সকালে উঠে বারান্দায় এসে দাঁড়াতে কেমন যেন শীত শীত করে উঠলো নন্দিনীর।
আঁচলটা গায়ে জড়িয়ে নিয়ে বারান্দার রেলিংএ ভর দিয়ে মনে পড়ে গেল একটি শীতের সকালের কথা।
সেদিন সমীরণ ওর হাতটা ধরে টেনে নিয়ে গিয়েছিলো জোড়া পুকুরের ধারে। সেখানে একটা খেঁজুর গাছে আগের দিন হাঁড়ি বেঁধে গিয়েছিলো ধনাই খুড়ো। ওরা দুজন ওখানে পৌঁছানোর পর খুড়ো রসের হাঁড়ি নামিয়ে ভাড়ে করে রস খেতে দিয়েছিলো ওদের। রস খাওয়া শেষ করে সমীরণ হাসি মুখে নন্দিনীর দিকে তাঁকিয়ে দেখলো ওর ঠোঁটের কোণায় একটুকরো বাকল্ লেগে আছে। সমীরণ বুড়ো আঙ্গুল দিয়ে সেটা ফেলতে গেলেই ওর ঠান্ডা হাতের স্পর্শে নন্দিনীর শরীরটা কেঁপে উঠেছিলো। ওকে কাঁপতে দেখে সমীরণ ওর গায়ের চাদরটা নন্দিনীর গায়ে জড়িয়ে দিতেই নন্দিনী অনুভব করলো অন্য স্পর্শ। পিছনে তাঁকিয়ে দেখতে পেল ওর স্বামী দিবাকরকে……..
জীবন সাথীর অগোচরে খেলার সাথীর ভাবনায় আড়ষ্ট হলো নন্দিনী।
দিবাকর বললো, ঠান্ডায় দাঁড়িয়ে কাঁপছো কেন? ঘরে চলো।”
নন্দিনী ঘরে ঢুকে দেখলো কাল রাতের গঙ্গা ফড়িংটা এখনো ঘরের মধ্যে উড়ে বেড়াচ্ছে। কাল সারারাত ঐ গঙ্গাফড়িংটা ঘুমোতে দেয়নি ওকে। কতবার যে গায়ে এসে বসেছে। জোড়া পুকুরের ধার থেকে সমীরণ এরকম একটা গঙ্গফড়িং ধরে নন্দিনীর হাতে দিয়েছিলো। দুজনে মিলে কচি ঘাস তুলে খাইয়ে ছেড়ে দিয়েছিলো। কী যে আনন্দ হয়েছিলো সেদিন। নন্দিনীর বাবা বড়বড়িয়া গ্রাম থেকে কলকাতায় বদলি হয়ে আসার পর আর কোনোদিন দেখা হয়নি সমীরণের সাথে। কোনোদিন গঙ্গাফড়িং ধরা হয়নি। আর কোনোদিন খেঁজুর রস খাওয়া হয়নি। কাল রাত থেকে বড্ড মনে পড়ছে সেই শৈশবের দিনগুলোর কথা।
কেমন আছে সমীরণ জানতে ইচ্ছে করছে। একটিবার দেখতে ইচ্ছে করছে। দেখা হলে নন্দিনী একটা কথাই বলতে চায়, “ভালো আছি ভালো থেকো। ছোটোবেলার নন্দিনীকে মনে রেখো”।।
কলমে ববিতা সরকার(গুহ রায়)
পড়তে, পড়াতে, ম
নের কথা সহজ ভাষায় লিখতে, গান গাইতে ভালোবাসি…