ক্যাঁচাল দেখলেই প্যাঁচাল পাড়তে ইচ্চে হল! বলি ক্যাঁচাল ক ধরনের হয়? মূলত দু ধরণের। যাই বলেন একটা ক্যাঁচাল হয়ে যায়, আরেকটি ক্যাঁচাল পাকানো হয়। ওর আর একটা নামও আচে, ডাকনাম! বাওয়াল। বাওয়াল টা ইচ্ছে করেই পাকানো হয়। কলেজে ফার্স্ট পিরিয়ডেই শোনা গেল আজ প্রফেসর আগের দিনের পড়া ধরবেন। কলেজ মানে, প্যাকনা ম্যালার বয়েস। প্রফেসর থিয়োরি পড়ালে ছাত্তর ছাত্রী প্রেমের গপ্প শোনে। গপ্প শুনতে শুনতে চুমুর জায়গা এলেই পটাপট পেছনের ডেস্কোওলারা ঠেলে ঠেলে সামনে। কে ল্যাকচার শুনবে। সব কলেজেই ছিটলে গোছের গাছপড়ুয়া দু চার পিস থাকতই, যাদের ছাত্র দশা জন্মান্তরেও ঘুচিত না, পেচুন থেকে কষে পাছায় কেউ এট্টা চিমটি দিয়ে দিত! ব্যস! স্যার সামওয়ান পিনচিং মি ফ্রম বিহাইন্ড! লে বাওয়াল! পেচুনের পার্টি তো আর ঘটনা জানত না! তারাও উই আর লিসেনিং, উই ডনট! ওয়াট ননসেন্স, ইংলিশে হতে হতে হঠাৎ মাতৃভাষায় শুরু, কি মনে করিস কি নিজেকে তুই ছাড়া কি কেউ পড়াশোনা করে না! অন্যজন বাওয়ালে ফোড়ন দিলো, সব জানা আছে, ছুটির পর গোখেল রোডে কে কে কোথায় যায়! ___তোদের মত ভিক্টোরিয়ায় বসে থাকি না! আমরা লাইব্রেরীতেও যাই!— যাস তো কি, বই নিয়ে বসে থাকিস! এতো পড়ে ওই তো পারসেন্টেজ! ল্যাও কেলো! এবার লাম্বার নিয়ে টানাটানি! বাওয়াল এবার পাক্কা ক্যাঁচাল! সাইলেন্স! ডেক্সে চাপড় পড়ল! তাতে কি! গুনগুনানি কি কমল! আলবাত নহি! কেটে গেল মিনিমাম পনের মিনিট! বাসস্ট্যান্ডেও চলল ক্যাঁচাল! ক্যাঁচাল আরো পাকতো, কলেজের সামনের সিনেমা হলে হরবখত ক্যাঁচাল! আসলে ইংলিশ মিডিয়াম বনাম বাংলা মিডিয়াম আর কী!— কি হয়েছে কি ভাই এখানে ! টিকিট পাওয়া যাচ্ছে না! —-মাইন্ড উর ওউন বিজনেস!—যাহ বাবা! এতে ইংলিশ ঝাড়বার কি হলো,সাহায্য কত্তে এলুম তো নাকি!— লিভ আস এলোন!– বাংলা মায়ের আংলো মেয়ে দেখি যে!– মাইন্ড ইওর ল্যাংগুয়েজ! — কেন জুহি চাওলা মামনি তুমি কী করবে!
— এই যে কাকু এদিকে একটু আসুন তো! কি ডিস্টার্ব করছে দেখুন তো!ব্যস হলুদ চেক কালো চেক পলকা ডট সব তেড়ে এলো! —-খবরদার কাকা! ঝিঙ্কুরদের পেচুনে বাতাস দিও না! হাজরাতে সিনেমা হল চালাও কিন্তু!
এটা কিন্তু পাক্কা লেগে যাওয়া ক্যাঁচাল!
শ্বশুর বাড়িতে লেগে যাওয়া ক্যাঁচাল কিন্তু একঘর! অনেক ভাই বোনের ঘর যাদের, তাদের একসেট প্লেয়ার বাড়িতে বাকি প্লেয়ার রা একসেট বাইরে থাকে। পুজোর সময় বাড়িতে গেলেই দু দিন সদ্ভাব, তিন দিনের দিন ক্যাঁচাল! কি ক্যাঁচাল হতে পারে ভাবুন!
— আমরা সারাদিন বাড়িতে খেটে খেটে মচ্চি, এক আধদিন একটু এসে হাতা খুন্তি ধরেছে কি ধরেনি অমনি পাক্কা রাঁদুনি একেবারে! সেজো বউমা, সেজো বউমা করে হদ্দ হচ্ছে আমাদের শাশুড়ী!– হ্যাঁ! আর গইলে ঘুঁটে আমরা থাবড়ে মরি! লুচি কি ফোলা ফোলা! সেজো বউমা করেছেন না! আহা, শ্বশুর মশাই আহ্লাদে আটখানা!– আমাদের মতো তো রোজ দিস্তে খানিক করে রুটি বানাতে হয় না! ন্যাকামির হদ্দ! রান্না ঘরের পাশে দাঁড়িয়ে শুনল সেজোবউ! ওমা কী অশিক্ষিত! ধুর! দু দিন থেকেছি যথেষ্ট।
চুপ করে শুনছিল বাতাসীও, উপরে উঠেই টুক করে আন বান করে লাগিয়ে দিলে মুনিবের কাচে! শাশুড়ীর মাথা গরম হল বেবাক! — আচ্ছা হিংসুটেতো! তোরাই তো সব ভোগ কচ্চিস, আমার ওই ছেলে বউ কি রোজ রোজ আসে! আমি আর বুড়োটা কম করেছি সংসারে! শাশুড়ী শূন্যে তীর ছুঁড়ল! টকা টক ফোনুয়া হল এবার মেয়েদের সাথে! মেয়েরা বুড়ির চীফ আডভাইসার! কিছুক্ষণ বাদেই কান্নার আওয়াজ, দোরে খিল! — মা বাবা কী কম করে, তোমাদের জন্য! উফফ একদিন দাদা বউদি এসেছে ব্যস ফোঁসফোঁসানি অমনি! কান্না বেড়ে গেল, বরের কানে মধু ঢালল ছোট বউ!
— তোমার দাদা ডাক্তার, তাই মা বউ বলতেই অজ্ঞান না! শুনে বরের মুখও বারকোশ, সেও উকিল!
সব কানে কান দিয়ে শুনলো বাতাসী, বাতাসের বেগে ছুটে চললো প্যাঁচাল পাড়া! এত্ত আস্পর্দা! শাশুড়ী শ্বশুরকে মুখ ঝামটা দিয়ে উঠল। রিলে করে অভিমান মুখভার, কুচুটিপনা ঝগড়া চলল! পরের দিন বাড়িতে ম ম করছে পেকে ওঠা ক্যাঁচালের গন্ধ।
তবে দুটি ক্যাঁচাল বাঙালী বিখ্যাত, যে যাই বলুক! একটি মনিব ভার্সেস কাজের লোক, অন্যটা আগে ছিল বাড়িওয়ালা – ভাড়াটে এখন ফ্ল্যাটবাড়ির দোতলা বনাম তিন তলা কী চারতলা! উফফফ! রোজ ক্যাঁচাল, পেকে লাট!
— তুমি ছুটি দিলে পরদিন তিনব্যালার এস্টেরা বাসন মাজাও। রুমা বউদি মেঝে নেয়!— নেয় কী রাখে আমি তো দেখতে যাই নি!– আমি কী মিথ্যা বলচি নাকি! বউদি কুঁড়ে নয়কো!– তবে কী আমি কুঁড়ে! মুখ সামলে কথা বল! — আমিতো সামলেই আচি। সত্যি বললেই দুষ! — তোমারতো উনি একেবারে ধম্মগুরু! আহা যেন কত রসগোল্লা সন্দেশ খাওয়াচ্ছে! হু! — খাওয়ায় তো! আমার ফণি মনির জন্যেও দে দেয়! বেশির ভাগ তো দেকি ন্যাতা ধোওয়া চা আর মুড়ি! — আচ্ছা! মনে হচ্ছে সরকারি চাকরি না ব্যাঙ্ক ডাকাতির পয়সা! __ডাকাত না চোর জানিনে! দেয় বলেই বলিচি!নে নে হয়েছে অনেক! বাসন মাজ এখন!৷
দুই পক্ষই মুখ তোম্বা করে রেখে দিল!
এবার দ্বিতীয়টাও পচা ক্যাঁচাল যাকে বলে!
–৷ ও মাসিমা শাড়িটা বেঁধে রেখেছেন কেন
— উপর থে ঝুলিয়ে দিলে আমরা কি অন্ধকারে থাকব মা! এইতো এট্টু বেলকণি!– প্রমোটর কে বলুন না! আমরা কোথায় দেব শাড়ি কাপড়– ছাদ আচে কী কত্তে! — তিনতলা থেকে পাঁচতলায় উঠব! লিফট আছে নাকি!– প্রমোটর কে বলো গে! শাড়ি ঝুললেই আটকাবো ব্যস!
কলমে শুভশ্রী সাহা, বারাসাত