মাটির অনেক রূপ দেখেছি ,

সেই যেবার বৃষ্টি ফুরিয়ে গিয়ে ছিল,
মেঘের আকাল নেমে এসেছিল আকাশে!
ক্ষিতিশ এর রুক্ষ জমির ওপর শুকিয়ে আসা ফসল নুইয়ে ,থরে থরে সাজানো ছিল, আর
হা হয়ে ফেটে পড়েছিল মাটি।
বুকের ভেতর হাজার বছরের গড়ল
যেন বাতাসে মিশিয়ে দিচ্ছে সে।

মাটি ফাঁক হয়ে পড়েছিল সেবারও ,
যখন সীতা নেমে গিয়েছিল পাতালে।

আজও,
মাটির ওপর কান পেতে ইতিহাসের
ভারী চাকার আওয়াজ শুনেছি ।
স্তরে স্তরে সাজানো ইট ,কাঠ ,লোহার
সাম্রাজ্যের উত্থান পতনের কাহিনী,
রক্ত বন্যা বহিয়ে দিয়ে কোথাও কোথাও
লাল হয়ে শুয়ে আছে এই মাটি।
সেই পবিত্র মাটি চন্দন এর মতো মাথায় বুলিয়ে
ঝাঁপিয়ে পড়েছিল যুবক-যুবতীর দল একসময়।

বৃষ্টির ফোঁটায় প্রথম ভিজে ওঠা মাটির গন্ধ
যখন ঘুরঘুর করতে থাকে বাতাসে,
প্রাণ ভরে তাকে টেনে নিয়েও
তৃষ্ণা মেটে না।
অনুভূতিরা সজাগ হয়ে ওঠে কেবলই।
মনে হয় সে ঘ্রাণ প্রাগৈতিহাসিক।

এমাটির ওপর রং চড়িয়ে
সে যখন চৌকাঠ ডিঙিয়ে ঘরে উঠলো
চোখ মেলে দেখি,  সিংহাসনে মৃন্ময়ী।
সমস্ত উপাচারে ভক্তি রসে সিক্ত হয়ে
ক্রমশ চিন্ময়ী হয়ে উঠলো সে।
মাধবের উচ্ছিষ্ট এ মাটির স্পর্শে ,
সর্বাঙ্গে অলৌকিক শিহরণ খেলে যায়।
তাই আজও এমাটির ওপর রেখা টানলেই ,
হয়ে ওঠে পুরানের সেই সুরক্ষার গন্ডি।

সেবার মাটির বাঁধ উপছে যখন ভৈরবী নদী
তুলসিমঞ্চ ডুবিয়ে দুয়ার ছুঁলো,
পা এর তলার মাটি সরে গিয়েছিল।
খানিক শুকনো মাটি খুঁজে ,
তার বুকে থিতু হয়ে বসে ,
গোগ্রাসে অনন্ত জলরাশি,
গিলে ফেলতে দেখেছিলাম।

নানাভাবে এই মাটি ফিরে ফিরে এসেছে
আমার কাছে,  এখনো ভুলিনি,
চোখের জল খসিয়ে এক মুঠো মাটি ঢেলে দিয়েছিলাম যুদ্ধ ফেরত ইসমাইলের নিথর বুকে ।

কলমে আশিস চক্রবর্তী, সুকান্ত পল্লি, মুর্শিদাবাদ

 বর্তমানে একটি স্কুলে পার্শ্ব শিক্ষক হিসেবে কর্মরত। ছেলে বেলা থেকেই লেখালিখি শুরু। দীর্ঘ সাত বছর নিজের একটি প্রিন্টেড পত্রিকার সম্পাদনা করেছি। বর্তমানে গল্প ,কবিতা , উপন্যাস ,নাটক , প্রবন্ধ , অনুগল্প প্রভৃতি কানাডা , অস্ট্রেলিয়া , বাংলাদেশ এবং ভারত থেকে নিয়মিত প্রকাশ হয়ে চলেছে -অনলাইন ও প্রিন্টেড আকারে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here