জাপান পর্ব ১০ ২৯শে এপ্রিল থেকে ৪য় মে
এই পুরো সপ্তাহটা নাকি জাপানে গোল্ডেন উইক (Golden Week)। স্কুল-অফিস সব ছুটি , চারিদিকে কেমন যেন উৎসব-ছুটি ছুটি ভাব , ঠিক আমাদের কালী পুজোর ছোটো ছুটির সপ্তাহের মতো। সপ্তাহে ৫ দিনের মধ্যে তিন দিন ছুটি (যদিও গোল্ডেন উইক এ মোট চারটি ছুটি , যার একটি এবার রবিবার পড়েছে ,২৯শে এপ্রিল ), তাই বেশির ভাগ মানুষ আরো দুদিনের ছুটি নিয়ে পুরো সপ্তাহের জন্য, যে যার মতো, ঘুরতে যায়। আমাদের ও প্ল্যান ছিল এই সপ্তাহে একটু বেশি ঘুরে নেবো , একটু কিয়োটো শহরের বাইরে। গোল্ডেন উইক ,ঠিক কি ?একটু ভনিতাতে আসি।
“গোল্ডেন উইক” এপ্রিলের শেষের দিকে এবং মে মাসের শুরুতে প্রায় এক সপ্তাহ বন্ধ হয়ে যায় জাপানের সব কর্মসংস্থান । কারণ এই সময়কালে জাতীয় ছুটির একটি ক্লাস্টার আছে। জাতীয় ছুটির প্রথম দিনটি ২9 শে এপ্রিল শুরু হয়, এটি সম্রাট শোয়ার জন্মদিন হিসাবে পালন করা, যিনি 1989 সালে মারা যান।সব ছুটি গুলির নাম জাপানীস এ একটু অন্য রকম শোনায়। যেমন
1)এপ্রিল ২9: শোয়া দিবস (昭和 の 日, শোয়া না হাই) …
2) 3 মে: সাংবিধানিক স্মৃতি দিবস (憲法 記念 日, কেনপৌ কিনিবি) …এই দিনে 1947 সালে নতুন সংবিধান কার্যকর হয়।
3) 4 মে: গ্রীনরি/সবুজ (Greenery ) দিবস (み ど り の 日, মিডোরি না হাই) …২006 সাল পর্যন্ত, গ্রিনারি দিবস ২3 শে এপ্রিল পালিত হয়, প্রাক্তন সম্রাট শোয়র জন্মদিন এর সাথে । সম্রাট গাছপালা এবং প্রকৃতি পছন্দ করতেন ।
4) 5 মে: শিশু দিবস (こ ど も の 日, কোদোমো না হাই) — এই দিনে বয়েজ (Boys ) উৎসব (টাংকা না সাক্কু) উদযাপন করা হয়। পরিবার তাদের ছেলেদের স্বাস্থ্য এবং ভবিষ্যতের সাফল্যের জন্য প্রার্থনা করে। গার্লস উৎসব ৩য় মার্চ উদযাপন করা হয়।
এই সময়টাতে সব দর্শনীয় জায়গায় খুব ভিড় থাকে , কারণটা অতি স্বাভাবিক। মেয়ের স্কুলে আগে থেকেই শিশুদিবসের প্রস্তুতি শুরু হয়ে গেছিলো। ছুটি পরার আগের দিন দেখলাম, ছুটির সময় মেয়ে নাচতে নাচতে হাতে কি একটা নিয়ে আসছে। দূর থেকে মাছের মতো মনে হলেও ওটা জাপানীস রা মোজা বানায় , মানে বানিয়েছে। সাথে হাওয়ায় ঘুরতে থাকা ঘূর্ণি , যা আমাদের দেশের মেলা তে বাচ্ছাদের এটি প্রিয় একটা খেলনা। সাথে সাথে এগিয়ে এলেন শ্রেণী শিক্ষিকা , আমাকে একটা কিছু ধরিয়ে দিলেন। বোঝাতে চাইলেন, এইটা যেন আমরা খাই , এটাও এক ধরণের রাইস কেক। কলা পাতার মতো মোড়ানো অনেকটা , যদিও কলা পাতা নয় সে। রাতে আমরা তিনজন সেটা কে খুব আগ্রহ সহ খুললাম অনেকটা নন-আলকোহলিক শ্যাম্পেন যেন। হা হা। এবার বলি কেমন খেতে !! সেদ্ধ ভাত ,বেশ ভালো করে পিষে , চিনি মিশিয়ে পরিবেশন এর মতো। চিটচিটে। মন্দ নয়।
আগের শনিবারের পরিকল্পনাতে, মাউন্ট হিয়েই বিফল হওয়াতে , এই সোমবার আমাদেç তালিকার আবশ্যক ভ্রমণ গন্তব্য , হিয়েই ছিল। মাউন্টহিয়েই (比叡 山 হুই-জ্যান) জাপানের কিয়োটো ও শিগা প্রিফেকচারের সীমান্তে অবস্থিত, কিয়োটোর উত্তর প্রান্তের একটি পর্বত।সেখানে UNSCO র ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ এঁর্যাকুজি (Enryakuji Temple ) মন্দির ও অবস্থিত। তাই এক ঢিলে দুই পাখির মতো। পাহাড় চড়া , সাথে আমার ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ তালিকাতে , আরো একটা সংখ্যা যোগ করার সুযোগ। দলে তিন ভারতীয় পরিবার , সোমবার দুপুর একটা। যাত্রা শুরু। এবার আর বাস নয়। ট্রেনে সরাসরি। এসে থেকে প্রথম সপ্তাহে হোলি উৎসবে যাওয়ার পর এই দ্বিতীয় বার ট্রেন চাপা। এই গত ১০ সপ্তাহে কম করে ৩০ বার বাস চেপেছি।ট্রেন স্টেশন আমার প্রতিবেশীর বাড়ির ন্যায়। ব্যালকনি দিয়ে অহোরাত্র প্রতি ৭ মিনিটে তাদের আনাগোনা। স্টেশনের নাম সুগাকুইন স্টেশন।
ইন্টারনেট থেকে সব খবরাখবর , মানে যাতায়াতের , সব আগাম নেওয়া ছিল। এখানে একটা ট্রেন শুধু মাত্র হিয়েই মাউন্টেন এর জন্য চালু হয়েছে , মানে উদ্বোধন হয়েছে, আমরা আসার ঠিক এক সপ্তাহ পরে। গায়ে মাউন্ট হিয়েই লেখা ,গাঢ় শ্যাওলা সবুজ ,এক বগির ট্রেন। আমরা যাওয়ার আগেই ট্রেনটা বেরিয়ে গেলো। যদিও চিন্তার কিছু নেই , কারণ ট্রেন প্রতি ৫-৭ মিনিট পর পর। তবে সব ট্রেন মাউন্ট হিয়েই যাবে না। আমাদের যেতে হবে Yase-Hieizan-Guchi রেল স্টেশন যেটা Eizan Main Line এর ট্রেন ধরেই যেতে হয়। ট্রেন এলো , ট্রেনের সামনে লেখা Yase .আগে থেকেই স্টেশন এ টিকেট কেটে নিয়েছিলাম , মাথা পিছু ২১০ ইয়েন।
সাত মিনিটের যাত্রা ট্রেনে। পৌছালাম Yase স্টেশনে। একদম, সেই পাহাড়ি জায়গার ছোট্ট স্টেশন। গল্পে পড়া , কল্পনাতে ঢুঁ দিয়ে যাওয়া জায়গা। বেরিয়ে ছবি তুললাম আশেপাশে। সামনেই একটা পাহাড়ি নদী বয়ে গেছে , ওপর দিয়ে কাঠের সেতু।চারিদিক যেন সবুজ সবুজ, চোখ ভরে যাচ্ছে ,তৃপ্ত মন। সেতুর নিচের নদীতে , অনেকেই স্নান এ নেমেছে। এখানে অনেক পর্যটকরা শুধু স্নান করতে আর প্রকৃতিকে উপভোগ করতে আসে,শোনা কথা ।
এখন থেকে ৪ মিনিটের হাঁটা পথে মাউন্ট হিয়েই কেবল কার (Mt Hiei Cable Car yase )স্টেশন।পাহাড়ের ওপরের কেবল কার তথা ট্রেন আমি কোনো দিন ও চড়িনি। এ এক নতুন অভিজ্ঞতা। ইউরোপীয় শৈলীতে কাজ করা এই কেবল গাড়ি গুলো বড় বড় জানলা দেওয়া দুই বা চার সিটের ,যাতে পর্যটকরা খুব ভালো ভাবে প্রকৃতি আর মাউন্ট হিয়েই কে উপভোগ করতে পারে।মনে একটাই প্রশ্ন এ গাড়ি এতো চড়াই তে চলে কি করে ! ওঠার সময় নয় উঠলো , কিন্তু এতো খাড়া ঢাল এ কিভাবে চলে এই গাড়ি , কি ভাবে ব্রেক নেয়। প্রশ্নের জবাব চোখের সামনেই ছিল। এমনকি টিকিট গুলো বিশেষ, কারণ তারা অত্যন্ত পুরু কাগজে মুদ্রিত, যা আজকাল খুব বিরল। এই পুরু টিকিট চিত্তবিনোদন এবং স্মারক হিসাবে খুব জনপ্রিয়।এখান থেকে ইজান ক্যাবল কার মাউন্ট হিয়েই শীর্ষস্থানে পৌছে দিতে টিকিট মূল্য 530/1040 ইয়েন (একদিকের পথ / ফেরত) আর রোপওয়ে তে গেলে ¥ 820/1640 (এক-পথ / ফেরত) .এই কেবল কার প্রতিদিন প্রতি 30 মিনিটে 8:30 থেকে 17:30 পর্যন্ত চলাচল করে । এই ট্রিপের শেষ লেজ একটি রুপওয়েতে 3-মিনিটের যাত্রা, যা প্রতি 10 থেকে ২0 মিনিটের সময়ে সকাল 9 টা এবং সন্ধ্যা 6 টা অবধি চালু থাকে।
ইয়াস(yase ) থেকে মাউন্ট হিয়েই (Hiei ) শীর্ষে, 15 মিনিটের যাত্রা ইজানে ক্যাবল কার উপভোগ করলাম ,যা জাপানের সবথেকে খাড়া পথে যাত্রার একটি। চারিদিকে কাচের ন্যায় জানলা দিয়ে দেখতে থাকলাম নিচের অপূর্ব কিয়োটো কে , আস্তে আস্তে উঠতে থাকলাম 840-মিটার চূড়ান্ত শীর্ষে।ধীরে ধীরে ছোট থেকে ছোট হতে থাকলো নিচের গাছ পালা ঘর বাড়ি। শিখরটি কিয়োটো শহরের তুলনায় ছয় ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি ঠান্ডা ,স্বাভাবিক ভাবে একটু ঠান্ডা লাগা শুরু হলো।
এখানে এসে একটা জায়গা ছিল মানে কেবল কার আর রোপওয়ে র সংযোগস্থল , যেন ব্যালকনি তে বসে শো দেখার মতো। ওপর থেকে নিচের পাহাড় ঘেরা শহর যেন অনেক অনেক বেশি রোমাঞ্চকর।সৌন্দর্য্য কে যেন নিজেই নিজের মধ্যে লুকিয়ে রেখেছে মাউন্ট হিয়েই , তার বন, তার গাছ এবং অপূর্ব কিছু অংশ কিয়োটো, Ohara, হ্রদ Biwa এবং Shiga এর .সেখানে আশেপাশে কয়েকটা বসার জায়গায় ও ছিল।
ব্যাগ রেখে সবাই (বিশেষ করে আমি )মেতে উঠলাম ছবি তোলাতে। ডাক পড়লো , পরবর্তী যাত্রার। রোপওয়ে হাজির। চড়ে বসলাম তাতে। পাহাড়ের রোপেওয়েতে আগেও চড়েছি সিকিমে। পুরো শহরের ওপর দিয়ে সে রোপওয়ে ছিল। আর এ একদম আলাদা। আস্তে আস্তে মাউন্ট হিয়েই এর শীর্ষের কাছাকাছি আমরা। আমার পরম সৌভাগ্য যে এখানে কেবল কার বা রোপওয়ে এর মতো ব্যবস্থা আছে,নইলে আমার মতো মানুষের এতো চড়াই পাহাড়ে ওঠা কোনো মতে সম্ভব না। অনেক ছোট পাহাড়ের রাস্তাতে যেতে, গাড়ি তে হাজারো বার বমি করার রেকর্ড আমার আর মেয়ের আছে। বিদেশিরা বেশির ভাগ ট্রেক করেই এই পাহাড়ে ওঠে।
ওপরে উঠেই মনে হলো , কি একটা যেন নেই। ব্যাস। পিঠের ব্যাগ ,ভাস্কর,আগের কেবল কার স্টেশন এ ফেলে এসেছে। কি মুশকিল। এবার কি হবে। মনে মনে ভাবছিলাম , জাপান এ জিনিস হারাবে না। এ দেশে কেউ বোধহয় কারোর জিনিস নেয় না। যে দেশে বছরে অপরাধ ১% ও নেই , পুলিশ থানাতে মাছি মারে , সেখানে আমি আমার ব্যাগ নিশ্চই ফেরত পাবো। হে হে। সে অনেক অনেক ভাবনাচিন্তা মনের মধ্যে ঘোরপাক করছে , সাথে সাথে বরের জন্য কিছু তিক্ত ভাবনাও (মানে গালি আর কি ) .বিপদ তো চুরির নয় , ঝামেলা হলো জাপানীস কে ইংলিশ বোঝানো। কি করে বোঝাই আমরা আমাদের ব্যাগ আগের স্টেশনে ফেলে এসেছি। ও মাগো। এক বলি, তো আর এক ভাবে। আমি বাইরে বেরিয়ে বসে থাকলাম।ভাস্কর তারপর কি বলে, কি অঙ্গভঙ্গিমাতে, ওদের বোঝাতে সক্ষম হয়েছিল জানিনা। ব্যাগ ফেরত এলো, ১০ মিনিট পর।
এখন থেকে নিচে নেমে গেছে গলি পথ। সবাই হাত শুরু করলাম বাসস্টপ এর দিকে, যদিও জানতাম এই দূরত্ব হাঁটা পথে যাওয়া সম্ভব। তবু। গন্তব্য এনয়েরকুজি টেম্পল(Enryakuji Temple)।সময় তখন অনেক হাতে তাই বাস স্টপ থেকে একটু এগিয়ে চার পাশের দৃশ্য দেখতে ব্যস্ত হয়ে গেলাম সবাই । বলা হয়নি , দিনটা ছিল মেঘলা। তাই যতটা দেখতে পাচ্ছিলাম, তার থেকে ছবিতে এত স্পষ্ট এলো না সব দৃশ্য। চেপে বসলাম বাস এ।
রাস্তা দিয়ে চোখে পড়লো অসাধারণ সব দৃশ্য। মনে হচ্ছিলো হেঁটে গেলে বেশ হতো।
আরেকটা কথা বলতে ভুলে গেছি , এই এনর্যাকুজি টেম্পল, এখানে অনেক ভাবে আসা যায়। যেমন ধরুন সরাসরি বাস বা যে ভাবে আমরা পৌছালাম সেভাবে , এছাড়া Sakamoto Cablecar দিয়ে যেটা সারা বছর চালু থাকে , কিন্তু যে ভাবে আমরা এলাম মানে Eizan Cablecar and Ropeway , এটা শীতকালে বন্ধ থাকে (মানে ডিসেম্বর এর প্রথম থেকে মধ্য মার্চ অবধি)।
পৌছালাম ৫ মিনিটের পথ শেষে মন্দিরের সামনে।এটাও একটি বিশ্ব ঐতিহ্য। আমার দেখা ৬ নম্বর বিশ্ব ঐতিহ্য, জাপানে। প্রবেশ মূল্য মাথা পিছু ৭০০ ইয়েন।সামনের পথ ধীরে ধীরে ওপরে উঠেছে। দুদিকে বহুমূল্য পেইন্টিং ঝোলানো। তার নিচে অনেক কিছু লেখা , যা আমার বোধগম্য হবার নয় , কারণ সব এ জাপানীস এ লেখা। এই একটা বিষয় ,জাপানের , আমার ভালো লাগেনি। মনে হয়েছে এরা বোধহয় একগুঁয়ে। মানে টা হলো ,জাপানীস এ পড়ো , নইলে পড়োনা। এদিকে এতো সুন্দর জায়গা জাপান , যেখানে দেশে বিদেশ থেকে বিভিন্ন সময় ,হাজারো পর্যটক ঘুরতে আসে। কিন্তু এদের ৯৫% জায়গা শুধু জাপানীস লেখা বা বলা , বা সেখানকার সব লোক জাপানীস এ বলে , ইংলিশ বোঝেও না , বলা তো দূর। এতো সুন্দর জায়গা , এতো বছরের ঐতিহ্য , কিন্তু পর্যটকের নিজের দায়িত্ব -সেটা বুঝে নেওয়া , যেমন টি হচ্ছে আমাদের ক্ষেত্রে। ইচ্ছে হলে বোঝো , না হলে শুধু দর্শন এ মন খুশ রাখো।
ভেতরের মন্দিরে (টডো) ক্যামেরা প্রবেশ নিষিদ্ধ। ভেতরে মহান বুদ্ধের মূর্তির সাথে দু পাশে আরো কিছু মূর্তি। উইশ বাক্স এর সাথে ধূপকাঠি, মোমবাতি রাখা। আর সাথে লেখা আছে মূল্য। যেমন ধরুন ২ টো মোমবাতি , ১০০ ইয়েন। ৩ টি ধূপকাঠি ১০০ ইয়েন ইত্যাদি। অনেকটা আমাদের দেশের পুজোর মতো। টাকার বিনিময়ে আশীর্বাদ। তবে এখানে কেউ দেখার নেই , কত টাকা আপনি উইশ বাক্স এ ফেলে কটা মোমবাতি নিলেন। বলেছিলাম না , এরা একটু বেশি বিশ্বাস করে। যাক সে কথা , মেয়ে তো আমার মানার নয় ,তাই উইশ বাক্স এ কইন coin ফেলার সাথে সাথে ধুপ মোমবাতি সব এ জ্বালিয়ে এসেছিলাম।
মন্দিরের থেকে বেরিয়ে বাঁ হাতে পরে একটা বিশালাকায় ঘন্টা। এতো বড় ঘন্টা ,এই প্রথম ,আর হ্যাঁ , এদের ঘন্টাও অন্যরকম। সেখানে ঘণ্টা বাজাতেও লাইন দিতে হয়েছিল যথারীতি।
ঘন্টার জায়গা টা ছিল গাঢ় কমলা , আর সাথে চারপাশ শরৎ এর হালকা লাল পাতা আর সবুজ পাতার আচ্ছাদন। সে এক অসাধারণ দৃশ্য। লিখতে লিখতে যেন চলে গেলাম জায়গাটা তে আরো একবার। এতো ভালো লাগা পটভূমি খুব কম দেখা যায় , বিশেষ করে ছবি তোলার জন্য। জাপানের প্রতিটা জায়গা আপনি থেকে এতো সুন্দর , যে যেখানে সেখানে দাঁড়িয়ে পড়লেও , অসাধারণ পটভূমি পাওয়া যায় , আর সেখানে এরকম ,যেখানে সব রং যেন মিলে মিশে একাকার।
অসময় এর পাতা , ছবি তুললাম।
নিচে নেমে গেছে সিঁড়ি। সেখানে খাবার ব্যবস্থা র সাথে আরো একটা মন্দির। এতো হলো আমার চোখে যেটুকু ধরা পড়া এনর্যাকুজি। একটু জেনে নি এবার এর আসলো ইতিহাস।
জাপানের হিউজান (比叡 山) পর্বতমালার অবস্থিত, Enryakuji (延 暦 寺) জাপানি ইতিহাসে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মঠ এবং জাপানি বৌদ্ধ ধর্মের তেন্ডাই সম্প্রদায়ের সদর দপ্তর। অনেক প্রভাবশালী ভিক্ষুরা Enryakuji এ অধ্যয়নরত, পরে আরও কয়েকটি সেক্টরের প্রতিষ্ঠাতা, যেমন Pure Land (জোডো), জেন ও নিচেরের সম্প্রদায়।
এনর্যাকুজি 788 খ্রিস্টাব্দে সন্ন্যাসী সাইকো কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত হয়, যিনি চীনে টেন্ডাই বৌদ্ধকে জাপানে প্রবর্তন করেন। 3000 subtemples এবং যোদ্ধা monks যারা প্রায়ই অন্যান্য মঠ এবং রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে সংগ্রাম করে শক্তিশালী বাহিনী ছিল।ওদা নুনানাগা, সব সম্ভাব্য প্রতিদ্বন্দ্বীকে সরিয়ে ফেলার এবং দেশকে একত্রিত করার জন্য এটিকে আক্রমণ করেন এবং বেশির ভাগ এনরিকাকুজি বাড়ির ধ্বংস করে এবং এর অধিকাংশ বাসিন্দাদেরকে 1571 সালে হত্যা করে। অতএব, আজকের মন্দিরের বেশিরভাগ ভবনগুলি এডো পিরিয়ডের শেষের দিকে, যখন Enryakuji পুনর্নির্মাণ করা হয়েছিল তখনকার তৈরী ।
Enryakuji এর আকর্ষণ তিনটি এলাকায় ঘনীভূত হয়: টডো (পূর্ব এলাকা) Todo, সত্যো (পশ্চিম এলাকা) Saito এবং ইয়োকাওয়া Yokawa। মূল এলাকাটি টোডো এলাকা, যেখানে মন্দির মূলত প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল এবং যেখানে মূল ভবনগুলি বেশির ভাগই অবস্থিত, সেখানে মূল হল Kompon Chudo (কমপোনের চুদো) এবং আমাদে Amida হল, যা 1937 সালে জটিলতায় যুক্ত ছিল।
বনের মধ্য দিয়ে একটি সুন্দর হাঁটা পথ Saito এলাকার সাথে টডো কে সংযুক্ত করে, যার প্রধান ভবন শাকা Shaka হল, পর্বতমালার প্রাচীনতম ভবন। একটু দূরে দূরে অবস্থিত একটি নিকৈনিক Ninai হাউস, একটি কেন্দ্রীয় করিডোর দ্বারা একে অপরের সাথে সংযুক্ত দুটি হল। বেনকেই নামক এক সন্ন্যাসী, যিনি তাঁর কিংবদন্তি শক্তিতে পরিচিত ছিলেন, তিনি একবার তাঁর কাঁধে হল নিয়ে এসেছিলেন বলে বলা হয়।
Yokawa এলাকা, অন্যান্য দুই এলাকার উত্তরে কয়েক কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এবং যেটা খুব কম পর্যটকই পরিদর্শন করে । এর প্রধান বিল্ডিং, ইওকাওয়া সেন্ট্রাল হল, আংশিকভাবে থাম দ্বারা নির্মিত একটি ঢাল।
কি ভাবে পৌঁছাবেন , তা তো আগেই বললাম , এবার জেনে নি
প্রবেশ সময় :
প্রতিদিন খোলা এই মন্দির টি প্রবেশ সময় ঠিক এরকম :
8:30 থেকে 16:30 (মার্চ থেকে নভেম্বর)
9:00 থেকে 16:00 (ডিসেম্বর)
9:00 থেকে 16:30 (জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি)
Saito এবং Yokawa এলাকায খোলা হয় 30 মিনিট পরে এবং প্রায় বন্ধ হয় 30 মিনিট আগে।
প্রবেশ মূল্য :
700 ইয়েন (তিনটি স্থানে প্রবেশ), 500 ইয়েন (ধনভাণ্ডার)
ফেরার সময় আগে থেকে ঠিক ছিল আমরা বাস ধরবো। বাস এর টাইম ৫ টা বেজে ১৫ মিনিটে , যতদূর মনে পরে। বাস নম্বর ৫৭। ভাড়া ৬০০ ইয়েন মাথা পিছু। দিন বাড়তে বাড়তে ঠান্ডাও বাড়ছিল। হু হু হাওয়া। খুব ইচ্ছে হচ্ছিলো এক কাপ চা এর। থের্মোস থাকা সত্বেও আজকাল আনা হয়না, ব্যাগ ভারী হয়ে যাবে বলে। বসে বসে এক গাদা চিপস খেলাম। বাস হাজির। বাস এ চড়তেই , মেয়ে বলে উঠলো , “গন্ধ পাচ্ছি মা “, বুঝে গেলাম , বিপদ হাজির। আমার মেয়ের গন্ধ লাগা মানে বমি পাওয়া। বাস হুর হুর করে , আঁকে বাঁকে নেমে যেতে লাগলো। লক্ষ করলাম প্রতিটি বাঁকে , বাস এর ডান দিকে একটা লাল বাতি জ্বলে উঠছে। আমার ধারণা এটা যাত্রীদের সতর্কতার জন্য। এমন একটা সময় এলো যে, ওই লালা বাতি ৩০ সেকেন্ডের এর কম টাইম এ জ্বলে উঠছিলো। আমার ও বিপদ বাড়ছিল , মানে মেয়ের সাথে আমরা বমি পাচ্ছিলো। বাস এ উঠলে ছোট থেকে বমি পায় , তবে বড় হবার পর সেই প্রবণতা একটু কমেছে , তবুও আমি বাস এর যাত্রা সব সময় এড়াতে চাই। কিন্তু জাপানে এসে , কোনো দূষণ ছাড়া পরিবেশে , অত্যাধুনিক বাস এ চড়তে আমার এখনো পর্যন্ত একটুও খারাপ লাগেনি, বরং বেশ লেগেছে। আজ ব্যতিক্রম ,কারণ,সেই পাহাড়ি আঁকাবাঁকা রাস্তা। সাথে কোনো প্লাষ্টিক ও নেই , এদিকে মেয়ে এই করে কি সেই করে বমি। সৌভাগ্যবশতঃ প্রিয়াঙ্ক দা এনেছিল প্লাষ্টিক তার ছেলের কথা ভেবে। উফফ। নামার ঠিক ৫ মিনিট আগে , মেয়ে ঢালতে শুরু করলো, মানে বমি। এখানে এক টুকরো কাগোজ কেউ বাইরে ফেলে না , এদিক ওদিক মূল মূত্র তো দূর ,আর অসময়ের বমি। অনেক ধন্যবাদ প্রিয়াঙ্ক দা কে , সেই ভাগ্যিস এর জন্য।
মেয়ে তো একদম কাহিল , সাথে মা ও। ফিরলাম বাড়িতে ৬:৩০ নাগাদ, সন্ধ্যে। এসে এক কাপ চা। মঙ্গল -বুধবার আবার বাবা মেয়ের অফিস আর স্কুল,তাই রুটিনের অনিয়ম হলো না। বৃহস্পতিবার আর শুক্রবার দুদিন ছুটি ছিল। খেয়ে দেয়ে বেশ কাটলো দুদিন, সাথে ছিল kyanat mall . আমার এলাকার ৩ টি বড় বড় mall , Kyanat -Life আর Izumiya .এখন mall এর সাথে সাথে আমাদের পছন্দের দোকান ও ফিক্স। সাথে ছিল Mac -D আর চিকেন।
অপেক্ষায় এবার শনিবার , শহর থেকে দূরে কোথাও।
<<জাপান পর্ব ১০ ক্রমশঃ>>
CopyRight @ M K Paul, May,2018
[…] <<জাপান পর্ব ৯ জাপান পর্ব ১১>> […]
[…] <<জাপান পর্ব ১১ ৫ই মে থেকে ৯ই মে ,২০১৮ […]
You could certainly see your enthusiasm within the article you write.
The sector hopes for more passionate writers like you who are not afraid to say how they
believe. All the time follow your heart.
I enjoy your writing style really enjoying this internet site.
Ι ɡenuinely emjoy examining oon this web site ,
itt contains eⲭсellent articles . “Sometime they’ll give a war and nobody will come.” by Cɑrl Sandburg.
All we must do should start our minds.