তখন ১৯৪০ সাল।শুরু হয়ে গেছে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ।বিভিন্ন শক্তিশিবিরে বিভক্ত গোটা বিশ্ব। প্রত্যেকদিন যুদ্ধোন্মত্ত দেশগুলির আগ্রাসী রণনীতি আঘাত হানছে সভ্যতার বুকে। প্রায় একপ্রকার জোর করেই ব্রিটিশ রাজশক্তি ভারতবর্ষকে সামিল করেছে এই যুদ্ধে। প্রতিবাদে উত্তাল আসমুদ্রহিমাচল। কংগ্রেসী মন্ত্রিসভার পদত্যাগ , বৃটিশ রাজশক্তির সাম্প্রদায়িক বিভেদমূলক নীতি, গান্ধীজির নির্দেশে বিনোবা ভাবের ব্যক্তিগত সত্যাগ্রহের মতো ঘটনায় উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে দেশীয় রাজনীতি।ইতিমধ্যেই ভারতের জনমানসে সারা ফেলেছেন এক তরুণ জ্যোতিষ্ক। না , তখনও তিনি নেতাজি বলে পরিচিত হননি। তখনও তিনি শুধুই সুভাষ চন্দ্র বসু, কিছুদিন আগেই যিনি গান্ধীজির সাথে মতাদর্শগত বিরোধের কারণে কংগ্রেস প্রেসিডেন্ট এর পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছেন, গঠন করেছেন নতুন দল -ফরোয়ার্ড ব্লক।কিছুদিন পরেই কলকাতার বাড়ি থেকে পুলিশ এর চোখে ধুলো দিয়ে আফগানিস্তানের পথে ঘটবে যাঁর মহাভিনিষ্ক্রমণ।
এমনি এক কঠিন সময়ের প্রেক্ষাপটে চলুন ঘুরে আসি মেদিনীপুর থেকে।ফিরে দেখি ইতিহাসের বহু ঘটনার নীরব দর্শক – নাড়াজোল রাজবাড়ি I
১০ই মে,১৯৪০। হিটলারের ৮৯ ডিভিশন সৈন্য দুরন্ত গতিতে ঝাঁপিয়ে পড়লো হল্যান্ড বেলজিয়াম ও ফ্রান্সের উপর I
পরদিন অর্থাৎ ১১ই মে,১৯৪০, দিনটা ছিল শনিবার।ঐদিন সন্ধ্যেবেলা সুভাষ বসু শেষবারের মতো জনসভা করার উদ্দেশ্যে পা রাখলেন মেদিনীপুর স্টেশন এ। আনন্দবাজার প্রত্রিকায় প্রকাশিত হলো সেই খবর। জনজোয়ারে ভেসে গেলো স্টেশন চত্বর। নাড়াজোল রাজের আতিথেয়তা গ্রহণ করে রাতটুকু কাটালেন গোপগড় প্রাসাদে। সেই প্রাসাদ আজ পরিচিত গোপগড় কলেজ নামে। পরদিন নাড়াজোল রাজ্ এস্টেটের তৎকালীন জমিদার দেবেন্দ্রলাল খান, কংগ্রেস কর্মী রবীন্দ্রমোহন সেনগুপ্তের সঙ্গে মোটরে চেপে রওয়ানা দেন ঝাড়গ্রামের উদ্দেশ্যে।
এর ঠিক ৭৯ বছর পর, ২০১৯ সালের হেমন্তের শেষ বিকেল। ধানসিঁড়ির পথ ধরে চলেছে আমাদের ক্যারাভান।গন্তব্য- নাড়াজোল রাজবাড়ী । সাঁঝবাতির দেখানো পথে হাজির হলাম মন্দিরময় রাজবাড়ীর চৌহদ্দিতে , যার ইটের পাঁজরে আজও গুমরে মরে অজানা ইতিহাস।সাধ্যমতো চেষ্টা করলাম সেই ইতিহাসকে বাঙময় করার। জানি, বাকি রয়ে গেলো না বলা অনেক কথাই , যা ধরা দেয়নি আমাদের কাছে। হয়তো ধরা দেবে তোমাদের লেখায় , এমনি কোনো সোনাঝরা বিকেলে।
মেদিনীপুর শহর ছেড়ে প্রায় ৪০ কিলোমিটার দূরে দাসপুর ১ নং ব্লক। গ্রামটির নাম কিসমত নাড়াজোল। কিসমতই বটে। ঐতিহ্যবাহী এই রাজবাড়ীটির দৌলতে ইতিহাসের পাতায় পাকাপাকি ভাবে স্থান করে নিয়েছে অতি সাধারণ অতীতের কপিশা বর্তমানের কংসাবতী এবং শিলাবতীর পলিপুষ্ট এই গ্রামটি।অধ্যাপক সুনীতি কুমার চট্টোপাধ্যায়ের মতানুসারে নাড়া শব্দটি এসেছে ধান কেটে রাখার পর তার অবশিষ্টাংশ থেকে। জোল শব্দটি সম্ভবত জলার অপভ্রংশ। দুই নদীর মধ্যবর্তী জঙ্গলাকীর্ণ, জনবিরল অঞ্চলে পূর্বে জল নিকাষিব্যবস্থা অপ্রতুলথাকায় প্রায় এই অঞ্চল জলমগ্ন হয়ে পড়তো। সেই থেকেই এই অঞ্চলের এই রূপ নাম হয় বলে অনেকের অনুমান।
এবার আসি রাজপরিবারের কথায়।উদয়নারায়ণ ঘোষ ১৬০৩ খ্রিস্টাব্দে নাড়াজোল রাজ্ প্রতিষ্ঠা করেন।তিনি ইতিপূর্বে বর্ধমান রাজার দেওয়ান ছিলেন। কথিত আছে তিনি দেবী জয়দূর্গার স্বপ্নাদেশ পেয়ে নাড়াজোলে রাজবাড়ী প্রতিষ্ঠা করেন এবং দৈবানুকম্পায় তিনি বিপুল সম্পত্তির অধিকারী হন।সেই থেকে দেবী জয়দুর্গা এই রাজবাটীতে নিত্য পূজিতা। এই বংশের পরবর্তী বংশধরদের নাম জানার জন্য যুক্ত করলাম বংশতালিকা। তালিকাটি লক্ষ্য করলে দেখতে পাবেন এই বংশের পঞ্চম পুরুষ কার্তিক রাম এর নামের শেষে আকবর শাসনাধীন ভারতে বাংলার তৎকালীন শাসক সুলেমান কররানী প্রদত্ত রায় উপাধি যুক্ত হয়েছে এবং ১৫৯৬ সালে অষ্টম পুরুষ বলবন্তের নামের শেষে তৎকালীন বাংলার নবাবের দেওয়া খান উপাধি যুক্ত হয়েছে। দুটি উপাধিই পরবর্তী বংশধরদের দ্বারা বংশপরম্পরায় ব্যবহৃত হয়েছে।
অভিরাম খানের তিন পুত্র যদুনাথ, সভারাম ও ত্রিলোচন খান সম্পর্কে পার্শ্ববর্তী রাজ্য কর্ণগড়ের মাতুলপুত্র ছিলেন। অজিত সিংহের মৃত্যুর পর ১১৬৫ বঙ্গাব্দে কর্ণগড় রাজ্যের অধীশ্বরী রানী ভবানী এবং রানী শিরোমনির সম্মতিতে রানীপাটনাতে স্বাক্ষরিত চুক্তিপত্র অনুযায়ী ত্রিলোচন খান কর্ণগড় রাজ্যের তত্ত্বাবধায়ক রূপে নিযুক্ত হন। দুই রানির মৃত্যুর পর কর্ণগড় রাজ্য নাড়াজোল রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত হয়।
নাড়াজোল রাজ্যের পরবর্তী উল্লেখযোগ্য রাজা ছিলেন সীতারাম I বাংলায় তখন চলছে কোম্পানির শাসন। নির্বিচারে লুন্ঠিত হচ্ছে বাংলার সম্পদ। বহু স্থানীয় রাজা এবং জমিদার কপর্দকশুণ্য হয়ে ইংরেজদের হাতে জমিদারি হারাচ্ছেন। কেউ আবার স্থানীয় কৃষক বা উপজাতি বিদ্রোহে ইংরেজদের বিরুদ্ধে নেতৃত্ত্ব দিয়ে ইংরেজদের নিপীড়ণের শিকার হচ্ছেন। সেই সময় কর্ণগড়ের রানী শিরোমনি ইংরেজদের অত্যধিক রাজস্বের চাহিদা মেটাতে অপারগ হয়ে রুখে দাঁড়ান রাজশক্তির বিরুদ্ধে , নেতৃত্ব দেন চুঁয়াড় বিদ্রোহে। পরিনাম হয়েছিল ভয়ঙ্কর। রাজ্যহারা হয়েছিলেন তিনি।ব্যতিক্রম নয় নাড়াজোলও। ইংরেজদের নির্লজ্জ শোষণের শিকার হতে হয়েছিল নাড়াজোলকেও Iসীতারাম বর্ধিত হারে রাজস্ব প্রদানে ব্যর্থ হওয়ায় নাড়াজোল রাজ্যও ইংরেজদের খাস সম্পত্তিতে রূপান্তরিত হয়েছিল I সীতারামের মৃত্যুর পর পুত্র আনন্দলাল ইংরেজদের বকেয়া রাজস্ব প্রদানের অঙ্গীকারের বিনিময়ে আবার সেই হৃত জমিদারি স্বত্ব ফিরে পান।
রাজপরিবারের ভাগ্যাকাশে এর পরেও দেখা যায় দুর্যোগের ঘনঘটা। কর্ণগড়ের রানী শিরোমনিকে চুঁয়াড় বিদ্রোহে সাহায্য করার অপরাধে আনন্দলালের পিতৃব্য চুনালালকে প্রথমে রানীর সাথেই আবাসগর দুর্গে বন্দি রাখা হয়I পরে কলকাতায় প্রেরণ করা হয়। ১৭৯৯ খ্ৰীষ্টাব্দে সদর নিয়ামত আদালত থেকে আনন্দলাল তাঁর পিতৃব্য চুনালাল ও রানীকে নিরপরাধ প্রতিপন্ন করে মুক্ত করেন। রানী তাঁর বাকি জীবনকাল অতিবাহিত করেন আবাসগঢ়েই।এই চুনিলাল খান ছিলেন বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী।তিনি নির্মাণ করেন নানা প্রত্নকীর্তি। বিদ্বানব্যক্তিদের দ্বারা লিপিবদ্ধ করেন বহু পুঁথি।
১৮০০ সালের ৩০শে জুলাই মেদিনীপুর রাজ্যের পরগনা রেস্ট্রিভুক্ত হয় আনন্দলালের নামে। ১২১২ বঙ্গাব্দ অব্দি তিনি জমিদারি চালান।ইতিমধ্যে রানী শিরোমনি তাঁর রাজ্য হারানোর জন্য আনন্দলালকে মূল ষড়যন্ত্রী মনে করে তা পুনরুদ্ধারের জন্য মামলা দায়ের করেন আনন্দলালের বিরুদ্ধে। মামলা চলাকালীন নিঃসন্তান অবস্থায় আনন্দলালের মৃত্যু হলে কনিষ্ঠ ভ্রাতা মোহনলাল মেদিনীপুর রাজ্য ও অপর ভ্রাতা নন্দলাল পৈতৃক সম্পত্তির উত্তরাধিকারী হন। শিরোমনির মামলায় জয় হলেও মোহনলাল লন্ডনে প্রিভি কাউন্সিলে আবেদন করায় তাদের নির্দেশে প্রাথমিক ভাবে সমস্ত সম্পত্তি মেদিনীপুর কলেক্টরেটের হস্তগত হয়। ১৮১২ খ্রীষ্টাব্দের ১৭ই সেপ্টেম্বর রানী শিরোমনির মৃত্যু হলে রানীর মৃত স্বামী অজিত সিংহের জ্ঞাতি কন্দর্প সিং মেদিনীপুর রাজ্যের ৪টি পরগনার অধিকার দাবি করেন। ১৮১২ এর ২৫শে সেপ্টেম্বর মেদিনীপুরের কালেক্টর সব পক্ষের দাবি নিয়ে জেলা জজের কাছে পেশ করলে জেলা জজ মোহনলালের পক্ষেই রায় দেন। জামিন নিয়ে মোহনলাল হৃত সম্পত্তি পুনরুদ্ধার করেন। পরে প্রিভি কাউন্সিলও জেলা জজের রায়কে সমর্থন করে।মোহনলাল তাঁর রাজত্বIঅধীন কুতুবপুর ও চেতুয়া পরগনায় অনেক মন্দির স্থাপন করেন। তাঁর কালজয়ী কীর্তির নিদর্শন অবশ্যই ১৮১৮ খ্রিস্টাব্দে স্থাপিত লংকাগড়ের জলহরি। এছাড়াও ১৮২৮ খ্রিস্টাব্দে স্থাপন করেন সামাট মঠ।
মোহনলালের মৃত্যুর পর তাঁর পুত্র অযোধ্যারাম রাজা হন।তাঁর সময় জমিদারি বিভিন্ন আর্থিক প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হয় ও নানা মামলা মোকদ্দমায় জড়িয়ে পড়ে। জমিদারি রক্ষা করতে তাকে বেগ পেতে হয়েছিল যথেষ্ট।যদিও শেষ অবধি তিনি সমস্ত বাঁধা কাটিয়ে ওঠেন। রাজভবন যা ইতিপূর্বে রাজস্ববাকির নিলামে বর্ধমানেশ্বরী মহারানী নারায়ণ কুমারী কিনে নিয়েছিলেন সেটিও তিনি পুনরায় ক্রয় করে নিজ দখলে আনেন। রাজপরিবার পুনরায় ফিরে পায় তার হারানো গৌরব। ভাগ্যের পরিহাসে ১৮৭৯ সালের ২৮সে জুন সেই সুসংবাদ জ্ঞাত হবার পূর্বেই তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
অযোধ্যারামের পুত্র মহেন্দ্রলাল একাধারে ছিলেন বিচক্ষণ ,কবি, গ্রন্থকার, বিদ্বান , সঙ্গীতপ্রিয় ও ভাষাবিদ। তাঁর রচিত সংগীতলহরী ,মনমিলন ,গোবিন্দ-গীতিকা, মথুরামিলন, শারদোৎসব নামক গ্রন্থের মধ্যে দিয়ে তাঁর পান্ডিত্যের পরিচয় পাওয়া যায় । ইংরেজি, সংস্কৃত ও পার্সি ভাষায় তাঁর ছিল অসামান্য বুৎপত্তি। তাঁর লেখা History of the Midnapore Raj মেদিনীপুরের প্রেক্ষাপটে ফেলে আসা সময়ের এক অমূল্য দলিল। একসময় মেদিনীপুর শহরে খানের ওয়ার্ড নাম যে কুষ্ঠাশ্রমটি প্রতিষ্ঠিত ছিল সেটি তাঁরই মহৎ কীর্তির নিদর্শন। তাঁর দরদী মনোভাবের পরিচয় মেলে মেদিনীপুর কলেজে তাঁর পিতIর স্মৃতিরক্ষার্থে অযোধ্যারাম খান বৃত্তি প্রচলনের মধ্যে দিয়ে। ১৮৮৭ সালে মহারানী ভিক্টোরিয়ার রাজ্য শাসনের সুবর্ণ জয়ন্তী উপলক্ষ্যে উপলক্ষ্যে ইংরেজ সরকার তাকে রাজা উপাধি তে ভূষিত করেন। ১৮৯২ খ্রিস্টাব্দে তাঁর মৃত্যুর পুত্র নরেন্দ্রলাল এই জমিদারির অধিকারী হন এবং ১৮৯৫ সালে তিনিও রাজা উপাধি পান। পিতার মতো তিনিও ছিলেন ভাষাবিদ এবং সঙ্গীতানুরাগী। তাঁর স্বরচিত গ্রন্থদ্বয় পরিবাদিনীশিক্ষা, স্তুতি কুসুমাঞ্জলি এবং কাব্যগ্রন্থ আধ্যাত্ম রামায়ণ বিদ্যোতমহলে যথেষ্ট সমাদৃত।তাঁর আমলে তাঁর বিচক্ষণতার ফলে জমিদারির আয় পূর্বাপেক্ষা অনেকাংশে বৃদ্ধি পেয়েছিল। কলকাতার ডাফরিন ফান্ডে এবং মেদিনীপুর কলেজের দাতব্য চিকিৎসালয়ে তিনি যথেষ্ট অর্থসাহায্য করেছিলেন ।যদিও তিনি তাঁর দেশভক্তির জন্য ব্রিটিশ শক্তির কাছে সন্দেহভাজন ছিলেন। মেদিনীপুরের স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রতি তাঁর সহমর্মিতাকে সুনজরে দেখেনি রাজশক্তি।মেদিনীপুর বোমা মামলায় ব্রিটিশ সরকার নরেন্দ্রলালকে দোষী সাব্যস্ত করে।১৯০৮ সালের ২৮সে আগস্ট মেদিনীপুরে নরেন্দ্রলালের জমিদারীভুক্ত গোপগড়ে ও নাড়াজোল রাজবাড়িতে তল্লাশি চালানো হয়।এই অকুতোভয় পরাক্রমী জমিদারতনয় তাঁর দেশভক্তির জন্য পরবর্তীকালে স্বাধীন সরকার কর্তৃক দেশভক্ত সম্মানে ভূষিত হন।
নরেন্দ্রলালের পুত্র দেবেন্দ্রলাল খান স্বাধীনতা আন্দোলনে অগ্রণী ভূমিকা গ্রহণ করেছিলেন।তাঁর সময়ে রাজবাড়িটি হয়ে উঠেছিল মেদিনীপুর জেলার স্বদেশী আন্দোলনের সূতিকাগার।গান্ধীজির নেতৃত্বে অসহযোগ আন্দোলনে তিনি সক্রিয় ভূমিকা নেন এবং কংগ্রেসের সদস্যপদ গ্রহণ করেন।বাংলায় কংগ্রেসের দলীয় তহবিলে তিনি প্রভূত অর্থ দান করেন যা তৎকালীন সময়ে দেশের স্বাধীনতা আন্দোলনকে ইন্ধন যুগিয়ে ছিল।তাঁর কলকাতার বাড়িটি ছিল বঙ্গীয় প্রাদেশিক কংগ্রেস কমিটির কার্যালয়। তিনি বহু বছর প্রাদেশিক কংগ্রেস কমিটি ও কংগ্রেস পরিষদ দলের কোষাধক্ষ্য ছিলেন। যুদ্ধবিদ্যায় দক্ষতা অর্জনের জন্য তিনি Bengal Light Horse এর সৈন্যশ্রেণীভুক্ত হয়েছিলেন। ১৯৩০ সালে তিনি প্রথম নাড়াজোল রাজবাটীতে উত্তোলন করেন জাতীয় পতাকা। সক্রিয় ভাবে অংশ নেন দেশব্যাপী লবন সত্যাগ্রহে এবং মেদিনীপুরে সাধারণ মানুষকে উদ্বুদ্ধ করেন এই গণআন্দোলনে অংশগ্রহণের জন্য।পরবর্তীকালে দেবেন্দ্রলাল খান এই জেলার অন্যতম নির্বাচিত প্রতিনিধি হিসেবে বঙ্গীয় ব্যবস্থাপক সভা ও পরে ব্যবস্থা-পরিষদের সভ্য নিযুক্ত হন। যদিও পরে কংগ্রেস নেতৃত্বের নির্দেশানুক্রমে কংগ্রেসী প্রতিনিধি হিসেবে অন্যান্য কংগ্রেসি সদস্যদের মতো তিনিও পদত্যাগ করেন।ব্যক্তিগত ক্ষয়ক্ষতির চিন্তাকে প্রশ্রয় না দিয়ে ১৯৩০ সালে যোগ দেন কংগ্রেসের খাজনা বন্ধ আন্দোলনে।তৎকালীন রাজন্যবর্গের মধ্যে দেশপ্রেমের এমন নজির ছিল বিরল।১৯৪৬ সালে তিনি কেন্দ্রীয় ব্যবস্থা পরিষদেরও সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। একবার মেদিনীপুরের জেলা বোর্ডের চেয়ারম্যান পদেও নির্বাচিত হয়েছিলেন জনপ্রিয় এই মানুষটি। ছিলেন আচার্য্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায় ও দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাসের স্নেহধন্য।
রাজপ্রাসাদের নিশ্চিন্ত বিলাসবহুল জীবনের মোহ ত্যাগ করে দেশমাতৃকার সেবায় অনিশ্চিতের পথে তার এই যাত্রা চির স্মরণীয় হয়ে থাকবে ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে। তাঁর সময়ে একাধিক দেশ বরেণ্য নেতার পদধূলীতে ধন্য হয়েছিল এই রাজবাটী। নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বোসের কথা বলেছি শুরুতেই।পরে খানিক বিশদে জানাবো মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের এই বাড়িতে আসার কথা। এছাড়া বিভিন্ন সময় স্বাধীনতা সংগ্রামের বিভিন্ন কর্মসূচি উপলক্ষে এই বাড়ির আতিথেয়তা গ্রহণ করেছিলেন স্বয়ং জাতির জনক গান্ধীজি থেকে শুরু করে জওহরলাল নেহেরু,মতিলাল নেহেরু, বিধান চন্দ্র রায়, সরোজিনী নাইডু,কাজী নজরুল ইসলামের মতো নমস্য ব্যক্তিগণ। প্রবন্ধ শেষে রইলো সেই অবিস্মরণীয় মুহূর্তগুলির সচিত্র সংযোজন। দুর্ভাগ্যক্রমে স্বাধীন ভারতের সূর্যোদয় তিনি দেখে যেতে পারেন নি। তার অল্প কিছুদিন আগেই তিনি পরলোক গমন করেন। কলকাতাবাসীরা বিশেষ করে যারা দক্ষিণ কলকাতায় থাকেন, তারা অনেকেই হয়তো শুনে থাকবেন দেবেন্দ্র লাল খান রোড এর নাম। না জানলে গুগল ম্যাপে সার্চ করে দেখেও নিতে পারেন। আশা রাখবো আজকের পর সেই রাস্তা দিয়ে কখনো গেলে অবশ্যই স্মরণ করবেন মেদিনীপুরের এই মহানুভব বীরপুরুষের কথা।
১৯৫৩ সালে জমিদারি প্রথা অবলুপ্তির সাথে সাথে নাড়াজোলের জমিদারিও সরকারী সম্পত্তি হিসেবে নথিভুক্ত হয়। দেবেন্দ্রলালের পুত্র অমরেন্দ্রলালের স্ত্রী শ্রীমতি অঞ্জলি খান ১৯৫৭ সIল্ থেকে ১৯৬২সIল্ পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার বিধায়ক হিসেবে দায়িত্বভার সামলান।এখনো এই বংশের বর্তমান বংশধরদের কেউ কেউ নাড়াজোলে বসবাস করে থাকেন ।
কিসমত নাড়াজোল জুড়ে আজ শুধুই অতীতের ধূসর ছায়াপাত। জীর্ণ বটগুল্মে ঢাকা প্রাসাদোপম ইমারত বারে বারে বিধ্বস্ত হয়েছে কালের প্রহারে। অনাদরে আর অবহেলায় হারিয়ে যাচ্ছে কত না নামজানা কালজয়ী শিল্পীদের সৃষ্টি। তবে এখনো সুযোগ আছে। শুধু এগিয়ে আসতে হবে।প্রশাসনিক উদ্যোগ, পরিকাঠামো আর আপনাদের মতো ভ্রমণপিপাসু ইতিহাসপ্রেমী মানুষের সান্নিধ্য আরো বেশি করে পেলে অচিরেই এই স্থান হয়ে উঠবে বাংলার পর্যটনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ।
নাড়াজোল পরগনার গড় নাড়াজোল নামক স্থানে ছিল এই বংশের প্রাচীন ভিটে।গড়টি বহির্গড় ও অন্তর্গড় – এই দুটি অংশে বিভক্ত ছিল। দুই গড়ের চারদিক জুড়ে ছিল দুটি পরীখা। সিংহদুয়ার দিয়ে অন্তর্গড়ে প্রবেশ করলে দেখা যায় কাছারিবাড়ি যা সেই সময় প্রতিদিন সরগরম থাকতো জমিদারি কাজকর্ম সংক্রান্ত ব্যস্ততায়, নানা লোকজনের আসা যাওয়ার মধ্যে দিয়ে। অন্তর্গড়ে দ্বীপের মধ্যে সুরক্ষিত ছিল প্রায় ৩৬০ বিঘা জমিজুড়ে ২৫০টি কক্ষবিশিষ্ট ত্রিস্তরীয় রাজবাড়ী।১৮৪০ সালে এটি নির্মিত হয়। বাংলার কারিগরদের সাথে হাত মিলিয়ে জয়পুর , দিল্লি , লাহোরের শিল্পী, কারিগরদের পরিশ্রমের ফসল এই অসামান্য শিল্প সুষমাময় রাজবাড়ী। রয়েছে পুজোর ঘর, বৈঠক খানা, তোষক খানা I অভ্যন্তরভাগে এছাড়াও ছিল রাজা মোহনলাল খানের অপর কীর্তি প্রায় ৬০ বিঘা জমির উপর পরিখাবেষ্টিত হাওয়া মহল বা Ball Room Iচাপা বাগান নামে এটি স্থানীয় ভাবে পরিচিত। মহলের পিছনেই ছিল সুসজ্জিত ফোয়ারা ও স্বচ্ছ দীঘি। অবসরকালীন প্রমোদভবন হিসেবে এটিকে ব্যবহার করতেন তৎকালীন জমিদার পরিবার। সান্ধ্য মজলিশে সুরা- সংগীত সুধায় সপারিষদ মজে থাকতেন জমিদার। ঠুমরি-দাদরার ছন্দে কেটে যেত বহু রজনী।ঘুঙ্গুরের ছন্দে চাপা পরে যেত অন্তঃপুরিকাদের হৃদয় ক্রন্দন। হাওয়া মহলের সামনে রাজকীয় ঐতিহ্যের নিদর্শনস্বরূপ আজও মাথা উঁচু করে সজাগ প্রহরীর ন্যায় দন্ডায়মান বিশাল তোরণদ্বার। এই লেখার শুরুতেই বলেছিলাম এই রাজপরিবার প্রতিষ্ঠার পেছনে দেবী জয়দূর্গার অনুকম্পা লাভের প্রসঙ্গটি। দেবীর প্রতি সেই অচলায়তন ভক্তির নিদর্শন প্রতীয়মান হয় পঞ্চরত্ন রীতিতে নির্মিত ১২ ইঞ্চির অষ্টধাতুর জয় দূর্গার বিগ্রহ সম্বলিত মন্দিরটি দেখলে। শোনা যায় রাজা উদয়নারায়ণ ঘোষ প্রতিষ্ঠিত নাড়াজোল রাজপরিবারের সবচেয়ে প্রাচীন এই মন্দিরটির বিগ্রহ বারবার অপহরণের চেষ্টা করা হলেও তস্কররা সফল হয়নি কোনসময়।অন্দরমহলে আরেকটি দ্রষ্টব্য হলো নাটমন্দির। লক্ষ্য করলে দেখা যায় এই নাটমন্দিরের গঠনরীতির সঙ্গে অদ্ভুত সাদৃশ্য পাওয়া যায় শান্তিনিকেতনের উপাসনা গৃহের। লোহার কারুকাজ আর রঙিন বেলজিয়াম গ্লাসের সাযুজ্যপূর্ণ উপস্থিতি এই নাটমন্দিরের মহিমাকে বৃদ্ধি করেছে বহুগুন। রাজবাড়ীর সদস্যদের কথায় জানা যায় যে একদা এই রাজবাড়ী পরিদর্শনে এসেছিলেন সপুত্র মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর। লোহার কলকা আর বেলজিয়াম গ্লাসের রংবাহারি নকশা দেখে বিস্মিত হন মহর্ষি ও ছোট্ট রবি।পরবর্তীকালে ১৮৬৩ সালে শান্তিনিকেতনে উপাসনা গৃহ নির্মাণেও মহর্ষি এই রীতি অনুসরণ করেছিলেন। তোরণ দ্বারের পাশে দুটি স্তম্ভের ওপর তৈরী কালের ভIরে ন্যূব্জমান নহবত খানা রাজকীয় বিলাসিতার নিদর্শন বয়ে নিয়ে বেড়াচ্ছে আজও। রাজপরিবারের কুলদেবতা সীতারাম মন্দির , আটচালা রীতিতে নির্মিত ষষ্ঠ শিবালয় ,রংমহল, রাসমঞ্চ ,দোলমঞ্চ, রাসমঞ্চস্থিত সপ্তদশ চূড়া বিশিষ্ট শতরত্ন মন্দির অতীতের নাড়াজোল রাজপরিবারের গৌরবময় ইতিহাসের উজ্জ্বল স্বাক্ষর।কথিত আছে সীতারাম মন্দির নির্মাণের জন্য অযোধ্যা থেকে বেলেপাথর আনা হয়েছিল। সীতারাম মন্দিরের মধ্যে রাম , সীতা, লক্ষ্মণ, ভরত , শত্রুঘ্ন ও মহাবীরের মূর্তি পূজিত হয়। এই মন্দিরকে কেন্দ্র করে রাজা মোহনলাল রামনবমীর দিন রথযাত্রা উৎসবের সূচনা করেন। আজও গেলে দেখতে পাবেন রাজবাড়ীর চত্বরে সেই রথটিকে। ১৮৬০ সালে সীতারাম খান নাটমন্দিরের পাশেই প্রতিষ্ঠা করেন গোবিন্দ জিউর মন্দির। মন্দিরের নিত্য পূজারী এখনো হাতড়ে বেড়ান সেই স্বর্ণযুগের দিনগুলি তার স্মৃতিচারণায়। পঁচিশটি দেউল সম্বলিত রাসমঞ্চগাত্রে উৎকীর্ণ লিপি থেকে জানা যায় নাড়াজোলের তদানীন্তন রাজা চুনিলাল খাঁ ১৮২৫-২৬ খ্রিষ্টাব্দে এটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। শুনে ভালো লাগলো যে সম্প্রতি নাড়াজোল হেরিটেজ কমিটি এই রাসমঞ্চটি নতুন ভাবে রক্ষনা বেক্ষনের ব্যবস্থা করেছে।রাজবাড়ীর পাশেই যে ছয়টি শিবালয় কালের আঘাত সহন করে আজও দন্ডায়মান সেগুলি নির্মিত হয়েছিল ১৭৬৫ সালে মোহনলালের পঞ্চম পুত্র ব্রজ কিশোরে খান কর্তৃক। চার খিলানের প্রবেশপথ দিয়ে ভেতরে ঢুকলে দেখা যায় পরিত্যক্ত দুর্গাদালান। দালানে তিন থাক বিশিষ্ট দরুন শ্রেণীর খিলান ও কলাগেছ্যা থামের থামের চমৎকার বিন্যাস আজও নজর কাড়ে।দুর্গাদালানের পাশেই রয়েছে ভগ্নপ্রায় সরস্বতী দালান। শিবমন্দির সন্নিহিত অঞ্চলে রাজপরিবারের সাতটি সমাধিমন্দির তৈরী হয়েছিল যার মধ্যে কয়েকটিই মাত্র অক্ষত আছে। দু টি সমাধিক্ষেত্রে খোদিত লিপি থেকে জানা যায় সেগুলি যথাক্রমে রাজা অযোধ্যা রাম খান (জন্ম ১৮২১ খ্রি -মৃত্যু ১৮৭৯ খ্রি ), রাম খানের মহিষী বিষ্ণুপ্রিয়ার (মৃত্যু-১৮৯৫ খৃ ) I বহির্ভাগে সর্বমোট ৫৪টি দেবালয়ের অস্তিত্বের নিদর্শন পাওয়া গেছে।মন্দিরগুলির স্থাপত্যশৈলীতে বাংলার পাশাপাশি ইউরোপীয় স্থাপত্যশৈলীরও অনুরণন ঘটেছে।মন্দিরসংলগ্ন অঞ্চলে রাজাদের উৎসর্গীকৃত জমির উপরে ১৯৬৬ সালে রূপ পায় বর্তমানের নাড়াজোল রাজ্ কলেজ।
কিসমত নাড়াজোলের রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা সঙ্গে নিয়ে আমাদের ক্যারাভান এগিয়ে চললো মাইল খানিক দূরের লংকাগড়ের পথে। গাড়ি থেকে নেমে মুগ্ধ হয়ে গেলাম। এক্কেবারে যাকে বলে Curtain raiser I পশ্চিম বাংলার অনেক জায়গা চষে ফেললেও এমন জিনিস দুটি দেখেছি বলে মনে করতে পারলাম না। বিশাল কাকচক্ষু সরোবরের মধ্যস্থলে কৃত্রিম দ্বীপের মাঝে নির্মিত প্রাসাদ , জলহরি । এর স্থাপত্যশৈলী দেখে মনে পরে যায় রাজস্থানের উদয়পুরে Lake Palace এর কথা। রাজা মোহন লাল খান বহু ব্যায় করে এই বিলাসক্ষেত্রটি তৈরী I দীঘির মধ্যিখানে ১০০ বিঘা জমি জুড়ে অবস্থিত রাজপরিবারের এই গ্রীষ্মবাসটি I দীঘির পার ধরে ছিল রাজার সাধের সাজানো বাগান। আগাছায় চেয়ে যাওয়া জমিতে এখনো মেলে তার প্রমান। ১৯৮৮ সালে এই পুকুরে নৌকাবিহারের ব্যবস্থা হলেও পরবর্তীকালে নানা অসুবিধার কারণে সেটি বন্ধ হয়ে যায়। দীঘির দক্ষিণ প্রান্তে দেখা যায় মোহনলাল (মৃত্যু-১৮৩০ খ্রি ) এবং নরেন্দ্র লাল খানের মহিষী রানী মৃণালিনীর (১৯২৮ খ্রি ) দুটি সপ্তরথ গম্বুজাকৃতি দেউল বিশিষ্ট সমাধিমন্দির।
প্রাচীনকালে রাজবাড়িতে মহাসমারোহে অনুষ্ঠিত হতো দুর্গাপূজা। পূজা উপলক্ষ্যে অভ্রভেদিনিনাদে বেজে উঠতো কামান। আজ আর সেই দিন নেই। যদিও এখনো প্রতি বছর এই রাজবাড়ীতে পরিবারের সদস্যরা দুর্গাপূজা করেন সাড়ম্বরে। স্থানীয় মানুষেরাও যোগ দেন এই মহোৎসবে।পূর্বের মতোই পক্ষকালব্যাপী রথযাত্রা উৎসবে এখনো বহু লোকের সমাগম হয় এই অঞ্চলে। West Bengal Heritage Commission ২০০৮ সালে সাড়ে চারশো বছরেরও বেশি পুরোনো এই নাড়াজোল রাজবাড়িটি ও রাজবাড়ী সংলগ্ন সমস্ত ঐতিহাসিক নির্মাণসমূহকে Heritage Building ঘোষণা করে। এই রাজবাড়িটি ব্যবহৃত হয়েছে “সত্যদার কোচিং” নামে একটি জনপ্রিয় short film এর শুটিং এও।
আশা রাখবো এই ধরণের উদ্যোগ আরো বেশি করে নেওয়া হবে আগামী দিনে। নাড়াজোল রাজবাড়ী অচিরেই হয়ে উঠবে পর্যটকদের কাছে অমোঘ আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু -এই আশা রেখে শেষ করলাম আজকের পথ চলা।
নাড়াজোলে যেতে হলে মেদিনীপুর থেকে গাড়ি নিয়ে যেতে পারেন। থাকতে হলে মেদিনীপুরে অনেক থাকার ব্যবস্থা আছে। সরকারি ব্যবস্থাপনায় চাইলে যুব আবাসেও থাকতে পারেন। online Booking এর সুবিধা আছে সে ক্ষেত্রে।
কলমে ইন্দ্রানী ভট্টাচার্য্য, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইতিহাসে মাস্টার্স।
বর্তমানে রাজ্য সরকারের উচ্চপদে কর্মরতা। গত এক বছর ধরে লেখালিখি করছেন। ইতিমধ্যে তাঁর লেখা প্রকাশিত হয়েছে আনন্দমেলা,সাপ্তাহিক বর্তমান, পঞ্চায়েতি রাজ, বিচিত্রপত্র, পান্থজন, উড়নচন্ডী, সাতকাহন, স্টোরি মিরর, একপর্ণিকা সহ একাধিক ডিজিটাল এবং মুদ্রিত পত্র পত্রিকায়। আরো কিছু প্রকাশিত হবার অপেক্ষায়।