জাপান -পর্ব ৪ (সেকেজান জেন-Sanjo)

2
2580

আগের পৃষ্ঠা  : জাপান পর্ব ৩                                                                   ৪য় মার্চ থেকে ১১ই মার্চ

এক সপ্তাহ কেটে গেলো। উফফ কবে যে এ কটা মাস কাটবে। এই উফফ টা কেন , তা বাপু আমাকে জিগেস করে লাভ নেই। সে এক স্বপ্নের মতো , আমি এয়ার এশিয়া ধরে ইন্ডিয়া যাচ্ছি , কবে যে সে দিন আসবে। দেশে ফিরে কি কি করবো , আর কি না করবো , সব ভেবে নিয়েছি এই গত এক সপ্তাহে। বুঝতেই তো পারছেন , অঢেল সময়।শুধু  ভাবার আর কিছু না করার। হা হা।

এই সপ্তাহটা আমার নিজের মতো করে গোছানো। মেয়ের সকালে স্কুল , বরের অফিস আর অনেকটা সময় আমার। যা গত পাঁচ বছরে আমার পাওয়া হয়নি। তাই বেরিয়ে গেছি হেঁটে বা সাইকেল এ, এদিক ওদিক , যেদিক মন প্রাণ  চাই তা ঠিক নয় , যতদূর পথ চিনি আর কি। হারিয়ে গেলে , নতুন নতুন ফিরে আসা মুশকিল 🙂

কিয়োটো শহরটি  আগে জাপানের রাজধানী ছিল , এখন রাজধানী  টোকিও , সবাই জানে।Shugakuin (শাগাকুনি) কিয়োটোর উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় একটি শান্ত  এলাকা । যেন সুন্দর করে সাজানো। অনেকের ঘরের ভেতর ও এতো সাজানো আর পরিকল্পিত থাকে না। মাঝে সাঝে বসার জায়গা , মাঝ বয়েসি – পুরাতনিদের  প্রায় দেখি বসে থাকতে। আমার জানলা দিয়ে যত দূর দেখতে পাই , তাতে বেশির ভাগ একতলা দোতলা বাড়ি , (ছাদ গুলো যেন আলাদাই সৌন্দর্য দিয়েছে ) , আর মাঝ খান দিয়ে পাহাড় (অনেক স্তরে ) .সকালে উঠে প্রায় দেখি  পাহাড়ের কোল ঘেঁষে মেঘেদের  ভিড়।  এই দৃশ্য দেখার জন্য মনে আছে সিকিমের দিন গুলো। সকালে উঠে তখনও দেখতাম হিমালয়কে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন রঙে।  যখন মন ঘর ছুঁয়ে যাই , বারান্দায় গিয়ে দাঁড়িয়ে , এই সৌন্দর্যর মাঝে নিজের মনকে অন্য পথে নিয়ে যাই। মনে মনে রবি ঠাকুর , গেয়ে উঠি
“তেপান্তরের পাথার পেরোই রূপ-কথার,
পথ ভুলে যাই দূর পারে সেই চুপ্‌-কথার–”

 

বারান্দা থেকে সন্ধ্যে
ছাদ যেন সৌন্দর্য বাড়িয়েছে

যতদূর চোখ পরে একটা কমলা রঙের দোতলা বাড়ি যা আমাদের দেশের মতো, বলতে পারো কলকাতার কাঠামো-তে বানানো। ভালো লাগে। ভালো যে লাগতেই হবে। সুগাকুইন(শাগাকুনি) ইন্টারন্যাশনাল হাউসের পাশ ঘেঁষেই বাচ্চাদের খেলার পার্ক , আমার মেয়ের প্রিয় জায়গা। বারান্দা দিয়ে সব সময় দেখি ছোট থেকে মাঝারি বয়েসের বাচ্চাদের ভিড়।মেয়ের বায়নায় অনেক বিকেল এখন ওখানেই কাটে আর আগামীতেও কাটবে।

একদিন মেয়েকে স্কুলে দিয়ে ফেরার পথে ঢুকলাম একটি ঘর সাজানোর জিনিসের দোকানে।আমার ছবি তোলার থেকে ছবি লাগানোর খুব শখ। ঘরটা কে একরকম ফটোগ্যালেরি করে রেখেছি মুম্বাইতে। কোথাও কোনো ভালো ফটোফ্রেম দেখলে লোভ সামলাতে পারিনা।ভাস্কর প্রায় আমাকে বলে ,”এতো ফটো লাগিও না , বা কাউর জন্য ফটো ফ্রেম কিনো না , তোমার ভালো লাগলেই যে সবার ভালো লাগবে , তার কি মানে।” আসলে আমার প্রিয় মানুষটির ও এতো অত্যাধিক ছবি ছবি ভরা ঘর ভালো লাগে না বোধহয় , কিন্তু ভয়ে বা আমার ভালো লাগার জ্বালাতে কিছু মুখ ফুটে সোজাসুজি বলে উঠতে পারে না। হা হা। যাইহোক ,সেই দোকান থেকে ফটো ক্লিপ কিনলাম, ফ্রিজের গায়ে ছবি সেটবো বলে।মনে করবেন না , যে এখনো আমার ফ্রিজ সম্মুখ ফাঁকা পরে আছে  , তা এখনো পুরোনো ছবিতে ভরা। টাকা দিয়ে যখন ফিরে আসছি,পেছন থেকে দোকানের মালিক মহিলা , এসে এ, আমার হাতে একটা ব্যাচ দিয়ে বোঝানোর চেষ্টা করলো , এটা গিফট। অচেনা নতুন দেশে, এরকম একটা অনুভূতি , মন কে একটু হলেও চঞ্চল করে দিলো।মন কিছু বলল , ভালো লাগলো। ব্যাচটা তে কিছু লেখা , মানে জানিনা।জানার চেষ্টাটাও করে ওঠা হয়নি।

এই সেই ব্যাচ

রোজকার দিন কাটছে বেশ নিয়মমাফিক। এখন মেয়েকে স্কুলে আনতে গেলে , প্রায় সবারই মুখ চেনা। আগের সপ্তাহে যাদের সাথে আলাপ হলো ,এখন তাদের সাথে অল্প হলেও  গল্প হয়। একদিন তো এক জাপানীস ভদ্র মহিলা দিব্যি জাপানীস এ আর আমি ইংলিশ এ মিনিট পাঁচ গল্প দিলাম। হ্যাঁ সত্যি। বেশ কিন্তু , দুজন দুজনের ভাবনা বুঝতে পেরেছিলাম। স্কুলে এখন আমার বেশ পরিচিত তিন মা বন্ধু জুটেছে ,Mike,Aiko,Naymi, এরা সবাই ইংলিশ বলতে পারে।  এর মধ্যে মাইক আমাকে বেশ সাহায্য করে , স্কুলের নোটিশ বোর্ড পড়তে বা স্কুলের কোনো প্রজ্ঞাপন বুঝতে। আমাদের এখন ফোন নম্বর ও আদান প্রদান ঘটেছে 🙂

 

Nyami with her Son

 

এ তো গেলো মেয়ের স্কুল আর আমার মা বন্ধুর কথা। এবার আসি আমার জীবন যুদ্ধ আর তার অস্ত্রশস্ত্র -র কথায়। যেদিন প্রথম জাপানের মাটিতে পা দিলুম,আমার রান্না বান্নার একটাও অস্ত্র মানে বাসন ছিল না সেরকম। কারণ ? আরে , ইন্ডিয়া থেকে যে যে কড়াই ,চাটু ,হাড়ি আর প্রেসার কুকার এনেছিলাম , তারমধ্যে ভাগ্যবশত , খালি প্রেসার কুকের টা Induction Based ,(মাঝে মাঝে মনে হয় , ভাগ্যিস , অন্য প্রেসার কুকের আনিনি , তাহলে কি যে হতো ) . এছাড়া মেয়ের থালা- বাটি -গ্লাস ছাড়া কিছু আনতে পারিনি। উপায় ছিলনা , ওজনে হচ্ছিলো না। ভেবেছিলাম খাবার থালা তো পাওয়া ই যাবে , তখন কে জানতো , জাপানীস রা অত বাঙালি থালার আয়তনের থালায় খায় না। ভারী মুশকিলে পরা গেলো , মানুষ তিন , থালা দুই। প্লেট পাওয়া যাচ্ছিলো কিন্তু আমরা যে পরিমানে খায় , তাতে প্লেটে খাওয়া টা ঠিক পোষায় না। অনেক খুঁজেও থালার দেখা না পাওয়াতে , শেষে একটা স্টিলের থালা দিয়ে বেশ উপকৃত করলো আসিফ , ভাস্করের ইউনিভার্সিটি র ,এক পিএইচডি ছাত্র। ভাস্করের সাথে তার ভারী ভাব। কেন জানিনা। যদিও তার সাথে ভাস্করের প্রথম আলাপ জাপানে এসেই।

নয় নয় করে এই একসপ্তাহে রান্নার অস্ত্র কেনা হলো। আশা করছি তালিকা তে আরো সংযোজন ঘটবে। এক টেবিল ভর্তি , মোমো র স্টীমার ,ফ্রাইং প্যান ,সস প্যান ,চাটু , প্লেট , কাপ,ট্রে,বাক্স ,থার্মস ,গরম জলের পাত্র থেকে মিক্সি , আরো কিছু মিছু ,ছয় -সাত মাসের গোছানো সংসার আর কি।

আমার জীবনযাপনের অস্ত্র

এই সপ্তাহে শনিবার, আগে থেকে পরিকল্পনা ছিল, আসিফ আসবে লাঞ্চ করতে। কথা মতো খেয়ে , সবাই বেরিয়ে পড়লাম ঘুরতে। গন্তব্য Shugakuin Imperial Villa . আমাদের ইন্টারন্যাশনাল হাউস থেকে বাম  হাতের রাস্তা ধরে একটু চড়াই।

Shugakuin Imperial Villa র পথে

বসতিপূর্ণ এলাকা অলিগলি দিয়ে ১০-১২ মিনিটের পথ। পৌঁছলাম Imperial Villa এ। একি কান্ড , ভাস্কর আমার আর মেয়ের রেসিডেন্সিয়াল কার্ড আনতে ভুলে গেছিল।আর প্রবেশ করতে সেই কার্ড অনিবার্য। এছাড়াও আরো এক বাধা হলো ,১৮ বছরের উর্দ্ধে শুধু প্রবেশের অনুমতি , তাই কন্যাকে রেখে যাওয়ার কোনো মনই ছিল না। এতো দূর এসে মনটা খারাপ হয়ে গেলো। ইতিমধ্যে আসিফ-র গুগল ম্যাপে ধরা দিলো একটা মন্দির। ওর নির্দেশ মতো পথে এগোতে থাকলাম। এসেই যখন গেছি অন্তত মন্দিরটি নয় দেখে যাই।

মন্দিরের পথে , প্রবেশদ্বার
একদম চুপচাপ নিরালা পরিবেশ। এক কথায় দারুন। গেট দেখে তার আসে পাশে চললো অনেক ফটো সেশন।  Sekizan Zen-in Temple ।যেটুকু জানতে পারলাম , গেটে  ঢুকতে গিয়ে সেটুকু বলি এই মন্দিরের ইতিহাস।

Sekizan Zen-in Temple

সেকেজান জেন- Shugakuin (শাগাকুনি )র দক্ষিণ-পশ্চিম পাদদেশে অবস্থিত।সঠিক অবস্থান: 18 কাইকোংবো-কো, শাগাকুঈন, সিকিও-কি, কিয়োটো ।

হুই এবং শাগাকুনি ইম্পেরিয়াল ভিলা এর সংলগ্ন, এটির সাথে এটি শাগাকুনি হিস্টোরিক ক্লাইমেট স্পেশাল সেভ ডিস্ট্রিক্ট নামে অভিহিত করা হয়। এটির আশেপাশে সুপরিচিত বিখ্যাত মন্দির যেমন মনসিংহিন ও শিসেন্দো রয়েছে।সিকিযান জিন-ইন প্রতিষ্ঠিত হয় 888 খ্রিস্টাব্দে, মহাযাজক যিকাকু দিশি এনিনের ইচ্ছায় । পরে হিয়েজান এনরিকুজি মন্দিরের টাংগাই সম্প্রদায়ের বৌদ্ধ ধর্মের সদর দফতর হিসেবে। কিয়োটো শাগাকুনি ইম্পেরিয়াল ভিলার কাছাকাছি একটি শান্ত আশেপাশে অবস্থিত, এটি শরৎকালে ,লাল তীক্ষ্ণ পাতাগুলির জন্য একটি বিখ্যাত ভ্রমণ সাইট বা দেখার মতো জায়গা ।
Sekizan Zenin, অবসরপ্রাপ্ত সম্রাট Gomizunoo (1596 ~ 1680) ,রাজকীয় পরিবারের কাছ থেকে সম্মানিত, , যারা Shugakuin ইমপেরিয়াল ভিলা নির্মাণ মালিক হিসাবে পরিচিত হয়। তিনি মন্দিরের মেরামত ও আদেশ দিয়েছিলেন, সেকিজান ডাইমিজিন (赤山 大 明 神) শব্দটি তার নিজের দ্বারা সম্পন্ন একটি ক্যালিওগ্রাফি । মর্মস্পর্শী কর্মক্ষমতা জন্য ঘন্টাধ্বনি ও লাগান ।

দর্শকদের প্রয়োজনীয় তথ্য :
প্রবেশদ্বার খোলার সময়: 06:00 -18:00
দর্শকদের জন্য সময়: 09:00 ~ 16:30
প্রবেশ মূল্য :বিনা মূল্য
কি করে পৌঁছবেন * 7 মিনিট সাবওয়ে Karasuma লাইন এর Matsugasaki স্টেশন থেকে ট্যাক্সি* ২0 মিনিট হাঁটুন বা 5 মিনিট ইজান ইলেকট্রিক রেলওয়ে এর Shugakuin স্টেশন থেকে ট্যাক্স দ্বারা* 15 মিনিট হেঁটে বাস স্টপ থেকে শগাকুইন রিকুইমাইচি (ময়মনসিংহ বাস লাইন 5, 31, বা 65)বা বাস স্টপ থেকে 15 মিনিট হাঁটা Shugakuin Michi (মিজানিজ বাস, Kita লাইন 8)
গাড়ী পার্কিং: পাওয়া যায় না। দেখার জন্য পাবলিক পরিবহন ব্যবহার করুন
যোগাযোগ: ফোন : 075-701-5181 (সিকিযান জেন-ইন) তথ্যের জন্য

তথ্যকেন্দ্র

 

Sekizan Zen-in

অসাধারণ পরিবেশে সূচ ফেলার ও শব্দের অভাব। ঢুকতেই চোখে পড়লো , একটা বাসের তৈরি নলের ব্যবস্থা। লেখা আছে মন্দিরে ঢোকার আগে হাত ধোয়ার জন্য ব্যবহার করুন। এই ব্যবস্থাকে chozuya বা temizuya বলে। জাপানী মন্দির ও তীর্থস্থানে শুদ্ধকরণের জন্য এটি  একটি চেজুইয়া বা টেম্পুইয়া পানি সরবরাহের প্যাভিলিয়ন। উপত্যকায় পানি দিয়ে ভরাট করা হয় এবং উপাসনাকারীদের হাত, মুখ এবং শুচি করার জন্য, কপালের ধোয়ার জন্য ব্যবহার করা হয়।

চেজুইয়া বা টেম্পুইয়া

চোখে পড়ল সেই ঘন্টা আর একটা সাদা ফ্রেমের মতো জিনিস। যার পাশে দাঁড়িয়ে আমরা তো দিব্যি ছবি তুললাম , কিন্তু জানতে পারিনি ওটা আদৌ কি। আমার কাছে জায়গাটা ফিল্মি লোকেশন থেকে কম কিছু নয়।

ভেতরের মন্দিরে বুদ্ধের সোনালী মূর্তি।এছাড়াও বাইরে পাথরের বুদ্ধের  মূর্তি চোখে পড়লো , যেখানে ছোট জলের গ্লাস এ জল দেওয়া। সাজানো রয়েছে অনেকে ধরণের লাল-সাদা লণ্ঠন।আরো কারুকার্যময় ল্যাম্প ও। আরো একটা দেখার বিষয় , দিক নির্দেশ। মন্দিরের কোন দিক দিয়ে ঢুকতে হবে আর কোন দিক দিয়ে বাহির তার নির্দেশ দেওয়া ছিল। পাশে বাঁশের বন। ছোট ছোট আরো দু একটা মন্দির ঘর। দেখলাম দুটো কাউন্টার আর তাতে বসে থাকা দুজন মহিলা। একদম চুপচাপ। নিজের কাজে ব্যস্ত।

বুদ্ধ মূর্তি
লন্ঠন
পাথরের বুদ্ধ মূর্তি

ছোট ছোট জাপানীস পুতুলের মতো কিছু চোখ এড়ালোনা  ,যার নিশ্চয় কোনো তাৎপর্য থাকবে ,যা আমার জানা নেই।

ফিরে এলাম ঘরে ,৪টা নাগাদ। চা খেয়ে আবার বেরোলাম অজানার উদ্যেশে। আসিফ বললো চলো একটু শপিং হয়ে যাক।
ছোট ছোট জাপানীস পুতুলের
আমার ঘরের কাছে দুটো বাসস্টপ , সুগাকুইন মিচি আর একটা সুগাকুইন রেলস্টেইনের কাছে। এখন থেকে ৫নম্বর আর ৩২ নম্বর বাস যায়। সে আর-এক অভিজ্ঞতা: বাসে চড়া। বাসস্টপ গুলো অত্যাধুনিক। ম্যাপ সহিত ,কোন কোন বাস সেই বাসস্টপ এ দাঁড়াবে আর তার তৎক্ষণাৎ অবস্থান কোথায় সেটা দেখিয়ে দিছিলো বাসস্টপের Display Stand। বাস এখন কোন স্টপ-এ আছে (শেষ তিন স্টপ পর্যন্ত ) সেটা দেখতে সক্ষম ,এখানকার বাসস্ট্যান্ডের GPS System ।বাস এলো। আমরা ঠিক করেছিলাম Sanjo যাব। সব থেকে ভালো জায়গা শপিং এর জন্য।
একটা জিনিস খেয়াল করলাম, বাস থামতেই , বাস, যাত্রীদের দিকে মানে বাসস্টপ এর দিকে(বাম দিক ) একটু নিচু হয়ে গেলো , যাতে যাত্রীরা সহজে উঠতে পারে আর ছাড়ার সময় আগের মতো সোজা হয়ে দাঁড়ালো। হাহা। এরকম ও হয়।!! হয় হয়তো। আমার প্রথম বিদেশ দেখা তো। এরকম ব্যবস্থা দেখিনি বাপু।
ট্রেনের মতো এক্ষেত্রেও পেছনের দরজা দিয়ে ওঠা আর সামনের দরজা দিয়ে নামা। প্রতিটি স্টপে ,ডিসপ্লে (diplay ) সহ ঘোষণা হতে থাকলো পরবর্তী স্টপের নাম সহকারে এবং যে যে স্টপ কোনো বিশেষ টুরিস্ট স্পট , সেটাও আলাদা করে ঘোষণা হয় ।

বাসের ভেতর

বাসে প্রতিটা সিট্ এর পাশে একটা সুইচ , তার নিচে ইংলিশ আর জাপানীস এ লেখা  “বাটন টিপে ড্রাইভারকে জানাতে যে আপনি পরবর্তী স্টপেজে এ নামতে চান” ।তাই হয়তো এখানে বাস এ কন্ডাকটর নেই, আমাদের দেশের  মতো।  কেউ টিকেট চাইও না আর কোনো যাত্রী চেঁচিয়ে বলেও না, দাদা আমি পরের স্টপ এ নামবো। হিহি।

প্রাপ্তবয়স্কের টিকিট মূল্য ২৩০ আর ৬ বছরের উর্ধে ১২০।আমরা ৬ বছরের উর্দ্ধে ,কথাটি  না পরেই সেদিন আসা যাওয়ার দুদিকেরই   মেয়ের টিকিট কেটেছিলাম। খেয়াল হয়নি। তুমি যদি প্রথম স্টপে নামো তাও তোমার ভাড়া যা , শেষ স্টপে নামলেও একই। কি মজার ব্যাপার না?

Sanjo

আমাদের স্টপ Sanjo ।স্টপ আসতেই এগিয়ে গিয়ে বক্সে coin ফেলে নেমে পড়লাম। ওহ। এই প্রথম জাপানে এসে ভালো লাগলো। আমি একটু কোলাহল প্রিয় মানুষ। মানে ভিড় পছন্দ করি ,জায়গাটা আমার জন্য একদম মানানসই। রাস্তা পার হতে একটা tunnel এর মতো কিছু। অপূর্ব সে দৃশ্য। হু হু করে হাওয়া বইছে।হাড় কাপানো একদম।তাতে কি। উৎসাহের একটুও ঘাটতি হলো না। ঝা চকচকে জায়গা। আলো আর আলো। লোক থিক থিক  করছে। তেমনি গাড়ির লাইন । কিন্তু  কোথাও কেউ থেমে নেই , নেই কোনো ট্রাফিক লাইন , না কোনো শোরগোল আওয়াজ। সব যেন নিয়মানুযায়ী চলছে- চলবে টাইপ।

Sanjo
শপিং করলাম মীনা শপিং মল থেকে , মনের আনন্দে ,খেলাম একটা ইন্ডিয়ান রেস্টুরেন্ট Diwali তে। অনেক অনেক হাঁটা , অনেক গল্প ,অনেক দোকান ঘুরে , বেশ সময় কাটিয়ে ৫ নম্বর বাস ধরে ঘরে ফিরলাম রাত ৯.৩০ এ।
আজ এই পর্যন্ত।

2 COMMENTS

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here