<< জাপান পর্ব ৭ ১ম এপ্রিল থেকে ১৫ই এপ্রিল
আগের পর্ব যেখানে শেষ করেছিলাম , সেখান থেকে শুরু করি। হ্যাঁ সে রাতে , বাঁশ খাওয়া শেষ হয়নি। বাস চড়েছি অনেক বার ,জিপিএস বাসস্টপ দেখে অভিভূত হয়েছি অনেকবার , কিন্তু বাস এর যে টাইম টেবিল ও ওই খানে লেখা আছে , তা চোখে পড়েনি ,না সে দিন ও পড়েনি। আগে কাঁদায় পড়বো , তার পর তো মাটি মাখা। সেরকম এক অবস্থা। ইন্ডিয়ান রেস্টুরেন্ট এর কাছেই যে বাস স্টপ সেটা থেকে ৫ নম্বর বাস যায়না।কিয়োটো বিশ্ববিদ্যালয় এর কাছের জায়গাকে হ্যকুমানবেন বলে। ওই স্টপ থেকে ৬৫ ,৩১ আর ২০৩ বাস ছাড়ে , তার মধ্যে ৬৫ আর ৩১, আমাদের সুগাকুইন এ আসে। বাস স্টপ এ পৌঁছাতেই দেখলাম ৬৫ ইতিমধ্যে শেষ। শেষ বলতে বাসস্টপ এর ডিসপ্লে স্ক্রিন এ ৬৫ নম্বর বাস এর নিচে জ্বলজ্বল করছে Finished লেখাটি। এখন একমাত্র ৩১ সম্বল । দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে, হঠাৎ করে দেখলাম ৩১ নম্বরের নিচেও জ্বলে উঠলো Finished. আমাদের সাথে আরো কয়েকটা পরিবার ওখানে অপেক্ষারত ছিল বাস এর জন্য। তাদের চোখে মুখে বিস্ময় , কেন ঠিক বুঝলাম না। মনে হলো কিছু একটা ভুল হচ্ছে। আমরা তো সকাল থেকে বাঁশ খাচ্ছি , তাই ভাবলাম এটাও আর এক। মন খারাপ করে ট্রেন এর স্টেশনের দিকে হাঁটা পথে এগুলাম। পা তো একদম সাথে দিচ্ছে না। কিন্তু মেয়ে কে সেটা বুঝতে দেওয়া যাবে না , তাই এমন ভান করলাম কিছুই হয়নি। হাঁটছি হাঁটছি। মা র কথা মনে পরে বেশি বিপদে , হে হে। আরো একটা বাস স্টপ চলে এলাম হেঁটে। পেরিয়ে চলেই যাচ্ছিলাম ,ওমা একই এই বাসস্টপ এ , ৩১ নম্বর বাসের নিচে ডিসপ্লে তে বাস আসছে দেখাচ্ছে। এইবার বুঝলাম কেন ওয়ারা অবাক হয়েছিল। নিশ্চয় প্রযুক্তি গড়বড় ঘটেছিল। মনে মনে আমরা দুজনেই হাসলাম। ঠাকুর আমাদের আরো কিছুটা হাঁটিয়ে শেষ মেশ দেখা দিলেন। এলো ৩১ নম্বর বাস। কি বাঁচা যে বাঁচলাম , বলে বোঝানোর নয়।
এবার ছোট করে বলি , এখন কার বাসস্টপের প্রযুক্তির কিছু কথা। এখন আমরা আর বাঁশ খাইনা। অন্তত বাস আসবে কি আসবে না , সেটা বুঝি। কোন বাস ওই রাস্তায় যাবে তা বুঝতে পারি।
এখানে একটা বাসস্টপ ও অন্য বাসস্টপের মধ্যে দূরত্ব ১ কিলোমিটার মতো। বড়- মাঝারি -ছোট সব রকমের বাসস্টপ আপনি দেখতে পাবেন। বড় বলতে , যে বাসস্টপ আকারেও বড়, বসার জায়গা বড় আর তার সাথে সব রকমের প্রযুক্তি বিশিষ্ট। সব রকমের ডিসপ্লে সহিত। মাঝারি বাসস্টপে ছাউনি থাকে না ,যতটা দরকার ততটা প্রযুক্তি সমৃদ্ধ আর ছোট বাসস্টপে শুধু একটা বোর্ড থাকে যেখানে লেখা থাকে কোনো কোন বাস সেখানে দাঁড়াবে।
বড় বাসস্টপ এ যে প্রযুক্তি থাকে তার একটু বর্ণনা দি। এক হচ্ছে , এদের বাসস্টপ গুলো জিপিএস সিস্টেম সমৃদ্ধ। জিপিএস সিস্টেম আপনাকে দেখতে শাখাহাম যে কোন কোন বাস আপনার স্টপ থেকে কতটা দূরে আসছে। পেছনের ৩টি স্টপ এটি দেখাতে সক্ষম। একটা বোর্ড থাকে যেখানে লেখা থাকে কোন কোন বাস এখানে দাঁড়াবে আর তাদের রুট কি। আর একটা বোর্ড থাকে যেখানে লেখা থাকে বুশের সময়সূচি , যা এতো দিন আমরা লক্ষ করিনি। সময়সূচি, বাস নম্বর আর সেটার গন্তব্য ছাড়া বাকি সব তথ্য জাপানীস এ লেখা থাকে। তাই আমাদের মতো পর্যটকরা সব সময় মোবাইল ফোনে অনুবাদক নিয়েই ঘুরে বেড়াই।
এ সপ্তাহ থেকে মেয়ের স্কুল আবার চালু হলো। ধরে প্রাণ এলো একদম। রোজ রোজ মেয়েও আমাকে সহ্য করতে পারছিলো না , আর না আমি। মেয়ের স্কুল শুরু , আর আমার ঘোরা। ঘোরা মানে , মেয়ে আর বর বেরিয়ে গেলেই , আমিও তৈরি হয়ে , কানে গান গুঁজে , সাইকেল নিয়ে পাড়ি দি। কোথায় যাবো ঠিক থাকে না , তবে যে দিকে যেদিন মন চাই , যতটা সোজা ৱাস্তায় যেতে পারি , চলতে থাকি। ইতিমধ্যে অনেক দোকান আমার এখন নখদর্পনে ,কোথায় কোনটা ভালো পাওয়া যায় , কোথায় কোনটা সস্তা , এই সব আর কি। একদিকের রাস্তায় গেলে চোখ পড়েছিল কিয়োটো ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্স সেন্টার আর আর একদিন কিয়োটো ইউনিভার্সিটি অফ আর্টস এন্ড ডিসাইন।সাইকেল চালিয়ে পরিষ্কার রাস্তায় , কোনো খানা খন্দ ছাড়া ,তীব্র গতিতে সাইকেল চালিয়ে যাওয়ার মজাই আলাদা। স্কুল এ পড়ার সময় সাইকেল চালানো আর অফিস জীবনে মোটরসাইকেল চালাতে গিয়ে এরকম অনুভব হতো। একদম হিরো হিরো টাইপ। হ্যাঁ , আমার মধ্যে আবার মেয়েলি ভাবটা অনেকটাই কম। হে হে। এ সপ্তাহে একদিন সন্ধে তে আসিফ এসেছিলো , রাতের খাবার আমাদের এখানে খেতে। খুব গল্প হলো।
এই সপ্তাহে আবার হঠাৎ করে ঠান্ডা ভাবটা বেড়েছে , শেষ দু সপ্তাহে একটু তাপমাত্রা ঠিক ছিল। মাঝে মাঝে মেঘ উঁকি মারছে , সাথে অল্প স্বল্প বৃষ্টি। শুনলাম কিয়োটো বোটানিক্যাল গার্ডেনে নাকি এই সপ্তাহের শেষ অবধি লাইট শো আছে। শরীর সেরকম সাথ দিচ্ছিলো না, তবু আমাদের পরিকল্পনা এটাই ছিল এ সপ্তাহে ওখানেই যাবো , কারণ এই সময় সম্পূর্ণ কিয়োটো ফুলে ফুলে এতো সুন্দর সেজে ওঠে , সেখানে উদ্ভিদ উদ্যান যে অপরূপ রূপে সাজবে , সে কোনো ব্যাতিক্রম নয়।
এখন বাড়িতে বসে , জাপানীস শেখা শুরু করেছি , আসলে ইচ্ছে ছিল কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গিয়ে জাপানীস ভাষাটা ভালো করে শিখি , কিন্তু সমস্ত কেন্দ্র গুলো আমার জায়গা থেকে বেশ দূরে। একদিন আমার পাশেই এক ছোটদের জাপানীস সেন্টার এ গিয়ে খোঁজ খবর নি। নাম কুমন KUMON , এখানকার খুব নামকরা প্রতিষ্ঠান। সেখানকার ভদ্রমহিলা আমাকে নিতে রাজিও হয় , কিন্তু পরবর্তী দিনে সেখানে খাতা কলম নিয়ে পড়তে গেলে উনি খুবই দুঃখের সাথে জানান যে আমার জন্য ওদের সেরকম কোনো ভাষার কার্যক্রম নেই। খুবই আশাহত হয়েছিলাম , কারণ এখানে এসে এই একটা কাজ করার আমার খুব ইচ্ছা ছিল , যা আর বোধহয় করে ওঠা হবে না।
তবে শেষমেশ এটা বেশ বুঝলাম ভদ্রমহিলা নিজে খুব এ দুঃখিত , অনেক অনেক বার সরি বলছিলেন। ফেরার সময় উনি অনেকক্ষণ আমার মেয়ের সাথে কথা বলেন আর আমাদের জানান, মে মাসের প্রথম দিকে এখানে সামিগমো আর কামিগামো নাম দুটো মন্দিরে বিশেষ কিছু আয়োজন বা উৎসব আছে। আমরা লিখে নিলাম কাগজে , কারন এদের নাম গুলো এতোটাই আলাদা যে মনে রাখা একবার শুনে প্রায় অসম্ভব। বাড়ি এসে গবেষণা করে দেখলাম ,এই জায়গা দুটো বোটানিক্যাল গার্ডেনের কাছাকাছি।
চলে এলো শনিবার , কিন্তু সকাল থেকেই আকাশের মুখ ভার। অনেকবার আবহাওয়ার পূর্বাভাস দেখলাম, মেঘ আছে, বৃষ্টি নেই এরকম দেখাচ্ছিল , তবে ৪ টের নাগাদ সামান্য বৃষ্টি। সেই ভেবে একটা ছাতা , খাবার নিয়ে বেরোলাম(অনেক বার মনে করেও মেয়ের ছাতা নিতে ভুলে গেলাম, আর কি)। আজ প্ল্যান ছিল আমরা সাইকেল এ করে ঘুরে বেড়াবো , কারণ বোটানিক্যাল গার্ডেন আমাদের জায়গা থেকে ৪ কিলোমিটার দূরে। মোবাইল এ জিপিএস ON করে , মেয়েকে সাইকেল এর ক্যারিয়ার এ বসিয়ে রওনা। হ্যা গেলো সপ্তাহে মেয়ের জন্য সাইকেল এ বেবি সিট্ বসাতে হয়েছে। এটা এখানে আইনত বাঁধাধরা নিয়মের একটা। বাচ্চাকে আমাদের দেশের মতো ক্যারিয়ার এ বসিয়ে ঠাং ঝুলিয়ে নিয়ে যাওয়া বারণ।জানেন তো এখানকার পুলিশ স্টেশন গুলো মাছি মারে। না আছে কোনো ক্রাইম না কোনো দুর্ঘটনা। আসলে এরা মানুষ আর তার জীবন নিয়ে এতটাই ভাবে , এতটাই মানুষের জীবনের মূল্য দেয় যে , কিছুতেই কোনো দুর্ঘটনা হতে দেবে না। সে নিয়ম এক দেশি আর এক বিদেশী সবার জন্য একই। সে মূল্য , বাচ্চার বেবি সিট্ দিয়ে ই শুরু হোক না কেন। অগত্যা আর কি , আরো ৫৫০০ টাকার গচ্ছা। কিন্তু মেয়ে আমার খুব খুশি , নতুন রকম সিট্ পেয়ে।
প্ল্যান এ ছিল, আগে কামিগামো মন্দির খুঁজবো ,কিন্তু এতো ঠান্ডা বাড়তে লাগলো , আর এতো হাওয়া , হাত যেন ধীরে ধীরে বরফ হচ্ছিলো। আজহঠাৎ এতো ঠান্ডা কেন বুলছিলাম না , ভাগ্যিস কোট পরে এসেছি। কিতায়ামা স্টেশন চত্বরে এর কাছাকাছি আসতেই জিপিএস দেখালো আমরা কাছাকাছি পৌঁছে গেছি বোটানিক্যাল গার্ডেন এর , গন্তব্য বদলে কামিগামো দিতে ভাস্কর বললো আজ আর ঝুঁকি নিয়ে লাভ নেই , মেঘ করেছে , রাস্তা চিনিনা আর তার ওপর বিকেল ৪ টের পরে প্রবেশ নিষেধ।অনেক ভেবে সাইকেল ঘোরালাম বোটানিক্যাল গার্ডেনের দিকে। একদম পাশেই ছিল যেখানে আমরা দাঁড়িয়ে ছিলাম , কিতায়ামা স্টেশন এর সাবওয়ে র কাছে।
কিয়োটো বোটানিকাল গার্ডেন
কিয়োটো বোটানিকাল গার্ডেন, কিয়োটো প্রেফেকচুয়াল বোটানিক্যাল গার্ডেন নামেও পরিচিত, কামো নদী, হঙ্গী-কো সিমোগামো, শাকো-কু, কিয়োটো, জাপানের পাশে অবস্থিত কনজারভেটরসহ একটি প্রধান উদ্ভিদবিজ্ঞান।
কিয়োটো বোটানিক্যাল গার্ডেন সবচেয়ে সাশ্রয়ী মূল্যের লুক্কায়িত রত্নগুলির মধ্যে একটি, যা দর্শক এবং স্থানীয়দের উভয়ের জন্য একই রকম ভ্রমণএর জায়গা ।সবুজ গাছপালা এবং সুন্দর উদ্যানের প্রাচুর্য দিয়ে, কিয়োটোতে উদ্ভিদ ও প্রাণীজগতের পরিবর্তন উপভোগের অনেক চমৎকার জায়গা রয়েছে । উদাহরণস্বরূপ, Arashiyama, একটি চমৎকার জায়গা ,যার বর্ণনা আমি আমার আগের ভ্রমণ পর্বে । কিয়োটোতে সব ঋতু উপভোগ করার অন্যতম জায়গা, কিটায়ামার কিয়োটো বোটানিক্যাল গার্ডেন। যার জাপানিজ নামটি কিয়োটো শোকুবুসসেন (京都 植物園)।
19২4 সালে প্রতিষ্ঠিত, কিয়োটো বোটানিকাল গার্ডেনটি প্রায় ২40,000 মিটার স্কয়ার এবং জাপানের 1২,000 প্রজাতির একটি চিত্তাকর্ষক গাছ এর সংগ্রহনশালা , এটি জাপানের প্রাচীনতম এবং সর্বাধিক জনসাধারণের বোটানিকাল বাগান। যদিও 1945 সালে এটি অপ্রয়োজনীয় হয়ে পড়েছিল, তা পুনরুদ্ধার করা হয় এবং 1961 সালে জনসাধারণকে পুনরায় খোলা হয়।
এটি সাবওয়ে দ্বারা প্রবেশযোগ্য, কিন্তু কেউ যদি চান আমাদের মতো সাইকেল চেপে বা সাইকেল ভাড়া নিয়ে Kitayama স্টেশনে উত্তর প্রবেশদ্বার সাইকেল পার্কিং দিয়ে এখানে প্রবেশ করতে পারেন । অন্যদিকে, দক্ষিণাঞ্চলীয় প্রবেশপথ, গাড়ীর জন্য পার্কিং স্পেস প্রচুর আছে।
কিয়োটো বোটানিক্যাল গার্ডেনের প্রবেশ মূল্য প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য মাত্র JPY200, এবং টিকিট একই দিনে একাধিক এন্ট্রির জন্য অনুমতি দেয়। এর মানে হল যে যদি আপনি কাছাকাছি লাঞ্চের জন্য পপ আপ করতে চান এবং পরে বাগানে অন্বেষণ চালিয়ে যেতে চান তবে এটি সম্পূর্ণরূপে সম্ভব! কিয়োটো বোটানিক্যাল গার্ডেনের বার্ষিক পাস JPY1000 এবং সারা বছরের সীমাহীন এন্ট্রির জন্য অনুমতি দেয়, যা স্থানীয় বাসিন্দাদের জন্য একটি সম্পূর্ণ সাশ্রয়ী মূল্যের চুক্তি।আমাদের ও প্ল্যান ছিল দুপুরে গার্ডেন দেখে রাতে আবার ফিরে আসার , আলোর প্রদর্শনী দেখতে।
ভেতরে ঢুকতেই ইংরেজী, চীনা ও জাপানী ভাষায় বোটানিক্যাল গার্ডেনের মানচিত্রগুলি রয়েছে – যেটা আপনার ভাষা সেটা আপনি শুধু বাছাই করুন। এই এলাকাটি আপনার পথ খোঁজা বেশ সুবিন্যস্ত। আপনি অবশ্যই একটি গাইড হিসাবে মানচিত্রটি ব্যবহার করতে পারেন।কিন্তু আমার আবার মানচিত্র দেখে সৌন্দর্য্য দেখার থেকে হঠাৎ করে সামনে আসা অপরিচিত অতিথিকে জেনে চিনে নিতে বেশি ভালো লাগে। মানচিত্র দেখে রাস্তা দেখলাম না ঠিক ই কিন্তু দেখে নিলাম কত রকমের গাছ এখানে রয়েছে। বাগানটি : বাঁশ বাগান; বনসাইয়ের প্রদর্শনী; কামেলিয়া গার্ডেন; চেরি গাছ; ইউরোপীয় স্টাইল গার্ডেন; Spring Floder Bed (এটি স্প্রিং এর সময়ের জন্য মূলত , এই সময় টিউলিপ দেখা যায় ); হাইড্রোঞ্জা গার্ডেন; জাপানি আইরিস গার্ডেন; জাপানি নেটিভ উদ্ভিদ; লোটাস পুকুর; নাকারগি-না-মাওরি পুকুরে (যমশিরো বেসিনে বসবাসকারী গাছ); পেনি গার্ডেন; বার্ষিক এবং দরকারী উদ্ভিদ গার্ডেন; সানকেন গার্ডেন; এবং উমে গ্রোভ, এতো রকমের উদ্ভিদ অধ্যায় বা ভাগ ছিল।
আমাদের সাথে প্রথমেই দেখা হয়েছিল সাকুরার চেরি গাছের।অনেক চেরি একসাথে যেন পরিবেশ কে স্বপ্নের মতো করে দিয়েছিলো। পশে ছিল টিউলিপ এর বাগান।এই প্রথম আমার সাথে টিউলিপের দেখা। অনেক বন্ধুদের সোশ্যাল মিডিয়াতে ছবি দিতে দেখেছি , ছোট বেলায় এক বিখ্যাত হিন্দি ছবিতে অভিতাভ বচ্চন কে দেখেছি এই টিউলিপের সাথে ,রঙ্গিন পর্দায়। কখনো ভাবিনি আমার সেই সৌভাগ্য হবে। মেয়ে কে নিয়ে অনেক অনেক ফটো তুললাম লাল লাল টিউলিপের সাথে। পরে ছিল স্প্রিং বেড যা বিভিন্ন রঙের টিউলিপের রঙে রাঙানো। বেগুনি ,সাদা,হলুদ,গোলাপি, লাল। দারুন দারুন।
গোলাপ তো এমনিই সুন্দর , কিন্তু যখন আপনি সেই গোলাপের অনেক বৈচিত্র্য দেখবেন , সত্যিই চোখ জ্বলে উঠবে। এখানে আপনি পাবেন কিছু গোলাপের স্যাম্পলিং: ক্যারোজেল, স্থায়ী ওয়েভ, চন্দ্র স্প্রাইট, রয়োককো, তাসোগে, মা পারকিন্স, ভোগ, দৈনিক স্কেচ, আশ্চর্য, এহগাসা, সতেরো, পেরেনিল পলসেন, অরিক্রট এনকরার, হানি গুলকি, অ্যানাবেল , সিয়েস্তা, আইরিশ ধ্বনি, প্রফুল্ল, রাজকুমারী মিকিকো, নিশিকি-ই, আরবেস, ট্রপিক্যাল শেরবারেট, টেকিলা, লা ভি ইন রোজ, মোনা লিসা, ল্যাভেন্ডার ড্রিম।
কিয়োটো বোটানিক্যাল গার্ডেনের বৈশিষ্ট্য এটাই যে, প্রতিটা ঋতু তে আপনি এই উদ্যান কে নতুন ভাবে খুঁজে পাবেন। ।বসন্ত তার চেরি আর শরৎ তার অপরূপ রঙে সব ভরিয়ে দেয় বার হয় । এখানে প্রায় 500 টি চেরি গাছ রয়েছে ।
যাইহোক, বসন্ত এবং শরতের বাইরে অন্যান্য ঋতু সমানভাবে মনোযোগের যোগ্য। উদাহরণস্বরূপ: মধ্য জুনের মাঝামাঝি বৃষ্টির সময়কালে, আপনি পূর্ণ প্রস্ফুটিত হাইড্রোঞ্জা বাগানে পাবেন। এখানে ১৮০ প্রজাতির , ২৫০০ টি হাইড্রোঞ্জা আছে।
কয়েক সপ্তাহ পরে ফিরে আসুন, এবং হাইড্রোঞ্জাইজগুলি সম্পূর্ণভাবে অদৃশ্য হয়ে যাবে অথবা এই বাগানে পদ্ম পুকুরে আভাসযুক্ত গোলাপী পদ্ম ফুল দিয়ে ভরে যাবে, এবং পাতার ভ্যালেন্টল্যাণ্ডের এলিসের চেহারাটি উপযুক্ত হয়ে উঠবে। প্রকৃতপক্ষে, যদিও বোটানিক্যাল গার্ডেন সাধারণত 9 টায় খোলা থাকে, জুলাই মাসে খোলা থাকার সময় 7 টায় শুরু হয়, যেহেতু পদ্মগুলি সকালে খোলা থাকে এবং সকালের মাঝামাঝি সময় বিবর্ণ হয়। গ্রীষ্মে বাগানগুলি পূর্ণ প্রস্ফুটিত উজ্জ্বল হলুদ রাশিয়ান সূর্যমুখী দেখা যায় – একেবারে সুন্দর।
আমরা হাটতে থাকি , সামনে weeping চেরির সারি। সাথে অনেক মানুষ আর সদ্য বিবাহিতদের ভিড়। অনেক সদ্য বিবাহিত জোড়া এখানে এসেছিলো তাদের নতুন জীবনের শুরুর কিছু মুহূর্তকে এই সুন্দর পরিবেশে ক্যামেরা বন্দি করতে। আমিও করলাম ,এরকম এক দম্পতির সুন্দর মুহূর্তকে আমার ক্যামেরাবন্দি।
আপনি শেষ পর্যন্ত এই conservatory স্পট পাবেন, বিশেষ করে যদি আপনি দক্ষিণ প্রস্থান থেকে হাঁটা করছি। গ্রীষ্মের সময়, কনজার্ভেটরির সামনে পুকুরের ভাসমান লিলিস এবংপদ্ম গুলির বিভিন্ন প্রজাতির দ্বারা আপনি বিভ্রান্ত হতে পারেন। কিন্তু আমাদের সময় এখানে উপস্থিত ছিল হালকা কমলা আর গোলাপির মেশানো রঙের টিউলিপ। অসাধারণ সেই দৃশ্য।
খুব ঠান্ডা বাড়ছিল , মাঝে মাঝে বৃষ্টিও। তাই ভাবলাম ভেতরে ঢুকে দেখায় যাক না করা আমাদের জন্য অপেক্ষারত। এর প্রবেশ মূল্য আলাদা। ২০০ ইয়েন। প্রথম সারিতে ছিল অনেক রকমের গোলাপ আর জবা। আরো অনেক রকমের ফুল , যাদের নাম জানা তো দূর ,কোনো দিন চোখে পড়েনি।অনেক ফুল অনেক গাছ আবার আমাদের ভাড়াটে খুব সহজে দেখা যায়। যাদের এখানে এরা খুব যত্নে রেখেছে , এদের যে এখানে তেমন দেখা মেলে না তা আন্দাজ করলাম। শালুক এর সাথে আরো এরকম অনেক ফুল ছিল যা আমার চেনা। এছাড়া এখানে ছিল :ব্রোমেলিয়াডস (গ্রীষ্মমন্ডলীয় উদ্ভিদের একটি পরিবার, যেমন আনারস), ডেজার্ট এবং সাভানাহ উদ্ভিদ, সিকুলার, বাগানে, গ্রীষ্মমন্ডলীয় আলপাইন গাছপালা এবং আরো প্রায় 4,500 টি প্রজাতির ।
যদি আপনার লাঞ্চের প্রয়োজন হয় কিন্তু মাঠ ছাড়তে না চান তবে গোলাপ বাগান থেকে অনেক দূরে সেন্ট্রাল লন কাছাকাছি একটি ক্যাফে আছে। এটি একটি ক্যান্টিনের মত, যেখানে আপনি একটি ভেন্ডিং মেশিন থেকে আপনার টিকিট ক্রয় করে আপনার পছন্দ মতো খাবার কিনে খেতে পারেন।
দুর্ভাগ্যবশত, মেনু আইটেমের জন্য কোন ইংরেজি অনুবাদ নেই, তাই আপনি আপনার সম্ভাবনা নিতে ইচ্ছুক হতে পারেন … অথবা সাহায্যের জন্য কাছাকাছি কেউ জিজ্ঞাসা করুন! যেহেতু আমরা এমন দিনে এসে পৌঁছেছিলাম যে খুব ঠান্ডা আর বৃষ্টি হচ্ছিলো, তাই সেভাবে উদ্যানের মাঝে বসে সে ভাবে পরিবেশকে উপভোগ করার সুযোগ তেমন হয়ে ওঠেনি। কিন্তু যে কোনো রোদ ঝলমলে দিনে বা গ্রীষ্মের দুপুরে আদর্শ স্থান এই উদ্যান। যেখানে সবুজ গাছের নিচে বসে প্রকৃতিকে আপনি খুব বেশি ভাবে উপভোগ করতে পারেন।
বোটানিক্যাল গার্ডেরনের শেষ প্রান্তে দেখা হলো আরো কিছু নাম না জানা ফুলের সাথে। সেখানে ছিল বিশ্রাম নেওয়ার জায়গা সাথে বাচ্চাদের ছোট্ট একটা পার্ক। ফেরার পাঠের রাস্তাটা ছিল মনে রাখার মতো। গাছের সারি কোথাও যেন মিশে যাচ্ছে।
আমরা প্রায় ঠান্ডায় কাঁপছিলাম। সাথে আনা লিকার চা তখন যেন অমৃত সমান। এদিক ওদিক একটু ঘুরে , আবহাওয়ার ভবিষ্যৎ বাণী ইন্টারনেটে চেক করে তাড়াতাড়ি ঘরের দিকে হাঁটা লাগলাম। প্রানপনে সাইকেল চালাতে হলেও , উঁচু খাড়া রাস্তাতে , পা সাথ দিছিলো না। সুগাকুইন ইন্টারন্যাশনাল হাউস এ থেকে ৩ মিনিটের দূরে বেশ তেড়ে ফুঁড়ে হাওয়া আর বৃষ্টি শুরু হলো। মেয়ের বর্ষাতি সাথে নেওয়া হয়নি , তাই আমি ,ভাস্কর , যতটা প্রাণ বেচেঁ ছিল , লাগিয়ে দিলাম সাইকেল চালাতে। আধা ভিজে পৌছালাম ঘরে। যে কারণে এতো তাড়াহুড়ো করে বোটানিক্যাল গার্ডেন এ গেছিলাম, সেই লাইট শো আর দেখা হলো না। আফসোস হচ্ছিলো , কিন্তু কি আর করা যাবে। রাতে আবার বৃষ্টি কমতে সাইকেল চালিয়ে ৪ কিলোমিটার দূরে পৌছালাম বাঙালি রেস্টুরেন্ট এ। এখনকার খাবারের মধ্যে এক ইন্ডিয়ান প্লেট , যাতে দুরকমের তরকারি (আমিষ ও নিরামিষ ), নান,তান্দুরি,পাঁপড় ,দই আর লস্যি। আর আছে বিরিয়ানি প্লেট। সেদিন দু প্লেট নিয়ে হুমরি খেয়ে পড়লাম। শুধু খাবার কথা ভাবলেই মনে হয় কবে যে বাড়ি যাবো।জানিনা কতদিন এই দুই পদে মন ভরবে। আমরাও লাগাতার খোঁজে আছি নতুন কোনো ইন্ডিয়ান রেস্টুরেন্ট এর ।
পরের সপ্তাহ :
এই সপ্তাহে , মেয়ের স্কুল এ নতুন ব্যাচ , নতুন আটটেনডন্স বই দিয়েছে। সাথে মলমূত্র পরীক্ষার নোটিশ। সত্যি বাবা , এরা পারেও। কি বাজে সপ্তাহ। শুধু বৃষ্টির পূর্ভাবাস আর মন খারাপ। এক সপ্তাহ আগে থেকে জেনে গেলাম আগামী শনি রবিবার বৃষ্টি হবে। আর কি। এখানে আসা অবধি সেরকম ভাজাভুজি খাওয়া হয়নি। তা হবে কি করে , অলিভ অয়েল এ ভাজা খাওয়া আর তার ওপর না আছে কোনো গভীর পাত্রের । কিসে ভাজবো চপ , বড়া বা সিঙ্গারা। এরকম এ একদিন , সকালে মেয়েকে স্কুলে চলে যাওয়ার পর এদিক ওদিক ঘুরতে বেরিয়ে চোখে পড়লো একটা পট , তাও ইনডাকশন ওভেন এর। আহা , হাতে চাঁদ পাওয়ার মতো। বাড়ি এনেই আমাদের দুজনের শুরু হলো সিঙ্গাড়া বানানোর পরিকল্পনা। আমাদের নিচের তলায় ভাস্করের এক ইউনিভার্সিটি কলিগ থাকে Yang .অনেকদিন তাকে খাওয়ানোর প্ল্যান ছিল। ভাবনা আর করে ফেলা।
একদিন রাতে তাকে ডেকে ফেললাম , খাওয়ালাম সিঙ্গাড়া আর রাতের খাবার রুটি ,তড়কা। জানিনা তার কেমন লাগলো , chinese আবার সাথে সিঙ্গাড়া। ভাবা যায়। এসপ্তাহে যেহেতু জানতাম বৃষ্টি হবে , তাই ভাবলাম কাছে পিঠে কোথাও যাবো আর তারপর সোজা sanjo , Sanjo তে বৃষ্টিতেও ভয় নেই। পুরো মার্কেট টা ওপরে ছাউনি দেওয়া। যেমন ভাবনা তেমন কাজ,শনিবার সকালে উঠে দেখলাম বিকেল ৩-৪ তে থেকে বৃষ্টি শুরু। আমরা তাড়াতাড়ি বেরিয়ে পড়লাম যাতে বৃষ্টির আগেই কাছাকাছি ঘুরে ফেলি। ভেবেছিলাম চিড়িয়াখানা টা নয় সেরে ফেলি এই সুযোগে। কিন্তু ওই যে চিড়িয়াখানা , মনে হয় এখনো দেরি আছে। চিড়িয়াখানার বাসস্টপ এ নামতেই , সামনে হেইয়ান শ্রাইন এর কাছে নজর আটকালো। অনেক মানুষের ভিড়। মেলা বসেছে। হস্তশিল্পের মেলা। আর কে যায় চিড়িয়াখানা। সেই মেলাতে , অনেক রকমের হাতের কাজের জিনিস এর সাথে ছিল raw cafee , অনেক রকম জাপানীস খাবার, আরো কিছু। চিনামাটির কাপ প্লেট , ঘর সাজানোর জিনিস , ব্যাগ ,ঘড়ি , আরও আরো অনেক কিছু। একজন ভারতীয় দোকান ছিল , যে কিছু কিছু ইন্ডিয়ান ফুড , যেমন মুসুর ডাল ,ছোলা ,মটর,রাজমা ছিল , আর সাথে ছিল চা আর সিঙ্গারা। একটা ছোট্ট সিঙ্গারা ৩০০ ইয়েন।
লক্ষ্য করলাম আজ সবার হাতে একটা ছাতা। সবাই জানে আজ বৃষ্টি আসবে। বেশ মজার না। আমাদের দেশেও যদি ঠিক এরকম হতো। সব কিছু পূর্ব পরিকল্পিত। আসা করি আগামী দিনে আমাদের দেশ এরকম উন্নত হবে বৈকি।Sanjo যাওয়ার পথে দেখলাম দোতলা সিটি বাস। এটা প্রধানত পর্যটকদের জন্য।
এখন থেকে সোজা Sanjo .আর জানেনই তো Sanjo মানেই অনেক কেনাকাটা খাওয়া আর মজা।ভাবলেই আমার কলকাতার পার্ক স্ট্রিট আর মুম্বাই এর কোলাবা মার্কেটের কথা মনে পরে। যদিও Saanjo সব দিক থেকে অনেক উন্নত আর আকারে বিশাল ,তবুও , দেশ তো দেশ ই। তার কথা মনে আসলেই ভালো লাগে। আজ একটা দোকানে ইন্ডিয়ার কিছু জিনিস দেখলাম , তার মধ্যে আচার,আর কিছু মশলার মিক্স ছিল। তাদের মধ্যে অন্যতম কলকাতা কারি।
<<আগের পৃষ্ঠা :জাপান পর্ব ৭ পরবর্তী পর্ব :ক্রমশ
[…] << জাপান পর্ব ৮ ১৬ই এপ্রিল থেকে ২২শে এপ্রিল […]
You are my іnspiration, I һave few bⅼogs and very sporadically run out from post
:). “He who controls the past commands the future. He who commands the future conquers the past.” by
Ԍeorge Orwell.
Pretty nice post. I simply stumbled upon your blog and wanted to say that I’ve truly enjoyed surfing around your blog posts.
We fully expect more of the lady within the years into the future.