রতনবাবু ও মন্দিরাদেবীর রোমাঞ্চকর বিবাহিত জীবনে- এই বছর, পঁচিশতম বর্ষপূর্তি অর্থাৎ সিলভার জুবলি। সারাদিন যেমন কাটুক না কেন বিকেলে তারা দুজনে ঘুরতে বের হতেন প্রতি বছর এই দিনেই। ফিরে যেতেন পঁচিশ বছর আগের কোন এক বিকেলে। লুকিয়ে লুকিয়ে দীর্ঘ পাঁচ বছর প্রেমের পর বিবাহ বন্ধনে আটকে পড়েছিলেন রতনবাবু ও মন্দিরাদেবী। প্রেম জীবনের নানা ঘটনার রোমন্থনে নিজেদের মধ্যে আনন্দে মেতে উঠতেন- বিবাহবার্ষিকীতে।একসাথে মিষ্টি খেতেন “আদি মিষ্টান্ন ভান্ডার”-এ।তারপর সন্ধ্যায়, বাড়ি ফেরার পথে মন্দিরার সাজানো খোপায়- রজনীগন্ধা ও গোলাপ ফুল গুজে দিতেন নিজের হাতেই। প্রতি বছরের নিয়মের ছন্দ না কেটে, রতনবাবু ও মন্দিরাদেবী হাসতে হাসতে বাড়ি ফিরতেন- এক হাঁড়ি আদি মিষ্টান্ন ভান্ডারের মিষ্টি নিয়ে।গতবছরও ঘুরতে বেড়ানো ও মিষ্টি খাওয়ার কোন ব্যতিক্রম হয়নি এই দিনে। “আদি মিষ্টান্ন ভান্ডার” অনেক বছরের পুরনো বাজারের সেরা মিষ্টান্ন ভান্ডার।   এবছর অন্য বছরের থেকে একটু অন্যরকম ভাবে প্রোগ্রাম সাজিয়েছেন রতনবাবু। বিবাহের সিলভার জুবলি বলে কথা! অবাক করা অনেক প্রোগ্রাম রতনবাবুর মনে সাজানো। সকাল থেকে নানা আনন্দের মধ্যে কাটার পর বিকেলের দিকে যখন পুরনো নিয়ম অনুসারে রতনবাবু ও মন্দিরাদেবী ঘুরতে বেরোলেন।  কিছুক্ষণ ঘোরার পর যখন “আদি মিষ্টান্ন ভান্ডার” এর সামনে এলেন, তখন রতনবাবু অবাক! দেখলেন- বিশাল জায়গা জুড়ে থাকা আদি মিষ্টান্ন ভান্ডার ভেঙ্গে ফেলেছে। গত তিরিশ বছর ধরে যে টেবিলে প্রতিবছর রতনবাবু ও মন্দিরাদেবী স্মৃতি জড়িত মিষ্টি খেতেন, সেই জায়গাটা এখন ফাঁকা। স্মৃতিবিজড়িত চেয়ার টেবিলগুলো আর নেই। রতনবাবুর জীবন থেকে যেন গত অনেক বছরের স্মৃতি ভেঙ্গে চুরমার হয়ে গেল। আনন্দের মুহূর্ত নিমেষের মধ্যে ধোঁয়াশায় পরিণত হল।রতনবাবু, মল্লিকাদেবীকে বললেন,-‘মল্লিকা, ত্রিশ বছর আগের স্মৃতি আর নেই!”সত্যি, স্মৃতি- ফেলে আসা দিনগুলির এক একটা অধ্যায়। স্মৃতি অধ্যায়ের, অনেক পৃষ্ঠাই নষ্ট হয়ে গেল। খুব কষ্ট পেলাম!’ বললেন মল্লিকাদেবী।        রতনবাবু আর কোথাও গেলেন না আজ। সোজা মল্লিকাদেবীকে নিয়ে বাড়ি ফিরলেন। ব্যতিক্রমী অবস্থায় বাড়ি ফেরা দেখে বাড়ির অন্যান্যরা অবাক! সকলে তাকিয়ে আছে রতনবাবু ও মল্লিকাদেবীর দিকে। কি হলো আজ! অন্যান্য বারের মতো তারা কেন এবছর হেসে ঢুকলেন না! মিষ্টির হাঁড়ি ? সকলের মনে একই প্রশ্ন। রতনবাবুর মুখ গম্ভীর! মল্লিকাদেবীও কারও সাথে কথা বলছেন না।     থমথমে পরিবেশ- সৃষ্টি হয়ে গেল মুহূর্তের মধ্যে। বাড়ির অন্যান্য সদস্যরা একে অপরের দিকে তাকা-তাকি করছে। কেউ জিজ্ঞাসা করার সাহস পাচ্ছে না- ঘটনা কী?      বাড়ির সবচেয়ে ছোট সদস্য, আর্য কয়েকটিরজনীগন্ধার স্টিকস নিয়ে, দাদুর সামনে দাঁড়িয়ে বলে উঠলো,-‘হ্যাপপি ম্যারেজ অ্যানিভার্সারি দা…দু – দি..দন।’রতনবাবু হেসে উঠলেন! মুহুর্তের মধ্যে গম্ভীর মুখ হাসিতে পরিনত!কাছে ডেকে নিলেন মল্লিকাদেবীসহ বাড়ির সকলকে।মেতে উঠলেন পঁচিশতম বিবাহবার্ষিকীতে।-

কলমে সুমিত রায়


দেশ-বিদেশে  বিভিন্ন পত্রিকায়, বইয়ে প্রকাশিত লেখার মূল্যায়নে যে সম্মাননা পেয়েছি, তা আমাকে বিশেষভাবে অনুপ্রাণিত করে চলছে। পারিজাত সাহিত্য পত্রিকার থেকে পেয়েছি- “শশাঙ্ক শেখর সাহিত্য স্মৃতি পুরস্কার”, Kolkata International Micro Film Festival’21 থেকে পেয়েছি “চিৎপ্রকর্ষ” সম্মাননা।

SOURCEকলমে সুমিত রায়
Previous articleকল্পতরু
Next articleচিলেকোঠা
Avatar
Disclaimer: Monomousumi is not responsible for any wrong facts presented in the articles by the authors. The opinion, facts, grammatical issues or issues related sentence framing etc. are personal to the respective authors. We have not edited the article. All attempts were taken to prohibit copyright infringement, plagiarism and wrong information. We are strongly against copyright violation. In case of any copyright infringement issues, please write to us. লেখার মন্তব্য এবং ভাবনা, লেখকের নিজস্ব - কপিরাইট লেখক কর্তৃক সংরক্ষিত..................

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here