<< জাপান পর্ব ১৭ ৪য় -৫ম জুন ,২০১৮
ভোর ৫ টাই উঠে , স্নান ব্রেকফাস্ট সেরে মেয়ে কে তৈরি করে রওনা হলাম , ছোটবেলার রূপকথার দেশে। সত্যি কথা বলতে , আমি বিদেশে কোনো দিন
এসব ভাবিনি , এটা আমার স্বভাবের বিরূপ দিক। কিন্তু জীবনে ঠিক যা যা নিশ্চিত করে ভেবেছি করবোনা সেটা অবশ্যম্ভাবী ভাবে ঘটে গেছে। যেহেতু বিদেশে আসবোনা ভেবেছি, তাই এটাও ভেবেছিলাম Disney Land আমার কোনোদিন ও দেখা হবে না। আর সত্যি বলতে জাপানে আসার আগেও আমি এতটাই অনাগ্রহে ছিলাম যে সেরকম ভাবে দেশটার সম্পর্কে পড়াশোনা করে আসেনি। তাহলে হয়তো অনেকে আগেই বেশি খুশি হতাম। তাই আজ যাচ্ছি Disney Land , আমার মতো অনেক মানুষের স্বপ্নের জায়গায়।
সকল ১০টার মধ্যে না পৌঁছালে সব তো দূর কথা ২০% ও দেখা হবে না। টোকিও স্টেশন থেকে JR Chuo Line Rapid ট্রেন নিয়ে পৌছালাম টোকিও স্টেশনে , সেখান থেকে লাইন বদলে করে JR Keiyo Line or JR Musashino Line ট্রেন ধরে Maihama মাইহামা স্টেশন। স্টেশন এ ঢোকার আগেই চোখে পড়লো Disney ল্যান্ড এর পোস্টার। এখানে Disney Land এর সাথে সাথে ছিল Disney Sea ও.আমরা এসেছিলাম Disney Land এর উদ্দেশেই।
স্টেশন থেকে ৫ মিনিটের হাঁটা পথ। টিকিটের লাইন এ আগে থেকেই প্রায়োরিটি টিকিট শেষ। ওই টিকিটের জন্য নাকি লোকে ভোর বেলা থেকে লাইন দেয়। আমরা জেনারেল টিকিটে কেটে ঢুকে পড়লাম ভেতরে। টিকিট মূল্য 7,400 ইয়েন (প্রাপ্ত বয়স্কের ), ৬৪০০ ইয়েন (বাচ্চাদের ). সব মিলিয়ে ২২০০০ ইয়েন এর ধাক্কা। তাতে কি। এদিন কি রোজ রোজ আসে , হা হা।
টোকিওর আমেজমেন্ট পার্ক টোকিও ডিজনিল্যান্ড একটি থিম পার্ক যা ওয়াল্ট ডিজনি তৈরী চলচ্চিত্রগুলির উপর ভিত্তি করে নির্মিত হয়। এটি 1983 সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে প্রথম ডিজনি থিম পার্ক হিসাবে খোলা হয়েছিল। এ বছর এটির ৩৫ বছর পূর্ণ হলো।
টোকিওর আমেজমেন্ট পার্ক ,ডিজনিল্যান্ড ,একটি থিম পার্ক যা ওয়াল্ট ডিজনি তৈরী চলচ্চিত্রগুলির উপর ভিত্তি করে নির্মিত হয়। এটি 1983 সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে প্রথম ডিজনি থিম পার্ক হিসাবে খোলা হয়েছিল। এ বছর এটির ৩৫ বছর পূর্ণ হলো। ঢুকতেই চোখে পরে একটি সুসজ্জিত ঝা চকচকে disney land স্ট্যাচু। দূর থেকে দেখা যাচ্ছিলো সেই টেলিভিশন এ দেখা disney castle .খুব আওয়াজ হৈচৈ হচ্ছিলো , ওদিক পানে। এগিয়ে গিয়ে দেখলাম সকালের প্যারেড তখন চলছে। দুর্গের সামনে শ এ শ এ মানুষ বসে দাঁড়িয়ে সেই প্যারেড উপভোগ করছে। প্যারেড এ এগিয়ে চলেছে ওয়াল্ট ডিজনির তৈরি বিভিন্ন চরিত্ররা। না না অঙ্গভঙ্গিমা -নাচে -গানে সে এক অসাধারণ পরিবেশ।মিকি -মিনি -ডোনাল্ড -সিনড্রেলা কে না নেই।
টিকিটের সাথে আমাদের একটা ম্যাপ ও দিয়েছিলো ঢোকার সময় , যেখানে এই পুরো Tokyo Disney Resort এর কোথায় কি কি ইভেন্ট -শো -পার্ক রয়েছে তার বর্ণনা ছিল। সেই মতে পুরো রিসোর্ট টা কয়েকটা ভাগে বিভক্ত , Adventureland, Frontierland (Westernland), Fantasyland, Tomorrowland, Critter Country and Mickey’s Toontown ইত্যাদি। আমরা প্রথম গেছিলাম এডভেঞ্চার ল্যান্ড এ , pirate of carabian শো দেখতে, তারপর দোতলা বাস এ চেপে দুর্গের চারপাশ ঘুরলাম।
disney land এর প্রতিটা বিভাগের বিভিন্ন শো গুলোর সাথে সাথে ছিল অনেক দোকান আর ফুড হল। ফুড হল গুলোতে পাওয়া যাচ্ছিলো মিকি র আকৃতির burger . এতো ভিড় তাও সোমবার , তাহলে শনি -রবিবারে কি হয় কে জানে।
খাওয়া সেরে এগিয়েছিলাম Toon Land এর দিকে , দেখেছিলাম একটা ৩D শো ,আমার প্রিয় ডোনাল্ড এর। সাথে সাথে চলে ছিল মেরি গো রাউন্ড আর অনেক রকমের রাইড। বেলা এগোতে থাকে। শরীর সাথ না দিলেও , এক মিনিটের জন্য কোথাও থামতে আছে হয়নি। মনে আছে একটা মিকি আকারের icecream খেতে পারে ৪০ মিনিট লাইন এ দাঁড়াতেও হয়েছিল।একে বলে পাগলামির চূড়ান্ত। এর পর টয় ট্রেন -মিকি ওয়ার্ল্ড -এডভেঞ্চার পার্ক। যদিও এডভেঞ্চার পার্ক এর রাইড দেখে ভাস্কর সাহস পাইনি সেটা চড়তে। অগত্যা আমরা চড়া হয়ে ওঠেনি। বেলা গড়িয়ে প্রায় সন্ধ্যে হবে , চারিদিকে হৈ -হৈ। কারোর যেন বিশ্রাম নেই। সবাই ছুটছে।
Disney র ক্যাসল থেকে রাস্তা র পাশ দিয়ে লোক এখন থেকে জায়গা জুড়ে বসতে শুরু করেছে ,রাতের লাইট শো দেখবে বলে। আমরাও দেখবো , কিন্তু এখন বসার সময় নেই। শো শুরু হবে ৭ টাই , হাতে এক ঘন্টা সময়ে স্পেস ল্যান্ড আর মিকি র সাথে দেখা করবে মেয়ে। এই প্ল্যান। স্পেস ল্যান্ড তো হলো , কিন্তু মিকি র ঘরের বাইরে যা লাইন তাতে আরো ১ ঘন্টা লাইন এ দাঁড়াতে হবে। তাই ছুটলাম লাইট শো দেখতে। সকালের প্যারেড এর মতো এখনো সবাই মানে disney র সব চরিত্ররা এখন রাস্তায় বেরিয়েছে , সাথে আলোর রোশনাই , গান , নাটক কত কি। যদিও সব জাপানীস , তাই মাথায় কিছু না ঢুকলেও , সব কিছু মনকে ছুঁয়ে গেলো , আর কানে কানে বলে গেলো , এ তো রূপকথা।
শো শেষ হবার আগেই আবার মেয়ে কে নিয়ে মিকি হাউস এ। মেয়ে নাছোড়বান্দা , মিকি র সাথে দেখা করবেই। আর এদিকে আমার্ আর ভাস্করের দেহ জবাব দিচ্ছে। আমার পা যেন যার চলছে না আর সেই নিয়ে আমরা আরো এক ঘন্টা দাঁড়িয়ে ছিলাম মিকির সাথে বাবির দেখা করাতে , ফটো তুলতে। জীবন যাই যাই অবস্থা। এক তো এতো হেঁটেছি যে খিদে যেন বেশি বেড়ে গেছে আর খাবারের দোকানে লাইন দেবার মতো অবস্থা আমাদের নেই। হোটেল এ ফিরতে প্রায় ১১ টা বেজে যায়। মেয়ে শেষমেশ স্টেশন এই বসে পরে , আর আমরা ভুল টিকিট কেটে , সেই টাকা ফেরত নেবার মতো কষ্ট করার মতো অবস্থাতেও ছিলাম না। মনে হয়েছিল , আজই শেষ নিঃস্বাস ত্যাগ হবে। খুব বেশি নিজেকে অত্যাচার করে ফেলেছি। রাতে ফিরে ৰেডিমেড রামেন /নুডলস খেয়ে সেদিন চোখ বুজি।
৫ জুন সকাল ১১ টাই হোটেল ছেড়ে দেবার কথা। আমাদের বুলেট ট্রেন বিকেল ৬টাই। প্ল্যান এ আগেই ছিল কামাকুরা দ্বীপ।সকাল সকল উঠে , হোটেল ছাড়ি ১০ টা নাগাদ , তারপর JR (JAPAN Railways ) লাইন ধরে সোজা কামাকুরা স্টেশন। বাঁধ সেজেছিল সাথে থাকা ট্রলি ব্যাগ , কারণ সারাদিনের ঘোরাঘুরিতে বাচ্চা সমেত ব্যাগ নিয়ে বেড়ানো বেশ কঠিন। আগে থেকে দেখেছিলাম , কামাকুরা স্টেশন টি বেশ বড়সড়ো , তাই সেখানে ব্যাগ রাখার লকার থাকাটা স্বাভাবিক। হ্যাঁ , ঠিক শুনলেন , জাপানে এটাও একটি বিশেষ ব্যাবস্থা। যখন পর্যটকরা বিভিন্ন শহর ভ্রমণে আসেন , তখন কোনো হোটেল শুধু ব্যাগ রাখার বা সাথে থাকা মালপত্র রাখার জন্য বুক না করে , বড় বড় স্টেশন এ থাকা এই ব্যাগ রাখার লকার গুলোতে রাখতে পারেন। এগুলোর নাম COIN LOCKER .কারণ ,coin /পয়সা নির্ণয় করে লকার গুলোর সাইজ বা আকার। বড় ট্রলি ব্যাগ থেকে ছোট হ্যান্ডব্যাগ সব রাখার জন্য এই লকার গুলোর সাইজও ও আলাদা আলাদা। কামাকুরা স্টেশন এ যথারীতি সব লকার ইতিমধ্যে বুক হয়ে গেছিলো। অগত্যা হেল্প সেন্টার এ গিয়ে আমাদের অন্য লকার এর খোঁজ শুরু করতে হয়। বেশি দূরে না , পাশেই ছিল আরো একগুচ্ছ লকার। সেখানে আমাদের মিডিয়াম সাইজও এর ব্যাগ ধরলেও বড় ট্রলি কে আমাদের সাথেই নিতে হয়। শুরু হয় যাত্রা। প্রথম গন্তব্য Kamakura’s Great Buddha .কামাকুরা স্টেশন থেকে ৩ স্টেশন পরে Hase স্টেশনের থেকে ৫-১০ মিনিট হাঁটা পথ।
যদি ও আমাদের এরপরের গন্তব্যের জন্য আমাদের Enoden ট্রেন নিয়ে Enoshima যেতে হতো , তাই আমরা ট্রেন না ধরে বাইরে থেকে বাস ধরে Hase পৌঁছায়। The Great Buddha of Kamakura (鎌倉大仏, Kamakura Daibutsu) , যার মন্দির টি Kotokuin Temple নাম পরিচিত এবং গ্রেট বুদ্ধ , Daibatsu নামে। কামাকুরা মহান বুদ্ধ মূর্তি , একটি 11.4 মিটার উচ্চতার ব্রোঞ্জ,বুদ্ধের Amida মূর্তি। এটি জাপান এর দ্বিতীয় বৃহত্তম ব্রোঞ্জের বৌদ্ধ মূর্তি, প্রথম স্থানে রয়েছে নারার Todaiji মন্দির এর বৌদ্ধ মূর্তি।
মূর্তিটি 1২52 সালে তৈরির পর মূলত একটি বিশাল মন্দির হলের ভিতরে অবস্থিত ছিল। তবে, 14 তম ও পঞ্চদশ শতাব্দীতে টাইফুন এবং জোয়ারের ঢেউ দিয়ে বহুবার মন্দিরের ভবন ধ্বংস হয়। তাই 1495 সাল থেকে বুদ্ধ মুক্ত আকাশের নিচেই বিরাজমান।
Kotokuin Temple প্রবেশের সময় ও প্রবেশ মূল্য :
মন্দিরটি প্রতিদিন খোলা , সকাল 8:00 থেকে বিকেল 17:30 পর্যন্ত (শুধু অক্টোবর থেকে মার্চ পর্যন্ত 17:00 পর্যন্ত খোলা থাকে ).
প্রবেশ মূল্য :২০০ ইয়েন
বুদ্ধের মূর্তি টি ভেতর দিয়ে ফাঁকা , মানে একটা গলি পথ রয়েছে , সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে গেছে রাস্তা। মাত্র ২০ ইয়েন দিয়ে যে কেউ ভেতরে প্রবেশ করে দেখে নিতে পারে ব্রোঞ্জের বৌদ্ধ মূর্তির আসল পরিকাঠামো।
এবার এখন থেকে হাঁটা পথে এগিয়ে Hase স্টেশন থেকে Enoshima যাওয়ার ইচ্ছেই রওনা দিলাম। পা এ পা এ এগিয়ে দু একবার ভুল পথে গিয়েও শেষমেশ স্টেশন এ পৌঁছালাম । হিল স্টেশনের মতো ছোট ছোট ২-৩ বগির টয় ট্রেনের মতো ট্রেন। Enoshima তে যাওয়ার ইচ্ছে , (beach) সমুদ্র -সৈকত দেখতে।
স্টেশন এর নাম Katase-Enoshima স্টেশন।এদিক ওদিক গলি -দিক নির্দেশ দেখে দেখে পৌছালাম সমুদ্রের কাছে।
কামুকুরার সামান্য পশ্চিমে একটি ছোট দ্বীপ হলো Enoshima। সমুদ্র সৈকতের সাথে সাথে রয়েছে – পার্ক, মঠ, স্থানীয় রেস্টুরেন্ট এবং এমনকি গুহা। আমাদের হাতে সময় খুব কম থাকায় আমাদের বেশি সময় কাটানো হয়নি সেই সমুদ্র সৈকতে। কারণ ফিরে যেতে হয়েছিল কামাকুরা স্টেশনে, আমাদের ছেড়ে আসা জিনিস আবার সংগ্রহ করতে।
কামাকুরা স্টেশন এ ব্যাগ সংগ্রহ করে ম্যাক ডি তে দিনের খাবার খেয়ে আর বাকি খাবার হাতে নিয়েই পারে ছুটে দিতে হয়। শেষ বেলাতে দেখার ছিল ছিল YOKOHAMA শহরটিকে। আমাদের বিকেলের শিনকানসেন ট্রেন ছিল Shin-Yokohama স্টেশন থেকে , আর আমরা দেখতে চাইছিলাম Yokohama শহর , যা Yokohama স্টেশনের কাছে। দুই স্টেশনের মধ্যবর্তী দূরত্ব ১১ মিনিটের ট্রেন যাত্রা হলেও , এক স্টেশন থেকে এক স্টেশন হাঁটা পথে প্রায় ৩০ মিনিট।
Yokohama স্টেশনে যখন নামি তখন প্রায় ৪ তা বাজে ঘড়ি। স্টেশনের হেল্প সেন্টার এ গিয়ে জিগেস করি , আমাদের ফিরে যাওয়ার ট্রেন ৬ টাই , আমরা Yokohama তে এখন কি কি দেখতে পারি !!দুজন মহিলা , যারা হেল্প ডেস্ক এ বসেছিলেন , তারা রীতিমতো আশ্চর্য প্রকাশ করলেন,বললেন এখন থেকে শুধু Shin-Yokohama স্টেশন এ পৌঁছাতেই আপনার হাঁটা নয় , দৌড়াতে হবে , তাই ঠিক কি কি দেখতে পারবেন , বলা মুশকিল। শুনেই দুজনে মুখ চাওয়াচাওয়ি করে একেবারে দে ছুট। কাজের সময় কোনোদিন ই আমাদের মোবাইল জিপিএস কাজ করেনি , না সেদিন করেছে। আগে বলি , কেন Yokohama ,কেন এই শহর এ আসা , তাও এতো ঝুঁকি নিয়ে। যদিও জানতাম , বুলেট ট্রেন যে কোনো মুহূর্তে হাতছাড়া হবে। তও যেন আমাদের দুজনের মাথায় কি একটা ভূত চেপেছিল। আর তার ভুক্তভোগী আমার বেচারি কন্যাও। সেই গত ৪-৫ দিন ধরে সে না পেরেছে শান্তিতে শুতে ,না খেতে। আমরা বেশ বুঝছিলাম ,দেশে জাপানীসদের মতো সামুরাই পুরোপুরি না হলেও, ছোটোখাটো হয়েই ফিরবো।
হ্যাঁ , যা বলছিলাম ,কেন Yokohama ??জাপানের কানগাওয়া প্রিফেকচার এর রাজধানী Yokohama এবং যা টোকিওর পর ,জাপানের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর এবং জাপানের সবচেয়ে জনবহুল পৌরসভা । ইয়োকোহামা তার প্রচুর দর্শনীয় স্থানগুলির জন্য বিখ্যাত, যার মধ্যে Queen Square ,Landmark Tower ,Cosmo World,Minato Mirai 21 অন্যতম।
এগুলো সব এ বিশালাকার বিল্ডিং এবং কোনো না কোনো কারণে বিখ্যাত। Yokohama স্টেশনটি নিজেই একটি বিশালাকার বিল্ডিং সহ মল ও , যার নাম Queen Square ,যেখান থেকে আমরা আমাদের যাত্রা শুরু করেছিলাম। এবার হাঁটা শুরু। টোকিও ঘুরে এসে , এই শহর দেখলে তাক লেগে যাওয়ার কথা। কেমন যেন বিদেশি সিনেমা সিনেমা অনুভূতি। ইয়া চওড়া চওড়া রাস্তা আর উঁচু উঁচু বিল্ডিং যে ঘাড় ও চোখ সমতলে রেখে তা কিছু ভাবেই দেখা সম্ভব না। চলার পথে পড়লো ল্যান্ডমার্ক টাওয়ার।
কি আছে এই ল্যান্ডমার্ক টাওয়ার এ ?
ল্যান্ডমার্ক টাওয়ার , যেটি ১৯৯৩-২০০৪ অবধি জাপানের সর্ব্বোচ্চ উঁচু বিল্ডিং ছিল। Yokohama ,ল্যান্ডমার্ক টাওয়ার দ্য স্কাই গার্ডেন হলো ল্যান্ডমার্ক টাওয়ারের 69 তম তলায় ইয়োকোয়ামা এর সর্বোচ্চ পর্যবেক্ষণ ডেক। ল্যান্ডমার্ক টাওয়ার , Yokohama র ২66 মিটার উচ্চতায় অবস্থিত সবথেকে উঁচু বিল্ডিং । এই বিল্ডিং এ রয়েছে জাপানের দ্রুততম লিফট যা 750 মি / মিনিট বেগে আপনাকে মাত্র 40 সেকেন্ডের মধ্যে পর্যবেক্ষক ডেকে পৌঁছে দেবে। এখান থেকে দেখা যাবে Yokohama শহরের একটি 360 ডিগ্রী view , Yokohama Bay সেতু, এবং পরিষ্কার দিনগুলিতে টোকিও টাওয়ার এবং মাউন্ট ফুজি ও দেখা যায় এই ডেক থেকে ।
আমরা ল্যান্ডমার্ক টাওয়ার এর পর্যবেক্ষণ ডেকে আর যায়নি , কারণ টোকিও টাওয়ার থেকে ইতিমধ্যে শহরের দৃশ্য দেখা হয়ে গেছে আর হাতে নামমাত্র সময়। নিচ থেকে দেখে , আর লিফ্ট এ কয়েক তলা উঠে , ল্যান্ডমার্ক টাওয়ার থেকে এগিয়ে যাওয়ার জন্য মনস্থির করি। ল্যান্ডমার্ক টাওয়ার এর বেস থেকে দূরে দেখা যাচ্ছিলো Minato Mirai 21 এর আংশিক দৃশ্য।
Minato Mirai আসলে আলাদা করে কিছু নয়। মিন্টো মিরাই ২১ (み な と み ら い 21) কেন্দ্রীয় ইয়োখোহামায় একটি সমুদ্র সৈকত এলাকা, যার আর এক নাম “harbor of the future” তথা “ভবিষ্যতের আশ্রয়”।
এটি জল বরাবর একটি মনোরম দৃশ্যযুক্ত জায়গার সঙ্গে সঙ্গে পর্যটকদের কাছে এক আকর্ষণীয় সম্পদ। এখানে রয়েছে বিশাল বিশাল ঝা চকচকে ইমারত , কেনাকাটা অনেক মল , হোটেল, একটি কনভেনশন কেন্দ্র, একটি বিনোদন পার্ক, Hot Spring Bath (Onsen )(জাপানীস এ বিখ্যাত একটি সানঘাট ), জাদুঘর এবং পার্ক ইত্যাদি ।ল্যান্ডমার্ক টাওয়ার ,কুইন স্কয়ার, Cosmo World Ferris Wheel সব এ এর একটা অংশ মাত্র।
দূর থেকে দেখা যাচ্ছিলো Cosmo World Ferris Wheel, এটি 1989 সালে নির্মিত হয়েছিলো, ইয়োকাহামা এক্সপো এর একটি প্রদর্শনীর জন্য। এটির বহিরাগত ব্যাস 100 মিটার,112.5 মিটার উচ্চতাএবং একসাথে ৪৮০ সর্বোচ্চ সংখ্যক যাত্রী কে নিয়ে এটি ঘুরতে পারে । 60 টি গন্ডোলেস gondola নিয়ে এক রাউন্ড দিতে এই ফেরি চাকার লাগে 15 মিনিট সময়। এই গন্ডোলে gondola গুলো লাল, নীল, কমলা, হলুদ ও সবুজ রঙের হয়ে থাকে । এছাড়াও একটি রক্তবর্ণ গন্ডোলা এবং দুটি সাদা ও রয়েছে ।শুধুমাত্র বেগুনি গন্ডোলাকে “হ্যাপি গন্ডোলা” বলা হয় এবং এগুলো হুইলচেয়ারের মানুষদের জন্য।যখন এটি প্রথম উদ্বোধন হয় এটি ছিল জাপানের সর্বোচ্চ ফেরি , কিন্তু ১৯৯২ সালে Igosu ১০৮, Shiga ফেরি তৈরী হবার পর , সেটিই জাপানের সর্বোচ্চ ফেরি wheel .
এই সব দেখে আর ছবি তুলতে তুলতে সময় যে কখন ৫ টা পেরিয়ে লেগেছে কে জানে। পড়ি কি মরি হয়ে ছুটতে শুরু করি আমরা , কারণ জিপিএস এ যে পথ দেখছিলো , তা শেষ করতে ঠিক কত সময় লাগবে , বুঝে উঠতে পারছিলাম না। এক সময় মনে হলো আজ আর বুলেট ট্রেন পাওয়া হলো না। কারণ ৬ টার ট্রেনে আমাদের সিট সংরক্ষিত ছিল , এর পরের কোনো সিনকানসেন এ উঠলে আমাদের ওই পুরো রাস্তা ট্রেনে দাঁড়িয়ে যেতে হবে, যেটা সে সময়ে প্রায় অসম্ভব। সারাদিন প্রায় দাঁড়িয়ে , তারপর সিট্ না পেলে যে কি হবে , ভেবেই কান্না পাচ্ছিলো। মেয়ে আর পারছিলো না হাঁটতে , অনেক সময় একটু জোরে চেঁচিয়ে উঠে বলছিল , মা আমি পারছিনা , কিন্তু সত্যি বলতে সে সময় ওর ওপর মায়ার থেকেও ট্রেন ছেড়ে যাওয়ার ভয়টা মাথায় এমন চেপে বসেছিল , যে মেয়েকে পাত্তা না দিয়ে , বরং অনেক জ্ঞান এ দিচ্ছিলাম , যাতে তাকে জোরে হাঁটতে অনুপ্রাণিত করতে পারি। সেই সময় যে স্টেশন এ এসে পৌঁছায় সেটা দেখে আর তার রাস্তা দেখে মনে হচ্ছিলো , মানুষ কি না পারে , এ যেন গোলকধাঁধা , কিন্তু সব এ চাবিকাঠি দিয়ে সুষম ভাবে সংগঠিত। মানুষ গুলো এতো সহজে এক লাইন থেকে এক লাইন এ
বা এক স্টেশন থেকে এক স্টেশন এ যাচ্ছে যে মনে হচ্ছে এ যেন কোনো ব্যাপার নয়। কিন্তু সত্যি বলতে মনে একবার এ ভয় ও হয়েছিল , এখানে হারালে ফিরে যাওয়া প্রায় অসম্ভব।
সময়ের ১০ মিনিট আগে Shin -Yokohama স্টেশন এ পৌঁছায় আমরা। ট্রেন আসে সময়ে। সময়ই পৌঁছায় কিয়োটো। প্রথম অনুভব হয় কতটা ভালোবেসে ফেলেছি এই শহর কিয়োটো কে। স্টেশন চত্বরে নেমেই মনে হলো , যেন ঘরে ফিরলাম। শান্ত সিন্গ্ধ আমার প্রিয় , মনের কাছের শহর কিয়োটো। বাইরের ইন্ডিয়ান রেস্টুরেন্ট এ নৈশভোজ করে ঘরে ফিরতে রাট ১০ টার ওপর। এই ৪ দিন যেন অন্যরকম ছিল , খুব বেশি রোমাঞ্চকর হলেও খুব বেশি ক্লান্তি আমাদের ছেঁকে ধরেছে। বিছানাতে শুতেই ভোরের আলো।
<< জাপান পর্ব ১৭ জাপান পর্ব ১৯ >>
Copyright © জাপান পর্ব ১৮, 2018 by M K Paul, monomousumi.com
[…] << জাপান পর্ব ১৬ জাপান পর্ব ১৮ >> […]
[…] <<জাপান পর্ব :১৮ ৬ জুন থেকে ১৬ জুন […]