অর্ধাঙ্গিনী

কলমে মিঠু দাস পাল

5
1205

“কি গো! ৮টা বেজে গেল,

ওঠো, অফিস যাবেনা…..”

বলে চায়ের কাপটা বিছানার পাশের টেবিলে রেখে চলে গেল রুমি।

নন্দন মানে রুমির স্বামী একটু আলসেমির সুরেই বলল ,উঠছি….

রুমির স্বামী নন্দন অর্থাৎ নন্দু ,একটা প্রাইভেট কোম্পানিতে সামান্য মাইনের চাকরি করে।২ বছরের ছোট মেয়ে দোয়েল, ৬ বছরের দীপ্ত আর তারা ২ জন এই তাদের সংসার।

রুমি একটি প্লে স্কুলে পড়াত, লকডাউন এর জন্য তার স্কুল পুরোপুরি বন্ধ, এখন রুমি বাড়িতেই থাকে, কাজের অবসরে বিভিন্ন ধরনের রান্না ইউটিউবে দেখতে সে ভালোবাসে, এটা তার হবি বলা যেতে পারে কিন্তু সেই রান্না, ঘরে এক্সপেরিমেন্ট করতে পারেনা কারন করোনার ছোবলে সংসার চালানোই বড় দায়।তবে রোজকার ডাল চচ্চড়ি যাই রান্না করে না কেন, নন্দন একেবারে চেটেপুটে খায়।নন্দনের, রুমির রান্না বেশ পছন্দের। শুধু নন্দন নয়, বন্ধুবান্ধব, আত্মীয় স্বজনের কাছ থেকেও অনেক প্রশংসা কুড়িয়েছে রুমি।

নন্দনের লাঞ্চ বক্স গোছাতে গোছাতে রুমি হাঁক ছাড়ে, “কি গো ! হলো তোমার,” ঘর থেকে উওর আসে “টেবিলে খাবার দাও, আসছি।”

টেবিলে রুটি আলু ভাজার প্লেট গোছাতে গোছাতে রুমি দীপ্তকে বলে বাবু! তাড়াতাড়ি বাক‍্যরচনাটা শেষ কর, আমি বোনকে খাইয়ে এসেই লেখা দেখব…না শেষ হলে কিন্তু আজ তোর ছুটি নেই ….

নন্দু খাওয়া দাওয়া সেরে তাড়াহুড়ো করে বেরিয়ে যায়।আর ঐ দিকে রুমি ,রান্নাবান্না ঘরের কাজ সব সেরে, ছেলে মেয়েদের স্নান খাওয়া করিয়ে, ঘুম পাড়িয়ে, নিজে খাওয়াদাওয়া সেরে সদ‍্য বিছানায় উঠেছে তখনই দেখে নন্দন এসে হাজির, চুল উসকোখুসকো, বড্ড ক্লান্ত দেখাচ্ছে।

নন্দন জামাকাপড় ছেড়ে স্নান সেরে ঘরে ঢুকতেই রুমি গরম জলের গ্লাস নন্দনের হাতে দিয়ে বলে “কি গো! কি হয়েছে তোমার ?এমন দেখাচ্ছে কেন তোমায়? শরীর খারাপ লাগছে নাকি ,এতো তাড়াতাড়ি চলে এলে যে?”

নন্দন চুপ করে থাকে।একি কথা রুমি বারবার বলতে থাকলে এবার নন্দন খেঁকিয়ে উঠে বলে,”তোমার আর কি? সারাদিন কি করো ঐ রান্নাটুকু ছাড়া আর কোনো কাজ আছে তোমার? যত চিন্তা সব আমার।” রুমি হতবাক হয়ে কোনো কথা না বলে বাইরের টেবিলে গিয়ে বসে।

নন্দন কিছুক্ষন পর রুমি কাছে গিয়ে হাত ধরে কাঁদো সুরে বলে ,সরি! আমায় ক্ষমা করো, মাথার ঠিক নেই, আজ অফিস থেকে বলে দিল আর কাজে আসতে হবে না, অফিস থেকে অনেক লোক ছাটাই হচ্ছে ….বস্ কে অনেক বার রিকুয়েস্ট করেও কাজ হয়নি।

কথাটা শুনে মাথায় বাজ পড়ার মত অবস্থা রুমির।ছেলে মেয়েগুলো ছোটো, কি ভাবে সংসার চলবে তাদের? কিন্তু ভেঙ্গে পড়লে চলবে না, রুমি নন্দনের হাতটা ধরে বলে ওতো ভেবোনা, আমরা ঠিক একটা ব‍্যবস্থা করবই।বলে দুজনে ভাবতে বসে, হঠাৎ রুমির মাথায় আইডিয়া আসে রান্নাকে হাতিয়ার বানিয়ে যদি কিছু করা যায়…..

সোনার কানের কান থেকে খুলে নন্দনের হাতে দিয়ে বলে এটা বন্দক দিয়ে কিছু টাকা নিয়ে এসো আমরা হোম কিচেন খুলব। নন্দন কানের নিতে রাজি না হলেও রুমির জোরাজুরিতে নেয় এবং পরে আবার ফিরিয়ে আনার আস্বাস দেয়।

এই দিকে ওরা ফেসবুক, হোয়াটস আ্যপ এবং বিভিন্ন গ্রুপে আ্যড দেয় তাদের হোম কিচেনের, প্রথম দিন ২-৩টে অর্ডার আসে, খুব কম লাভে তারা হোম ডেলিভারি দেয়।এরপর তাদের রান্নার প্রশংসা বাড়তে থাকে আর অর্ডার ও বাড়তে থাকে।রুমি রান্না করে আর নন্দনের কাজ হল বাজার করা আর বাড়ি বাড়ি খাবার পৌঁছে দেওয়া।

এখন তাদের কিচেনের বয়স দশমাস, তারা এখন ছোটোখাটো অনুষ্ঠানের ও দায়িত্ব নেয়, ব‍্যবসা একটু বড় হয়েছে একটা ছেলেও রেখেছে কাজের জন্য। তাদের সংসার এখন মোটামুটি ভাবে চলে যায়। নন্দন আর অন্য কাজের চেষ্টা করেনি এখন তাদের চোখে মুখে একটাই স্বপ্ন কীভাবে ব‍্যবসা আরো বড়ো করা যায়।

নন্দনদের এখন সামর্থ্য হয়েছে বন্দকি জিনিস ছাড়িয়ে আনবার।নন্দন সেই সোনার কানেরটি ছাড়িয়ে এনে রুমির হাতে দিয়ে বলে, “তুমি আমার যোগ্য অর্ধাঙ্গিনী… আমার পাশে তুমি না থাকলে আমার সব শেষে হয়ে যেত ,আমি ভেসে যেতাম। তোমরা মেয়েরা দশভূজা ,অনেক কিছু পারো তোমরা।”

কলমে মিঠু দাস পাল, দিল্লী

একজন গৃহবধূ।পড়তে ও শিখতে ভালোবাসি।বর্তমানে একটু আধটু লেখার চেষ্টা করি।কয়েকটি পত্রিকায় আমার লেখা প্রকাশিত হয়েছে।আরো অনেকে অনেক শেখার বাসনা নিয়ে এগিয়ে যেতে চাই।

5 COMMENTS

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here