মাথার ওপর সবুজ হলুদ কলকা আঁকা ফুলের প্যাটার্ন , বাবাকে দিয়ে জোর করে নিজের ঘরের সিলিংএ দুপাশে দুটো করিয়েছিলাম। চোখ বন্ধ করে ওই ফুল… ছাদে হাওয়াতে উড়ে যাওয়া মায়ের শাড়ি … ব্যস্ততার ডাক…দুপুরের গন্ধ.. এক প্রশ্বাসে টেনেনি বুকে। রাস্তা দিয়ে রোজ হেঁকে যাওয়া ফল – সবজিওয়ালার গলায় পরিচিতর টান। মন বলে এ সব আমার। দোতলার ছাদের একপাশে দাঁড়িয়ে অনেক সময় মেপে নি আমার বেঁচে থাকার রসদকে। নিচতলার মা এর হাতে লাগানো গাছে গন্ধরাজ -থোকা টগরের ভিড়, মাঝে আম আর ডালিমের লড়াই…বুঝতেই দেয় না জীবন পাল্টেছে…পাল্টাচ্ছে।
অন্যদিকে, রোজ রোজ কচু থেকে ডুমুরের আয়োজন – পা ছড়িয়ে মনের মতো সবজি কাটা -অনেক বকা শুনে চুপ করে যাওয়া বাবা-নিজের মতো করে সামিল করে নেয় তাঁর সব কাজে। প্রিয়জনেদের ‘ভালো আছিস’ বলে অনেকটা ভালোবাসা আর যত্ন।.. সাইকেল চেপে কানের পাশ দিয়ে “ভালো থাকিস” বলে দূরে মিলিয়ে যাওয়ার গুরুজনের আশিষ.. বুকের ভেতর -এ সব যেন হারিয়ে যাওয়ার ভয়।
বাড়ি টানে , মা এর মতো। ওর আনাচে কানাচে ভালোলাগার বসবাস ! একটা দূর্গ – যার ভেতরে ঢুকে পড়লেই এক সুরক্ষার বলয় ঘেরা নিশ্চিন্তের দিন। ছোটবেলা চোখ বন্ধ করে নিজেকে পরীক্ষা করতাম, যদি কখনো অন্ধ হয়ে যাই , চিনে নিতে পারবো কি !! যেতে পারবো।এক নিমেষে এদিক ওদিক !! প্রতিবার সফল হয়েছি। তবে ভাবিনি , চোখ থাকতেও চোখ বন্ধ করে সেই বাড়ির কোনায় কোনায় পৌঁছে যেতে হবে কোনোদিন। ভাবিনি।
শুয়ে শুয়ে ভাবি- আমি আমার খাটে , মা পাশের খাটে কত কথা বলছে , তাঁর সব কথায় শেষমেশ আমাকে পিছে টানছে। কখনো চোখের জল , কখনো অভিমান , কখনো বা রেগে উত্তর না দিয়ে বুঝিয়ে দিচ্ছে আমি ছাড়া তাঁর কেউ নেই।
আর আমি দীর্ঘশ্বাসে… চলছি … চলেই যাচ্ছি … সাত সমুদূররররর…. তেরো নদীর পারে … মা কে ছেড়ে বহু দূরে।।।।।।।
***ঠাকুমা -ছোটকাকা -জেঠু – কাউকেই মৃত্যুর সময় কাছ থেকে দেখতে পারিনি , আমার দুর্ভাগ্য হলেও আমার স্মৃতিতে তাঁরা জীবন্ত আজও। তাই যাঁদের ফেলে চলে আসা তাদের আমার আবার ফিরে আসা অবধি বেঁচে থাকার লড়াই লড়ে যেতে বলেছি, বলেছি স্বার্থপরের মতো “আমার জন্য বেঁচে থেকো। “
১১.০৫.২০২১
মৌসুমী