যে সকল কাজ সম্পাদন করার জন্য আমাদের মেধা ব্যয় করতে হয়, সে সকল কাজকে মেধাশ্রম বলা হয়। অর্থাৎ যখন আমরা নিজেদের চিন্তা, ভাবনা, জ্ঞান ইত্যাদি ব্যবহার করে কোন কাজ করে থাকি, সেটাই হলো মেধাশ্রম। আমরা যখন কোন কিছু নিয়ে চিন্তা করি, কোন সমস্যা হলে সেই সমস্যা সমাধানের উপায় খুঁজি, সেগুলো সবই এক প্রকার মেধাশ্রম। প্রতিদিনের পড়া শেখা, সেগুলো মনের মধ্যে ধারণ করে রাখা এবং ভবিষ্যতে সেগুলো কাজে লাগানোও মেধাশ্রমের উদাহরণ। মানবসমাজে ঘটে যাওয়া প্রতিদিনের ঘটনার সারসংক্ষেপ হলো ইতিহাস। বিশেষ বিশেষ ঘটনাসমূহ ইতিহাসে বর্ণিত হয়। অনেক কিছু বিবেচনা করে ইতিহাস লেখা সহজ নয়। তার জন্য অনেক মেধা খাটিয়ে লিখতে হয়। মানবসভ্যতার ইতিহাস থেকে আমরা জানতে পারি আগেকার মানুষ কিভাবে জীবনযাপন করত, কী খেত, কী পরতো, কোন ধরনের আচার-অনুষ্ঠান পালন করত। যে সময়কার মানুষ ইতিহাস লিখতে জানতো না বা যাদের লেখা ইতিহাসসমূহ আমরা পাইনি তাদের সম্পর্কে আমরা খুবই কম জানতে পারি। কাজেই ইতিহাস লেখার কাজে মেধাশ্রমের ব্যবহার আমাদের অনেক উন্নত জীবনযাপনে সহায়তা করে। ছবি আঁকা, গল্প-কবিতা লেখা, এসবই মেধাশ্রমের উদাহরণ। বই পড়ে অনেক কিছু শেখাও মেধাশ্রমের উদাহরণ। জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই মেধাশ্রমের প্রয়োজন। তাছাড়া মেধাশ্রম মানুষকে সৃজনশীল করে তোলে। মানুষ যদি পাখির ওড়া দেখে উড়োজাহাজ তৈরি কল্পনা না করত তাহলে আমরা আজ এক দেশ থেকে অন্য দেশে সহজে যেতে পারতাম না। আবার যেসব কাজে মেধাশ্রম থাকে, তেমনি কায়িক শ্রমও থাকে। মেধাশ্রমের পাশাপাশি কায়িক শ্রম দিতে না পারলে অনেক কাজই হয়তো সুষ্ঠুভাবে সম্পাদন করা যেত না। অন্যদিকে যেসব কাজে আমরা শারীরিক শ্রম দিয়ে থাকি, সে সকল কাজকে কায়িক শ্রম বলে। কায়িক শ্রম আমাদের শরীরকে সুস্থ রাখে। নিয়মিত ও পরিমিত কায়িক শ্রম অর্থাৎ ব্যায়াম আমাদের বিভিন্ন স্বাস্থ্যগত সমস্যা থেকে দূরে রাখে। এ শ্রম রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। যুগে যুগে মানুষ অনেক কিছু বানিয়েছে যা নিরলস এবং কঠোর কায়িক শ্রমের পরিচয় বহন করে। মিশরের পিরামিড, চীনের মহাপ্রাচীর, ভারতের আগ্রার তাজমহলের মতো স্থাপনা কিভাবে মানুষ হাজার হাজার বছর আগে কোন উন্নত প্রযুক্তির সাহায্য ছাড়া নির্মাণ করেছিল তা এক বিস্ময়ের ব্যাপার! সন্দেহহীনভাবে বলা যায় কঠোর কায়িক শ্রমের ফলেই তা সম্ভব হয়েছে। কিন্তু এই স্থাপনাগুলো নির্মাণ করতে প্রথমে মানুষের মেধা ব্যয় করতে হয়েছিল। এগুলোর নির্মাণ কৌশল সম্পর্কে ভাবতে হয়েছিল। প্রথমে মেধাশ্রম না দিলে তারা এগুলো নির্মাণ করতে পারত না। মানুষ তার মেধা শ্রম দিয়ে অনেক জিনিসপত্র তৈরি করেছে বলে জীবন আরামদায়ক হয়েছে। আমরা যদি মেধাশ্রম না দিতাম তাহলে মানবসভ্যতা দিনে দিনে উন্নত হতে পারত না। কিভাবে ঘর বানাতে হয় তা হয়ত আমাদের অজানাই থেকে যেত; আমরা হয়ত আজও পাহাড়ের গুহার মধ্যে বাস করতাম। আবিষ্কারগণ তাদের মেধাশ্রম না দিলে আমরা বৈদ্যুতিক বাতিও পেতাম না; পেতাম না মোবাইল, টেলিভিশন, এমনকি বাইসাইকেল। তাই বলা যায়, মানবসভ্যতার বিকাশে মেধাশ্রমই মুখ্য ভূমিকা রাখে। অনেক পেশামূলক কায়িক শ্রমের কাজ কষ্টকর। যেমন- কৃষিকাজ। বর্তমানে প্রযুক্তি ও নানা বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারের ফলে আমাদের কঠোর কায়িক শ্রমের পরিমাণ অনেক কমে গেছে। কায়িক শ্রমের অনেক কাজ আমাদের হয়ে যন্ত্র করে দিচ্ছে। আনা ফ্রাঙ্ক, টমাস আলভা এডিসন, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মতো অনেক মানুষ তাদের মেধাশ্রমের কারণে স্মরণীয় হয়ে আছেন। সকল বয়সের মানুষের কাজ করার শক্তি একরকম না থাকলেও আছে ভিন্ন ভিন্ন চিন্তন দক্ষতা। সেই মেধাকে কাজে লাগিয়ে মানুষ নতুন কিছু আবিষ্কার করতে সক্ষম হবে এবং পৃথিবী উন্নতির শিখরে পৌঁছাতে পারবে।

সুতরাং, কায়িক শ্রমের তুলনায় মেধাশ্রমের গুরুত্ব অপরিসীম।

By Anio Biswas Raiyan

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here