<< জাপান পর্ব ১৩ ১৯শে মে থেকে ২৭শে মে ,২০১৮
এখন মে মাসের মাঝামাঝি , গরমের লেশ মাত্র তো নেই এ , উল্টে সন্ধ্যে বা রাতের দিকে বেশ ঠান্ডা। মাঝে মাঝে ঘুরতে বেরোলে বেশ কেস খেতে হয়। যেরকম খেয়েছিলাম এই সপ্তাহে। মনে আছে যেদিন ,aoi masturi দেখতে গেছিলাম ,সেদিন একমাত্র , আমার ঘাম হয়েছিল। ভাবা যায় , আবহাওয়া এতটাই ভালো যে , গম কবে হয়েছিল মনে আছে। সেদিন দুপুরে , হাফ স্লিপ জামা পরেও সাইকেল চালিয়ে আসার সময় বেশ গরম লেগেছিলো। সেই প্রথম আর শেষ মনে হয়। এই সপ্তাহ তা একটু উষ্ণ , তবে ভারতের মতো কোনো ভাবেই না। আমার মা , গরমে খুব ভোগে। ভুগবে নাই কেন ! যা গরম তাতে , জল গরম করার দরকার পরে না। আগের বছরের মে জুন টা তো কলকাতাতেই কেটেছে , তাই স্মৃতি তা বেশ তাজা। মাঝে মাঝে মনে হয় , মা কে যদি এই দেশে আনা যেত , বা কলকাতা কে কিয়োটো বানানো যেত , মা আমার কি না খুশি হতো। যত সব অবাস্তব ভাবনা , কি বলেন। তবে দিনের মধ্যে ৫০% সময়ই আমার অবাস্তব ভাবনা তে কাটে। কি কি ভাবনা বলে , নিজেকে পাগল প্রতিপন্ন করার খুব শখ আমার নেই , তবে বেশ ভালো লাগে , এতো ভেজাল দুনিয়ার থেকে মন মাথাকে সরিয়ে কল্পনার জগতে থাকতে।
মাছ জিনিসটা আমার কোনো জন্মেই পছন্দের না। বাঙালি বলে অনেক অবাঙালি আমাকে অনেক সময় প্রশ্ন করে , “আরে তুমি তো বাঙালি , খুব মাছ খাও বুঝি “. বিশ্বাস করুন , মাছ দেখলে বেশ মুড অফ হয়। হ্যাঁ , মায়ের রান্না কিছু স্পেশাল মাছ আর বিয়ে বাড়ির মাছ ছাড়া আমি মাছ মুখে তুলিনা। নিজের এই অবস্থা অন্য কে কি দোষ দেব। অন্য বলতে বর আর মেয়ে। বর মাছ পছন্দ ও না আবার অপছন্দ না, মানে ওই। মাছ আমার ঘরে সপ্তাহে একবার এ হতো মুম্বাইতে ,শুধু মাত্র মেয়েকে অভ্যাস করানোর জন্য। কিন্তু মেয়ে !!!সে আমার সব বাজে গুন গুলো পরিমানে তিনগুন নিয়ে জন্মেছে। মাছ দেখলেই তার বমি আসে। মাছ রান্না হচ্ছে শুনলেই তার ও ওই এক , মুড অফ। তাই এসে অবধি জাপানে এখনো অবধি মাছ কিনি নি। একজন পরিচিত বললেন সামুদ্রিক মাছে অনেক গুন। সে ভাই আমিও জানি। ভাবলাম রোজ ওই ডিম-মাংস আর ছানা খেয়ে মেয়ে নিশ্চয় bore হয়েছে। এখানে সলমন মাছ খুব ভালো পাওয়া যায়। একদিন তাই কিনে আনলাম। লাল লাল। কেমন যেন। বাবা আর মেয়ের জন্য , আমার জন্য অবশ্য চিংড়ি ছিল। হা হা। বাবা মেয়ে কে প্রথম দিন কড়া করে ভেজে দিতে দুজনেই প্রায় ভালোভাবে খেলেন। কিন্তু দ্বিতীয়দিন আবার যেই সে মাছ আনলাম , দুজনে যা বেজায় মুখ দেখালো , সে কি বলবো। তাই ভাবছি আর কিনবো না। কেনো -রান্না করো তার ওপর যারা খাচ্ছেন , তারা একটুও খুশি নন। আমার এখানে এসে পরিচিত এক বাঙালি ৬ মাস ওই স্যামন মাছ ভাজা খেয়েই নাকি দিন চালিয়ে দিলেন। কি ভালো। আর আমার !!
এখানে জাপানীস রা বেশি মনে হয় রান্না বান্না করেন না। কারণ এখানে ফুড মল গুলোতে সব রকমের খাবার রান্না করা (মানে ওই হলো সেদ্ধ ), প্যাকেট বন্দি পাওয়া যায়। কি চান বলুন , ইনস্ট্যান্ট নুডল , সাথে বিভিন্ন রকমের মাছ , আমিষ নিরামিষ সুসি , আরো অনেক কিছু যার নাম আমার জানা নেই। আমরা হলাম বাঙালি , এখানে এসেও রান্না আর রান্না।জাপানের নেই নেই সবজি বাজারেও , ফুলকপি বাঁধাকপি , ছাড়া , বাঙালির চোখ ফুটিয়ে তুলে আনি সপ্তাহের সাত পদ রাঁধার উপকরণ। ছোটবেলায় মাথায় খেলা ঘুরতো-তারপর পড়াশোনা , চাকরি আর এখন দিনান্তে , আগামী দিনের তিন বেলার খাবার পদ গুলো ঠিকঠাক সাজিয়ে নিতে পারলেই , যেন জিতে গেছি। ঢেঁড়স এর ২-৩ পদ /ফুলকপির দু পদ /বাঁধাকপি ও তরকারি বা পকোড়া / ধোকা /ঘুগনি /তারকা/রাজমা/আলুর পরোটা/উচ্ছে বেগুন /শসা র তরকারি /গাজরের তরকারি এসব ঘুরে ফিরে সপ্তাহ কেটে যায়। সাথে ডিম এর কারি কখনো বা এগ চিকেন রোল , কখনো বিরিয়ানি বা ফ্রাইড রাইস এর সাথে চিকেন কষা বা গ্রীলড চিকেন। লিখছি খুব মজা লাগছে সত্যি , কিন্তু বিশ্বাস করুন , বেশ খাটনি লাগে , না রান্না করতে নয় , মেনু ঠিক করতে।
ওসাকা থেকে এসে আমরা বেশ ক্লান্ত ছিলাম। তাই এবার দেখিও নি কোথায় যাবো। শুক্রবার রাতে একবার ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ এর লিস্ট টা চেক করে দেখলাম , কোথায় কোথায় বাকি। তার পর উবু দশ করে একটা জায়গা বেছে নিলাম। জায়গাটা বেছেনিলাম কারণ এটা যে এই স্থানটি কিয়োটো সিটি ট্রাভেল এ বেশ জ্বলজ্বল করছিলো। আরো দেখলাম এই মন্দিরে একটা ঝর্ণা জাতীয় কিছু আছে , বেশ মজাদার, তার কাহিনী। হ্যাঁ ঠিক হলো এ সপ্তাহের আমাদের গন্তব্য কিয়মইজুডেরা টেম্পলে Kiyomizudera Temple ,কিয়োটো শহরে।
শনিবার বেশ ফিলফিলে জামা পরে , এবার পড়েছিলাম জাপানীস একটা টপ। অনেকদিন ভাবছিলাম , এই আবহাওয়াতে বোধহয় আর এরকম ফিলফিলে জামা পড়া যাবে না , কিন্তু এই সপ্তাহে বেশ গরম থাকায় ভাবলাম , এই জামাটাই পড়ি। কে জানতো , কি আছে কপালে। মেয়ে আর বর যথারীতি ঠিক থাকে জামার সাথে জ্যাকেট ও পড়েছিল হালকা। মোবাইল এ চেক করে নিলাম দুপুর এ তাপমাত্রা ১৮ থেকে নেমে ১৭ হবে, তার পর আর অত খেয়াল হয়নি। অতিরিক্ত বিশ্বাস বশত কোনো জ্যাকেট ও নিলাম না। বেরিয়ে পড়লাম দুপুর ১ টার কাছাকাছি। ৫ নম্বর বাস ধরে GION এর আগের স্টপ এ নামলাম। সেখান থেকে ২০৬ বা ১০০ দুটো বাস এ ওখানে যায়। আমরা চড়ে বসলাম ২০৬ এ। নেমে পড়লাম Kiyomizu-michi বাসস্টপ এ। সেখান থেকে ১০ মিনিট এর চড়াই রাস্তা চলে গেছে মন্দিরের দিকে। রাস্তায় চোখে পড়লো , rented kimono র দোকান অনেক। এই প্রথম , এতো রেন্টেড কিমোনো দোকান দেখলাম , আর তেমন ভিড়। বুঝলাম না বুঝেও ভালো জায়গায় চলে এসেছি। আমাদের বাঙালি রা যেমন পুজো দিতে গেলে শাড়ী পরে , এখানে জাপানীস মহিলা রা কিমোনো পরে।
দুপাশে অনেক দোকান , খাবারের আর স্মারক আর অনেক কিছুর। এতো ভিড় আর এতো আকর্ষণীয় জায়গা ,কিয়োটো তে অনেকদিন পরে দেখলাম। ফটো তুলতে তুলতে এগিয়ে যাচ্ছিলাম , আর বার বার মনে হচ্ছিলো মেয়ে না হাত ছেড়ে হারিয়ে যায়।
অসাধারণ অসাধারণ অসাধারণ। নিজের চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা যাবে না , এই মন্দিরের অবস্থান সৌন্দর্য্য। আমি আজ ক্যামেরা আনিনি , ভেবেছিলাম সেরকম জায়গা নয় , কে ক্যামেরা বইবে। কিন্তু মনে হলো খুব ভুল হলো।
এগিয়ে গেলাম মন্দিরের দিকে , নিজের চোখে যা দেখলাম ,তার সাথে এই মন্দিরের ইতিহাস আর কেন এটি ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সেটা একটু বলে নি —
প্রথমেই বলি , এই মন্দির খোলা থাকে প্রতিদিন সকল ৬ টা থেকে সন্ধ্যে ৬ টা। শুধু মাত্র হেমন্ত ও বসন্ত কালে এই সময় সীমা বাড়িয়ে রাত ৯টা অবধি করা হয়। প্রবেশ মূল্য মাথাপিছু ৪০০ ইয়েন।
Kiyomizudera (清水寺, literally “Pure Water Temple”) কিওমিজউদেরা (清水寺, আক্ষরিকভাবে “বিশুদ্ধ জলের মন্দির”) জাপানের সবচেয়ে সুপ্রসিদ্ধ মন্দিরগুলির একটি। এটি 780 সালে অটিওয়া OTOWA জলপ্রপাতের কাছে , কিয়োটো পূর্ব প্রান্তের বনভূমি পাহাড়গুলির মধ্যে স্থাপিত হয়েছিল, এবং এর নামটি ও ওই জলপ্রপাতের বিশুদ্ধ জলের নাম থেকে এসেছে। এই মন্দির মূলত হোসো সম্প্রদায়ের সাথে যুক্ত ছিল, জাপানি বৌদ্ধধর্মের প্রাচীনতম বিদ্যালয়গুলির মধ্যে একটি, কিন্তু 1965 সালে এটি নিজস্ব কিটা হোসো সম্প্রদায় গঠন করেছিল। 1994 সালে, মন্দিরকে ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্যের স্থানগুলিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল।
Kiyomizudera সেরা তার কাঠের মঞ্চের জন্য,যেটা তার প্রধান হল থেকে বাইরে, নীচের পাহাড় থেকে 13 মিটার ওপরে অবস্থিত।এই মঞ্চটি দর্শকদের বসন্ত এবং হেমন্তের চেরি এবং ম্যাপেল গাছগুলির অপূর্ব রঙের একটি চমৎকার দৃশ্য এবং সেইসাথে কিয়োটো শহরটির দূরত্বের একটি চমৎকার দৃশ্য প্রদান করে।প্রধান হলের মধ্যে রয়েছে , মন্দির এর পূজার প্রধান উপাদান, এগারো মুখোমুখি একটি ছোট মূর্তি, হাজার সশস্ত্র Kannon ।
প্রদত্ত এলাকার বাইরেমন্দিরের প্রবেশপথের চারপাশে, অন্য একটি মন্দিরের ভবনের পাশে একটি স্তম্ভ, তিনটি তলাবিশিষ্ট প্যাগোডা, একটি সংগ্রহস্থল, বৃহত প্রবেশদ্বার এবং জিউগুদো হল( যা বুদ্ধের মায়ের জন্য উৎসর্গীকৃত) রয়েছে এবং যেখানে একটি ছোট প্রবেশিকা ফি দিয়ে যে কেউ একটি মা এর গর্ভপ্রতীক তার পিচ কালো বেসমেন্ট ভাসতে পারেন।
Kiyomizudera এর প্রধান হল পিছনে Jishu Shrine, প্রেম এবং matchmaking দেবতা নিবেদিত একটি মঠ স্থান। মন্দিরের সামনে দুটি পাথর রয়েছে, 18 মিটার দূরে অবস্থিত। আপনাকে চোখ বন্ধকরে সফলভাবে এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে আপনার ভালোবাসার মানুষটিকে খুঁজে নিতে হবে । আপনি একজন অন্য ব্যাক্তিকে পথ নির্দেশিকা বা নির্দেশক হিসাবে নিতে পারেন, তবে এর অর্থ এটাই যে আপনার মধ্যস্থতাকারীকেও আপনার ভালোবাসার জীবনেও প্রয়োজন হবে।
কুইমিজউডারের প্রধান হলের ভিত্তিতে ওটোওয়া জলপ্রপাত অবস্থিত। তার জলের তিনটি পৃথক প্রবাহ মধ্যে ভাগ করা হয়, এবং দর্শক তাদের থেকে পান করার জন্য দীর্ঘ খুঁটি সঙ্গে সংযুক্ত কাপ ব্যবহার। প্রতিটি প্রবাহের জলকে একটি ভিন্ন উপকার বলে মনে করা হয়, যথা দীর্ঘায়ু, স্কুলে সাফল্য এবং সৌভাগ্যবান প্রেমের জীবন। যাইহোক, তিনটি প্রবাহ থেকে জল পান করা কে লোভী বলে মনে করা হয়।
ঠিক এই জায়গাটা তে আমার মনে হয়েছে , কেন এতো ভিড় এই মন্দিরে। আমরা কি চাই আমাদের জীবন থেকে। একজন ভালোবাসার মানুষ বা দীর্ঘায়ু বা উন্নতি। যে মন্দির আপনাকে এই একটির পথ দেখিয়ে দেয় , সেখানে তো ভিড় হবেই। জাপানীসরা যে আমাদের ভারতীয় দের মতো বেশ ধার্মিক ও কুসংস্কারে বিশ্বাসী , তা অনেক মন্দির ঘুরে আমার ধারণা হয়েছে।
ভাস্কর বলেছিলো আমরা তিনজনে তিন টি প্রবাহ থেকে জল খাবো। কিন্তু আমি মানিনি। অনেক যোগ বিয়োগ করে , আমি ওই জল টাই খেয়েছিলাম যেটা ও খেয়েছিলো আর মেয়েকে মাঝের প্রবাহ থেকে জল। যে লম্বা হাতল দেওয়া কাপ এ করে আমরা জল খেলাম সেটা খাবার আগে ও পরে একটি নির্বীজনকারী
মেশিনের মধ্যে রাখা হয়। যাতে একে অন্যের রোগ পরিবহন না করে। আর জলপ্রপাতের জল কেও পর্যটকদের কাপ এ পোঁছানোর আগে পরিশোধিত হয়ে আসতে হচ্ছিলো। এই জায়গায় মার্ খেয়ে যায় ভারত। জাপান ধর্ম -কুসংস্কার এর সাথে সাথে নিজের দেশ বা অন্যের দেশের মানুষের খেয়াল রাখে, তাদের স্বাস্থ্যের কথা ভাবে। যা আমাদের দেশে বিরল দৃশ্য। আসল কথা জাপান ভালো বসে তার দেশবাসী কে আর তার দেশবাসী ভালোবাসে তার দেশ কে মনে প্রাণে। একথা শুধু মুখের কথা নয়। কথা যখন হচ্ছে বলি , একবার দুবার নয় বহুবার দেখেছি এ দেশের লোকেরা কি ভাবে তার দেশ কে পরিষ্কার রাখে। আজ তার প্রমান পেলাম। এই ঝর্ণা দেখে পাশের মন্দিরে যাওয়ার পথে দেখলাম এক দৃশ্য। মন্দির টি অনেক উঁচু পাহাড়ে অবস্থিত। তাই পাশ দিয়ে নেমে গেছে জঙ্গল র খাদ। যদিও একটা boundry রয়েছে। এক ব্যাক্তিকে দেখলাম , সস্ত্রীক -বাচ্চাকে নিয়ে আমাদের আগেই যাচ্ছিলো। হঠাৎ করে দেখলাম , সে পাশে গিয়ে হাত বাড়িয়ে জঙ্গলের ভেতর থেকে কি একটা কাযোগের ন্যায় তুলে অন্য আর নিজের ব্যাগ থেকে একটা প্লাষ্টিক ব্যাগ বের করে তাতে তুলে রাখলো। এবার বলুন তো , কেন এই দেশ এতো পরিষ্কার। যে নোংরা সে করেনি , না করেছে তার পরিবার , তবু সে সেই নোংরাকে পরিষ্কার করে গেলো। আমরা খালি আমাদের দেশের ব্যবস্থা কে দোষারোপ করি , নিজের মধ্যে দশ খুঁজে বেড়াই না। আমার লেখা পরে নিশ্চয় ভাববেন , জাপান এ আছি তাই এসব বলছি , না আমি একদন এ আমার দেশের বিরোধী নয়। সব সময় মনে হয় আমার দেশ ও যদি এরকম হতো , ঠিক যেমন আমি জাপানে বিদেশী হয়েও জাপানের সৌন্দর্য্য উপভোগ করছি , তেমনি কোনো বিদেশী আমার দেশে গিয়ে তার সৌন্দ্যর্য কে খুঁজে পাক।
আরো একটু এগিয়ে গেলাম ঝর্ণা ছাড়িয়ে , প্রধান হল ছাড়িয়ে ,সবুজ গাছের মাঝে যে মন্দিরের মতো জিনিস তা দেখা যাচ্ছে তার দিকে। দেখলাম তা হলো একটা মন্দিরের চূড়ার ন্যায় একটা জায়গা। যেখানে বসে অনেক ছবি নিলাম। এবার ফেরার পালা।
মাঝে একবার ও ঠান্ডা লাগছে মনে হয়নি , কিন্তু হঠাৎ করে তাপমাত্রার সাথে সাথে ঠান্ডা হাওয়া বইতে শুরু করলো। না , দেখলাম কেস জন্ডিস। মেয়েও বলা শুরু করলো , মা ঠান্ডা লাগছে। ভাস্কর বললো , চলো এবার বেরিয়ে পড়ি , নইলে ঠান্ডা লেগে যাবে। এই যে ঠান্ডা লেগে যাবে কথাটা সেদিন আমার হাড়েহাড়ে টের পাওয়া হয়েছিল। এখন থেকে বেরোতে আমাদের আরো ২০ মিনিট লেগে গেলো। হাঁটতে হাঁটতে বেশ বুঝলাম আর পারা যাচ্ছে না। ভাস্করের কথায় , চলো sanjo , সেখানে Mall থেকে একটা সোয়াটার কিনে পরে নাও। বেশ। কিন্তু উঠে পড়লাম ভুল বাস এ। যে জন্য পৌঁছাতে ১৫ মিন লাগতো তা লাগলো ৫০ মিনিট। ততক্ষন এ বাস এ ঠান্ডা অনেকটা কম লাগছিলো , তাই মন বদল করে ফেলেছি ইতিমধ্যে যে সোয়াটার কিনবোনা। যদিও তা বরকে বলিনি। কথা মতো Mall ঘুরেও আমি সোয়াটার কিনিনি। আর না বর কে বুঝতে দিয়েছি। সেদিন খেয়েছিলাম Meena Mall এর Diwali বলে একটা রেস্টুরেন্ট এ। উফফ সে কি জঘন্য খাওয়া। জাপানীস চালে বিরিয়ানি আর তার সাথে সব তরকারি তে অতিরিক্ত মিষ্টি। গা তা বমি দিয়ে উঠলো। সে যাই হোক। যখন ফেরার সময় হয় , mall থেকে বেরিয়ে ৫-৭ মিনিট আমি বাসস্ট্যান্ড এ দাঁড়িয়েছিলাম। আর ওই ৭ মিনিট এ বুঝতে পেরেছিলাম , লোকে ঠান্ডায় কেন মারা যায় !!! সে যেন হাড় কাঁপুনি ঠান্ডা , সহ্যের বাইরে। পাশ থেকে ভাস্কর রীতিমতো রাগবশত কথা বলে চলেছিল। বাড়ি ফিরি বরের কোট পরে , সাথে বমি বমি ভাব। না শুধু ভাব এ নয় , বাড়ি এসে ওই বিরিয়ানি গলায় আঙ্গুল দিয়ে বমি করেছিলাম আর ওই বিরিয়ানির নাম রেখেছি বমি বিরিয়ানি। ছাইপাশ। এই জাপানের এই একটাই জিনিস আমার ভালো লাগে না , খাওয়া। আমার পছন্দের খাওয়া মেলা ভার। যাক এভাবে কেটে গেলো আরও কিছু দিন। আগামী সপ্তাহে আমরা যাবো টোকিও। সে এক বিশাল পরিকল্পনার ব্যাপার ,সাথে বুলেট ট্রেন আর ঝা চকচক টোকিও।
<< জাপান পর্ব ১৩ জাপান পর্ব ১৫ >>
*-* পর্ব ১৪ :CopyRight @ M K Paul, June,2018 *-*
[…] জাপান পর্ব ১৪ […]
Very interesting and nicely written 🙂
কলকাতা কিয়োটো নয়, লন্ডন হবে। এটা খাওয়া special episode. বাকিটা অনবদ্য আমার বন্ধুর মতো।
তোর সাথ থাকলে সব হবে @ Apurba
[…] << জাপান পর্ব ১৪ ২৮ শে মে থেকে ২ জুন […]