জাপান পর্ব ১৫ : টোকিও শহর -বুলেট ট্রেন

1
2311
Shinkansen Nozomi 700 @ M K Paul

<< জাপান পর্ব ১৪                                                                            ২৮ শে মে থেকে ২ জুন

এই সপ্তাহটা একটু চাপের , পরিশ্রমের দিক থেকে না মনের দিক থেকে। ২ তারিখে ঠিক হয়েছে , টোকিও যাবো। কিন্তু এখনো টিকেট কাটা হয়নি। তবে হবে। বার বার সিনকানসেন বুলেট ট্রেন এর টাকার অঙ্ক দেখে , পরিকল্পনা পাল্টাবো ভাবছি। আমাদের নিচের এক ভারতীয় , খুব সস্তায় বাস এ যাচ্ছে টোকিও। কিন্তু আমার দ্বারা বাস তাও ৮ ঘন্টার সম্ভব না। আমার জন্যই হয়তো মেয়েটাও মানসিক ভাবে ছোট থেকে দুর্বল হচ্ছে। এটা পারি না ওটা পারিনা , মেয়েও তাই শিখছে। মনের জোর শরীর এর বল কোনোটাই ঠাকুর আমাকে দেয়নি। ঠাকুর কে দোষ দিয়ে নিজেকে বাঁচানোর চেষ্টা আর কি। সর্ব ক্ষেত্রে ভোগে আমার বর বাবাজি। বৌ র জন্য তার টাকা বাঁচানো প্রায় অসম্ভব।
২ তারিখ টি ৫ তারিখ অবধি টোকিও তে হোটেল বুক করা হয়ে গেছে। তাই যাবো তো অবশ্যই , কিন্তু। ভাবুন , ছোট বেলায় যখন জাপানের বিষয়ে পড়তাম , তো কি পড়তাম ! জাপানের পরমাণু বোমায় শেষ হয়ে যাওয়া দুটো শহর ‘হিরোশিমা -নাগাসাকি’, ভূমিকম্প, আর বুলেট ট্রেন। জাপানে এসে বুলেট না চড়লে হয় ! তাই টিকেট কাটা হলো জাপান মুদ্রায় ৬০০০০ টাকার কাছাকাছি , শুধু কিয়োটো থেকে টোকিও আর টোকিও থেকে কিয়োটো , আসা আর যাওয়া বুলেট ট্রেন এ। এক প্রকার নিশ্চিন্ত হলাম ।

বুলেট ট্রেন এর টিকিট

এ সপ্তাহে সব দিন গুলো শুধু জামা কাপড় আর খাবার গোছাতে বেশি সময় গেলো। এ সপ্তাহে যে তো আরো ভালো কাজ হলো , সে হলো আমার মেয়ের সাইকেল শেখা আর মেয়ের স্কুল এ মা -মেয়ের কিছু অতুলনীয় মুহূর্ত (প্যারেন্ট টিচার মিটিং ডে ) .এই জাপান দেশ টি অন্য অনেক দেশের থেকে অনেক কিছুতে অন্যরকম। যদিও আমি ভারত ছাড়া এই নিয়ে দ্বিতীয়বার নতুন দেশে এসেছি। তবে বই পরে বা অন্য মাধ্যমে যা তথ্য ছিল, তাতে জাপান অন্য অনেক দেশের থেকে অনেক ভাবে অন্যরকম ও অনেক শ্রেয়। তার একটি হলো এই সাইকেল ব্যবস্থা। এই দেশে অপরাধমূলক কাজ কর্ম এতটাই কম যে পুলিশ রা সারাদিন কেন সারা বছরে একটি অপরাধী কে ধরে বেঁধে আনে। এখানে পুলিশ রা অন্য কোনো অপরাধ মানে চুরি ডাকাতি খুন ধর্ষণ , (যা আমাদের দেশে প্রতি মিনিটে ডজন খানিক হয় ) ছেড়ে সাইকেল এর লাইসেন্স -ইন্সুরেন্স -হেলমেট এসব নিয়ে বেশি মাথা ঘামাই। সাইকেল ব্যাপার টা জাপানীস দের জীবনে ওতপ্রোত ভাবে যুক্ত। ছোট কচি বাঁচা থেকে ৮০ বছরের বুড়ো বুড়ি সবাই সাইকেল চালায় , তাও আবার বিভিন্ন ধরণের। আগেও বলেছি এখানে ছোট বাচ্চা দের নিয়ে যাওয়ার জন্য অনেক রকমের ক্যারিয়ার পাওয়া যায় , যা সাইকেল এর সামনে ও পেছনে লাগানো যায়। সেগুলো যেমন নানা ধরণের তেমনি সেই ক্যরিয়ার লাগানোর জন্য সাইকেল ও নানা ধরণের। ক্যরিয়ার এ বাচ্চা নিয়ে যাওয়ার জন্য , বাচ্চার ওজন অনুযায়ী ক্যারিয়ার আর সেই অনুপাতে সাইকেল এর বহন যোগ্য ক্যরিয়ার স্ট্যান্ড।এরা সাইকেল নিয়ে ও এতো গবেষণা করেছে যে বলার নয়, আর সত্যি বলতে কি , কোথাও কোনো ত্রুটি নেই।

দু দিকের ক্যরিয়ার এ মালপত্র বাহন করার জন্য বাক্স এর ন্যায়
দু দিকের ক্যরিয়ার এ বাচ্চা ক্যারি করার জন্য সাথে বৃষ্টি থেকে বাঁচার উপায়,মোটর যুক্ত সাইকেল
দু দিকের ক্যরিয়ার এর একটি বাচ্চা ক্যারি করার জন্য,মোটর যুক্ত সাইকেল
দু দিকের ক্যরিয়ার এর একটি বাচ্চা ক্যারি করার জন্য , মোটরবিহীন সাইকেল
দু দিকের ক্যরিয়ার এ বাচ্চা ক্যারি করার জন্য ,মোটর যুক্ত সাইকেল
এটি বাচ্চাদের সাইকেল নয় , বড় দের , এটা ফোল্ডেবল সাইকেল

সব বাচ্চা রা সাইকেল এ ক্যরিয়ার এ মতই হেলমেট সহ বসে , সাথে আমাদের দেশের চার চাকার মতো , সাইকেল ক্যরিয়ার সিট্ এ থাকে সিট্ বেল্ট। কি করে বলুন তো এবার এখানে কোনো দুর্ঘটনা হবে! এরা যে তার কোনও অবকাশ এ রাখে না। আমার মেয়ের জন্য আমরা একটা ছোট্ট সাইকেল কিনেছি , সে সেটি একদিন রাতে এক পা দু পা চেষ্টা করে করে চালিয়েই ফেলেছে। আমরা সত্যিই খুব খুশি। মেয়ের স্কুল এ গেলে আমি অনেক রকম সাইকেল দেখতে পাই , যেখানে সব সাইকেল আরোহী মা রাই বিশেষত। আর বেশির ভাগ সাইকেল এ ইলেকট্রনিক্স বা ব্যাটারী দিয়ে চলে।

সাইকেল ক্যরিয়ার সিট্ এ বসার হেলমেট

এখানে mall বা সাইকেল এর দোকান গুলো দেখলে প্রথম প্রথম প্রায় চমকে উঠতাম। সাইকেল এর দাম ২০০০০ ইয়েন থেকে শুরু হয়ে ২ লক্ষ ইয়েন অবধিও আমার নজর এ পড়েছে। আমার যাতায়াতের রাস্তায় বড় বড় চার চাকার শোরুম এর সাথে সাথে সাইকেল এর mall ও আছে Ashi .

Ashi Cycle Shop

এখানে পুলিশ বা অপরাধ নিয়ে কথা বলছিলাম , হা হা। আমাদের সুগাকুইন ইন্টারন্যাশনাল হাউস এর নোটিশ বোর্ড এ এই সপ্তাহে একজন ব্যাক্তি র ছবি most wanted বলে ছাপা হয়ে ছিল। জানেন কি তার দোষ। তার দোষ সে সঠিক ডাস্টবিন এ ময়লা ফেলেনি এবং সে হয়তো রাস্তা তে ময়লার ব্যাগ ফেলে গেছে। সিসিটিভি ক্যামেরা তে তাকে বন্দি করা হয় এবং সব জায়গায় তার ছবি মোস্ট ওয়ান্টেড বলে ছাপা হয়। সত্যি , এযেন আজব দেশ। তাই না। একদন ছোট বেলার গল্প আজব গাঁয়ের মতো। মাঝে মাঝে মনে হয় এই জাপানীস রা আমাদের দেশে গেলে ঠিক কি মনে করে !!! ওরা কি ভয় পেয়ে যায় , না?

Most Wanted

এই বুধবারে ছিল প্যারেন্ট টিচার মিটিং , সাথে চার্চ ডে -অরিগামি আরো অনেক কিছু। আসলে এখানে স্কুলে মাঝে মাঝেই কিছু না কিছু হয় , যেখানে এরা চেষ্টা করে বাচ্চা আর তার মা কে এক সাথে আনতে। আসলে একটা দিন বাচ্চারা কি কি করে স্কুলে সেটাই তার মা কে দেখানো। মাঝে মাঝেই অনেক রকম অনুষ্ঠান হতে থাকে স্কুলে ,এরা চায় বাচ্চারা স্কুলে মজা করুক , তাই কোনো দিন পিকনিক , কোনোদিন রান্না , কোনো দিন স্কুলেই চিড়িয়াখানার আয়োজন তো কোনো দিন সাঁতার কাটা। আমার যেতে একটু দেরি হয়ে গেলো , যতক্ষনে পৌছালাম , ওদের স্কুলে ঢুকে খেলার সময় ওরা ঠিক কি কি করে সেটা দেখা হয়ে ওঠেনি , এর পর সবাই গেলাম চার্চ ঘরে। যেকানে যীশুখৃষ্টের মূর্তি , সবাই ঢুকতেই এক এক করে প্রণাম করে ঢুকলো। তার পর , সিট্ এ গিয়ে বসে শুরু হলো প্রার্থনা। আমার জন্য ছিল ইংলিশ এ অনুবাদ করা প্রার্থনার সুর। কতটা আন্তরিক এরা এখানেই প্রমান হয়। পোপ এর জামা পরে ঘরে ঢুকলেন স্কুল এর প্রধান। বাবি র ক্লাস টিচার পিয়ানো বাজিয়ে শুরু করলেন প্রার্থনার সুর। মেয়ের সব মুখস্থ। ভালো লাগলো এই অভ্যাস দেখে। কিছু বুঝতে পারলাম না ঠিক এ সেই গানের এক লাইন , কিন্তু এতো সুন্দর সুর , মন ছুঁয়ে গেলো।

Church Room

এর পর সবাই মিলে গেলাম প্রধান হল ঘর এ। এখানে ছিল আজ মা ও বাচ্চাদের অরিগামি শেখানোর ক্লাস। দিদিমনি বোর্ড এ শেখাতে থাকলো আর আমি আমার বাবি বানালাম , ফুল, প্রজাপতি, পাতা আরো অনেক কিছু।

Origami

এর পর ছিল , বাচ্চাদের নাচ , তাদের মা এর উদ্যেশে। ওহ , কি যে ভালো লাগার মুহূর্ত , বলে বোঝানোর নয়। নাচ গান ছন্দ সুর এই জিনিস গুলো এমনই যে তা কোনো ভাষার অপেক্ষা রাখে না। শুধু সুন্দর সুর আর বাচ্চাদের আনন্দ- নাচ-উপভোগ চোখ মন জুড়ে ছড়িয়ে পড়লো। মানে বোঝার চেষ্টা একবার ও মস্তিস্ক করেনি। এর পর মা দের ছিল টিচার এর সাথে মিটিং আর বাচ্চা দের মুভি টাইম। অন্য সব বারের মতো এবারেও আমার আর বাবির দিদিমনি র কথার অনুবাদের মধ্যস্ততার দায়িত্বে ছিল আমার জাপানীস বন্ধু আইক।

শনিবার সকাল ১০ টার বুলেট ট্রেন। আমি বেশ খুশ মেজাজ। সব রকম গোছগাছ খাবার বাক্সপেটরা নিয়ে একদম তৈরী হয়ে বেড়িয়ে পড়লাম টোকিওর উদেশ্যে। সুযাগকুইন থেকে ৮ নম্বর বাস ধরে মাৎসুগাসাকি স্টেশন। সেখান থেকে এক্সপ্রেস ট্রেন এ চেপে ২৫ মিনিটে কিয়োটো স্টেশন।

মাৎসুগাসাকি স্টেশন টিকিট মেশিনের সামনে
এক্সপ্রেস ট্রেনের প্লাটফর্ম এ অটোমেটিক সেফ ওয়াল এর ভেতরে ট্রেন

কিয়োটো স্টেশন যেন এক গোলক ধাঁধা। নিচের তলায় প্লাটফর্ম এর সাথে সাথে হাজারো দোকান , ওপরেও তোলা গুলোতেও অনেক দোকান , একদম মলের মতো।

Incredible India বিজ্ঞাপন কিয়োটো স্টেশন এ

কি নেই এখানে , কত রকমের ট্রেন যে এ স্টেশন এ চলে তা আমার জানা নেই। JR Railways মানে জাপান রেল, এছাড়া অনেক বেসরকারি কোম্পানির বিভিন্ন রকমের ট্রেন এখানে চলে আর চলে বুলেট। বুলেট ট্রেন এখানে সিনকানসেন নাম পরিচিত। স্টেশন এ পৌঁছাতে , দিক নির্ণয় এর চিহ্ন দেখে দেখে পৌঁছে গেলাম আমাদের ট্রেন এর উদ্যেশে। বুলেট ট্রেন এর বিভাগ তা একদম আলাদা। এখানে সব ট্রেন এ আমাদের এয়ারপোর্ট এর প্লেন এর আসা যাওয়ার টাইম টেবিল র মতো ডিসপ্লে স্ক্রিন এ দেখানো হয়।

Shinkansen Line
Shinkansen track

আমাদের বুলেট ট্রেন এর নাম Nozomi (のぞみ, “Wish) , যেটি সব থেকে দ্রুতগতিতে চলে এবং সব থেকে ব্যয়বহুল বুলেট ট্রেন। কিয়োটো থেকে টোকিও যেতে মাত্র ২ ঘণ্টা এবং ২0 মিনিটের সময় নেয়। যেকানে এক্সপ্রেস ট্রেন ৮ ঘন্টা (কোনো সরাসরি ট্রেন নেই ) আর বাস নেয় ৭ ঘণ্টা। এছাড়া Hikari ও Kodama বলে আরো দুটো সিনাকনসেন এই পথে চলে , যারা Nozomi থেকে কয়েক মিনিটের দেরিতে গন্তব্যে পৌঁছায় এবং এরা আরো কয়েকটি স্টেশন এ স্টপ নেয় বা দাঁড়ায়। জাপানে যারা ঘুরে আসেন , তাদের জন্য এই বুলেট ট্রেন খুব সস্তা তে একটা ৩ দিনের পাস দেয় , যেটা আমরা পাইনি , কারণ আমরা এখনকার বর্তমান বাসিন্দা , কোনো পর্যটক নয়। দুর্ভাগ্য , বা সৌভাগ্য , যেটা মনে করলে মন ভালো থাকে সেটাই , আর কি।ট্রেন এসে দাঁড়ালো ঠিক সময় এ এবং ছাড়লো ও যথারীতি ঠিক সময় এ।ট্রেন গুলো স্টেশন এ ঠিক এক মিনিটের জন্য থামে। অটোমেটিক দরজা খোলে, আবার বন্ধ হয়। যদিও স্টেশন এ একজন গার্ড থাকে সব ঠিক আছে নাকি তা চেক করার জন্য। ড্রাইভার এর কাছে থাকে সেকেন্ড এর কাউন্টার। এক সেকেন্ড দেরিও এদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনীয় ব্যাপার।

Bullet train Platform

Nozomi shinkansen পরিষেবাগুলি ১৪ই মার্চ, ১৯৯২ তারিখে ৩০০ সিরিজ এর ট্রেন সেট দিয়ে ২৭০ কিলোমিটার / ঘণ্টা বেগে প্রথম শুরু করা হয়। মার্চ ১৯৯৭ থেকে টোকিও-হাকাটা নোয়াওমি সার্ভিসগুলিতে ৩০০ কিলোমিটার / ঘন্টা সর্বোচ্চ গতিতে চলা ৫০০ সিরিজ এর ট্রেন শুরু করা হয় এবং যা এই দূরত্ব অতিক্রম করতে সময় নেয় মাত্র ২ ঘন্টা ১৭ মিনিট।
আমরা চড়েছিলাম Nozomi এর ৭০০ নম্বর সিরিজ এ , যেটি ১৯৯৯ সালে প্রথম চালু হয়। ১ম জুলাই, ২০০৭ থেকে N700 সিরিজ ট্রেন চালু করা হয়েছিল, প্রাথমিকভাবে চারটি দৈনিক রাউন্ড ট্রিপ রান দিয়ে। নোয়াজি সার্ভিসেস (টোকিও-হাকাটা) এর মাধ্যমে ২০০৯ সাল নাগাদ এন ৭০০ সিরিজ ট্রেন দ্বারা পরিচালিত হয় এবং ২01২ সালের মধ্যে নিয়মিত নাওমি সার্ভিসগুলি N700 ট্রেন দ্বারা পরিচালিত হয়।

N700 Nozomi

Nozomi সিনকানসেন ভিডিও

বুলেট ট্রেন এর ভেতরের ভিডিও

বুলেট ট্রেন এর ভেতর

ট্রেন এর ভেতর একদম এরোপ্লেন এর মতো , তবে পা রাখার জায়গা টা , আন্তর্জাতিক এরোপ্লেন এর ন্যায় বেশ প্রশস্ত।টয়লেট দেখলে মনে হবে সবে কেউ নতুন করে বানিয়ে দিয়েছে , এতটাই পরিষ্কার। আমরা সংরক্ষিত টিকিট কেটে ছিলাম তাই , আমাদের বগি নম্বর ছিল ৭। এই ট্রেনে এ সংরক্ষণ ছাড়াও শুধু টিকেট কেটে যেতে পারেন , তবে সিট্ পাবেন নাকি বলা মুশকিল , যদি আপনার স্টেশন কোনো গন্তব্যের মধ্যবর্তী স্টেশন হয়।অসংরক্ষিত সিট এর জন্য বগি নম্বর ১, ২, ও ৩ রাখা হয়েছে , বাকি যারা সংরক্ষিত টিকিট কাটেন তাদের টিকিট এ বগি নম্বর এর সাথে সিট নম্বর দেওয়া থাকে। বেশির ভাগ মানুষ এখানে খাবার কিনেই উঠেছিল ,কারণ ট্রেন এ খাওয়া বিনামূল্যে পাওয়া যায়না। মাঝে মাঝে এয়ারহোস্টেসজ এর মতো বুলেট ট্রেন হোস্টেজ কিছু চা কফি আরো জাপানীস খাবার নিয়ে এদিক ওদিক বিক্রি করে বেড়াচ্ছিল। এখানে যারাই বুলেট ট্রেন এ যাতায়াত করেন তারা একিবেন Ekiben থেকে তাদের রেডিমেড খাবার কিনে নেন। eki মানে স্টেশন আর Ben মানে Bento . এরকম ekiben এর দোকান আপনি কিয়োটো -টোকিও, এমনকি সব বড় স্টেশন এ দেখতে পারবেন। যেখানে বিভিন্ন রকমে ready to eat খাবার , সুন্দর প্যাকেট করে বিক্রি হয়, এবং তা যথেষ্ট সস্তা। Bento মানে জানেন তো। যদি না জানেন তবে বলি। Bento হলো একটি জাপানি-শৈলী প্যাক করা লাঞ্চ, যাতে , ভাত , শাকসব্জী ,সুশি, মাংস,মিষ্টি এবং সাশিমীর মত জিনিস থাকে।Bento বক্সগুলি জাপানের একটি ঐতিহ্য, একটি অপরিহার্যতা, এবং উপভোগ্য উপায়ে খাবার কে উপভোগ করার একটি সহজ উপায়। অতীতে, বেন্টো বাক্সগুলির প্রায় এককভাবে ঘরে বানানো লাঞ্চ ছিল, যারা বাইরে কাজ করে কাজ করে, অথবা মায়েদের স্কুলে যাওয়ার আগে তাদের সন্তানদের লাঞ্চ দিতে ব্যবহৃত হতো । আজকাল, সব ধরনের দোকান এবং রেস্টুরেন্ট এ সুন্দর সুন্দর নিষ্পত্তি মোড়কে এদের খুঁজে পাবেন।
জাপানীসদের লাঞ্চ বাক্স কে সাধারণত Bentobox বলে।দোকানে গেলে বিভিন্ন ধরণে সুন্দর সুন্দর বেন্টোবক্স খুঁজে পেয়ে যাবেন। খুঁজে পাবেন , বেন্টোসকে “শৈবাল” (“চরিত্র বেন্টো”) নামে একটি শৈলীতে সুবিন্যস্তভাবে সাজানো । Kyaraben নামক বেন্টোবক্সকে সাধারণত জাপানি অ্যানিমেশন (anime), কমিক বই (manga), বা ভিডিও গেম থেকে জনপ্রিয় অক্ষর মত চেহারা সজ্জিত করা হয়। আরেকটি জনপ্রিয় বেন্টো শৈলী হল “ওকেকিবেন” বা “ছবি বেন্টো”। এটিতে মানুষ, প্রাণী, ভবন এবং স্মৃতিসৌধ, বা ফুল এবং গাছপালা কে আইটেম মত চেহারা সজ্জিত করা হয়। প্রতিযোগিতা প্রায়ই অনুষ্ঠিত হয় যেখানে বেনটোর ব্যবস্থাপকরা সর্বাপেক্ষা নান্দনিকভাবে আনন্দদায়ক ব্যবস্থাগুলির জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতাও করে।

মেয়ের স্কুলের জন্য কেনা বেন্টোবক্স

 

আমার মেয়ের স্কুলে নিয়ে যাওয়ার জন্য যে টিফিনবক্স এনেছিলাম দেশ থেকে , তা স্কুলে গ্রাহ্য করেনি , কারণ এদের নিয়ম মতো bentobox এ খাবার দিতে হবে সাথে কাটা-চামচ-চপস্টিকের সেট সহিত। আমার কাছে তাই এখন এরকম দু সেট ইতিমধ্যে উপস্থিত। ট্রেন নিজের গতি নিলো। নিমেষে পেরিয়ে যাচ্ছিলো , গাছ পালা, ঘর বাড়ি , শহর থেকে শহর। ১২:৩০ নাগাদ পৌছালাম টোকিও স্টেশন এ।সেখান থেকে ট্রেন পাল্টে উপস্থিত হলাম হোটেল যেখানে নিয়েছিলাম সেই স্টেশন এর কাছে একটা স্টেশন এ।নাম Bakuracho।

 

 

স্টেশনের বাইরে এসে বুঝলাম মোবাইল এ ইন্টারনেট হচ্ছে না। এদিক ওদিক দেখে এক জাপানীস ভদ্রলোককে জিগেস করতে দেখিয়ে পৌঁছে দিয়ে গেলে প্রায় হোটেলের কাছাকাছি। লোকটি বেশ ইংলিশ বোঝে এবং বলছিলো ও। হোটেল APA .এখানে সব কিছুই নিজেকে করতে হয় , নিজেদের পেমেন্ট টা , নিজেদের কে মেশিন মারফত করে দিতে হলো আগেই। তারপর হাতে আসলো , ঘরের চাবি , না না , স্মার্ট কার্ড। এই কার্ড না থাকলে নিচের লাইফ টাও আমাদের জন্য খুলবে না। বোঝো কান্ড।

APA হোটেল

ঘরের চাবি
হোটেল সুবিধা বিভাগ

হোটেল রুম না তো কুঁড়ে ঘরের থেকেও ছোট। ঢুকেই দমবন্ধ যেন। সুগাকুইন এর মতো ৩ টি খোলামেলা ঘরে থেকে এসে এই ঘর যেন কেমন লাগছিলো। খুব ক্লান্ত লাগছিলো , কিন্তু হাতে সময় কম। বিকেলেই টোকিওর কিছু জায়গা দেখে নিতে হবে। এ যেন পরীক্ষার আগের প্রস্তুতি , মরি বাঁচি পড়তেই হবে। খেয়ে দিয়ে বেড়িয়ে পড়লাম টোকিওর কিছু প্রসিদ্ধ জায়গার উদ্যেশে। আমাদের এই হোটেলের একদম পাশেই একটা স্টেশন ছিল নাম Ningyocho, আর টোকিওতে ঠিক যে জায়গায় আমরা ছিলাম তার নাম Ningyocho-Eki-Kita .৩ মিনিটের হাঁটা পথে পৌছালাম স্টেশন চত্বরে।

<< জাপান পর্ব ১৪                                                                                         জাপান পর্ব ১৬>>

 

*-* পর্ব ১৫ :CopyRight @ M K Paul, June,2018 *-*

1 COMMENT

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here