ভূতের সঙ্গে বাংলার সম্পর্ক অত্যন্ত গভীর।বাংলার মতো এত গাছপালা,বন জঙ্গল কোথাও দেখা যায় না। এই বাংলা অনেক ভূতের জন্মদাতা। ভূত বিভিন্ন ধরনের হয়।যদিও একথা এখনও অমীমাংসিত যে ভূত আদৌ আছে কিনা! তবে ভূতের অস্তিত্ব নিয়ে তর্ক যতই চলুক এমন অনেক অভিজ্ঞতার কথা শোনাযায় যার বৈজ্ঞানিক ব্যাখা অনেক সময় দেওয়া সম্ভব হয় না। অনেকে বলেন ভয় থেকেই ভূতের জন্ম। তা হতেই পারে তাহলে একথাও বলতেই হয় ভূত থেকেই ভয়ের জন্ম। ভূত আর ভয় –এরা যেন হরিহর আত্মা। ভূত আর এখন সামান্য বিষয় নয়,ভূত এখন গবেষণার জিনিস হয়ে উঠেছে। ভারতের বাইরে উন্নত ও কুসংস্কারমুক্ত দেশেও ভূতের অস্তিত্ব বা অলৌকিকত্ব কে স্বীকার করা হয়েছে।
আজ কোনো বানানো গল্প বলব না।ভূত নিয়ে শোনা বন্ধুর জীবনের সত্য ঘটনা তোমাদের সামনে তুলে ধরব।
শীতের এক সান্ধ্য আড্ডায় ভূত প্রেত নিয়ে আলোচনা যখন জমে উঠেছে তখন আমি, রতন কে জিজ্ঞাসা করলাম–আচ্ছা রতন, তুই ভূতে বিশ্বাস করিস?
–দেখ ভূতে আমি বিশ্বাস করি না। তবে একটা এরকম অভিজ্ঞতা আমার হয়েছে।
–মানে ভূত দেখার অভিজ্ঞতা? বলিস কী রে! বল বল।
–ঠিক ভূত দেখার না ,অনুভবের। তবে সেটা ভূত কিনা তা জানি না।
কফির কাপে এক চুমুক দিয়ে রতন কে বললাম,–নে শুরু কর তোর ভূত অনুভবের গল্পটা।
–গল্প নয় রে, আমার বাস্তব অভিজ্ঞতা।
–আচ্ছা, সেই বাস্তব অভিজ্ঞতাটাই বল।
রতন কফির কাপে আর এক চুমুক দিয়ে শুরু করল – আমি তখন 11এ পড়ি। দাদুর ক্যানসারের শেষ ধাপ চলছে খুব বাড়াবাড়ি। যেদিন মারা যাবে ঠিক তার আগের দিন খুব বাড়াবাড়ি হল। মামার বাড়ি ঘন্টাখানেকের পথ। তাই খবর পেয়েই আমরা সবাই গেলাম। গিয়ে দেখি ঘরে মরাকান্না শুরু হয়ে গেছে। মামা ডাক্তার নিয়ে এসেছে। ডাক্তার একটা ইঞ্জেকশন দিতেই কিছুক্ষণের মধ্যে দাদু একবারে সুস্থ হয়ে উঠে বসল। সব নাতি নাতনিদের মধ্যে আমি দাদুর খুব আদরের । আমাকে জড়িয়ে ধরে অনেক আদর করল গালে কপালে চুমুটুমু খেল। যাইহোক দাদু ঠিক আছে দেখে আমরা বাড়ি ফিরলাম।
পরদিন রাত্রে এই 10–10.30 সময় আবার ফোন এল দাদুর আবার খুব বাড়াবাড়ি। আমি আর বাবা দুজনে বাইকে করে গেলাম খবর করতে। গিয়ে শুনলাম ডাক্তার জানিয়েছেন আর বেশিক্ষণ নেই। মামা বলল দাদু নাকি সন্ধ্যা থেকে আমাকে দেখতে চেয়েছে।
বাড়িতে মা ভাই একা থাকায় বাবা আমাকে বাড়ি পাঠিয়ে দিল।রাত তখন ঠিক 12টা। ল্যান্ড ফোনে খবর এলো দাদু আর নেই। বাবা জানাল মামাতো বোনের জামাই ওর চারচাকা গাড়ি নিয়ে আমাদের বাড়ি আসছে মা কে নিয়ে যাবার জন্য। বাবা,গাড়িতে মা আর ভাই কে পাঠিয়ে দিয়ে আমাকে ঘরে থাকতে বলল। কারণ ঘর একবারে ফাঁকা রাখা ঠিক হবে না। আমার সাহস আছে জেনে বাবা আমাকে জিজ্ঞাসা করল একা থাকতে পারব কিনা। আমি একাই থাকতে পারব বলাই বাবা বলল,”ঠিক আছে তাই কর।”
মা-রা চলে গেলে বাইরের দরজা লাগিয়ে এসে আমি শুলাম। এতো বড়ো ঘরে আমি একা।ঘুম আসতে চাই না। দাদুর কথা মনে পড়ছিল। এর মধ্যে কখন চোখ লেগে গেছে।
হঠাৎ একটা শব্দে ঘুমটা ভেঙে গেল। রুমের খোলা জানলা দিয়ে বাইরের আবছা আলো ঘরটাতে সামান্য একটু আলো-আঁধারির মায়া ছড়িয়েছিল।
কিন্তু তাতে স্পষ্ট কিছু দেখা যাচ্ছিল না।
আলোয় আমার ঘুম আসে না।তাই রুমের নাইট ল্যাম্পটা বন্ধ করে রেখেছি। ফলে ঘরের ভিতর অন্ধকার। জানলার বাইরে বাগানের দিকে চোখ যেতেই মনে হলো কেউ যেন দাঁড়িয়ে আছে। অন্ধকার থাকলেও একদম স্পষ্ট মনে হলো কেউ যেন একটা দাঁড়িয়ে।
আমি “কে?” বলে চিৎকার করতেই সেই ছায়া মূর্তি সরে গেল।
আমি আবার “কে ওখানে?”–বলে আবার চিৎকার করলাম। কিন্তু কোনো শব্দ নেই।
বিছানা থেকে দূরে সুইচবোর্ড। কোনো বেড সুইচ নেই। তাই মাথার কাছে টর্চ নিয়ে ঘুমায়।তাই
টর্চটা জ্বালতে গেলাম।কিন্তু সেটা খুঁজে পেলাম না।
কোথায় গেল টর্চ?
আমি তো বালিশের পাশেই ওটা রেখেছিলাম।
মনের ভুল ভেবে আমি আর উঠে লাইট ধরাবার চেষ্টা করলাম না।
এর ঠিক কিছু পরেই ঘরের মধ্যে একটা হাঁটার আওয়াজ পেলাম। ভাবলাম ঘর ফাঁকা জেনে কেউ চুরি করতে নামে নি তো?
তাই এবার বিছানা থেকে উঠে আলো জ্বেলে বাইরেটা একবার দেখে এলাম কিন্তু কোথাও কিছু নেই। আলো নিভিয়ে আমি এসে আবার শুলাম।
ঘুমিয়ে না গেলেও একটা তন্দ্রা ভাব। কিছুক্ষণ পরে আবার মনে হলো বাগানে কেউ যেন হাঁটছে। আবছা আলোয় এবার স্পষ্ট দেখতে পেলাম একটা কালো মুখ। মুখটা ঠিক পরিস্কার নয়,কিন্তু অবয়বটা আমার খুব চেনা। দেখে মনে হলো যেন দাদু।
ছায়াটা বাগান থেকে ক্রমশ আমার ঘরের দিকে এগিয়ে আসছে। পরিস্কার দেখলাম আমার ঘরে ঢুকল সেই ছায়া মূর্তি। আমার স্পষ্ট মনে হলো কেউ যেন আমার খাটে মাথার পাশে বসে মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে, চুলে বিলি কেটে দিচ্ছে।আমার সারা মুখে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। আমি খুব জোরে চিৎকার করার চেষ্টা করলাম কিন্তু মুখ থেকে একটা আওয়াজ বেরল না। পরদিন সকালে বাবা বাড়ি ফিরে পাঁচিল টপকে ঘরে ঢুকে আমাকে অচৈতন্য অবস্থায় উদ্ধার করে।
রতনের মুখ থেকে ওর বাস্তব অভিজ্ঞতা শুনতে শুনতে আমার গোটা গা একবারে কাঁটা দিয়ে ওঠে।আমার সঙ্গে এরকম ঘটলে কী হতো কে জানে!