দিনটা আজ দূ্র্গাপুজোর ষষ্ঠী। মায়ের বোধনের দিন। বহুদিন পর আজ মুখার্জি বাবুদের খুশির দিন। দূ্র্গাপুজোর এই দিনটাতে প্রতি বছর কৈলাস মুখুজ্জে ম্লান হয়ে থাকেন। আড়াইশো বছরের দূর্গাপূজা তাঁদের। প্রতি বছর দূর্গাপূজার সময় গ্রামের কত মানুষ এসেই না ভিড় করে তাঁদের এই সাতমহলা বাড়িতে। কিন্তু কোথায় যেন শূন্যতা থেকেই যায়। আজ সেই শূন্যতা পূরণ হবে বোধহয়। ছেলে অনিমেষ ফিরছে বিদেশ থেকে সঙ্গে বৌমা ও নাতি পুকাই।
কৈলাস মুখুজ্জে এবাড়ির কর্তা। গিন্নি পুজোর ব্যস্ততায় সামিল। তাঁরও কম ব্যস্ততা নেই। ছেলে আসবে তার জন্য বাড়ির গাড়ি পাঠানো, চাকর-বাকরদের কাজকর্ম দেখে নেওয়া, পুরোহিতের সাথে কথোপকথন এইসব চলছেই। এত ব্যস্ততার মাঝেও গ্রামাফোনটিকে চালু করে রেখেছেন তিনি। তাঁর কথায় এই গ্রামাফোনের সুরই নাকি তাঁকে সচল করে রাখে। দীর্ঘ সময়ের অপেক্ষার পর ছেলে আজ তার নিজের ভিটেয় ফিরবে।
মায়ের বোধন শুরু হয়ে গেল। পুরোহিত পুজো শুরু করা মাত্রই গ্রামের এক চেনা পরিচিত এসে খবর দিলেন মুখুজ্জেবাবু আপনার ছেলে আর কিছুক্ষণের মধ্যে এসে পড়বে। বাড়িতে মহাখুশির রোল উঠল। ঢাক-ঢোল, কাঁসর-ঘন্টার আওয়াজে সারা বাড়ি গমগম করতে লাগল। এসবের মধ্যে কোথাও যেন মুখুজ্জেবাবুর প্রিয় গ্রামাফোনের আওয়াজ মিলিয়ে গেল।
বাড়িতে গাড়ি ঢুকল। মুখার্জিবাবুর তীক্ষ্ণ দৃষ্টি গাড়ির কাঁচে। এতদিন পর তিনি তার ছেলেকে দেখতে পাবেন সচক্ষে। গাড়ির চালক গাড়ির দরজা খুলে নেমে এসে গাড়ি থেকে বার করলেন দুটি দেহ। রক্তমাখা দেহ। মুখার্জিবাবু দেখলেন তার ছেলেকে সচক্ষে। বাড়ির চারদিকে কান্নার রোল উঠল। বাড়ির চারিদিকে শূন্যতা ছেয়ে গেল। গ্রামাফোনে বেজে উঠল বিষাদের সুর।