ইন্টারস্কুল ডান্স কম্পিটিশনের ফল ঘোষনা হচ্ছে “এডুকেশন উইথ পার্সোনালিটি ডেভেলপমেন্ট” স্কুলের সেমিনার রুমে।
ঘোষনা হয়-“প্রথম হয়েছে ইমন বাউরি, দ্বিতীয় স্থানাধিকারী স্ট্রং স্টিল এর ভাবী কর্ণধার সোহম মুখার্জী এবং আমাদের শর্ত মতো তৃতীয় পুরস্কার না থাকাই বাকি সমস্ত প্রতিযোগীদের রুপোর মেডেল দিয়ে সন্মানিত করবেন, স্ট্রং স্টিল এর কর্ণধার আমাদের দ্বিতীয় স্থানাধিকারী প্রতিযোগীর পিতা ও আমাদের স্কুলের অন্যতম ট্রাস্টি সূর্যশঙ্কর মুখোপাধ্যায়।
আরও একটা ঘোষনা আপনারা শান্ত হয়ে বসুন,’ন্যাশনাল টেলিভিশন’ কর্তৃক পরিচালিত ‘ডান্স ফর চেঞ্জ’ এর ওয়াইল্ড কার্ড থেকে সরাসরি টপ থার্টি তে জায়গা করে ফেলেছে আমাদের আজকের প্রথম দুজন ।”সামনের রো এ বসে থাকা ন্যাশনাল টেলিভিশন চ্যানেলের সদস্যদের ধন্যবাদ জানিয়ে করতালি দিতে বলেন প্রোগ্রাম এর হোস্ট।
করতালিতে মুখরিত হয় সেমিনার হল,তবে এই করতালির মাঝে উদ্বিগ্ন ও ভয়ানক মুখে সূর্যশঙ্কর মুখোপাধ্যায় তার অফিসের আপার ডিভিশন ক্লার্ক, মৃণালের মুখের দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে থাকে।ঝড়ের আভাস উপস্থিত এই ক্ষণিক ভয়ংকর নিঃশব্দতা মাঝে।

অফিসের চেম্বার থেকে বেল বাজিয়ে নিজের পি এ কে দিয়ে সূর্যশঙ্কর ডেকে পাঠান তার অফিসের আপার ডিভিশন ক্লার্ক মৃণাল বাউরি কে ।

দরজায় নক করতেই সূর্যশঙ্কর বলেন-“এসো,এসো মৃণাল বস ।”মৃণাল বসতেই সূর্যশঙ্কর গলা ঝেড়ে সরাসরি বলেন-“দেখো, মৃণাল আমার অনেক কাজ তাই আমি যা বলব ডাইরেক্টলি বলব।”
-“বলুন স্যার।”
-“দুটো অপশন আছে তোমার কাছে, তোমাকে হয় চাকরি ছেড়ে দিতে হবে স্বেচ্ছায় রেজিগনেশন লেটার দিয়ে-“
-“কিন্তু কেন স্যার।”
-“জাস্ট শাট আপ,চুপ করে শুনবে, আমি এখন ও দ্বিতীয় অপশন টা বলিনি ।যাই হোক,কিংবা তোমার ছেলের ‘ডান্স ফর চেঞ্জ’ এ পার্টিসিপেট করা যাবে না।কারণ, তুমি আমার ছেলে, বৌ এর ঘুম কেড়ে নিয়েছ।”অনেকক্ষণ চুপ করে বসে থাকা মৃণাল, সূর্যশঙ্কর এর টেবিল থেকে একটা ফাঁকা পাতা নিয়ে রেজিগনেশন লেটার লিখে পেনটি পকেটে গুঁজতে গুঁজতে,পেপার ওয়েট চাপা দিয়ে বলে-“স্যার একটু ‘অ্যাকাউন্ট ডিপার্টমেন্ট’ এ ফোন করে দিয়ে আমার ব্যালেন্স গুলো ক্লিয়ার করে দিতে বলবেন কাইন্ডলি, চলি।”
জানালার দিকে মুখ ঘুরে একটা কেরানির এত বড়ো সাহসে কিছু পরিবর্তনের ইঙ্গিত সূর্যশঙ্কর নাড়া দেয়।

চাকরিচ্যুত হওয়া আজ এক মাস হয়ে গেছে ।ইমন আছে কলকাতায় কম্পিটিশনের ক্যাম্পস এ ।এদিকে পি.এফ এর টাকা এবং বকেয়া যা টাকা মৃণাল অফিস থেকে পেয়েছিল তাতে একটা হোম ডেলিভারির ব্যবসা শুরু করেছে, এতে তার স্ত্রী করুণাময়ী ও তাকে হেল্প করে।এখন ইমন টপ ফিফটিন এ।তবে, ব্যবসা সেভাবে জমে না ওঠায় সংসারের টান রয়েছে।মৃণাল তার এক খুড়তুতো দাদার কাছে টাকা ধার করেছিলেন, ইমনের শো এর এন্ট্রি ফি এর জন্য।ইমন কিছু একটা করবে এই তাদের আশা আর কি!
ফোন এসেছে ইমনের ।তার সঙ্গেই এখন কথাবার্তা চলছে, পিতামাতার সমস্ত বেদনা কে হাসি দিয়ে লুকিয়ে রেখে।রাতে অবশ্য পাড়াসুদ্ধ লোক ইমনের নাচের প্রোগ্রামও দেখে এখন।আর নাচের রিভিউ প্রোগ্রামও চলে পাড়ার গলিতে; ইমনের বাড়ির বারান্দাতেও ।

আজ গ্র্যান্ড ফিনালে অপরূপ সজ্জায় সজ্জিত কলকাতা যুবভারতী স্টেডিয়াম।সমস্ত পারফরমেন্স হয়ে যাওয়ার পর রেজাল্টের প্রাক্ মুহূর্তে চলছে টপ টেন প্রতিযোগীদের সংঘর্ষের গল্প শোনা,সেই দলে ইমন ও সোহমও রয়েছে।এখন পালা ইমনের ,
ইমন হাতে মাইক পেতেই বলে,”আমি প্রথমে স্টেজ এ আমার বাবা মাকে ডাকতে চায়।”বাবা মা উঠে আসতেই শুরু হয় পরিবর্তনের সংঘর্ষের কাহিনী।
এই পরিবর্তন যেন শূদ্রপুত্র কর্ণের ‘প্রতিভা’র,
এই পরিবর্তন যেন দলিতপুত্র আনন্দ কুমারের ‘গুরু’ হওয়ার।
আজ বিশ্বব্যাপী সূর্যশঙ্করের নাম করে চলতে থাকে কটাক্ষপাত এই লাইভ শো এর মাধ্যমে।
শেষমেশ আর বসে থাকতে না পেরে, প্যারেন্ট চেয়ার থেকে ঝলসানো মুখ নিয়ে উঠে চলে জান,সূর্যশঙ্কর।ঘোষনা হয়,”প্রথম স্থান অধিকার করেছে,অন্যায় ভাবে চাকরিচ্যুত এক দলিত কেরানী মৃণাল বাউরির ছেলে ইমন বাউরী-তাকে ‘ন্যাশনাল টেলিভিশন’এর পক্ষ থেকে পঞ্চাশ লক্ষ টাকা ও একটা নাচ সম্মন্ধিত ‘ইউটিউব চ্যানেল’এর সমস্ত খরচ এবং সুবিধা দেওয়া হল।”
সবার চোখে জল,এ যেন ‘কুরুক্ষেত্র প্রাঙ্গনে’ সত্যের জয়,ধর্মের জয়;
এ জয় ‘প্যারাডাইস লস্ট ‘-এর ‘শয়তান ‘এর জয় নয়।

কলমে জয় ঘোষাল, পশ্চিম বর্ধমান

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here