ডাউন পাশকুড়া লোকালের খবরটা শুনেই ছোটা শুরু। সিঁড়ি দিয়ে নামতেই হৃৎপিণ্ড যেন বিস্ময়ে হাতে ! সঞ্চিতা না? কিন্তু ও এখন কোথা থেকে আসবে? নির্নিমেষ চেয়ে থাকা । সেই চোখ, সেই মুখ, সেই রাতকালো চুল! মন মানে না—-সে তো দীর্ঘকাল আগেই হারিয়ে গেছে আমাদের থেকে।সে তো……
সময়টা তখন স্নাতকের তৃতীয় বর্ষ । অর্থনীতি নিয়ে স্নাতকে পড়ি রামকৃষ্ণ মিশন বিদ্যা মন্দিরে। ম্যাক্রো ইকোনমিকসের বেশ কিছু বিষয় খুব জটিল লাগছিল বলে টিউশন নিলাম ড: নিলাদ্রী সেনগুপ্ত স্যারের কাছে। প্রথম দিনই বন্ধুত্ব হয় সঞ্চিতার সাথে। প্রেসিডেন্সির মেয়ে। থাকে বেলেঘাটায়। পড়ার পর হেদুয়ায় আড্ডা চলত আমাদের। ওর সরলতায় আমরা আশ্চর্য হতাম খুব। কোন দেমাক নেই। ওর দেশের বাড়ি ছিল বোলপুরে। শান্তিনিকেতনের গল্প যখন ও বলতো, মন্ত্রমুগ্ধ আমরা। মাটির সোঁদা গন্ধ যেন ওর কথায়, সরলতায় মোড়া যেন ওর আচরণ। সেই প্রান্তিকের গল্প। সেই খোয়াই—-সেই পৌষ মেলা—সেই দোল !
মনটা কয়েক মুহূর্ত যেন আটকে ছিল ফেলা আসা অতীতে। সম্বিৎ ফিরল পঙ্কজের ডাকে।মেয়েটার দিকে আবার তাকালাম। সারা মুখে যেন নিকষ কালো মেঘ! জীবন থেকে হারিয়ে যেতে থাকার গল্প সারা শরীর জুড়ে। তবে কি ও মানসিক চাপে? সেই চাপ যার জন্য সঞ্চিতা সিলিং ফ্যান থেকে ঝুলে পড়েছিল বাবা মা কে মুক্তি দেবে বলে !
শঙ্কিত মন প্রার্থনা করে উঠলো, হে ঈশ্বর, এই মেয়েটিকে বাঁচিয়ে রেখো । সঞ্চিতা হয়ে ও বাঁচুক সকলের মাঝে !!!
কলমে দেবাশীষ মুখোপাধ্যায়