<< জাপান পর্ব :২১ ১৫ই জুলাই থেকে ২৩য় জুলাই ,২০১৮
মেয়ের স্কুলের ছুটি পরবে আগামী ২০ই জুলাই। তার জন্য স্কুলে চলছে নানা আয়োজন। শেষ দিন নাকি সকাল থেকে বাচ্চারা কিন্ডারগার্টেন এ থাকবে, নিজেরা খাবার বানাবে , খাবে , রাতে ওখানেই শোবে আর পরদিন সকালে প্রার্থনা করে , প্রাতঃরাশ করে বাড়ি ফিরবে।
এই সপ্তাহে রয়েছে কিয়োটো তথা জাপানের অন্যতম প্রধান উৎসব গিওন মাৎসুরি। এর আগে আরও দুটো মাৎসুরি উপভোগ করলেও গিওন এর মাৎসুরি অনেকটাই আলাদা এবং সব থেকে বড় উৎসব। দেশ বিদেশ থেকে মানুষরা এই সময় জাপান ভ্রমণ করেন শুধু এই একটি কারণে।
এই উৎসব টির উৎসকেন্দ্র গিওন এর যাসাকা শ্রাইন, দু সপ্তাহ আগেই সেখানে ঘুরে এসেছি, এই কারণে , যে কি এমন আলাদা সেই শ্রাইন।গিওন মাৎসুরি সম্পর্কে বলতে গেলেই আগে বলতে হয় গিওন মৎসুরি (祇 園 祭), এটি প্রতিবছর জুলাই মাসের পুরো মাস ধরে সঞ্চালিত হয়। সেখানে বিভিন্ন ঘটনার সাথে ,১৭ই জুলাই এর ভাসা (ইয়ামাবোকো জঙ্কো) এর বিশাল মিছিল বিশেষত দর্শনীয়। খুব উপভোগ্য মিছিল (Yoiyama) আগে উৎসব সন্ধ্যায় হয়। ২০১৪ সাল থেকে, 48 ঘণ্টার বিরতির পর ২৪ জুলাই ভোরের দ্বিতীয় মিছিল পুনরায় চালু করা হয়। ১৭ই জুলাই এর মিছিলে বড় বড় float দেখা গেলেও ২৪ই জুলাই বিশেষত ছোট float চোখে পরে।
আমরা ১৫ই জুলাই এর বিকেলের দিকে রওনা দি , গিওন এর উদ্যেশে , কারণ আমাকে আমার জাপানীস বান্ধবীরা আগেই সতর্ক করেছিল , অত্যাধিক মাত্রার ভিড়ের জন্য। তাই ভাবলাম প্রথম দিন ই উপভোগ করে নি , পরে যত দিন বাড়বে ভিড় ও বাড়বে। আমরা পৌঁছে যাই বাস ধরে , সানজো র কাছে। চোখে পরে ছোট খাটো দোকান , রাস্তার পাশে তাদের পসার বিস্তার করছে।কিছুটা এগোতেই চোখে পরে আমাদের দেশের দোতলা রথের ন্যায় একটি কাঠামো , সামনে লণ্ঠনের ন্যায় ঝুলন্ত আলোকসজ্জা। রথের সাথে ও চারপাশে ছিল কিছু বিশেষ পরিধান পরিহিত জাপানীস মানুষ, যারা কেউ বাদ্যযন্ত্ৰ কেউ বা প্রার্থনাতে রত. আমরা এগোতে থাকি রাস্তার একপাশ ধরে , চোখে পরে কের পর এক ছোট বড় Floats .আর ও কিছু বলার আগে বলে নি , কি এই উৎসব আর কি এই Floats .
Floats এর ইতিহাস :
এই উৎসবে যে দুটো রকমের রথ দেখা যায় , তাদের নাম ইয়াম এবং হোকো। যমবোকো শব্দটি মিছিলের কাজে ব্যবহৃত দুটি ধরনের ভাস্কর্যকে বোঝায়: ২৩টি ইয়ামা এবং ১০টি হোকো । গিওন মাতসুরি আসল চিত্তাকর্ষক এর কারণ যে হোকো, তার বিশালতায় ২৫ মিটার লম্বা, ১২ টন পর্যন্ত ওজন, এবং সেটিকে মানুষের মতো বড় চাকার উপর টেনে আনা হয়। ইয়াম এবং হোকো উভয় ব্যাপকভাবে সাজানো হয় এবং অনন্য থিম এ উপস্থাপন করা হয়। ১৭ই জুলাই মিছিলটিতে ২৩টি ইয়াম এবং হোকো,এবং ২৪শে জুলাই মিছিলের বাকি দশটি ইয়াম এবং হোকো মিছিলে বের হয় ।
এটি একটি মহামারী প্রাদুর্ভাবের সময় দেবতাকে খুশি করার একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠান হিসাবে (নারা -হেইয়ান পিরিয়ড 869) পালিত হয় । এমনকি আজও, উৎসব এ একটি স্থানীয় পুত্রকে ঐশ্বরিক রসূল হিসাবে নির্বাচন করার অভ্যাস অব্যাহত রেখেছে। অনুষ্ঠানের সময় ১৩ই জুলাই থেকে ১৭ই জুলাই অবধি শিশুটিকে মাটিতে পা অবধি ফেলতে দেওয়া হয়না।
বিস্তারিত অনুষ্ঠানের বিবরণ:
গিওন মাৎসুরির ইভেন্টগুলি প্রকৃতপক্ষে গিওন জেলার মধ্যে নয় বরং কামো নদীর বিপরীত দিকে হয় । মিছিলের তিন দিনের পূর্বে, যাস এবং হোকো করাসুমা ও শিজো রাস্তার অন্তর্নিহিত অংশের অর্ধ কিলোমিটারের মধ্যে প্রদর্শিত হয়। সন্ধ্যায় সম্পূর্ণ এক আলোয় সুসজ্জিত হয়ে ওঠে। দুপাশে দেখা যায় অসংখ্য বিক্রেতা তাদের বিক্রয়ের জিনিস এর ডালা সাজিয়ে বসেছেন। কেউ মিষ্টি , কেউ পানীয় , কেউ হাত পাখা , কেউ কিছু কিছু। এই কদিন সন্ধ্যে ৬টা থেকে রাত ১১ টা অবধি ট্র্যাফিক বন্ধ থাকে।
১৭ ই এবং ২৪ শে জুলাই সকাল ৯ টা থেকে ১১:৩০ টা পর্যন্ত ভাসা (ইয়ামাবোকু জঙ্কো) সংঘটিত হয় এবং শিজো, কাওয়ামাছচি ও ওকে রাস্তার পাশে তিন কিলোমিটার দীর্ঘ পথ অনুসরণ করে (১৭ তম তারিখে শিজো-করাসুম থেকে শুরু হয় এবং করাসুমা- ওকে ২4 তম তারিখে)। কিছু প্রদত্ত আসন সিটি হলের সামনে সরবরাহ করা হয় (৩১৮০ ইয়েন; অগ্রিম বুকিং প্রয়োজন; 4000 ইয়েনের জন্য ভায়াগেইন মাধ্যমে ইংরেজীতে অনলাইন ক্রয় সম্ভব), তবে মিছিলটি বেশ দীর্ঘ পথ এবং সময়কালের উপর সঞ্চালিত হওয়ার কারণে ভাল মতামতও থাকতে পারে খুব বেশী কষ্ট ছাড়া অন্য কোথাও পাওয়া যাবে।
এই মিছিল ১৭ই জুলাই ও ২৪শে জুলাই ,সকাল ৯ টা থেকে ১১ টা তে শিজো, কাওয়ামাছচি ,ওইকে রাস্তার ওপর দিয়ে তিন কিলোমিটার দীর্ঘ পথ অনুসরণ করে সংঘটিত হয়। বেশির ভাগ স্থানীয় জনতা -বিদেশি রাস্তার দুধারে দাঁড়িয়ে এই মিছিলের আনন্দ উপভোগ করলেও , রয়েছে টাকা দিয়ে বসে দেখার ব্যবস্থা। অগ্রিম বুকিং এ এই সিট্ এর দাম ৩১০০ ইয়েন হলেও , দিনের দিন এই সিট্ এর দাম মাথা পিছু ৪০০০ ইয়েন।
এবার ফিরে আসি আমাদের অভিজ্ঞতায়। আমরা সেই সন্ধ্যেতে প্রায় সব ইয়ামা ও হোকো র কাছে যায়। সব থেকে বড় হোকো র ওপরেও উঠি। যার অবশ্য মূল্য দিতে হয়েছিল মাথা পিছু ১০০০ ইয়েন। তার জন্য তারা আমাদের কে দিয়েছিলো একটি খামে ভর্তি কিছু কাগজ আর একটি ঝাড়ুর ন্যায় জিনিস।সেটা কি সেটা কেউ ব্যাখ্যা না করে দিলেও আমরা ভেবে নিয়েছিলাম সেটা তথাকথিত ভগবানের কিছু উপহার।পরে অবশ্য বান্ধবী আইক , একই কথা বলেছিলো। এগুলো ঘর এ রাখলে ভালো হয় ইত্যাদি ইত্যাদি। ফেরার পথে ভিড় এটি বেড়ে গেছিলো যে ১০০ মিটার হাটতে আমাদের ৩০ মিনিটের ওপর লেগে যায়। রাতের আহার ওখানেই মল এ সেরে বাড়ি আসি।
১৭ই জুলাই মেয়ে কে আর আমরা সাথে নিয়ে যায়নি , কারণ আগের দিন যে ভিড় দেখেছিলাম , তা দেখে আমাদের যথেষ্ট ভয় জন্মায় মনে। তার ওপর আবার ট্রাফিক বন্ধ থাকবে, বাস চলবে না , কত দূর হাঁটতে হবে জানিনা। তাই সকাল সকাল মেয়েকে স্কুলে পাঠিয়ে দুজনে রওনা দি শিজোর উদ্দেশ্যে। কাওড়ামাছি স্টেশনের সামনে দিয়ে মিছিল যাবে , সেটা আমরা আগের দিন ভালো করে ম্যাপ দেখে মিলিয়ে নিয়েছিলাম।তাই কোথায় নামতে হবে কতদূর হাঁটতে হবে জানা ছিল। মেয়েকে বাড়ি পৌঁছে আবার স্কুল থেকে আনতেও হবে। এরই মধ্যে আমার জাপানীস বান্ধবীরা আমাকে বিদায় সম্বর্ধনাও জানাবে। যদিও আমি সেপ্টেম্বর এ ফিরে যাবো দেশে এ কথা চলছে আর সে কথা কি করে ওদের কানে পৌঁছেছে জানিনা।
কিন্ডার গার্টেন প্রায় দেড় মাস ছুটি , সেই অবধি আমি না থাকলে , সেই ভেবে ওরা আগে ভাগেই এই আয়োজন করেছে। পরে আসছি সে কথাই , আগে বলি মিছিলের কথা।
সকাল ৯টা নাগাদ আমরা পৌঁছে যায় ,ভিড় ভিড় , শুধু চারপাশে , কালো কালো মাথা। সব জাপানীসরা হাতে একটা হাত পাখা-গ্রীন টি র বোতল ,মাথায় টুপি , হাতে অবশ্যই ফোন বা ক্যামেরা। গরম রোদ দুটোই প্রচন্ড ছিল , তবু আমাদের ভারতীয় দের জন্য এমন কিছু না , তাতেই জাপানীসরা কুপোকাৎ। একের পর এক ছোট বড় রথ এর মিছিল শুরু হলো। সাথে সুদৃশ্য পোশাকে জাপানীসদের নাচ-বাজনা। সে এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতা, ভোলার মতো নয়। সব ক্যামেরা বন্দি করে তাড়াতাড়ি ফিরে এলাম। আসার পথ এ মেয়েকে একদম স্কুল থেকে নিয়ে ফিরলাম।
একটি অন্যতম অভিজ্ঞতার সাক্ষী হয়ে থাকলাম। যা দেখলাম , তার খুব অল্পই হয়তো লিখতে পারলাম। দেখলাম , এতো থিকথিকে ভিড়েও নিজেদের ডিসিপ্লিন হারাইনি জাপানীসরা। হাজার হাজার মানুষ একই জায়গায় জোর হলেও ছিল না কোনো শোরগোল – শব্দ দূষণ বা কিছু। সবাই নিজেও উপভোগ করছিলো , অন্যকেও সেই সুযোগ করে দিয়েছিলো। সেরকম ছিল ট্রাফিক ব্যবস্থা।
১৭ তারিখে যেতে পারিনি বলে , ১৮তে আমরা জাপানীস বান্ধবীরা আমাকে গুডবাই জানাবে বলে সভার আয়োজন করলো এবং আমাকে আমন্ত্রন পাঠালো। গত এক সপ্তাহ ধরে নানা বাহানায় অনেকেই এসে এসে আমাকে জিগেস করেছে আমি কি পছন্দ করি , বিশেষ করে কি জাপানীস খাবার। আমি প্রথম তা বুঝতে পারিনি , পরে আইক কে জিগেস করতে জানতে পেরেছিলাম ওরা আমার বিদায় সভার আয়োজন করছে। যেহেতু জাপানীস খাবারের মধ্যে বিশেষ এক রকমের সস এর গন্ধ থাকে যেটা আমার ভালো লাগে না , আমি আইক কে বার বার করে বলেছিলাম আমার জন্য তেমন কিছু ব্যবস্থা না করতে, একটু মিষ্টি -কুকিজ- লজেন্স আর অনেক অনেক গল্প হলেই আমি খুব খুব খুশি হবো।
আমার সময় জ্ঞান অনেকটা জাপানীস দের মতন ই। তাই ঠিক দিন , ঠিক সময় এর ৫ মিনিট আগেই যথাস্থানে পৌঁছে গেলাম।ওরা কিন্ডারগার্টেন এর একটা রুম নিয়েছিল। আমি ৫ মিনিট আগে পৌঁছানোর দরুন ওদের সাজগোজ একদম শেষ পর্যায়ে ছিল। কাঠের স্লাইডিং দরজা খুলতেই প্রথম বিস্ময় ওরা সব কিমোনো পরে তৈরি হচ্ছিলো , আমাকে দেখে হেসে বললো “মৌসুমী , surprise !!!”, সঙ্গে ও দেখালো ওরা আমার জন্য একটি কিমোনো এনেছে , আমাকে পরাবে বলে। আমার চোখ আনন্দে চিকচিক করে উঠলো।ওরা কি করে মনের মনের উইশ জেনে গেলো। আমি তো চেয়েছিলাম , একবার কিমোনো পরতে। কিমোনো অনেকটা বাঙালির শাড়ির মতো , বিশেষ অনুষ্ঠানে, পুজোতে ,ওরা ঠিক আমাদের শাড়ির মতো কিমোনো পরে। সেজে উঠলাম ওদের সাজে। আইক আমাকে কিমোনো পরিয়ে দিলো। জানলা দিয়ে উঁকি মেরে দেখলাম , মেয়ে আমার সুইমিং পুল এ বেশ মজা করছে। সাথে ফ্রুইট জুস আর কিছু কুকিজ নিয়ে গেছিলাম। কিন্তু আমি গিয়ে যা দেখলাম , তাতে বিশালাকার টেবিল এ আর কোনো জায়গা বেচে ছিল না , শুধু নানা রকম মিষ্টি , কুকিস , লজেন্স আরো কত কি। সাথে একজন নিয়ে এসেছিলো বাড়ি থেকে বানানো এক স্পেশাল সরবত, এক এনেছিল গ্রীন টি আর দুজন কে দেখলাম দুটো আইস কাটে যে মেশিন সেটা নিয়ে চলে এসেছে , একজন অটোমেটিক একজন হাতে চালানো। ভাবা যায় , কে জানে ওরা কি করে জানলো আমি বরফের গোলা ভালোবাসি , হয়তো আমিই গল্প করতে করতে বলেছি। কারণ জাপানে যে যে জায়গায় ঘুরতে গেছি , সেখানে বরফ গোলা থাকলে অবশ্যই আমি আর মেয়ে খেয়েছি।আমি বিদায়সভা তে যাবো বলে একটা গুডবাই কার্ড বানিয়েছিলাম ওদের জন্যও, যেখানে কার্ড এর ভেতরে সবার নাম আমি জাপানীস এ লিখেছিলাম। সেই কার্ড দেখা মাত্র ওরা এতো আনন্দ পেলো, যে বলার না। একজন আনন্দে আমাকে গলা জড়িয়ে ধরে বলার চেষ্টা করলো , আমি তার মনের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করতে সচেষ্ট হয়েছি। আমার কার্ড বানানো সার্থক হলো।
ওরা নিজেদের গল্প শোনালো আর আমি শোনালাম ভারতের , আমার দেশের গল্প, দেশের মানুষের গল্প। আমরা কি খাই , কি পড়ি , কি কি অনুষ্ঠান , আমাদের সাথে জাপানের কি কি মিল ইত্যাদি ইত্যাদি। মনে হচ্ছিলো সময় এখানেই থেমে যাক। আইক আমাকে বললো , ওরা কারোর জন্য কোনো দিন এরকম কিছু আয়োজন করেনি , আমিই নাকি প্রথম। কি সৌভাগ্য আমার , যে আমি ওদের মনে জায়গা করে নিতে পেরেছি।
“টি সেরেমনি” জাপানের একটি বিশেষ অনুষ্ঠান , যেটা ওরা কোনো বিশেষ উদ্দেশে করে থাকে। সেই দিন সেই উদ্যেশ্য ছিলাম আমি , নিজেকে আর চোখের জল কে আটকে রাখতে পারছিলাম না , এই ভেবে যে যারা আমার ভাষা বোঝে না , তারা আমাকে এতো ভালোবাসলো কি করে। আইক বাড়ি থেকে গ্রীন টি বানানোর কিছু সরঞ্জাম নিয়ে এসেছিলো। যা দেখলাম , তাতে , আমাদের দেশের যা গ্রীন টি বলে বিক্রি হয় (অন্তত মধ্যবিত্ত রা যেটা কে গ্রীন টি বলে ), সেই গ্রীন টি মোটেই ওরকম নয়। ছোট্ট একটা কৌটোতে একদম সবুজ রঙের চায়ের মসৃন গুঁড়ো। প্রথমে জল গরম করে , ওর মধ্যে সেটা মিশিয়ে ,ওরা অনেকক্ষণ ধরে নাড়ালো , তাও একটি প্রথাগত প্যাটার্ন এ। আমাকেও করলো , আর তারপর ওদের জাপানীস কাপ এ দু হাত দিয়ে ধরে কি ভাবে চা পান করতে হয় শেখালো। দারুন দারুন ব্যাপার।
আমাদের ভারতীয়দের কাছে খুব সামান্য হলেও , এটা যে ওদের কাছে ও আমার কাছে এক অসামান্য ব্যাপার হয়ে থাকলো তা বলার নয়। কিমোনো পড়ে সবাই অনেক ছবি তুললাম। কিছুক্ষন পর বাচ্চারাও এসে আমাদের সাথে যোগ দিলো। বেশ কাটলো সময় , হেসে। সুগাকুইন এ ফিরে এলাম ,সাথে অনেক খাবার , পানীয় আর অমূল্য স্মৃতি।
মেয়ের স্কুল ২০ই জুলাই এ ছুটি পড়ছে , এই দিন মেয়ে কে আমাদের স্কুলে ছাড়তে হলো দুপুরে। কথা ছিল সব বাচ্চারা , ওখানে থাকবে, নিজেরা রান্না করে খাবে, রাতে ওখানে শোবে আর সকালে প্রাতঃরাশ করে আবার ফিরে আসবে। কিন্তু আমি ভেবেছিলাম মেয়েকে এক রাতে রাখবো না , স্কুলে জানিয়েছিলাম মেয়ে একা থাকতে পারে না , আসলে তা নয় আমিই মেয়েকে একা ছাড়িনি। মেয়েকে স্কুলে ছাড়তে গিয়ে দেখলাম, দূরে দুই দিদিমনি একটু আড়াল থেকে বাচ্চাদের স্কুল গেট দিয়ে ঢোকার ছবি তুলছে , মেয়ে স্কুল গেট এই তার সঙ্গী খুঁজে পেলো,তাই একবার ও মা র দিকে না তাকিয়ে নাচতে নাচতে স্কুলের ভেতরে চলে গেলো।
রাত ৮ টা নাগাদ মেয়েকে বাড়ি আনলে মেয়ে যারপর ন্যায় রেগে ছিল তার মা- বাবা র ওপর, কেন তাকে সেখানে রাত কাটাতে দেওয়া হলো না ,সেই কারণে।মেয়ের কাছ থেকে শুনলাম, তারা আগে সুইমিং করেছে , তারপর অনেক রকমের খেলা , তারপর রান্না , প্রার্থনা আর শেষে নৈশভোজ। আমার মেয়ের মুখ বলে দিছিলো , সে কি পরিমান খুশি। সে তার মা র কাছেও ফিরে আসতে নারাজ আজ।
অনেক বুঝিয়ে- ভুলিয়ে তাকে রাতের মতো শান্ত করে সকাল সকাল মেয়েকে নিয়ে গেলাম স্কুল এ গিয়ে দেখলাম সব বাচ্চারা নিজে নিজে স্নান করে ব্রেকফাস্ট করছে। আধ্যা ও সেখানে যোগ দিলো। আমাকে স্কুল থেকে বলা হলো , ১০টার সময় মেয়েকে নিতে যেতে। নিতে গিয়ে দেখি আরো এক কান্ড ,আমার বিদায়সভার সাথে সাথে আমার মেয়ের জন্যও দারুন আয়োজন।
প্রধান হল ঘরে সবাই একত্রিত হলাম , সবাই একে একে আমাকে আর আমার মেয়ের জন্যও কিছু বলছিলো জাপানীস এ , যা আইক আমাকে ইংলিশ এ অনুবাদ করে দিছিলো। আমার মেয়ে আধ্যার জন্য ওরা অনেক গিফট আর ফেয়ারওয়েল কার্ড বানিয়েছে , যেখানে প্রতিটা বাচ্চার আধ্যার সাথে একটি ছবি ও কিছু লেখা রয়েছে।এক কথায় অসাধারণ। আমাকেও অনুরোধ জানানো হলো , কিছু বলার। ধন্যবাদ ধন্যবাদ আর ধন্যবাদ এছাড়া আমার আর কি বলার ছিলো। এতো ভালোবাসা এতো অল্প দিনে পেয়েছি , এর থেকে সৌভাগ্যের কি আছে।
<< জাপান পর্ব :২১ পরবর্তী :ক্রমশ