রাত প্রায় ১০ টা। শমিক পেঁয়াজ কাটছিল স্যালাড বানাবে বলে। দরজায় বেল বাজতে ছুরিটা টেবিলে রেখে রান্নাঘর ছেড়ে এগোয় বাইরের ঘরের দরজার দিকে। কিন্তু এই সময় তো কারোর আসার কথা না।
“একটু বিরক্ত করছি অসময়ে। একটু জল পাওয়া যাবে ? আমি আপনার পাশের ফ্লাটেই এলাম আজ। ঘর গুছিয়ে উঠতে এত দেরি হয়ে গেল খেয়ালই নেই যে ঘরে একদম জল নেই যে একটু খাব”—মাঝবয়সী লোকটা বলে।
“নিশ্চয়ই, আপনি আসুন ভেতরে। আমি একটা বোতলে আপনাকে জল ভরে দি?” – শমিক জিজ্ঞেস করে।
“অসংখ্য ধন্যবাদ” – লোকটা একটু স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে।
লোকটাকে বসতে বলে শমিক রান্না ঘরে ফেরে। একটা বোতল খুজে জল ভরতে থাকে। হঠাৎ সাংঘাতিক এক আর্তনাদ তীরের মত ছুটে আসে বাইরের ঘর থেকে।
“কি হল?” – শমিক ছুটে যায় বাইরের ঘরে। জল চাইতে আসা লোকটা রক্তাক্ত অবস্থায় পরে আছে সোফায়। ঘরের ফ্লোর ভেসে যাচ্ছে রক্তে ধীরে ধীরে।
একটা ছুরি, ছুরিটা পেটের একটু ওপরের দিকে গেঁথে আছে লোকটার। ছুরিটা একদম একরকম দেখতে যেটা দিয়ে শমিক একটু আগে স্যালাড কাটছিল। কাছে গিয়ে ভালো করে তাকিয়ে দেখে – নাহ কোনও ভুল না, এটা তো সেই ছুরি। কিন্তু এটা অন্য কেউ পেল কি করে? কে খুন করল লোকটাকে, আর কেন?
ছুরিটা শুধু স্যালাড কাটার ছুরি না, এটা বেশ বড় আর ধারালো, মাংসও কেটে যাবে সহজে।
শমিক ছুটে যায় রান্নাঘরে আবার দেখার জন্য ছুরি টা রান্নাঘরে আছে কিনা । সত্যিই ছুরিটা নেই ওখানে। মনে করার চেষ্টা করে ছুরিটা ও নিয়ে গিয়ে দরজা খুলল না কি টেবিলে রেখে গিয়ে, মাথার মধ্যে সব গুলিয়ে যাচ্ছে। বাইরের ঘরে একটা বডি যার সাথে এই মাত্র শমিকের আলাপ। এবার কি করবে ও?
শমিকের মাথায় আসে না কি করা উচিৎ। পুলিশকে জানালে ওকেই ধরে নিয়ে যাবে। ছুরিটা ওরই, কিন্তু ছুরিতে হাতের ছাপ ওর না।
কোথায় ফোন? শমিক ছুটে আসে বাইরের ঘরে। ফোন সুইচড অফ, ফোনে চার্জ দেওয়া নেই। বডিটা পরে আছে এখনো।
বাইরের ঘরের দরজাটা হাট করে খোলা। দরজাটা বন্ধ করতে গিয়ে শমিক একবার উঁকি মেরে দেখে পাশের ফ্ল্যাটটা। সেটাতে তো তালা ঝুলছে, তবে কি লোকটা তালা মেরে পাশের ফ্লাটে জল চাইতে এসেছিল? এমন আবার হয় নাকি? লোকটা কে আসলে? কিছুই বুঝতে পারছে না। হঠাৎ শরীরটা খারাপ লাগে শমিকের, মাথাটা ঘুরে যায়, তারপর সব অন্ধকার।
——————————-
১১ই এপ্রিল, রাত প্রায় ১০ টা। শমিক পেঁয়াজ কাটছিল স্যালাড বানাবে বলে, দরজায় বেল বাজতে ছুরিটা হাতে নিয়েই রান্নাঘর ছেড়ে এগোয় বাইরের ঘরে দরজার দিকে, এই সময় তো কারোর আসার কথা না। তাহলে ?
“কি চেনা চেনা লাগছে?” মাঝবয়সী লোকটা, নাম রতন, শমিক চিনতে পারে লোকটাকে। এর থেকে শমিক বছর খানেক আগে ৫ লাখ টাকা ধার করেছিল। টাকাটা এখনো ফেরত করা হয়নি, এই মুহূর্তে এতোগুলো টাকা রেডি ও নেই শমিকের কাছে।
কি মনে হল, শমিক কোনও উত্তর না দিয়ে ছুরিটা একেবারে রতনের পেটে দিল ঢুকিয়ে। মুহূর্তের মধ্যে রতনের বডিটা ঢলে পড়ল শমিকের ওপর। বডিটা সোফায় এলিয়ে দিয়ে শমিক কি করবে ভেবে না পেয়ে ছুটে বেরিয়ে যায় ঘর থেকে, সিঁড়ি দিয়ে নেমে যায় খুব তাড়াতাড়ি। পালাতে হবে ঘটে যাওয়া ঘটনাটা থেকে। সাংঘাতিক একটা খারাপ কাজ করে ফেলেছে ঝোঁকের বসে। এমন একটা ঘটনা ঘটে গেল যেটা ও কল্পনাও করতে পারেনি কোনদিন ।
সিঁড়ি শেষ হলে সামনেই বিল্ডিঙের মেন গেট। উদ্ভ্রান্তের মত শমিক ছুটে বেরোয় বিল্ডিং থেকে, সামনেই মেন রাস্তা। মাথায় নানা রকম গল্প ফাঁদতে থাকে। যদি কোনও ভাবে বাঁচা যায় পুলিশের হাত থেকে, শাস্তি থেকে। যদি ও নিজে গিয়ে পুলিশকে বলে একজন অচেনা লোক জল চাইতে এসে খুন হয় ওর বাড়িতে? কিন্তু ছুরিটা কি হবে ? সেটা তো ফেলে এসেছে ও ফ্ল্যাটে। পাগলের মত গল্পটা ফাঁদতে থাকে মনে মনে, ছুটে চলে দিক-বিদিক জ্ঞানশূন্য হয়ে। হঠাৎ একটা ফ্ল্যাশ লাইটের মত কিছু একটা ছুটে আসে ওর দিকে, আর কিছু জানেনা শমিক।
——————————
১১ই এপ্রিল, রাত প্রায় ১১.৩০। পথ দুর্ঘটনায় পড়ে থাকা শমিককে রাস্তার কিছু লোক ভর্তি করে হাসপাতালে। একটা গাড়ি ধাক্কা মারে, ড্রাইভারের কথা মত শমিক কোথা থেকে দুম করে এসে পড়ে গাড়ির সামনে, যে গতিতে আসছিলো গাড়িটা ব্রেক কষা সম্ভব ছিল না। শমিক গত এক মাস কোমায় । তার অবচেতন মন তবু একটা গল্প দেখে যাচ্ছে বার বার, সেই অচেনা লোকটা যে জল চাইতে এসে খুন হয়। ঘুরে ফিরে ওই একই গল্প চলছে ওর অবচেতন মনে।
কলমে শ্রীপর্ণা দাস ব্যানার্জী, বাঙ্গলোর
[…] আমিদুঃস্বপ্নঅবচেতন মনের গল্পগল্পকার রবীন্দ্রনাথএইটুকু তো […]