বিশাল হাত
” আমার যদি বিশাল একটা হাত হত,
নতুন পৃথিবী গরতাম আমি নতুন রঙের সাজ হত”।
বৃদ্ধ একাকী ভাবে সারাটি জীবন ধরে,
জীর্ণ-বস্ত্র শীর্ণ- দেহে খড়ের কুঁড়েঘরে।
স্ত্রী-পুত্র সব ছেড়ে গেছে অভাবের তাড়নায়,
জানেনা তারা কেমন আছে কোন অজানা ঠিকানায়।
দুয়ারে দুয়ারে ভিক্ষা করিয়া জোটে দুমুঠো খাবার,
কোন দিন শুধু জল পান করে কাটে সারাদিন অনাহার।
দিকে দিকে আজ মহামারী তাই সকল দুয়ার বন্ধ,
মৃত্যু দিয়েছে ডাক বোধ হয় চোখ দুটো হবে অন্ধ।
পৃথিবী হয়েছে মুক্ত কারাগার সব দুয়ার আজ খোলা,
মানুষ হয়েছে বদ্ধ নিজের ঘরে এ যেন প্রকৃতির এক নতুন খেলা।
বৃদ্ধ লোকটা ভাবে আর একাকী মুচকে হাসে,
সেই কৃপণ-ধনীদের সব ঘৃণা- প্রতারণা চোখের সামনে ভাসে।
প্রকৃতি আজ করেছে তাদের বদ্ধ, দিয়েছে নিঠুর শাস্তি,
জ্বলেছে আগুন দেহে তার নাই তো মনে শান্তি।
বৃদ্ধ হাঁকিয়া কহে,
“হে বিধাতা তুমি কবে দেবে মোর সাথ,
মরিবার আগে দান করো মোরে বিশাল একটা হাত।
যে হাত দিয়ে করবো আমি সারা পৃথিবী গ্রাস,
ধনী গরিবের থাকবে না কোন ভেদ করবো সর্ব পাপের বিনাশ।”
বিধাতার বরে একদিন সে পেল যে বিশাল হাত,
চার ভাগ করে গড়লো পৃথিবী জেগে সারা দিন-রাত।
ধনী, গরিব, আর ধন-দৌলত, সকল জিনিস খাবার,
গরিবের আজ হলো মহাভোজ সেই ধনীরা সব অনাহার।
ধন দৌলত ছুড়ে ফেলল গরিব লোকের মাঝে,
হঠাৎ করেই মনের মধ্যে লোভের ঘন্টা বাজে।
আপন মনে কহে, “আমি কী হবো না রাজা!
তাহলে সেই কৃপণ ধনী- লোভীদের কে দেবে হেথায় সাঁজা?”
লোভের বশে বৃদ্ধ করলো সকল যে ধন চুরি,
সোনায় বাঁধা হলো সিংহাসন বানালো রাজবাড়ী।
মুছে গেল সব মায়া মমতা সেই গরিবের কথা,
মনের দুয়ারে জন্ম হলো তার রঙিন স্বপ্ন গাথা।
পড়লো সোনার মুকুট, “হে বিশ্ব বাসি শোনো দিয়া মন,
আমি হয়েছি বিশ্বের রাজা আজ করবো তোদের শাষণ।”
সেই ধনীর দুয়ারে পড়লো কুনজর’ “ব্যাটা খুব করেছিস মজা!
গরিবের ক্ষুধা ছিনিয়ে নেয়ার আজকেই হবে সাঁজা।
কাঙ্গালের আজ হবে ভুরিভোজ সেই ধনী রবে অনাহার,
অনেক ফূর্তি করেছিস বটে দেখো কেমন লাগে কারাগার।
টাকার জোরে হয়েছে মত্ত চরেছ নতুন গাড়ি,
আমরা ঘুরেছি খাবারের লাগি তোমাদের বাড়ি বাড়ি।
পেয়েছি তিরস্কার তাই ঘৃণা করি আজ তোদের,
দেখবি নয়ন ভরে তোরা আজ আমোদ-ফুর্তি মোদের।”
সোনার মুকুট পরে, বৃদ্ধ সেজেছে রাজা,
“এই কে আছিস, দেখি এক পেয়ালা সুরা-আর এক নস্যি গাঁজা।
আঁহা- কি মজা – থাকলে যৌবন হত সুখ,
মুছে যেত সব ঘৃনা আর জীবনের যত দুঃখ্।
আমি পারি নাই তাতে কি হবে আসবে ছেলে ফিরে,
করবে শাষন এই পৃথিবী সোনার মুকুট পড়ে।
কি জানি কোন ভিনদেশে যেয়ে আটকে পড়েছে তারা,
প্রকৃতি আজ করেছে অচল তাই, সারা বিশ্বে পাপে ভরা।”
লোভের মোহে বৃদ্ধ করিল সকল ধন আত্মসাৎ,
বিধাতার শাপে মরলো বৃদ্ধ ভাঙলো বিশাল হাত।
বিধাতা মুচকি হাসে-
হায়রে মানব জাতি তোরা কেউ নয় ভবে সুখী,
আছে যার যত সে চায় তত তাইতো তোরা দুঃখী।
এসেছিস তোরা খালি হাতে আবার ফিরে যাবে খালি হাতে,
লোভের বোঝা বইয়ে ঘুরিস কেন এই পৃথিবীর মাঝপথে?
আমি গড়বো নতুন পৃথিবী আবার করবো নতুন সৃষ্টি,
নবজাতকের থাকবে পূণ্য হাত থাকবে পুণ্য দৃষ্টি।
থাকবে সবার সমঅধিকার দেখবে নতুন আলোর পথ,
লোভের মোহে আসলে কেহ হবে সে দৃষ্টিহীন, আর কেটে যাবে পাপী হাত।
শুধু তুমি
শুধু তুমি – শুধু তুমি – ওগো প্রিয়তমা শুধু তুমি,
মোর জীবনের ফুল বাগানের ফুলের সুবাস তুমি,
যার গন্ধে মুগ্ধ হলেম, পাগল হলাম আমি।
বৈশাখীর কালো মেঘ যেন তোমার মাথার চুল,
তোমার কানের গয়না যেন সব, আমার মনের রঙ বেরঙের ফুল।
টাপুর টুপুর বৃষ্টি ভেজা বর্ষার বিকেলখানি,
আমার কানে ভেসে আসে তার মধুর প্রেমের বাণী।
জানালার এক কোনায় বসে কেটে যায় মোর দিন,
কত কথা স্মৃতি মনে পড়ে যায় কত সুরে বাজে বিণ।
শরতের কাশফুলে সাঁজা তোমার নতুন রুপ,
নয়ন ভরে দেখি তোমায় শুধু হয়ে যায় আমি চুপ।
ঠোট দুটি তার পলাশের রঙ রজনীর মালা গলে,
হাতের চুরি পড়েছ তুমি শিউলির মালা ঢেলে।
পাখিরা গাহিছে ডালে ডালে আজ নতুন সুরের গান,
নব সজ্জিত প্রকৃতি আজ যেন পেয়েছে নতুন প্রাণ।
তোমার জন্মে সাজলো নতুন, শুন্য আমার ভুমি,
যার পরশে ফিরিল জীবনখানি সেই প্রিয়তমা হলে তুমি – শুধু তুমি।
বসে আছি একা নির্জনে হেথা বিরহের জ্বালা বুকে,
ফিরে আসো তুমি মোর জীবনে ভরে যাক গৃহ সুখে।
আমার মনের আধার গৃহে দাও সুখের আলো ভরে,
ওগো প্রিয়তমা শুধু তুমি – শুধু তুমি ফিরে আসো মোর ঘরে।