আমি তখনও এমন শান্ত ছিলাম,
স্রোতের অভিমুখে দাঁড়িয়ে ছিলাম নিশ্চিন্তে ।
শীতল জলের ত্বকে ছিল গরম রোদের চুমু ।
নদীটা ছিল অন্তঃসত্ত্বা, হয়তো সামনের কোনো বাঁকে,
সহসাই সে কোনো জলপ্রপাতের জন্ম দেবে !
যন্ত্রণায় সে থরথর কাঁপছিল, লাল হয়ে যাচ্ছিল
তার কোমল উদর থেকে জানুদেশ !

আমি তখনও এমনই শান্ত ছিলাম ।
পর্বতের সানুদেশ থেকে নিচের দিকে তাকিয়ে,
প্রায় হঠাৎই যখন দেখেছিলাম ছোট্ট একটা
বরফি ছাঁদের সবুজ বন ।
নিজেকে মনে হয়েছিল হারিয়ে ফেলেছি,
কাঁটাঝোপে ছোট্ট ছুঁচের মতো !

আমি তখনও শান্ত ছিলাম ।
যখন জঙ্গলে লাগল আগুন !
কতিপয় শিশুগাছ দাউদাউ করে, জ্বলে গেল
চোখের সামনে ! দগ্ধ হরিণ পড়ে ছিল কত !
অদৃশ্য হল মাথার উপরে, পাতার চন্দ্রাতপ ।

তখনও ভয় পাই নি, রোমকূপে আসে নি
কোনো ত্রস্ত সন্দেশ ।
মনে হতো, রাতের বুনো অন্ধকার ফুঁড়ে
ঠিক আসবে, বেতের চাবুকের মতো ভোর ।

কিন্তু এ কোন্ সময় এল ?
আজ অনুভবের দশটা দিকে
দশটা নাগরদোলায় কেবল অন্ধকার দুলছে ।
প্রতিটা আয়নায় তার বর্বর হাতের ছাপ,
পায়ের আঙুলগুলোর নখ কেটে বসে যাচ্ছে,
ঘোলাটে আলোর বুকে ।
আর তো শান্ত থাকা যায় না !
বহুদিনের অনভ্যাসে স্বর, উচ্চগ্রামে ওঠে না সহজে ।
এমন দুর্যোগে একক স্বর দুর্বলতা,
আসুন না আমরা এই দুর্দিনে
বহুস্বরে, সমস্বরে গাই ।

কলমে অভিষেক ঘোষ, কসবা

পেশায় স্কুল শিক্ষক, বিষয় বাংলা ভাষা ও সাহিত্য । দক্ষিণ চব্বিশ পরগনায় জন্ম । গত দশ বছরে আনন্দবাজার পত্রিকা-সহ, বার্তা, পথ, দিগন্ত, দক্ষিণের জানালা, এবং সইকথা ইত্যাদি বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা ও ওয়েবজিনে প্রবন্ধ, কবিতা, গল্প, চলচ্চিত্র সমালোচনা প্রকাশিত হয়েছে । এছাড়াও ‘শব্দের অভিযান’ শীর্ষক কবিতা সংকলন প্রকাশিত হয়েছে ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here