উন্নাওয়ের সেই মেয়েটিকে এই জঘন্য পাশবিকতার বলি হয়ে বিদায় নিতে হল!!
কোন ভাষা মুখে জোগায় না , কোনো ভাষাই যথেষ্ট নয় এই পাশবিকতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ হয়ে জ্বলে ওঠার।।
একটি মেয়ের জন্মের সাথে সাথেই তার অস্তিত্বের সংকট সৃষ্টি হয়ে গেল। দুদিন অথবা দুমাস অথবা দুবছর..সেই কন্যাসন্তান আরও কয়েকটি দিন কি বেঁচে থাকবে? নিরাপদে বেঁচে থাকার অধিকার কি তার আছে! অনেক টাকার প্রশ্ন! সে নিরাপদ ভাবে বেড়ে উঠবে কিনা, শিশু থেকে বৃদ্ধা কারও কাছে, এই প্রশ্নের উত্তর নেই। জীবনযুদ্ধের ময়দানে চলতে চলতে প্রতিমুহূর্তেই কন্য সন্তানের নিরাপদে যাপনের অস্তিত্বের সংকট সৃষ্টি করে চলেছে।
আজ শুধু একটি তেলেঙ্গানা, কিংবা নির্ভয়া অথবা উন্নাও নয়, হাজারো উন্নাও, তেলেঙ্গানার বিষ বাষ্পআমাদের চারিদিকে ছেয়ে আছে। রক্তবীজের মতো তার বিস্তৃতি। আইন যা বলে, যে পথে তার স্বাভাবিক চলা, তা আমাদের মন বা বিবেক সবসময় মানতে পারেনা বা মানেনা। বিদ্রোহের ঝড় ওঠে মনে। তারই ফলশ্রুতি জনরোষ। আমাদের মন অনুসারী তেমন কোন পদক্ষেপ প্রশাসনের তরফে সংঘটিত হলে, আমরা তাকে সাধুবাদ জানাই। উচ্ছসিত হয়ে উঠি। কিন্ত সুদুরপ্রসারি সমাধান কি সেই পথে আছে, তা আমাদের ভাবতে হবে। প্রথমে যেটা বলবার, ধর্ষণ একটি সামাজিক ব্যাধি। যে কোন ব্যাধির মতো তারও সুচিকিৎসার প্রয়োজন। রোগটি ক্রণিক, তাই তার চিকিৎসার ধরণ ব্যতিক্রমী হওয়া বাঞ্চনীয়।
চিকিৎসার বিভিন্ন পদ্ধতির মতো, প্রতিষেধক, ওষুধ প্রয়োগ এবং কিছুক্ষেত্রে শল্য চিকিৎসার প্রয়োজন পড়ে। একটি ছেলে যখন বেড়ে উঠছে, তাকে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার সাথে সাথে সামাজিক ও ব্যবহারিক শিক্ষায় শিক্ষিত করে তুলতে হবে।বাড়ি থেকেই এই শিক্ষার শুরু। ভাল পরিবেশ, বা খারাপ পরিবেশের তারতম্য
তাকে বোঝাতে হবে।নিজের বোন বা মায়ের প্রতি ছেলেটি যতটা সংবেদনশীল, অপরের মা ও বোনের প্রতি সমমনোভাবাপন্ন হওয়ার পাঠ দিয়ে, তার মনন কে সঞ্জীবিত করবার প্রচেষ্টা নিতে হবে। যদি পাঁচটির মধ্যে দুটি হয়, তবে সে পাঠদান কিছুটা হলেও সার্থক।
দ্বিতীয় পদক্ষেপ, কঠোর আইন প্রণয়ন….। ধর্ষণের মতো অপরাধ সংঘটিত করবার পরে, অপরাধী নাবালক কিংবা সাবালক এর ভিত্তিতে সাজা নির্ধারণ কেন হবে এই প্রশ্ন মনে উঠতেই পারে! একটি অপরাধের ফলাফল যখন অভিন্ন, তখন সাজাও অভিন্ন, হওয়া বাঞ্চনীয়।।
তৃতীয়ত, ধর্ষণ, খুন এই ধরনের অপরাধের ক্ষেত্রে, বিচারের দীর্ঘসুত্রতায় মানুষের ধৈর্যচ্যুতি ঘটায়। বিচার ব্যবস্থার উপর হয়তো আস্থা হ্রাস হতে থাকে। প্রকৃতপক্ষে মামলার প্রতুলতাই এর অন্যতম কারণ। এই মামলা গুলি খুব কম সময়ের মধ্য, বিশেষ আদালতে নিষ্পত্তি হওয়া উচিৎ। যা কোন ক্ষেত্রেই দুমাসাধিক
কাল হবেনা।। একটা কথা জানি যে, justice delayed is justice deniied.. বিচারপ্রার্থীর কাঙ্ক্ষিত বিচার পেতে,পেতে অনেক দেরী হয়ে যায়, আর এখানেই হয় ধৈর্যচ্যুতি।
আইন প্রনোয়ন করে এই অপরাধ গুলির ক্ষেত্রে, জামিন অযোগ্য গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা প্রয়োজন। এবং এসব ক্ষেত্রে অবশ্যই শাস্তি হবে দৃষ্টান্ত যোগ্য, যা দেখে অন্য কেউ ভয়ে, আশঙ্কায়, নিজে এই জঘন্য অপরাধ সংঘটিত করতে অনেক অনেকবার ভাববে।
শিক্ষাদানের মাধ্যমে চেতনার সঞ্চার করতে হবে সমাজের প্রত্যেক স্তরে। আর্থিক ভাবে অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর মধ্যে ভীষনভাবে সংশোধন বা শুদ্ধিকরণের কাজ করতে হবে, কারন মনে পাশবিক বোধের বিলুপ্তিটা তখনই আসতে পারে, যখন একটা নিরক্ষর মানুষও মনে প্রাণে শিক্ষিত হয়ে ওঠে, মানুষ হবার পথে
এগিয়ে যায়, চেতনা আর মূল্যবোধকে নিয়ে, যা আপাতভাবে দুরুহ হলেও অসম্ভব নয়।।
লেখক পরিচিতি : ডাঃ নীলাঞ্জন চ্যাটার্জী,পশ্চিমবঙ্গ .বিশিষ্ট আইনজ্ঞ,নট- নাট্যকার মিহির কুমার চট্টোপাধ্যায় ও সাহিত্য – শিল্প অনুরাগিনী নিয়তি চট্টোপাধ্যায়ের পুত্র নীলাঞ্জন চট্টোপাধ্যায় – এর সাহিত্য অঙ্গনে প্রবেশ কলেজ জীবনের প্রারম্ভেই।
সেই সময় থেকেই, “ভারতবর্ষ”, “দিশারী” সহ নানা পত্রিকায় কবির, কবিতা প্রকাশিত হতে থাকে।
কবি, বিজ্ঞান ও চিকিৎসাবিজ্ঞানে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে।
পেশার বাইরে সেবামুলক কাজের জন্য স্থাপন করেছিলেন একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা।
ডাঃ চট্টোপাধ্যায়ের চিকিৎসাবিজ্ঞান সংক্রান্ত লেখা, সংবাদপত্রে ও “প্রসাদ” পত্রিকায় ইতিপূর্বে অনেকবার প্রকাশিত হয়েছে।