“স্বাধীনতার পরে কেটে গেছে কতকাল এসেছে নতুন যুগ, বদলেছে হালচাল। “

দীর্ঘ দুশো বছর পরাধীনতার নাগপাশ ছিন্ন করে ১৯৪৭ সালের ১৫ই আগস্ট এলো সেই বহু কাঙ্খিত স্বাধীনতা। স্বাধীনতার সূর্য উদিত হয়েছিলো ভারতাকাশে। উড্ডীয়মান হলো আমাদের ত্রিবর্ণ রঞ্জিত পতাকা। পরাধীন জাতির বুকে সূচনা হলো এক গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায়।
প্রতিটি মানুষের কাছে তাদের জন্মভূমি শ্রেষ্ঠ কারণ সেই দেশের আলো-হাওয়া-বাতাস-মৃত্তিকায় স্নেহ-মায়া-মমতায় প্রতিটি মানুষ জন্ম নেয় এবং বেড়ে উঠে পরিপূর্ণতা লাভ করে। দেশমাতৃকার স্নেহ নিয়ে চিনে নেয় পৃথিবীর রূপ-রস-গন্ধকে। স্বদেশ বড়ো আদরের, বড়ো ভালোবাসার, বড়ো প্রেমের সম্পদ প্রতেকের কাছে। তাই তো কবির মতো বলতে ইচ্ছা করে-
“ ও আমার দেশের মাটি
তোমার পরে ঠেকাই মাথা৷”
স্বাধীন পাওয়ার পর স্বদেশ প্রেম মানুষকে করে তোলে আবেগঘন৷ সেই আত্মিকটানেই জন্মভূমির প্রতিটি বস্তুকে আবেগমথিত করে তোলে৷ তাই তো কবির মতো বলে গেছেন- “আমার এই দেশেতে জন্ম যেন, এই দেশেতে মরি।”
স্বাধীনতার ৭৫ টা বছর কেটে গেল নানান পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে।আমরা কখনো হয়েছি বিভ্রান্ত, কখনো হয়েছি সাফল্যে উদ্বেলিত।৭৫ বছরে দেশের সংহতি বরাবর বিপন্ন হয়েছে দেশের মাটি সাম্প্রদায়িক দাঙ্গামা, রক্তক্ষয়ী সংগ্রাম দেশমাতাকে কালিমালিপ্ত করেছে। দেশের প্রায় অর্ধেক মানুষ আজ দুবেলা-দুমুঠো ভালোভাবে খেতে পায়না এবং প্রায় 40 শতাংশ মানুষ আজ শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত। তাছাড়াও শিশুশ্রমিকরা মাথার ঘাম পায়ে ফেলে তুলে দিচ্ছে ছোট-ছোট ভাই বোনদের মুখে ও  পরিবারের মুখে দু’বেলা দু’মুঠো অন্ন। অপুষ্টিতে ভুগছে শত শত গর্ভবতী নারী ও কোলের ছোট্ট ছোট্ট শিশুরা। অপরদিকে দেখতে পাওয়া যায় কিছু চোরাশিকারি স্বার্থান্বেষী কালোবাজারি চোরাকারবারিদের বিলাস-ব্যসনে মত্ত। স্বাধীনতার 75 টা বছর কেটে গেলেও আজও ভারতমাতার বুকে কান পাতলে শত শত বিপ্লবীদের ধ্বনি শোনা যায়। তাদের স্লোগান গুলি আজও প্রতিটি ভারতীয়কে উজ্জীবিত করে তোলে। আমাদের মনে জাগ্রত হয় দেশপ্রেম। স্বাধীনতা পাওয়ার পর এই ভারতের স্নিগ্ধ মাটিতে প্রস্ফুটিত হয়েছিল আশার সুগন্ধ গোলাপ। উদিত হয়েছিল নতুন রাঙা সূর্য। তাই প্রতিবছর এই দিনটি নতুন উদ্দীপনায় ভারতের প্রতিটি প্রান্তে মহাসমারোহে পালিত হয়। স্বাধীনতাকে ক্ষুদ্র অর্থে না ভেবে বৃৃহৎ ব্যপ্তি দিয়ে ভাবতে হবে কারণ ধনধান্যে পুষ্পে ভরা এই ভারতের মাটিতে সুজলা-সুফলা শস্য-শ্যামলা পরিপূর্ণ ভান্ডারের প্রতি হিংসা আছে যুগে যুগে কালে কালে প্রতিটি জাতি ও উপজাতির। ইংরেজদের আগমনে ভারতের মানুষ হয়েছিল  লাঞ্ছিত, বঞ্চিত ও নিপীড়িত। তাদের অত্যাচারের মাত্রা ও ব্যপ্তি  হৃদয়বিদারক। বহু প্রতিক্ষার পর নোংরা জীবন থেকে স্বাধীনতার দিনটি যথার্থই উত্তরণের দিন। যে স্বাধীনতা সম্পর্কে কবি শামসুর রহমান আবেগঘন হয়ে বলেছেন- “স্বাধীনতা তুমি রোদেলা দুপুরে মধ্যপুকুরে গ্রাম্য মেয়ের অবাধ সাঁতার।”
  কিন্তু প্রশ্ন ওঠে আমরা যে স্বাধীনতা পেয়েছি, তা পূর্ণরূপে ভোগ করছি?  জনৈক ব্যক্তি ঠিকই বলেছিলেন-“স্বাধীনতা অর্জনের চেয়ে তা রক্ষা করা বেশি কঠিন।” বর্তমান যুগে আমরা প্রতি নিঃশ্বাসে আশাভঙ্গের যন্ত্রণা অনুভব করছি। মানুষের লোভ লালসার শিকার হচ্ছে প্রকৃতি। আবার প্রকৃৃতি আজ বিপন্ন। প্রাকৃতিক বিপর্যয় মানবজাতিকে ধ্বংসের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে- জলোচ্ছ্বাস, সুনামি,খরা, বন্যা, ভূমিকম্প,দুর্ভিক্ষ,মহামারী মানুষের জীবনকে বিপর্যস্ত করে তুলেছে।এখন সবথেকে অতি মহামারী যে রোগ মানুষের জীবনকে ছিনিয়ে নিচ্ছে তা হলো করোনা। এই করোনার ভয়াবহ তাণ্ডব  সমস্ত পৃথিবী কে কাঁদিয়ে তুলেছে। উন্নত মানের দেশগুলো আজ শ্মশানে পরিণত হয়েছে। ছোট্ট একটা ভাইরাস কেড়ে নিল লক্ষ লক্ষ সন্তানকে মায়ের কোল থেকে। কত মায়ের সিঁথির সিঁদুর মুছে, অকালে ঝরে গেল কত প্রাণ। এই ভয়াবহ পরিস্থিতিতে প্রত্যেক ভারতবাসীকে সজাগ ও সচেতন থাকতে হবে যে আমরা যে অমৃতসম স্বাধীনতা পেয়েছি তা যেন অন্য কোন জাতি এসে ছিনিয়ে নিতে না পারে।
  আমাদের শপথ নিতে হবে যে আমরা আমাদের দেশের অশিক্ষা অজ্ঞতা দূর করে দেশকে স্বমহিমায় প্রতিষ্ঠা করব। দেশের অগ্রগতির জন্য সর্বাগ্রে দেশকে ভালোবাসতে হবে তা না হলে দেশকে উন্নতির পথে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া কখনো সম্ভব হবে না। তাইতো দেশকে ভালোবেসে স্বামী বিবেকানন্দ বলেছেন-“…ভারতের মৃত্তিকা আমার স্বর্গ,ভারতের কল্যাণ আমার কল্যাণ।”
     সমগ্র ভারতবাসীকে যখন বিবেকানন্দের বাণীর মর্ম উপলব্ধি করবে তখনই জাতীয় অগ্রগতি সম্ভব। ভারত তখন জগৎ সভায় শ্রেষ্ঠ আসন লাভ করবে। তাই শেষমেষ বলা যায় দেশাত্মবোধে হলো জাতীয় অগ্রগতির মূলমন্ত্র।


বন্দে মাতরম্।জয় হিন্দ।

কলমে দেবজিৎ দত্ত, জরুল,আমিলা, পূর্ব বর্ধমান, বয়স ১৩

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here