এই গোটা বিশ্ব জুড়ে বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে আছে হাজারও স্থাপত্য। কালের ক্ষতচিহ্ন নিয়েও স্থাপত্যগুলি বর্তমানের কাছে অতীতকে তুলে ধরে ইতিহাস প্রিয় মানুষের কৌতুহল, আগ্রহের পিপাসা মিটিয়ে এক বন্ধুর মতো সাহায্য করে। এরকমই একটি শতাব্দী প্রাচীন স্থাপত্য পুরীর জগন্নাথদেবের মন্দির,যার প্রতিটি গ্রথনে আছে ভারতবর্ষ তথা ওড়িশার নিজস্ব স্থাপত্য রীতির বৈশিষ্ট্য, ইতিহাস ও পুরাণ। অতীতকালের কামড়কে নিজ অঙ্গে ধারণ করে চরিত্রের পরিবর্তন ঘটিয়ে জনপ্রিয়তার সঙ্গে বর্তমানে গর্বের সহিত দাঁড়িয়ে থেকে ফিসফিস করে অতীতের কথা বলে চলেছে সবসময়।         

মন্দিরের অবস্থান:–ভারতবর্ষে  চারধামের অন্যতম উড়িষ্যা রাজ্যের পুরী জেলার গ্র্যান্ড রোডে অবস্থিত জগন্নাথদেবের মন্দির। কলিঙ্গ বৌদ্ধস্থাপত্যে নির্মিত এই মন্দিরটি শ্রীমন্দির নামে সমধিক পরিচিত। কেন বিখ্যাত:– এটি মূলত ভারতবর্ষের চারধামের অন্যতম ধাম বা প্রসিদ্ধ মন্দির হিসেবে খ্যাত। তাছাড়া আরো যেসব বিশেষত্ব এই মন্দিরটিকে বিশ্বের দরবারে ভারতবর্ষের পর্যটন স্থান হিসেবে জায়গা করে দিয়েছে সেগুলি হল—                                    

১) জগন্নাথদেবের এই মন্দিরটি শতাব্দী প্রাচীন এবং মন্দিরটি ভারতবর্ষের তথা বিশ্বের স্থাপত্য শিল্পের এক অসাধারণ যথাযোগ্য নমুনা। বর্তমান মন্দিরের গঠন কাঠামোর সঙ্গে জড়িত উড়িষ্যা রাজ্যের স্থাপত্যের নিজস্ব শৈলী ও নিজস্ব বহু হস্তশিল্প। তবে শুধু মূল মন্দিরটিই নয়, শ্রীমন্দিরের পাশাপাশি মন্দির থেকে তিন কিলোমিটার দূরে অবস্থিত গুন্ডিচা মন্দিরেও প্রাচীন ওড়িয়া স্থাপত্য শিল্পের বহু নিদর্শন আছে।                               

২) মন্দিরের পাশাপাশি জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রার মূর্তির সঙ্গে জড়িয়ে আছে বহু অলৌকিকত্ব ও পৌরাণিকতা।                            

৩) সারা বছর দেশ-বিদেশের বহু ভক্তগণ নিজের মনোস্কামনা পূর্ণের জন্য এই মন্দিরে এসে ভিড় জমান।                                                       

৪) মন্দিরে অবস্থিত জগন্নাথদেবের রান্নাঘরকে ঘিরে রয়েছে একাধিক রহস্য। এই রান্নাঘরের অলৌকিকত্ব নিয়ে নানা রহস্যময় গল্প প্রচলিত আছে।      

৫) মন্দিরে অবস্থিত রত্নভান্ডারকে ঘিরে রয়েছে মানুষের কৌতুহল এবং আকর্ষণ।                       

৬) জগন্নাথদেবের মহাপ্রসাদ এবং পুরীর সমুদ্র বিশেষভাবে ভক্তগণকে আকৃষ্ট করে।                 

৭) আষাঢ় মাসে পালিত জগন্নাথদেবের রথযাত্রা সারা বিশ্বে খুব জনপ্রিয়। রথের রশিতে টান দেওয়ার জন্য রথযাত্রায় দেশ-বিদেশের বহু ভক্তগণ আসেন।                                                

৮) মন্দির চত্বরে জগন্নাথ মন্দির ছাড়াও রয়েছে আরো অনেক মন্দির। যথা– বিমলা, মহালক্ষ্মী, বটগণেশ, সূর্যদেব, পঞ্চমুখ হনুমান ইত্যাদি।

মন্দিরের ইতিহাস:– পুরীর জগন্নাথ মন্দিরটি বহু যুগ প্রাচীন। জগন্নাথদেবের ইতিহাস খুঁজলে দেখা যায়, হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষদের মধ্যে মান্যতা আছে ভগবান বিষ্ণু মর্ত্যে বিভিন্ন সময়ে তাঁর চার ধামে যাত্রা করে থাকেন। এই চার ধাম হলো– বদ্রীনাথ ধাম, দ্বারিকা ধাম, পুরী ধাম, রামেশ্বরম। কথিত আছে, ভগবান বিষ্ণু ভারতের হিমালয় পর্বতের শিখরে অবস্থিত বদ্রীনাথ ধামে স্নান করেন, গুজরাটের দ্বারিকা ধামে গিয়ে বস্ত্র পরিধান করেন, ওড়িশার পুরী ধামে ভোজন করেন এবং সবশেষে তাঁর শেষ ধাম রামেশ্বরমে গিয়ে বিশ্রাম নেন। পৌরাণিক কাহিনী অনুসারে, দ্বাপর যুগে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ তাঁর মৃত্যুকালে পুরীতে ছিলেন। পুরী হিন্দু ধর্মাবলম্বী মানুষদের কাছে এক অন্যতম পূজ্য ধাম। যেখানে ভগবান জগন্নাথ, তাঁর দাদা বলরাম এবং ছোটো বোন সুভদ্রা একসাথে পূজিত হয়ে আসছেন। জগন্নাথদেবের স্বপ্নাদেশ পেয়ে রাজা ইন্দ্রদ্যুম্ন ১০৭৮ সালে জগন্নাথ মন্দির নির্মাণ করেন। ১১৭৪ সালে মেরামত করার পর আজকের জগন্নাথ মন্দির এই রূপ ধারণ করে।          

মন্দিরের গঠন:– কালের প্রভাবে মন্দিরের পরিবর্তন ঘটেছে বহুবার। পুরীর জগন্নাথ মন্দির এতই  প্রাচীন যে এর কোনো ঐতিহাসিক রেকর্ড পাওয়া অসম্ভব। জগন্নাথ মন্দিরে অহিন্দুদের প্রবেশ কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। কলিঙ্গ স্থাপত্য শৈলীতে নির্মিত এই মন্দিরটি শ্রীমন্দির নামেও পরিচিত। গর্ভগৃহের মাথায় রয়েছে একটি সুউচ্চ চূড়া। প্রদীপ উৎসর্গের জন্য রয়েছে ফসিল হয়ে যাওয়া একটি কাঠের স্তম্ভ। মন্দিরের প্রধান দরজা সিংহদ্বারের রক্ষক দেবতা জয় ও বিজয়। মূল প্রবেশপথের সামনে রয়েছে অরুণস্তম্ভ নামে এক স্মৃতিস্তম্ভ।মন্দিরের চূড়ায় লাগানো আছে একটি পতাকা ও সুদর্শনচক্র।                                      

জগন্নাথদেবের মূর্তির ইতিহাস:– মালাবারের রাজা ইন্দ্রদ্যুম্ন একবার স্বপ্নে জগন্নাথদেবের দেখা পেলেন। স্বপ্নে জগন্নাথদেব রাজাকে আদেশ দেন,নীলাঞ্চল পর্বতের গুহায় তাঁর একটি মূর্তি আছে। সেই মূর্তিটিকে নিয়ে এসে রাজা যেন মন্দির বানিয়ে পূজা করেন। স্বপ্নাদেশ পেয়ে রাজা ও তাঁর সৈন্য,অনুচররা নীলাঞ্চল পর্বতের দিকে যাত্রা করেন মূর্তিটি খোঁজার জন্য। তাঁদের মধ্যে বিদ্যাপতি নামে এক ব্রাহ্মণ ছিলেন। তিনি শুনেছিলেন সবর জাতির লোকেরা এই নীলমাধবের মূর্তিটিকে নীলাঞ্চল পর্বতের গুহায় লুকিয়ে রেখেছেন এবং সবর জাতির প্রধান বিশ্ববসুর সাহায্য ছাড়া সৈন্যরা মূর্তিটি খুঁজে পাবেনা।বিশ্ববসু ছিলেন নীলমাধবের পরমভক্ত। পরে বিদ্যাপতি কৌশলবশত বিশ্ববসুর কন্যাকে বিবাহ করেন এবং বিশ্ববসুর কন্যার সাহায্য বিদ্যাপতি পর্বতের গুহা থেকে মূর্তিটিকে নিয়ে এসে রাজার হাতে তুলে দেয়। মূর্তিটি চুরি হওয়ায় বিশ্ববসু চরম শোকগ্রস্ত হন। রাজা পুনরায় মূর্তিটিকে নীলাঞ্চল পর্বতের গুহায় রেখে আসেন এবং মন্দির নির্মাণের কাজ শুরু করে দেন। মন্দিরের নির্মাণ কাজ শেষ হলে রাজা জগন্নাথদেবকে ফিরে আসার জন্য আকুতি জানায়। জগন্নাথদেব তখন রাজা ইন্দ্রদ্যুম্নকে স্বপ্নাদেশে বলেন,দ্বারিকা নগরী থেকে একটি নিমগাছের গুঁড়ি ভাসতে ভাসতে সমুদ্রে আসবে ও সেই কাঠ দিয়ে যেন তাঁর মূর্তি তৈরি হয়। পরেরদিন রাজার সৈন্যরা সমুদ্রতটে উপস্থিত হলে সৈন্যরা গুঁড়িটিকে ডাঙায় তুলতে ব্যর্থ হয়। প্রভুর  লীলা বুঝতে পেরে রাজা বিশ্ববসুর কাছে গুড়িটিকে ডাঙায় তোলার জন্য সাহায্য চান। বিশ্ববসু একা কাঁধে করে গুঁড়িটিকে ডাঙায় তুলে আনেন। কাঠ পাওয়া গেলেও মূর্তি তৈরি নিয়ে সংশয় দেখা দেয় রাজার। তখন বিশ্বকর্মা এক বৃদ্ধ কারিগরের রূপে উপস্থিত হন। বিশ্বকর্মা মূর্তি নির্মাণের জন্য তিনটি শর্ত রাখেন। যথা– প্রথমতঃ মূর্তি তিনি একা তৈরি করবেন, দ্বিতীয়তঃ মূর্তি তৈরির সময় দরজা সম্পূর্ণ বন্ধ থাকবে, তৃতীয়তঃ মূর্তি নির্মাণ তিনি ২১ দিনের মধ্যে সম্পন্ন করবেন।রাজা শর্ত মেনে নিলে কারিগর দরজা বন্ধ করে কাজ শুরু করেন। রাজা ইন্দ্রদ্যুম্নের রাণী গুন্ডিচা দেবী রোজ বন্ধ দরজায় কান পেতে ঠকঠক শব্দ শুনতেন। একদিন রাণী শব্দ শুনতে না পেয়ে রাজাকে জানান। রাজা নিরুপায় হয়ে দরজা খুলে দেখেন কারিগর উধাও এবং তিনটি অর্ধনির্মিত মূর্তি পড়ে আছে। জগন্নাথ ও বলরামের হাত অর্ধেকটা তৈরি হয়েছে এবং সুভদ্রার হাত-পা নেই। তখন রাজা দুঃখে ভেঙে পড়লে দেবর্ষি নারদ তাঁর সম্মুখে হাজির হন এবং বলেন, এই অর্ধনির্মিত মূর্তি পরমেশ্বরের এক স্বীকৃত স্বরূপ। রাজা তখনই মূর্তিগুলি মন্দিরে প্রতিষ্ঠা করেন এবং তখন থেকে ভগবান জগন্নাথ, সুভদ্রা ও  বলরামের এই অর্ধনির্মিত মূর্তি পুরীর মন্দিরে পূজিত হয়ে আসছে।                                  

মন্দিরের অলৌকিক রহস্যসমূহ:– প্রাচীন ভারতের ঐতিহাসিক স্থানগুলির মধ্যে অধিকাংশই এখনও পর্যন্ত রহস্য বহন করে চলেছে। যার মধ্যে অন্যতম হলো পুরীর জগন্নাথদেবের মন্দির। এই মন্দিরে এমন অনেক রহস্য আছে যা আজও উদঘাটন করা সম্ভব হয়নি। এসব ঘটনার নেই কোনো বৈজ্ঞানিক তাৎপর্য। এই অলৌকিক রহস্যগুলি হল– 
১) মন্দিরের চূড়ায় লাগানো পতাকাটি ওড়ে বায়ুর গতিবেগের বিপরীতে। সন্ধ্যার পর যখন সমুদ্রের দিকে হাওয়া বয়,পতাকা দিক পরিবর্তন করে ওড়ে। কীভাবে এই ঘটনা ঘটে,আজও তার উওর দিতে পারেনি বিজ্ঞান।          
২) মন্দিরের চূড়ায় লাগানো সুদর্শনচক্রকে পুরীর যেকোনো জায়গা থেকে দেখা যায়। মন্দিরের চূড়ায় চক্রের অবস্থান,আড়াল কাটিয়ে কীভাবে তা দেখা যায়, তা নিয়েও রয়েছে রহস্য।
৩) মন্দিরের চূড়ার উপর দিয়ে কখনো কোনো পাখি উড়তে দেখা যায়নি,বসে না পাখি। এমনকি কখনো কোনো বিমান মন্দিরের চূড়ার ওপর দিয়ে যায়নি।  

৪) মন্দিরে ছায়া দিনের কোনো সময় ভূমিতে পড়ে না। সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত কেউ দেখতে পায়না মন্দিরের ছায়া।                                           

৫) সন্ধ্যাবেলায় মন্দিরের দ্বিতীয় সিঁড়িতে পা রাখলে সমুদ্রের শব্দ শোনা যায়না। আবার তৃতীয় সিঁড়িতে পা রাখলে শোনা যাবে সমুদ্রের শব্দ। কেন এমন হয়, তার নেই কোনো উত্তর বিজ্ঞানের কাছে।

 ৬) পুরীর মন্দিরে জগন্নাথ,সুভদ্রা, বলরামের মূর্তি কাঠের তৈরি। প্রত্যেক ১২ বছর পর একটি গোপন রীতি মেনে তাঁদের নতুন শরীর প্রদান করা হয়। মন্দিরের মুখ্য পুরোহিত স্বপ্নাদেশ পেয়েছিলেন যে মূর্তি নির্মাণের জন্য গাছটি নিমগাছ হতে হবে।তাতে চন্দনের গন্ধ থাকবে। গাছে শঙ্খ, চক্র,গদা,পদ্মের চিহ্ন থাকবে। সেই গাছে যেন কোনো পাখি না বসে,গাছটি সাপেরা ঘিরে রাখবে। এবং পুরোনো মূর্তি নতুন মূর্তির নীচে মাটি চাপা দিয়ে রাখা হয়। 

৭) পুরীর মন্দিরের সবচেয়ে রহস্যময় জিনিস হলো “জগন্নাথদেবের রান্নাঘর”। এই রান্নাঘরে ৩২ টি কক্ষ আছে। এখানে ভোগ রন্ধনের জন্য কোনো যন্ত্র, বিদ্যুৎ ব্যবহৃত হয়না। যতই ভক্ত সমাগম হোক মন্দিরে কখনোই অভাব পড়ে না ভোগের। বহুদিন ধরে রেখে দিলেও নষ্ট হয়না ভোগের প্রসাদ।ভোগ রন্ধনের জন্য ব্যবহৃত উনুনের সংখ্যা ৭৫২টি। উনুনের ওপর ৯টি পাত্র একটির ওপর আরেকটি বসিয়ে রন্ধন করা হয়। আশ্চর্যের কথা হলো, সবার আগে উপরের পাত্রে এবং সবশেষে নীচের পাত্রে রান্না হয়। ভোগ রান্না হয় পোড়ামাটির পাত্রে,যা একবার ব্যবহারের পর আর ব্যবহৃত হয়না।  প্রতিদিন জগন্নাথের বিশেষ ৫৬ পদেরও বেশি ভোগ  রান্না হয় এখানে। রান্নাঘরের ভিতর দিয়ে গঙ্গা ও সরস্বতী নদী প্রবাহিত হয়েছে,যা বাইরে থেকে দেখা যায় না। এই নদীর জল থেকে জগন্নাথদেবের ভোগ রান্না করা হয়। কথিত আছে, জগন্নাথদেবের ভোগ রান্না করেন স্বয়ং লক্ষীদেবী এবং রান্নার কাজে যুক্ত সেবকগণ তাঁকে সহায়তা করেন। ভোগ রান্নার দায়িত্বে থাকেন ৫০০ জন রাঁধুনি এবং রান্নার অন্যান্য কাজে নিযুক্ত থাকেন ১৫০০ এর বেশি সেবক। ভোগ রন্ধনের জন্য অগ্নির নাম বিষ্ণু অগ্নি,যা কখনো নেভেনা। তাই জগন্নাথদেবের এই রান্নাঘরকে ‘অদ্ভুত রান্নাঘর’ বলে অভিহিত করা হয়।                                                                           

মন্দিরের রত্নভান্ডার:– মন্দিরের গোপন কক্ষে সাতটি ঘর আছে। সেগুলি হল রত্নভান্ডার। জগন্নাথের রত্নভান্ডারের রহস্য অধরাই রয়ে গিয়েছে। সেই কয়েকটি কক্ষ থেকে উদ্ধার হয় প্রচুর অলঙ্কারসমূহ। পুরীর মন্দির প্রশাসনের তৈরী হিসেব অনুযায়ী, মণিমুক্তো খচিত ১২০ কেজি স্বর্ণ অলঙ্কার,২২০ কেজি রৌপ্য অলঙ্কার, রূপোর বাসনপত্র সহ বিভিন্ন দামী বস্তু রত্নভান্ডারে পাওয়া গেছে।                                               

জগন্নাথদেবের তাত্ত্বিক ব্যাখা:– জগন্নাথের মধ্যে বিষ্ণুর সকল অবতারের চিহ্ন আছে। বিশেষ বিশেষ অনুষ্ঠানে তাঁকে বিষ্ণুর একএকটি অবতারে পূজা করা হয়। রথযাত্রার দিন জগন্নাথকে বামন        অবতারে পূজা করা হয়। জগন্নাথ মন্দিরে অহিন্দুদের প্রবেশ কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। হিন্দুধর্মের সকল সম্প্রদায়ে তিনি পূজিত হন। মন্দিরের পূজারিরা শাক্ত ও বৈষ্ণব সম্প্রদায়ভুক্ত। শৈব ও শাক্তরা জগন্নাথকে শিব মনে করেন। প্রচলিত বিশ্বাস অনুসারে, ভক্তদের ইচ্ছে পূরণের জন্য তিনি সব দেবতার রূপ ধরতে পারেন।

মন্দিরের বিশেষ উৎসবসমূহ:– প্রতিদিন পুরীর জগন্নাথদেবের মন্দিরে পূজা হয়। বহু ভক্তের সমাগম ঘটে। আষাঢ় মাসে অনুষ্ঠিত  জগন্নাথদেবের  রথযাত্রা মন্দিরের প্রধান উৎসব। এছাড়া জগন্নাথদেবের স্নানযাত্রা এবং নেত্রোৎসব ইত্যাদি বহু ভক্তের সহিত অনুষ্ঠিত হয়।                

জগন্নাথদেবের রথযাত্রা:– পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের  প্রধান উৎসব জগন্নাথদেবের রথযাত্রা। দীর্ঘ বিচ্ছেদের পর কৃষ্ণের বৃন্দাবন প্রত্যাবর্তনের প্রতীকী রূপে পালিত হয়ে থাকে এই রথযাত্রা উৎসব। এই উৎসবের সময় জগন্নাথ, সুভদ্রা, বলরামের মূর্তি গর্ভগৃহ থেকে বের করে এনে কাঠের তৈরি তিনটি বিরাট রথে করে ৩ কিমি দূরে গুন্ডিচা মন্দিরে নিয়ে যাওয়া হয়। ভক্তরাই এই রথগুলি টেনে নিয়ে যায়। এখানে প্রতিবছর কাঠের নতুন রথ তৈরি হয় এবং রথযাত্রার পর সেই রথ ভেঙে সেই কাঠ দিয়ে জগন্নাথদেবের ভোগ রান্নার জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত হয়। জগন্নাথের রথের নাম নন্দীঘোষ,যার উচ্চতা ৪৫ ফুট। ৮৩২ টি কাঠ দিয়ে নির্মিত এই রথের চাকা ১৬ টি এবং রথটি লাল ও হলুদ কাপড়ে সাজানো থাকে। বলরামের রথের নাম তালধ্বজ, যার উচ্চতা ৪৪ ফুট। ৭৬৩ টি কাঠ দিয়ে নির্মিত এই রথের চাকা ১৪ টি এবং রথটি লাল ও সবুজ কাপড়ে সাজানো থাকে। সুভদ্রার রথের নাম দর্পদলন,যার উচ্চতা ৪৩ ফুট। এই রথের চাকা ১২ টি এবং রথটি লাল ও কালো কাপড়ে সাজানো থাকে। এই রথগুলিতে চড়ে জগন্নাথ, সুভদ্রা ও বলরাম রথযাত্রার দিন ৭ দিনের জন্য তাঁদের মাসির বাড়ি যান। পুরীর রাজা রথের সম্মুখে রাস্তা ঝাঁট দেন। রথযাত্রার দিন এখানে দেশ-বিদেশের বহু ভক্ত সমাগম হয়। তাঁরা এই রথের রশি স্পর্শ করে পূণ্য অর্জন করতে চান।

 জগন্নাথদেবের লীলাভূমি ও ভারতবর্ষের চার ধামের অন্যতম ধাম হিসেবে এই মন্দির হিন্দু, বৈষ্ণবদের পবিত্র তীর্থক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। কালক্রমে এই ধামের পরিচয় বিদেশে পাড়ি জমিয়েছে বহু আগেই। মন্দির এলাকা সর্বদা ‘জয় জগন্নাথ’ ধ্বনিতে মুখরিত থাকে। ওড়িয়া স্থাপত্য, ভাস্কর্য, পৌরাণিক ও বিভিন্ন অলৌকিক রহস্যের সংমিশ্রণে পুরীর এই জগন্নাথদেবের মন্দির ও মূর্তি নির্মিত হয়েছে। বহু শতাব্দী প্রাচীন ওড়িয়া স্থাপত্যের এক উৎকৃষ্ট নির্দশন এই পুরীর জগন্নাথদেবের মন্দির।

কলমে হিরন্ময় চক্রবর্তী, সিউড়ি, বীরভূম

বর্তমানে দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র। পৌরাণিক বিষয়ে লেখালেখি করতে ভালোবাসেন। লেখালেখির পাশাপাশি তিনি একজন মৃৎশিল্পী।

52 COMMENTS

  1. খুব সুন্দর হয়েছে।লেখাটি পড়ে জগন্নাথ মন্দির সম্পর্কে অনেক অজানা তথ্য জানতে পারলাম।

  2. দারুন হয়েছে… সত্যিই অসাধারণ 👍👍👍👍পড়ে খুব ভালো লাগলো 👌🙏

  3. খুব সুন্দর হয়েছে👍👍👍… পড়ে খুব ভালো লাগলো 👍🙏

  4. অপূর্ব লিখেছিস তুই ঋজু। সত্যি অসাধারণ হয়েছে তোর লেখা এই প্রবন্ধ😍😍😍🥰🥰🥰👍🏻👍🏻👍🏻👌🏻👌🏻👌🏻👌🏻❤️❤️❤️

  5. খুব সুন্দর লিখেছেন আপনি 👌 এইভাবে আরো লেখা চাই আপনার কাছে থেকে 😊 খুব ভালো লাগলো 👍❤❤💖💖

Leave a Reply to Jahir Hossain Cancel reply

Please enter your comment!
Please enter your name here