রক্ষাকর্তা

0
1167

আজ অনেক দিন পর ঋতুকা দিদির সাথে দেখা হলো আদিত্যর  ভীষণ ব্যস্ত আদিত্য ঋতুকা দিদি কে চিনতে পারলে , ‘কেমন আছো ’ ‘কি করছোরকমের কিছু সাধারণ প্রশ্ন করেই কাটানোর চেষ্টা করছিলো একটা দরকারি  ফোন আসার কথা আছে আদিত্যর  চাইছিলো না বেশিক্ষন চলুক এই কথোপকথন কিন্তু হঠাৎ ঋতুকা দিদির একটা অদ্ভুত প্রশ্নে একটু থমকে গেলো আদিত্য ঋতুকা দিদি  চলে যাচ্ছিলো , যাবার পথে হঠাৎ ঘুরে বললো , তোর বয়স কত হলো আদিত্য ? যুবক আদিত্য নিজের বয়স লুকোতে খুব একটা চাই না সরাসরি বললো ২৫, কেন বলো তো ? তাহলে দাদুর শেষ ইচ্ছা টা পূরণ করার সময় এসে গেছে আদিত্য দাদু কথা  মনে পরতে হঠাৎ   বেশ খানিকটা অন্যমন্যস্ক হয়ে গেলো আদিত্য হঠাৎ মনে পড়লো দাদুর সেই শেষ দিন গুলোর কথা , রাগ করে ছিল আদিত্য দাদুর উপর , তার মেনে চলা কিছু নিয়ম কানুন এর উপর তার জীবন এর শেষ মাস দেখা করেনি আদিত্য দাদুর সাথে কিন্তু মনে মনে আজ সে দাদু কেই নিজের আইডল বলে মানে মেনে চলে দাদু এর শেখানো সব রকম এর শিক্ষা কে দাদুর সাথে ঋতুকা দির একটা ভীষণ ভালো রিলেসন ছিল ঋতুকা দি আদিত্য দের নিজেদের কেউ নয় ,  শুধু মাত্রা দাদুর জন্য একসময় সে ভীষণ কাছের হয়ে গেছিলো আদিত্যর আর দাদুর শেষ জীবন ঋতুকা দি ছিল এক মাত্রা সঙ্গী আদিত্য , কি হলো ?”, ঋতুকা দির কোথায় হঠাৎ সম্বিৎ ফিরলো আদিত্য বললো কি ছিল দাদুর শেষ ইচ্ছা ? ঋতুকা দি জানালো দাদু আদিত্য কে কিছু কথা জানাতে চেয়েছিলো , যেটা শুধু আমাকে বলে গেছিলো , কথাটা হয়তো আজ তোমার কাছে সে রকম ইম্পর্টেন্স পাবে না , কিন্তু দাদু কে দেয়া কোনো শর্ত পূরণ না করতে পারলে সত্যি আমার খুব খারাপ লাগবে তাই বলতে চাই আদিত্য খুব করুন স্বরেই বললো , কি কথা ঋতুকা দি ? এর পর ঋতুকা দি যা বললো সেটার  আসল রহস্য জানতে গেলে আদিত্য দাদু কে চেনা আর ঋতুকা দির সাথে আলাপ হবার ইতিহাস জানা ভীষণ দরকার

দাদুর সাথে ঘুরে বেড়াতে বরাবর  ভালো লাগতো আদিত্যর জীবন এর সব সমস্যার  সঠিক সমাধান যেন সে দাদুর কাছেই পেত | আদিত্যর বাবা মা দুজন এই কাজ করতো , আদিত্য কে সময় বরাবর তারা খুব কম  দিতে পারতো তাই আদিত্যর বন্ধু , সঙ্গী যা ছিল শুধু দাদু প্রতিদিন অন্ততঃ বার করে সে দাদু কে ফোন করতো , আর সব ফোনের শেষেই আবদার থাকতো তাড়াতাড়ি আসার জন্য কলকাতার তথাকথিত জনবহুল জায়গাতেই ফ্লাট কিনেছিলো আদিত্যর বাবা মা নিজেদের অফিস সেখান থেকে খুব কাছেই ছিল আদিত্য কে কলকাতা বেশ বড় স্কুল ভর্তি করে দিয়েছিলো তারা স্কুল বাস করে প্রতিদিন স্কুল যেতে মজাই পেট আদিত্য কিন্তু তাও কোথায় যেন একটু ফাঁক থেকেই যেত , যা আদিত্য কে দাদুর দিকে ভীষণ আকর্ষণ করতো আসলে আদিত্য যে স্বপ্ন দেখতো বিশাল মাঠ , তার চার পাশে পুকুর , কত পাখির ডাক , সেখানে ভীষণ খেলায় ব্যস্ত আদিত্য কে দাদু কিছু টা  হলে আদিত্যর  এই স্বপ্ন পূরণ করতো দাদু এলে রোজ মর্নিং ওয়াক যাওয়া হতো, কত গল্প হতো , সাথে থাকতো ফুটবল খেলা যেন সব কিছু হারিয়ে ফেলতো আদিত্য , দাদুর সাথে ঘুরতে ঘুরতেই জীবন টাকে নতুন করে ভাবতে শিখতো সে এরকম   এক দিন মর্নিং ওয়াক গিয়ে   ঘটেছিলো সেই ঘটনা

অন্যান্য দিনের মতোই মনের অজস্র প্রশ্ন নিয়ে দাদুর সাথে কথা বলছিলো আদিত্য আর প্রতিটা প্রশ্নের উত্তর পুরোপুরি বুঝতে না পারা অব্দি দাদু কে প্রশ্ন বানে  অস্থির করে দিত সে ততোধিক ঠান্ডা মাথায় প্রতিটা প্রশ্নের উত্তর দিতো দাদু প্রতিদিন কিছু না কিছু বিষয় নিয়ে আলোচনা শুরু করতো আদিত্য , তারপর ভীষণ গভীর চলে যেত দাদু নাতির সেই আলোচনা আর ফেরার সময় থাকতো দাদুর সেই সব বাণী যে গুলো লিখে রেখে সবার কাছে ছড়িয়ে দিতে ভীষণ মন চাইতো আদিত্যর সে দিন এর আলোচনা টা  শুরু করেছিল আদিত্য আগের রাতে বাবা মা এর ভীষণ  ঝগড়া প্রতক্ষ্য করেছিল আদিত্য , তাদের অদ্ভুত এই জীবন যাত্রায় তারা ভীষণ খুশি বলেই এতো দিন জানতো আদিত্য , কাল   হঠাৎ আবিষ্কার  করলো সেটা সত্যি নয় তাদের সেই আচরণ নিতে না পেরে আদিত্য অনেক রাত অব্দি জেগে ছিল কিছুতেই ঘুম আসছিলো না তার আজ দাদু না ডাকলে মর্নিং ওয়াক যাওয়া হতো না তাই দাদুর কাছে নাতির প্রথম প্রশ্ন ধেয়ে এলো এই ঝগড়া নিয়ে দাদুর উত্তর দেবার কৌশল থেকে এটা পষ্ট হয়ে যাচ্ছিলো যে  দাদু যেন তৈরি   ছিল এসব প্রশ্নের উত্তর দিতে

নাতি : ঝগড়া কেন হয় ?

দাদু : ঝগড়া হলো এক রকম মনের অনুভূতির প্রকাশ দাদুভাই কথা বলা ,খাওয়া ,ঘুমোনোর মতো এটা খুব স্বাভাবিক ঘটনা শুধু এর প্রকাশ টা  একটু অন্য রকম হয়

নাতি : কিরকম অনুভতি দাদু যাতে এক জন অন্যের ক্ষতি করতে চাই ?

দাদু : ভালো করে যদি ভাব দাদুভাই , মানুষের জীবন সাধারণত চার রকম অনুভূতি কাজ করে ভালোবাসা , রাগ , ভয় , আর লোভ এর মধ্যে শেষ এর তিন অনুভূতি মানুষ কে দিয়ে কি করাতে  পারে বলা খুব মুশকিল যদি রাগ এর কথাই বলি , যখন ছাত্র রা ক্লাস খুব দুষ্টমি শুরু করে , তখন মাস্টারমশাই খুব রেগে যান , তাতে ভয় পেয়ে পুরো ক্লাস কিন্তু শান্ত হয়ে তার কথা শোনেন তখন এই রেগে যাবার অনুভূতি কিন্তু ভালো কাজেই লাগলো আবার এই মাস্টারমশাই যদি রেগে গিয়ে কোনো ছাত্র কে ভীষণ মারে , তখন কিন্তু তার রাগ টা  অপরাধ হয়ে গেলো

নাতি : তাহলে বুঝবো কি করে কখন রাগ করা উচিত আর কখন নয় ?

দাদু : এই প্রশ্নের উত্তর তো সরাসরি দেয়া  সম্ভব নয় দাদুভাই এটা তোমাকে নিজেকেই বুঝতে হবে আমি শুধু তোমাকে পথ দেখতে পারি

দাদুর উত্তর কোনো গল্পের শুরুর স্বাদ পেয়ে যেতেই , আবদার জুড়লো আদিত্য

নাতি : একটা উদাহরণ দাও  দাদু আমি ঠিক বুঝে নেবো

হেসে ফেললো আদিত্যর দাদু , হারাধন চক্রবর্তী , স্কুল টিচার হিসাবে ভালোই নাম ছিল হারাধন বাবুর  , টিচারী চলে যাবার পর এই নাতির সাথে সময় কাটাতেই বেশি পছন্দ করেন তিনি তাই তো বারে বারে দৌড়ে আসা এই কলকাতায়

দাদু : ঠিক আছে তোমাকে একটা গল্প বলছি দাদুভাই , হিন্দু পুরান মতে বলে দেবতারা হচ্ছে  শান্ত আর ভালোবাসার প্রতীক , সেরকম অসুর রা হচ্ছে হিংসা বা রাগ এবং ঘৃণার প্রতীক আর এই দেবতা দের দেবতা দেবাধিদেব মহাদেব ছিলেন দেবতা এবং অসুর দু জন এর  ভগবান তাই পুরান মতে বলে , রাগ এবং ভালোবাসা টো কেই সমান ভাবে স্থিতিশীল রাখতে নাকি এক মাত্র তিনি   পারতেন এহেনো মহাদেব এর রাগ নিয়ে টি ঘটনা কথিত আছে , যেখানে তিনি অন্যায় দমন করেছেন আবার কোথাও নিজে অন্যায় করে তা স্বীকার করেছেন এবং তা থেকে মুক্তির উপায় বাতলেছেন

নাতি : কি গল্প দাদু বলো

দাদু : একটি তে তিনি নিজের স্ত্রীর মৃত্যুর প্রতিশোধ নিয়েছেন প্রজাপতি দক্ষ কে মৃত্যুদণ্ড দিয়ে , যেখানে তিনি অন্যায় কে শেষ করেছিলেন অন্যদিকে তার এই রাগ নিজের ছেলে গণেশ এর মুন্ডচ্ছেদন করে দিলেও , তিনি নিজের হঠাৎ করে ফেলা অন্যায় কে স্বীকার করে অন্য রূপে ফিরিয়ে দিয়েছিলেন গণেশ এর জীবন

এই পর্যন্ত বলেই হঠাৎ কিছু দেখে থেমে গেলো দাদু , যেটা আদিত্য একেবারেই পছন্দ হলো না কি হলো দাদু বলো কোনো উত্তর পেলো না সে দাদুর কাছ থেকে দাদু নাতির গল্প এতো সুন্দর একটা জায়গায় ছিল , সেখান থেকে হঠাৎ ছেদ পড়ায়  বেশ বিরক্তি হলো আদিত্য আর এক বার  দাদু কে খোঁচাতে যাবে , এমন সময় দাদু নিজেই বলে উঠলো ,

দাদু: দাদুভাই গল্প নয় তোমাকে পরে বলা যাবে , মনে হছে আজ অন্য কিছু করার দরকার পরবে তারপর একটু থেমে বললো তোমাকে এতদিন বলতাম , জীবন বিচিত্র পরিস্থিতিতেই মানুষের আসল পরীক্ষা হয় , মনে আছে তো ?

নাতি : তা তো মনে আছে দাদু বিচিত্র পরিস্তিতেই মানুষ কতটা তার সাহস , সততা এবং শক্তির প্রদর্শন করতে পারে , তার উপর বিচার করেই একটা মানুষ এর চারিত্রিক দৃঢ়তা তৈরি হয়  

সব কিছুই যেন খুব তাড়াতাড়ি বুঝে ফেলতো দাদু , তাই দাদু না বলা অব্দি আদিত্য কখনো  বুঝতে পারবে না কেন দাদু গল্প ছেড়ে হঠাৎ এসব কথা বলতে শুরু করলো যাই হোক , দাদু কে এরকম সিরিয়াস হতে সে আগে দেখেছে , এই সময়  দাদু একটু কম কথা বলে তাই চুপ চাপ দাদু পিছন পিছন যেতে লাগলো আদিত্য দাদু প্রশ্ন করলো , দাদুভাই তুমি উঁচু পাঁচিল এক লাফে টপকাতে পারবে ? প্রশ্ন টা  অদ্ভুত লাগলে আদিত্য বললো কতটা উঁচু ? দাদু বললোধরে নে তোর মাথার সমান পাঁচিল আদিত্য এমনিতেই ক্যারাটে তে এক্সপার্ট , লাফাতে অনেকটাই পারে সে , তাই গর্বের সাথেই দাদু কে জানালো সে পারবে

তারপর দাদু বললো যা বলছি চুপ চাপ শোন , কোনো প্রশ্ন করিস না , শুধু জেনে রাখ সামনের যে মেয়ে টিকে দ্রুত পায়ে যেতে দেখছিস বিপদে পড়েছে , কিন্তু কাউকে কিছু বলতে পারছে না বিপদের উৎস টা  এখনো বুঝতে পারছিনা , মেয়েটি নিরাপদে বাড়ি যেতে পারে কিনা সেটা দেখা আমাদের কর্তব্য আর যদি বিপদ হয় তোর সাহায্য আমার লাগবে

কিরকম সাহায্য ?

দাদু জানালো রকম সাহায্য লাগতে পারে , কিন্তু টো  ক্ষেত্রেই আমি তোকে ডাকবো তারপরেই তুই আসবি শুধু হাতে টো যতটা পারিস  বড় সাইজ এর ইঁট নিয়ে থাকিস আর এই পাঁচিল এর পিছনে থাকবি , আমি ডাকলেই চলে আসবি

একটা অদ্ভুত এনার্জি অনুভব করতে লাগলো আদিত্য কিন্তু দাদু কেন এতো টা  ভাবছে এই মেয়ে টি কে নিয়ে সেটা সে বুঝতে পারলো না মেয়ে টিকে সে প্রতিদিন  দেখে , আজ দেখছে কিন্তু আশ্চর্য্যজনক কিছু তার চোখে পড়লো না দাদু যখন বলছে নিশ্চই কিছু দেখেছে তাই বলছে কিছু প্রশ্ন না করে চুপচাপ পাঁচিল এর পিছনে চলে এলো সে মেয়ে টিকে আদিত্য চেনে সামনের গলিতেই থাকে সে খুব নিরীহ ভাবেই হেঁটে যাচ্ছিলো সে কিছু অস্বাভাবিক চোখে পড়ছিলো না  আদিত্য হঠাৎ কি মনে হলো পিছনে ফিরে দেখলো দাদু নেই এতো তাড়াতাড়ি দাদু কোথায় চলে গেলো বুঝতেই পারলোনা সে এখন দাদু কে ডাকা টা যাবে না দাদু যতক্ষণ না তাকে ডাকছে ততক্ষন তার পাঁচিল এর পিছন থেকে মেয়ে টিকে দেখা টাই  কাজ সেটাই মন দিয়ে করতে লাগলো সে মেয়ে টি হাঁটতে হাঁটতে মাঝে মাঝে দাঁড়িয়ে পড়ছে , বিভিন্ন ফ্রি হ্যান্ড ব্যায়াম করছে আদিত্য এর থেকে ভালোই বড় হবে মেয়েটি কোনো দিন  সামনে থেকে ভালো করে মেয়ে টিকে দেখেনি সে , আজ তাকে পিছন থেকে দেখছে , তাই মেয়ে টি সুন্দরী বা কতটা ভালো দেখতে অনেক চেষ্টা করে মনে করতে পারলো না আদিত্য এই ভাবে প্রায় ১০ মিনিট এর উপর কাটার পর যখন আদিত্য বিরক্ত হতে সবে শুরু করেছে , হঠাৎ দেখলো টা সাইকেল টো ছেলে যেন মেয়ে টাকে কোনো ভাবে  নজর রাখছে হঠাৎ করে দেখলে এক দম বোঝা যাবে না , কিন্তু যেহেতু আদিত্য অনেক্ষন ধরে দেখছে তাই সন্দেহ টা  মনে দানা বাঁধলো একটু পরে সেটা একদম প্রতিষ্ঠিত হলো যখন সাইকেল টি সবার নজর এড়িয়ে কিন্তু ধীরে ধীরে মেয়ে টির দিকে এগিয়ে যেতে থাকলো দাদুর সন্দেহ যে সত্যি কিছু একটা ঘটতে চলেছে মেয়েটির সাথে সেটা বুঝতে পারছিলো আদিত্য এই সময় দাদু পাশে থাকলে খুব ভালো হতো , আদিত্য সব বুঝে কি করবে বুঝতে পারছিলো না দাদুর কড়া  নির্দেশ আছে না ডাকলে যেন সে কিছু না করে

আদিত্য দেখলো সাইকেল টা  এবার একটু দ্রুত এগিয়ে গেলো , মেয়েটির খুব কাছে গিয়ে সাইকেল চালানো ছেলে টি মেয়ে টিকে ডাকলো  তারপর কিছু একটা বলছিলো মেয়েটির চোখ মুখ দেখে বোঝাই যাচ্ছিলো সে বেশ রাগ দেখাছে ছেলেটির  প্রতি রাগারাগি যত বাড়ছে পিছন এর ছেলে টি যেন পকেট থেকে কিছু বার করছে আদিত্য কিছুতেই বুঝতে পারছিল না এই সময়  দাদু কোথায় গেলো কি করা উচিত তাও সে বুঝতে পারছিলো না এমন সময় সে দেখলো রাগারাগি খুব বড় আকার ধারণ করেছে , অত সকালে রাস্তা ফাঁকা থাকায় কেউ তেমন সেটা দেখছিলো না একমাত্র আদিত্য ছাড়া এর পর   ঘটলো সেই মারাত্মক ঘটনা যার জন্য আদিত্য একেবারেই প্রস্তূত ছিল না ঝগড়া হতে হতে হঠাৎ পিছন এর ছেলে টি একটা বোতল বার করে মেয়ে টির দিকে ছুঁড়তে গেছিলো , ঠিক সেই সময় কথা থেকে যেন একটা বিশাল বড় থান ইঁট পিছনের ছেলেটির মাথায় বিশাল জোরে লাগলো , এরকম হঠাৎ আক্রমণে তাল সামলাতে না পেরে বোতল তো ছিটকেই গেলো , আর সে গিয়ে পড়লো পাশের পুকুর হঠাৎ করে নিজের বন্ধু কে এরকম হাবুডুবু খেতে দেখে সাইকেল থাকা ছেলে টি ভীষণ ভয় পেয়ে গেলো সে সাইকেল টা ফেলে পালাবে না বন্ধু কে বাঁচাবে বোঝার আগেই আরও  দুটো বড় বড় থান ইঁট তার মাথায় আর বুকে এসে পড়লো তাল সামলাতে না পেরে সাইকেল সমেত সে গিয়ে পড়লো পাশের পুকুর তখন   আদিত্য শুনতে পেলো দাদুর গলা, আদি তাড়াতাড়ি আই পাঁচিল টপকে মেয়ে টির কাছে যেতে কয়েক মিলিসেকেন্ড নিলো আদিত্য দাদু ততক্ষন মেয়ে টির পাশে  এসে দাঁড়িয়েছে দাদু কে দেখলো পরে যাওয়া বোতল দিকে খুব কড়া  দৃষ্টি তে দেখতে এই বোতল কি আছে সেটা আদিত্য বুঝতে না পারলে মেয়ে টি যে ভয়ানক কোনো বিপদ হতে পারতো এই বোতল থাকা লিকুইড টা  থেকে , সেটা আদিত্য ভালো করেই বুঝতে পারছিলো দাদু হুকুম করলো , আদি মেয়ে টিকে বাড়িতে পৌঁছে  দিয়ে আই মেয়ে টিকে বললো , কোনো ভয় নেই মা , আমি তোমার সাথে পরে বাড়ি গিয়ে দেখা করে আসবো , এখন আমার এই নাতির সাথে ঘরে চলে যাও এখুনি এখানে অনেক লোক চলে আসবে , আমি চাইনা এই ঘটনা তে তুমি জড়িয়ে এটা  কেউ জানুক বাড়ি যাও মা , কাল   আমি তোমার কাছে যাবো

এই প্রথম মেয়ে টির মুখ সামনে থেকে দেখলো আদিত্য , বেশ ভালো দেখতে , কিন্তু ভীষণ এক আচমকা ভয় যেন একদম মুষড়ে গেছে আদিত্য হাত ধরে টানলো মেয়ে টির মেয়ে টি দ্রুত তার সাথে পা মেলালো , মেয়ে টির বাড়ি সেখান থেকে খুব দূরে নয় , পুরো রাস্তা টাই মেয়ে টি কোনো কথা বললো না , হয়তো অজানা কোনো আতঙ্কে সে চুপ মেরে গেছে একেবারে ঘরে ঠোকার সময় শুধু একটাই প্রশ্নের উত্তর দিলে সে , যে তার নাম ঋতুকা , ঋতুকা ব্যানার্জী

ঋতুকা দির কাছ থেকে বিদায় নিয়ে আদিত্য যখন ঘটনাস্থলে পৌঁছলো , দেখলো সব কিছুই খুব সাধারণ হয়ে গেছে , ছেলে দু টির কোনো অস্তিত্ব সে দেখতে পেলো না সাধারণ সকাল প্রতিদিন যা হয় সে রকম  যেন সব কিছু ঘটছে দাদু কে শুধু দেখতে পেলো আদিত্য পাঁচিল এর ওপারে দাঁড়িয়ে আছে

আদিত্য ছুটে চলে গেলো দাদুর কাছে জিজ্ঞেস করলো ছেলে দুটোর কি হলো ? দাদু কোনো উত্তর না করে বললো চল এবার বাড়ি যাওয়া যাক আদিত্য বার বার জিজ্ঞেস করতে থাকলো , দাদু বললো  আজ নয়  দাদুভাই কাল ওই দিদির বাড়ি গিয়ে সব বলবো

পরের দিন দাদু আর আমি ঋতুকা দির বাড়ি গেছিলাম ঋতুকা দির মা দাদু কে পেয়ে প্রায় কেঁদেই ফেলেছিলো দাদু মোটামুটি যা বললো , এই ছেলে দুটি কে শীতের কলকাতায় প্রায় ১৫ মিনিট ধরে পুকুর এর জলেই রেখে দিয়েছিলো দাদু , উঠতে গেলেই নয়  ইঁটের বাড়ি না হলে লাঠির ঘা সহ্য করতে করতে তাদের অবস্থা বেশ খারাপ হয়ে গেছিলো অনেক ক্ষমা প্রার্থনা করার পর তাদের মুক্তি দেয় দাদু , কারণ তখন   সেখানে কিছু চেনা লোকের বাইরে কিছু অজানা আর কৌতূহলী  চোখ জড়ো  হচ্ছিলো যেটা বাড়তে দিতে দাদু চাইনি , সেই সাথে দাদুর সেই সারাজীবন মেনে আসা একটা অদ্ভুত নিয়মাবলী , “অন্যায় কে খতম করো অন্যায়কারী কে নয় ”, এই দুই অনুভূতি থেকেই দাদু মুক্তি দিয়েছে তাদের ওরা  ভীষণ বাচ্ছা ছেলে , চরম অপরাধ করলে বোধহয় চরম শাস্তি ওদের আমি দিতে পারতাম না তবে মা ভয় নেই আমি বলছি ওরা আর  এই ভুল করবে না আমার এই সিদ্ধান্ত জন্য তোমার কাছে ক্ষমা চাইতে এসেছি মা ঋতুকা দি কাঁদতে কাঁদতে দাদু কে জড়িয়ে ধরলো আমার বাবা দাদু কেউ  নেই , আপনি   আজ থেকে আমার দাদু আর বাবার জায়গা নিলেন আপনি যাই সিদ্ধান্ত নিন সেটাই সঠিক

এর পর থেকে ঋতুকা দির সব সময়  দাদুর সাথে দেখা করতে আসতো এমন কি দাদুর শেষ জীবন যখন আদিত্য দাদু কে সময় দিতে পারতো না , তখন ঋতুকা দি নাকি সব সময়  প্রায় দাদুর কাছেই থাকতো

এহেন ঋতুকা দি কে দাদু এমন কি বলে গেলো যা তাকে ২৫ বৎসর হলেই জানাতে বলেছিলো খুব উৎসাহভরে ঋতুকা দির দিকে তাকিয়ে ছিল আদিত্য , ঋতুকা দির সেই রূপ আর নেই , অনেক টাই বুড়ি হবার দিকেই যাছে সে মুখের মধ্যে মধ্যবিও সমাজের ছাপোষা নারীর কষ্টের ছাপ খুব স্পষ্ট শুনেছিলাম একটি ছেলে আছে ঋতুকা দির , বর ছোট খাটো কোনো ব্যবসা করে ।আর ঋতুকা দি নিজে কিছু একটা কাজ করে দাদু মারা যাবার পর থেকে শেষ বছর বিশেষ যোগাযোগ ছিল না তার সাথে হঠাৎ ঋতুকা দি বললোকথাটা বিশেষ কিছু নয় , আসলে সে দিন এর সেই ইতিহাস টা নিশ্চয়ই মনে আছে তোর “, বললামসে তো কোনো দিন ভুলতে পারবো না ঋতুকা দি ”, “তাহলে এটা   নিশ্চয়ই  জানিস , এই পুরো ঘটনাটা তে যে আমি জড়িত সেটা এক মাত্র জন   জানতো , যার মধ্যে জন আর বেঁচে নেই , দাদু আর আমার মা ” , আদিত্য ঘাড়  নাড়লো ঋতুকা দি বলতে থাকলো ,”দাদু সে দিন আমাদেরকে এই ঘটনার শেষ যা বলেছিলো সেটা পুরো সত্যি ছিল না আমাকে পুরো সত্যি দাদুর মৃত্যুর দিন আগে জানিয়ে ছিল আর বলেছিলো তোকে জানাতে যখন তোর বয়স ২৫ বছর পেরিয়ে যাবে না হলে তাঁর মরে শান্তি হবে না আদিত্য বললোকি হয়েছিল সে দিন ?”

দিদি বলে চললো , “দাদু ওই ছেলে দুটি কে শুধু শুধু ছেড়ে দেয় নি সেদিন যে দাদু বলেছিলো ওই ছেলে দুটি আর কখনো কোনো মেয়ে কে  বিরক্ত করতে পারবে না , তার কারণ ছিল দাদু ওই  অ্যাসিড এর বোতল থেকে পুরো অ্যাসিড টাই দু জন এর হাতের এর উপর ঢেলে দিয়েছিলো তাতে ছেলে দু টির হাত প্রায় অখেজ হয়ে গেছিলো আর এরকম নিষ্ঠূর হবার জন্য দাদু শেষ জীবন পর্যন্ত নিজেকে কিছুতেই মাফ করতে পারিনি অনেক বার ছেলে দু টির বাড়ি গিয়ে দেখা করে এসেছে , কিন্তু কিছুতেই নিজের করা এই অন্যায় কে তিনি মানতে পারেন নি কিন্তু শুধু আমার নাম জড়াবে না বলে কাউকে মন খুলে এই কথা বলতে পারেনি ফলে দাদু কখনোই আর সেই প্রাণবন্ত হতে পারেনি তোর সাথে মনোমালিন্য হবার কারণ ছিল এটাই ,তুই কিছুতেই আর আগের দাদু কে ফিরে পাসনি এই দিনের পর যা তোকে ধীরে ধীরে আরো দূরত্ব বাড়িয়ে দিয়েছে দাদুর থেকে পারলে দাদু কে মাফ করে দিস তোর মনের মতো দাদু না হতে পারার জন্য এটাই ছিল দাদুর শেষ ইচ্ছা

সব শুনে অনেক ক্ষণ চুপ করে ছিল আদিত্য মনের মধ্যে তখন অনেক ঝড় চলছিল তার কত ঝগড়া করেছে সে দাদুর সাথে আগের মতো স্বাভাবিক থাকতো না বলে , অথচ দাদুর মনের ভিতরে চলা এরকম এক কঠিন লড়াই কে  সে কোনো দিন বুঝতেই চাইনি ঋতুকা দি কে নিজের গাড়িতে করে বাড়িতে পৌঁছে দিয়ে যখন ফিরছিলো আদিত্য কান্নায় তার চোখ ভেসে যাচ্ছিলো শুধু মনে হচ্ছিলো ফিরে  এস দাদু , আমরা আবার যাই মর্নিং ওয়াক , আবার কোনো অজানা অচেনা কাউকে বাঁচানোর জন্য দু জন মিলে  পরিকল্পনা করি আর পাই জীবন এর এক অদ্ভুত জ্ঞান , যা তোমার কাছ থেকে সব সময় পেয়ে এসেছি , “জীবন এর সব  রাস্তা পরিকল্পিত হয় না , মনের অদম্য ইচ্ছা অনেক সময় অজানা রাস্তা তৈরি করে দেয়

 

লেখক পরিচিতি : সুতনু সিন্হা  , একজন IT সংস্থায় চাকুরীরত লেখক। লেখা আমার একরকমের শখ। যখনই সময় পাই , ছোট গল্প লিখতেই বেশি পছন্দ করি , কখনও তা রহস্য -রোমাঞ্চ কখনো বা জীবনমুখী। যে লেখা মানুষের মনে ছাপ রেখে যায় , সেই ধরণের লেখা লিখতেই আমি বেশি ভালোবাসি।

 

লেখকের আরো লেখা পড়তে ক্লিক করুন  হঠাৎ দেখা  ছোট্ট হাসি

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here