরা এক সত্তোরোর্ধ্ব বৃদ্ধার কথা শুনে খাবারের হোটেলের মালিকটি মুখ তুলে চাইলো। বৃদ্ধাকে দেখে হঠাৎ তার মায়ের কথা খুব মনে পড়লো। “হ্যাঁ, হ্যাঁ মা কেন নয়। আসুন না ভেতরে আসুন”,বলে দোকানের মালিক বড়ো আদর-যত্ন করে খাবারের টেবিলে বসালেন বৃদ্ধাকে। একটি ছেলেকে ডেকে বৃদ্ধাকে খাবার দিতে বললেন। খাবারের থালা এনে দিতেই বৃদ্ধা বললেন, “শুধু এট্টু ভাত চেয়েছিলাম বাবা। তুমি আবার এতো কিছু কেন আনতে গেলে”? দোকানের মালিক বললেন, “খান না মা। আমি তো আপনার ছেলের মতোই। ছেলের কাছে নাহয় এক বেলা একটু শাক ভাতই খেলেন”। বৃদ্ধা হাত ধুয়ে খেতে শুরু করলেন। বৃদ্ধাকে তৃপ্তি ভরে খেতে দেখে দোকানের মালিক আড়ালে চোখ মুছলেন। বৃদ্ধা খাবার খেয়ে বেরোনোর পরপরই দোকানটির সামনে একটি বড়োগাড়ি এসে থামলো। গাড়ির ভেতর থেকে বেশ দামী জামা-জুতো পরা এক ভদ্রব্যক্তি বেরিয়ে এলেন। দোকানের মালিক তাড়াতাড়ি দোকান থেকে বুকের কাছে হাত জোর করে বেড়িয়ে এলেন। সেই ভদ্রলোক জিজ্ঞেস করলেন, “আপনার দোকানে কিছুক্ষণ আগে কোনো গরীব বৃদ্ধা এসেছিলেন”? আকর্ণবিস্তৃত এক হাসি দিয়ে দোকানের মালিক বললেন, “আজ্ঞে হ্যাঁ বাবু। এই তো কিছুক্ষণ আগেই বেরিয়ে গেলেন। উনি এট্টুখানি ভাত খেতে চাইছিলেন। মাতৃস্থানীয় বৃদ্ধামহিলাকে কী আমি শুধু একটু ভাত দিতে পারি বাবু। উনাকে পেট পুরিয়ে খাইয়ে দিয়েছি”, বলে এক তৃপ্তির হাসি দিলেন। ভদ্রলোক বিরবির করে বললেন, “মা..You are impossible…তোমায় নিয়ে কী যে করি”। দোকানের মালিক একটু আগ্রহের সঙ্গে জিজ্ঞাসা করলেন, “বাবু কী চেনেন নাকি ওই বুড়িমাকে”। ভদ্রলোক বললেন, “খুব ভালো করেই চিনি। উনি আমার মা…বিখ্যাত ‘মুখার্জি এন্ড সন্স’ এর কর্ণধারিনী বেণীবালা মুখার্জি”। দোকানে মালিক বেশ কয়েকবার “অ্যাঁ, অ্যাঁ” আওয়াজ করে শেষে ভিরমি খেতে শুরু করলেন। মালিকের ওই অবস্থা দেখে দোকানের একজন কর্মচারী ছুটে এসে বললো, “ও দাদা, অমন কইরচেন কেন, কী হয়েচে, ও দাদা শুনতে পারচেন”। ভদ্রলোক কর্মচারীটির হাতে বেশ কিছু টাকা গুঁজে দিয়ে বললেন, “ওনার শক্ লেগেছে। ভেতরে নিয়ে একটু জল-টল খাওয়াও, প্রয়োজনে ডাক্তার দেখিও। আর হ্যাঁ, উনাকে বলো আমি উনার বুড়িমার খাবারের দামটা মিটিয়ে দিলাম”,বলে গ্যাটগ্যাট করে গাড়িতে চেপে ‘সোঁওওও’ করে বেরিয়ে গেলেন। কর্মচারীর হাঁ করা মুখের ভেতরেও খানিকটা গাড়ির ধোঁয়া ঢুকে গেল।

শহরের এক বিশিষ্ট অভিজাত কলোনিতে পাঁচতলার যে দর্শনীয় বাড়িটি আছে, সেটিই হলো ‘মুখার্জি নিবাস’। বাড়িটির সৌন্দর্য্য ও কারুকার্যিতা যেকোনো ব্যাক্তির মনে হিংসের কারণ হতে বাধ্য। একটু আগেই মুখার্জি বাড়ির বড়োছেলের গাড়িটি ঢুকলো। পোর্টিকোতে গাড়িটা দাঁড়াতেই ভীষণ দ্রুততায় গাড়ি থেকে বেড়িয়ে বাড়ির ভেতরে গেলেন মুখার্জি বাড়ির বড়োছেলে অম্বরিশ মুখার্জি। তেড়েমেড়ে বাড়িতে ঢুকতে দেখে অম্বরিশের স্ত্রী বহ্নিতা দৌঁড়ে এসে স্বামীকে বললেন, “শোনো না, তুমি রাগ করোনা না লক্ষীটি। মায়ের বয়স হয়েছে তো। ওই একটু ছেলেমানুষী করে ফেলেছেন। তুমি কিন্তু মাকে কিছু বলোনা, কেমন”‌। স্ত্রীর হাতটা ঝটকা মেরে সরিয়ে অম্বরিশ বললেন, “নিকুচি করেছে তোমার ছেলেমানুষি। প্রায় সময়ই আমাকে অফিসের কাজ, গুরুত্বপূর্ণ মিটিং ছেড়ে উনার পেছন পেছন দৌঁড়ুতে হয়। এএএ..ইতো সেদিনই.. ভরা দুপুরে চাঁদি ফাটানো রোদ্দুরে মাঝরাস্তায় ভিক্ষুকের মতো বসে আছেন। জিজ্ঞাসা করায় বলেন নাকি উনার ভিক্ষুক সেজে অভিনয় করতে ইচ্ছে হয়েছে। কোনোদিন দীন-দুখিয়ারি,কোনোদিন ছেলেবউ বিতারিত শাশুড়ি…. একদিন তো মানসিক বিকারগ্রস্ত এক মহিলা সেজে পার্কে বসেছিলেন। ভাগ্যিস ভবেশ দেখতে পেয়েছিল। এমনভাবে মেকআপ নিয়ে থাকেন যে চেনাই যায়না। ভবেশকে পাহারায় রেখে গিয়েছিলাম বলে আজ ধরতে পারলাম”। মুখার্জি বাড়ির ছোটোছেলে ঋষি তখন কোথাও একটা বেরোচ্ছিল। দাদার চেঁচামেচি শুনে ফিকফিক করে হাসতে হাসতে বললো, “দাদাই, মা হলো রকিং হিরোইন। তুইও enjoy করতে শেখ। মা ঠিকই বলে তুই হলি দাদুভাইয়ের মতো রসকষহীন। সবসময় কেমন যেন গম্ভীর-গম্ভীর”। অম্বরিশ বলে, “হ্যাঁ, সে তো বলবিই। তোকে তো আর কাজ-বাজ ছেড়ে মায়ের পেছন পেছন দৌঁড়াতে হয় না। সারাক্ষন তো নিজের কলেজ, এস্কারশন, প্রজেক্ট নিয়েই আছো। কোনো হ্যাপাই নেই”। ঋষি বুঝলো অম্বরিশ আজ বেদম খেপেছে। বহ্নিতার কাছে গিয়ে ফিসফিসিয়ে বললো, “বৌমনি, দাদা তো আজ চরম রেগে গেছে। একটু সামলে নিও। আমি কেটে পড়লাম”,বলে বহ্নিতাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই সুরুৎ করে বেরিয়ে গেল ঘর থেকে। বহ্নিতা আরো একবার চেষ্টা করলো অম্বরিশকে বোঝানোর। কিন্তু সে কোনো কথা শুনতেই রাজি নয়।

বাইরের ঘরে চেঁচামেচি শুনে নিজের ঘরে বসে বেণীবালা দেবী ঘটনার গম্ভীরতা বেশ ভালোভাবেই অনুমান করতে পারলেন। এই পরিপাটি ভাবে শাড়ি পরা এবং তার সাথে যথোপযুক্ত প্রসাধনে সজ্জিতা বেণীবালা মুখার্জির সাথে ঘন্টাখানেক আগের দুঃস্থ বৃদ্ধার কোনো মিলই বর্তমান নেই। মনে মনে একটু ভয়ই পেলেন অম্বরিশের চেঁচামেচি শুনে। আজ তার অফিসে খুব গুরুত্বপূর্ণ মিটিং ছিল। অম্বরিশের হাতে ব্যবসার সবকিছু বুঝিয়ে দিয়ে এই দুবছর হলো তিনি একদম ঝাড়া হাত-পা। ইদানীং ঘরে বসে থেকে থেকে উনার পুরোনো নেশাটা আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। নেশাটা হলো অভিনয়ের। ওই যখন অভিনয়ের পোকা গুলো মাথার ভেতর ঘুরঘুর করতে থাকে তখন আর নিজেকে আটকে রাখতে পারেন না তিনি। সাজপোশাক নিয়ে বেরিয়ে পরেন রাস্তায়। কদিন বেশ চলছিল। কিন্তু ওই বড়োখোকার চ্যালা ভবেশটার চোখে একদিন পড়ে যেতেই বিপত্তি ঘটে যায়। এরপর অবশ্য কয়েকদিন নিজেকে নিবৃত্ত করে রেখেছিলেন কিন্তু শেষে ওই অভিনয়-পোকারই জয় হলো। অবশ্য পুত্রবধূটি এব্যাপারে তাকে খুব সাহায্য করেছে। খুব বোঝে তাকে মেয়েটা। হঠাৎ দরজার প্রচণ্ড জোরে আওয়াজে বেণীবালা দেবীর ভাবনায় ছেদ পড়লো। ওদিকে বহ্নিতা একমনে ঠাকুরকে ডাকতে লাগলেন যাতে গন্ডগোল না হয় কিছু।

“মা..এসব কী? আমি তো আগেও তোমায় বলেছিলাম এসব না করতে। তুমি তো কোনো কথাই শুনছো না। শেষে পরিবারের মর্যাদা নিয়ে টানাটানি হবে। এতোবড়ো বিজনেস ইন্ড্রাস্টিয়ালিস্ট বেণীবালা মুখার্জি,সে কিনা রাস্তায় রাস্তায় অভিনয় করে বেরায়..লোকে শুনলে হাসবে”। এতক্ষন চেঁচামেচি করার পর মায়ের সামনে এতো কথা বলে হাঁপাতে লাগলো অম্বরিশ। বেণীবালা দেবী ছেলেকে আদর করে কাছে বসালেন। তারপর পরম মমতায় নিজের হাতে জল খাওয়ালেন এক গ্লাস। তারপর স্মিত হেসে বললেন, “জানিস বাবা…আমি তোকে যত দেখি তত আমার তোর ঠাকুরদার কথা মনে হয়। তুই একদম উনার মতো। উনার মতোই সক্ষম, উনার মতোই গাম্ভীর্যে ভরা”। অম্বরিশ বললেন, “কিন্তু কেন মা? কেন এমন করো তুমি? তোমার এই সব কান্ড দেখলে কেউ বলতে পারবেনা যে,এই সেই বেণীবালা মুখার্জি যে ‘মুখার্জি এন্ড সন্স’ কোম্পানিকে মাটি থেকে আকাশে উঠিয়েছে”। হালকা হেসে বেণীবালা দেবী বললেন, “অভিনয় আমার জীবনের বহুদিনের শখ রে বাবা। আমার বাবা ছিলেন বিপ্লবী। তাই তাঁর মানসিকতা ছিল সবার থেকে আলাদা আর তেমনি উদার। উঁনি কোনো কিছূতেই আমায় কোনোদিন বাধা দেননি। পড়াশোনার পাশাপাশি কলেজে চুটিয়ে অভিনয় করতাম। বিভিন্ন পথনাটিকাও করেছি। একবার ‘ইন্টারন্যাশনাল কালচার এন্ড ক্রিয়েটিভিটি’ অর্গানাইজেশন থেকে একটি নাটকের প্রতিযোগিতা হয়েছিল। সেখানে আমাদের দলের নাটকটি প্রথম পুরস্কার পায় আর আমি পাই শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর শিরোপা। প্রাইজ ডিস্ট্রিবিউটার প্যানেলে ছিলেন তোর দাদু। সেখানে আমাকে দেখে উনার পছন্দ হয় এবং পরে উনি তোর বাবার জন্য আমার বাড়িতে বিয়ের প্রস্তাব পাঠান। তোর বাবা পাত্র হিসেবে বেশ ছিলেন। তাই আপত্তির প্রশ্নই ছিল না। হয়ে গেল বিয়ে। তখন ‘মুখার্জি এন্ড সন্স’ এর খুব নামডাক। বিয়ের কয়েকদিন পর তোর দাদু আমায় বললেন যে আমি যেন আর অভিনয় না করি কারণ তাতে পরিবারের নাম খারাপ হবে। আমি আমার বাবার মতো অতো সোচ্চার ছিলাম না। কষ্ট হয়েছিল খুব কিন্তু তোর বাবাকে ততদিন খুব ভালবেসে ফেলেছি। অভিনয়ের জন্য জোরাজুরি করলে কী ফল হবে তা জানতাম। তোর বাবা তবুও লুকিয়ে লুকিয়ে আমায় নিয়ে যেত থিয়েটার পাড়ায়। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তুই এলি, ঋষি এলো। তারপর সংসারের চাপটাও বাড়তে লাগলো। একদিন হঠাৎই না বলে-কয়ে তোর বাবা আমাদের ছেড়ে চলে গেলেন। তোর বাবার মৃত্যুর ধকলটা তোর দাদু নিতে পারলেন না।  অসুস্থ হয়ে গেলেন তিনি। আর এদিকে ব্যবসার তখন ভরাডুবি অবস্থা। পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার কোনো উপায় খুঁজে পাচ্ছিলাম না। শেষে নিজেই কোমড় বেঁধে নেমে পড়লাম ‘মুখার্জি এন্ড সন্স’কে আগের জায়গায় নিয়ে যাওয়ার জন্য। কমার্স নিয়ে মাস্টার্স করা ছিল। সেটাই কাজে লাগল শেষে। তারপর ব্যবসা, বাড়ি, তোরা, তোদের দাদু এইসব সামলাতে সামলাতে অভিনয় কখন যেন হারিয়ে গেল জীবন থেকে। এখন তোরা নিজের নিজের জায়গায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছিস। আমিও কিছুটা চাপমুক্ত হয়েছি। তাই নিজের অপূর্ণ ইচ্ছেটা একটু পূরণের চেষ্টা করছিলাম”। অম্বরিশ এতোকিছু শোনার পর খুব হতবাক হয়ে গিয়েছিল। ধীরস্বরে সে বললো, “এতো কথা লুকিয়ে রেখেছিলে মা তুমি। আর আমরাও কোনোদিন জানতেও চাইনি তোমার মনের কথা”। স্মিত হাসি দিয়ে বেণীবালা দেবী বললেন, “না রে এতো নিতান্তই একটা ইচ্ছে। যখন যে চরিত্র নিয়ে রাস্তায় নামি তখন সেই চরিত্রটা যে সহানুভূতি, দয়া কূড়োতে সক্ষম হয় সেটাই আমার জন্য দর্শকের হাততালি। এই শখটা আমি নিজের মতো করে পূরণ করতে চেয়েছিলাম। তাই কাউকেই বিরক্ত করতে চাইনি”। অম্বরিশ কথাগুলি শুনে হঠাৎ দাঁড়িয়ে পড়লো। তারপর কোনো কথা না বলেই বেড়িয়ে গেল ঘর থেকে। বেণীবালা দেবী বুঝলেন ছেলের রাগ হয়েছে। 

রাত দশটা বেজে গেছে, এদিকে অম্বরিশের কোনো খবর নেই। বৌমা বহ্নিতা বেশ কয়েকবার ফোন করেছে অম্বরিশকে, কিন্তু সে ফোন ধরছে না। ছোটছেলে ঋষি গিয়ে অফিসেও দেখে এসেছে। কিন্তু অম্বরিশের পি.এ. জানালো যে অম্বরিশ সেই দুপুরের পর থেকে আর অফিসেই আসেন নি। বাড়িতে খুবই দুঃশ্চিন্তার পরিবেশ হয়ে আছে। রাত যখন এগারটা বাজে, ঠিক সেসময় অম্বরিশের গাড়িটা পোর্টিকোতে থামলো। হাতে একটা ফাইল নিয়ে গটগটিয়ে জুতোয় আওয়াজ করে অম্বরিশ ভেতরে ঢুকেই বললো, “বহ্নিতা,খাবারের ব্যবস্থা করো করো। খুব খিদে পেয়েছে”। বাড়ির সকলেই চিন্তায় চিন্তায় এখনো খাওয়া-দাওয়া করেননি। তাই সবাই একসাথেই খেতে বসলেন। বহ্নিতা সবাইকে খাবার বেড়ে দিয়ে নিজের খাবারও নিয়ে বসলো। খাওয়া শেষে সবাই যে যার ঘরে চলে গেলে বেণীবালা দেবীও ঘরে গিয়ে বিছানায় এসে বসলেন। অম্বরিশ এখনো পর্যন্ত তার সাথে কথা বলেন নি। তিনি ভাবলেন যে আর নয়, উনার শখ পূরণের নেশা উনার সন্তানকে কষ্ট দিচ্ছে। তাই তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন যে অভিনয়কে চিরকালের মতো বিদায় জানাবেন। অভিনয়কে  ছাড়ার কথা ভেবে বেণীবালা দেবীর চোখ ছলছলিয়ে উঠলো। ঠিক তখনি অম্বরিশ ঘরে ঢুকে বললো, “মা, শুয়ে পরেছো”। ঝটপট চোখের জল মুছে বেণীবালা দেবী বললেন, “না রে। বুড়ো মানুষ আমি। অত তাড়াতাড়ি কী আর চোখে ঘুম আসে”। অম্বরিশ বেণীবালা দেবীর কাছে এসে বসে বললেন, “এই নাও মা”,বলে একটা ফাইল এগিয়ে দিলেন। বেণীবালা দেবী জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকালে অম্বরিশ বললেন, “এটা তোমার ‘এক মুঠো ভাত’ মা। এতে শহরের কিছু বিখ্যাত থিয়েটারের নাম, ঠিকানা ও ফোন নম্বর আছে। তোমার যে থিয়েটারে কাজ করতে ইচ্ছে করে তুমি সেখানে গিয়ে অভিনয় করো। আমি সবার সাথে কথা বলে এসেছি। তোমার কোনো অসুবিধে হবে না”,বলে অম্বরিশ উঠে চলে যেতে উদ্যোত হলো। এমন ঘটনা বেণীবালা দেবী কখনো আশাই করেননি। ঘটনার আবেগে উনি বিহ্বল হয়ে পড়লেন। ভাঙ্গা গলায় কাঁপা কাঁপা আওয়াজে বেণীবালা দেবী বললেন, “কিন্তু.. কেন..”? অম্বরিশ পেছন ঘুরে স্মিত হেসে বললেন, “মা আজীবন তুমি নিজের খুশীকে বিসর্জন দিয়ে আমাদেরকে ভালো রেখেছো। কখনোই নিজের জন্যে ভাবোনি। এখন নিজের ইচ্ছামত বাঁচো। এটা আমাদের তরফ থেকে তোমার জন্যে ফেয়ারওয়েল..তোমার পাওনা ‘এক মুঠো ভাত’, তোমার গিফ্ট”। বেণীবালা দেবী অম্বরিশকে বুকে জড়িয়ে ধরে বললেন, “আআমি….আমি ভুল ছিলাম বাবা। তুই শুধু তোর দাদুর মতোই হোসনি, তোর বাবার গুনও পেয়েছিস। আজ আমি খুব খুশী..খুব খুশী”। মা ছেলের তখন চোখ বেয়ে আনন্দাশ্রু ঝরতে লাগলো।

  লেখনীতে তনিমা সাহা, নারায়ণপুর, কোলকাতা

দর্শনে স্নাতক, কাউন্সেলিংয়ে ডিপ্লোমা এবং অ্যাপলাইড সাইকোলজিতে স্নাতকোত্তর। কিছু পত্র-পত্রিকায় লেখা প্রকাশিত হয়। এরমধ্যেই কিছু ই-ম্যাগাজিনে লেখা প্রকাশিত হয়েছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here