টুকাই এর সাথে ননীবালা দেবীর যেন জন্ম জন্মান্তরের সম্পর্ক। সম্পর্কে ঠাকুমা-নাতির তর্ক যেন লেগেই আছে। সেকেলে আদব কায়দা ও সংস্কারে বিশ্বাসী ননীবালা দেবীর সবকিছুতেই বিধিনিষেধ। তবে জেনে বুঝেও টুকাই ইচ্ছে করে ঠিক উল্টোটাই করে বসে। তারপর আর কি! শুরু হয়ে যায় ঠাকুমা-নাতির খুনসুটি। বাড়ির আর সবাই ও ঠাকুমা-নাতির এমন শিশুসুলভ আচরন তাড়িয়ে তাড়িয়ে উপভোগ করে। এই তো সেদিন বৃষ্টির ফোঁটা হালকা থেকে মাঝারি হয়েছে কিনা ননীবালা দেবী ঠাকুর ঘরের শঙ্খ হাতে হাজির। তার মতে এমন দূর্যোগের সময় শাখে ফুঁ দিলেই নাকি দূর্যোগ কেটে যায়। সতিই কিছুক্ষন পর স্বাভাবিক নিয়মেই বৃষ্টি থামলো ঠিকই কিন্তু ননীবালা দেবীর কথায় সবই নাকি তার শাঁখে ফুঁ দেওয়ার ই কামাল। কিন্তু বিজ্ঞানের ছাত্র টুকাই এসব মানবেই বা কেন অতঃপর আবার শুরু হয় তর্কাতর্কি। ঠাকুমার এমন সেকেলে আদব কায়দা, সংস্কার এসব হয়তো সে মানে না ঠিকই কিন্তু মনে মনে সমর্থন ও যে করে না তা ও কিন্তু নয়। তার কথায় ঠাকুমা এরকম না করলে খুনসুটিটা জমবে কেন। সেবার অবশ্য মনেপ্রাণে না চাইলেও শেষমেশ ননীবালা দেবীর কথাই রেখেছিল টুকাই। ঠাকুমার কথাতেই তো পড়াশোনার জন্য তার কলকাতায় যাওয়া। এখন আর তর্কাতর্কি টা সেরকম জমে না। মোবাইলের দরুন ফোন করেই সে খোঁজ নেয় তার ঠাকুমার কথা, ঠাকুমা ও ফোন আগলে হাপিত্যেশ করে বসে থাকে তার সাথে কথা বলবে বলে। তবে মিনিট পাঁচেকের সেই কথাবার্তায় খুনসুটির থেকে রক্তের টানটাই বেশি চোখে পড়ে। আজকাল যেখানে সমাজের বেশ কিছু শ্রেনীর মানুষ বৃদ্ধ মা-বাবার দায়িত্ব নিতে অস্বীকার করছে কিংবা ঠেলে দিচ্ছে অসহায়ত্বের পথে। সেখানে টুকাই আর তার ঠাকুমা ননীবালা দেবী যেন বড়োই ব্যতিক্রম। তারা একে অপরের পরিপূরক, খুনসুটির সঙ্গী। এখন যেখানে ঢালাও ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে উঠছে বৃদ্ধাশ্রম থেকে আবাসিক সেখানে সম্পর্কের মান যে কমবেই তা তো স্বাভাবিক। আর এভাবেই আধুনিকতার মোড়কে হয়তো একদিন হারিয়েই যাবে এরকম কিছু খুনসুটির সম্পর্ক। সেদিন হয়তো টুকাই ও ভুলে যাবে তার এককালে চোখে হারানো ঠাকুমাকে। ঠাকুমা ও হয়তো নীরবে বেছে নেবে কোনো বৃদ্ধাশ্রমের চারটে দেওয়াল যেখানে তিনি একা, শুধুই একা।
কলমে সমীর মন্ডল, বারুইপুর, ক্ষিণ ২৪ পরগনা
আশুতোষ কলেজের প্রানীবিদ্যা বিভাগের প্রথমবর্ষের একজন ছাত্র।