উল্টো পুরাণ
এইতো ক’দিন আগেও তোমরা
আগুন লাগালে বনেতে,
নৃশংস ভাবে পুড়লো পশুরা
দাগ কেটেছিল মনেতে?
বিষ ছড়িয়েছ আকাশে বাতাসে
বিষ ছড়িয়েছ জলেতে
বনকে পুড়িয়ে পাহাড় গুঁড়িয়ে
দুনিয়া ভরেছ কলেতে।
ময়না চড়ুই হারিয়ে গিয়েছে
তোমার লোভের জ্বালাতে
ডোডো পাখিদের মতোই তারাও
পথ পায়নি তো পালাতে।
পশুপাখি ধরে খেয়াল খুশিতে
বাঁদর নাচন নাচাতে
বহু পাপ করে অবশেষে তুমি
বন্দি এখন খাঁচাতে।
পাখিরা উড়ছে মুক্ত আকাশে
মানুষ বন্দি খাঁচাতে,
কতদিন পরে জীবকূল খুশি
করোনা এসেছে বাঁচাতে।
ইঞ্জেকশন
লোকে আমায় ভয়ই পেত,বাসত না কেউ ভালো
মনে মনে সবাই আমায় দিত অনেক গালও।
তারপরে যেই কোভিড এল, তাক ধিনা ধিন ধিন
অবশেষে এল আমার শোধ তোলবার দিন।
আমার জন্য এখন লোকের হয় না রাতে ঘুম
লাইন দিয়ে চলছে সবার সুঁই-ফোটানোর ধুম!
আমায় নিয়ে কাড়াকাড়ি, চলছে যে রাজনীতি
সুঁই ফোটানোয় আমজনতার একটুও নেই ভীতি!
ফার্স্ট ডোজের পরে আবার মিলবে কবে ডোজ
নিয়ম করে যাচ্ছে নিয়ে সক্কলে সেই খোঁজ।
দুটি ডোজের মধ্যে আবার গ্যাপ যদি যায় বেড়ে
হাঁ-হাঁ করে অমনি সবাই মারতে আসে তেড়ে।
কাঁদছে সবাই ঠোঁট ফুলিয়ে যাদের আছে বাকি
এত্ত ভালোবাসা আমি কোথায় বলো রাখি?
আশার বাষ্প
মহামারী এসে জীবন কাড়ছে তবু
আমরা চেয়েছি গেয়ে যেতে সেই গান
শবের উপরে জমছে শবের স্তুপ,
কবরের পাশে বেঁচে ওঠে কিছু প্রাণ।
রাত্রির বুকে বাড়ছে আঁধার রোজই
ফুল তবু ফোটে শবদেহটার পাশে
চাঁদ নেই তবু দূরের আকাশে দেখ,
কিছু ছোট তারা আলো দেয়,ভালোবাসে।
মৃত্যু আসছে কাড়ছে মায়ের কোল
কত ভাবনারা আর তো পেল না ভাষা
বেশ কিছু ফুল অকালেই ঝরে গেল,
মৃত্যুর পরও থেকে যায় প্রত্যাশা।
দূরের তারার ক্ষীণকায় স্মিত আলো
সংকেতে বলে সংগ্রাম আছে বাকি
তারা খসে গেলে মৃত্যুর গান গেয়ে,
তখনও দেখবে ডাকছে ভোরের পাখি।
বুমেরাং
আমাজনের সেইসব মৃত গাছেরা বল্লম হয়ে ছুটে আসছে
মৃত পশুদের কঙ্কাল থেকে বার হচ্ছে কাঁটা বিষ
দু’ধারে সারি সারি বন্ধ দোকান
যত্রতত্র মৃত্যুর শীতল ছোবল
সব নৌকারা থেমে আছে
মনখারাপের পাতার ওড়াউড়ি
চুনের চেয়েও সাদা বিষন্নতা
রাত্রে পুলিশ জ্বালিয়ে দিচ্ছে শব
পরিজনেরা আসেনি সমাধিতে
জীবন এত কঠিন হবে ভাবিনি
অদৃশ্য পেঁচারা উড়ছে
গোটা মানবজাতি ভয়ে কুঁকড়ে ঢুকেছে জেলখানায়
বিষন্ন নীলাভ মানুষ হাত-পা ছুঁড়ছে
বাতাসে অক্সিজেন নেই।
অঙ্গীকার
মৃত্যু যতই এসে ধমকানি দিক
দুঃখের কথামালা থেমে যাবে ঠিক।
সেইদিন আর নেই খুব বেশি দূরে
আবার উঠবো গেয়ে পুরানো সে সুরে।
বন্ধু গো দেখা হবে পরশু বা কাল
অতিমারী শেষে হবে খুশির সকাল।
কলমে সুদীপ্ত বিশ্বাস, ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট, রানাঘাট